ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য হতে পারে আশীর্বাদ by অরুন দেবনাথ
গত ৩০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম বাংলাদেশভিত্তিক তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারী
নিউএইজ গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির সুযোগ পেতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর এ জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্পের যুদ্ধকে।
হেনেস অ্যান্ড মরিজ এপির অন্যতম সরবরাহকারী নিউএইজ তিন দশক ধরে
ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর সাথে কাজ করছে। এখন তারা ম্যাসিস ইন্ক, গ্যাপ
ইনকর্পোরেটের সাথে কাজ করার সম্ভাবনা দেখছেন বলে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন
নিউএইজ গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েলিটেক্স
গ্রুপের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১ জুলাই শুরু হওয়া বছরে যুক্তরাষ্ট্রে
বার্ষিক রফতানি দ্বিগুণের বেশি হয়ে বছরে ২৫ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। গ্রুপের
চেয়ারম্যান ডেভিড হাসানাত এ তথ্য দিয়েছেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ ৩০ জুন সমাপ্ত
বছরে রেকর্ড ৪০.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। ট্রাম্প ২০০ বিলিয়ন
ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ ভাগ করায় বাংলাদেশের পোশাক
রফতানি বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ
করেছে। ফলে ১,৯৮১টি শুল্ক-সংশ্লিষ্ট পণ্যের অর্ধেকের বেশি ভিয়েতনাম ও
মালয়েশিয়ার মতো দেশ থেকে রফতানি হয়েছে।
নিউএইজের ইব্রাহিম বলেন, খুচরা বিক্রেতারা তাদের ব্যবসায়িক ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ থেকে আমদানির চিন্তা করছে।
ম্যাসিস মে মাসে জানিয়েছে, তারা চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিতে কিছু দিন ধরেই কাজ করছে।
বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২৪ সাল নাগাদ মোট রফতানি ৭২ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে
যাওয়া। এক্ষেত্রে চীনের ৪১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করবে। আর এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের মতে, আগামী দুই বছরে পোশাক
খাতে ব্যবসা রেকর্ড ৮ ভাগ বাড়বে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতে ৪০
লাখ লোক কাজ করে, এই খাত থেকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১৩ ভাগ আসে।
চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফসল তুলতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম তৈরী বলে
মনে করা হচ্ছে। এ দুটি দেশই হতে পারে মার্কিন আমদানিকারকদের প্রধান
টার্গেট।
চাহিদা বাড়ার কারণে নিউএইজ কালিয়াকৈরে ২০ মিলিয়ন ডলারের একটি পোশাক
কারখানা খুলতে এক চীনা বিনিয়োগকারীর সাথে চুক্তি করেছে। চার মাসের মধ্যে এই
কারখানা উৎপাদনে যাবে।
তবে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক কারখানাগুলোর জন্য কিছু সমস্যাও আছে। বিশ্ব
অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল কমপেটিটিভনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবকাঠামোর
র্যাংক ১০৩ নম্বরে। অথচ চীনের স্থান ২৯-এ। ফলে বাংলাদেশকে সরবরাহ শৃঙ্খল
উন্নত করতে হবে, পোশাক কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে, নতুন নতুন মহাসড়ক
নির্মাণ করতে হবে, আরো ক্রেতা আনতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মে মাসে চট্টগ্রামের পথে চার লেনের দুটি সেতু
উদ্বোধন করেছেন, মার্চে করেছিলেন আরেকটি। ফলে চট্টগ্রাম যেতে সময় অর্ধেক
কমে গেছে। মহাসড়কগুলোর গতিও বাড়াচ্ছে সরকার। তারপরও ঢাকা থেকে মালামাল
জাহাজে পাঠাতে রফতানিকারকদের লাগে ১৬৮ ঘণ্টা। অথচ সাংহাইতে লাগে মাত্র ২৩
ঘণ্টা।
রফতানিকারকদের উৎপাদনশীলতাও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ঢাকাভিত্তিক
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন,
উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আমাদের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে প্রযুক্তিগত
আধুনিকায়ন ও অটোমেশন করতে হবে। কয়েকটি কোম্পানি অটোমেশন করলেও এই সেক্টরে
আরো অনেক কিছু করা বাকি রয়ে গেছে।
তবে বাংলাদেশে কিছু মূল্য সুবিধাও আছে। চীনা রফতানি করা পোশাকের দাম পড়ে
প্রায় ২.৩ ডলার, আর বাংলাদেশে পড়ে ২.৭৯ ডলার, কম্বোডিয়ায় ২.৫২ ডলার। এই
হিসাব বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকের। চীনের মূল্য সুবিধা ও প্রযুক্তিগত
শ্রেষ্ঠত্বই তাদেরকে এই শিল্পে এগিয়ে দিচ্ছে।
তবে এখন বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো আছে সবচেয়ে ভালো অবস্থায়। আমেরিকান
ফ্যাশন লেবেলস টমি হিলফিগার ও ক্যালভিন ক্লেইনের মালিক পিভিএইচ করপোরেশনসহ
ভিয়েলাটেক্স ক্লায়েন্টদের প্রায় ৩০ ভাগ এখন আমেরিকান, অথচ এক বছর আগে ছিল
২০ ভাগ।
ভিয়েলাটেক্সের চেয়ারম্যান হাসানাত বলেন, আমরা আমেরিকান কোম্পানিগুলো থেকে বেশি বেশি ব্যবসায়িক অর্ডার লাভ করার জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানায় কর্মকরত শ্রমিকরা, ছবি: ব্লুমবার্গ |
No comments