পাসপোর্ট ছাড়াই পাইলট কাতারে তদন্ত কমিটি
পাসপোর্ট
ছাড়া কাতারে গিয়ে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলেছেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল
মাহমুদ চৌধুরী। ফিনল্যান্ড সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাতার
থেকে বহনকারী ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য তাকে দোহা পাঠানো হয়েছিল।
বুধবার তিনি ঢাকা ছেড়ে যান। কাতার পৌছার পর ইমিগ্রেশন কতৃপক্ষ মাহমুদকে
আটকে দেয়। বিশেষ ব্যবস্থায় পরবর্তী ফ্লাইটে তার পাসপোর্ট কাতার পৌঁছানো এবং
কূটনৈতিক চেষ্টায় ঘটনা ছাইচাপ দেয়া হলেও শাস্তি থেকে রেহাই পাচ্ছে না
তিনি। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বহন করতে কাতার যাওয়া উড়োজাহাজের পাইলটের
তালিকা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাঁর পরিবর্তে বিমানের জ্যেষ্ঠ পাইলট
ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় কাতার ইমিগ্রেশনে পাইলট ফজল মাহমুদ ‘আটক’ হওয়ার ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট পাইলটসহ পাসপোর্টবিহীন বিমানে ভ্রমণ এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য গতকাল ওই আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমকে প্রধান করে গঠিত ৪ সদস্যের ওই কমিটিকে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় দোহা ভ্রমণের কারণ অনুসন্ধান, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার্যপদ্ধতির ত্রুটি নিরূপণ করতে বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পাইলট ফজল অবশ্য তাকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের কথা অস্বীকার করেছেন। তার দাবি পাসপোর্ট ছেড়ে যাওয়ায় তিনি বিমানবন্দরের ভেতরে একটি হোটেলে কাটিয়েছেন। ঢাকা থেকে পরের ফ্লাইটে তার পাসপোর্ট যাওয়ার পর তিনি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছেন। মিস্টার চৌধুরী যাই দাবি করেন না কেন- তিনি যে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন এটা মানছেন প্রায় সবাই। তার এ ঘটনায় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন কতৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি ফের সামনে আসছে। বিশেষ করে নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হলেন। বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায় সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের যে কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে পাইলট, কেবিন ক্রুদের জেনারেল ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হয়।
এই ফরমে পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, গন্তব্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হয়। এ ছাড়া তাদের ব্যক্তিগত পাসপোর্ট অবশ্যই সঙ্গে নিতে হয়। এরপর বিদেশে পৌঁছার পর ওই দেশের বিমানবন্দরে পাসপোর্ট প্রদর্শন করেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। এতে কোন ছাড় নেই। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে গণমাধ্যমে খবর এসেছে বুধবার রাতে ঢাকা ছেড়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের স্টাফদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে যেতে পারেননি তিনি। তাকে সেখানেই আটকে দেয় কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আটক বা গ্রেফতারের খবর নাকচ করে কাতারে অবস্থান করা ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ গতকাল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেন ভুলে তিনি পাসপোর্ট সঙ্গে নেননি। তার বক্তব্যটি ছিল এরকম ‘আমি ফ্লাইটে যাওয়ার সময় যে ব্যাগ সঙ্গে নিই, সেখানেই আমার পাসপোর্ট থাকে। গত ৩ জুন ব্যাংকের কাজে সেখানে পাসপোর্ট নিয়ে যাই। পরবর্তীতে ভুলে আর পাসপোর্টটি আমার ফ্লাইটের ব্যাগে নেয়া হয়নি।
এ কারণেই এই ভুল হয়েছে।’ তিনি বলেন, আমাকে আটক করা হবে? আমি তো ইমিগ্রেশনেই যাইনি। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কারণ নেই। আমি তাদের মুখোমুখিও হইনি। ফ্লাইট নিয়ে গেলে কাতার শহরের ক্রাউন প্লাজা হোটেলে ওঠেন বিমানের পাইলটরা। কিন্তু আমার সঙ্গে পাসপোর্ট না থাকায় আমি আর সেখানে যাইনি। অন্য পাইলট ও ক্রুরা ইমিগ্রেশন হয়ে ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে যান। আমি দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকার হোটেল অরিস এয়ারপোর্টে উঠি। পাসপোর্ট পৌছার পর আমি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করি এবং ক্রাউন প্লাজায় যাই। বাংলাদেশ থেকে কাতারে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট দেখানো প্রসঙ্গে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, ‘ঈদের দিন বিকালে আমরা রওনা হই। ঈদের দিন হওয়ায় সবাই ফেস্টিভেল মুডেই ছিলেন। শাহজালালে ইমিগ্রেশনে আমার পাসপোর্ট দেখতে চাইলে এ ভুলটি আর হতো না। আমি তখনই পাসপোর্ট এনে ফ্লাইটে যেতাম। আসলে আমি যেমন ভুল করেছি, ঢাকার ইমিগ্রেশনও ভুল করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার ইমিগ্রেশনে আমাদের জেনারেল ডিক্লেয়ারেশনের (জিডি) কপি দেয়ার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হয়। দেখানো ছাড়া পাসপোর্ট আর কোনও কাজে লাগে না। কারণ, জিডি কপি আর ফিঙ্গারপ্রিন্টেই সব তথ্য পেয়ে যায় ইমিগ্রেশন। তবে অনেক দেশে পাসপোর্ট স্ক্যান করে রাখে।’
বরখাস্ত হচ্ছেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা: পাসপোর্ট ছাড়া পাইলটকে ইমিগ্রেশনে পার হওয়ার অনুমতি দেয়ার ঘটনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে এ খবর বেরিয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় চার থেকে পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় পাইলট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেননি। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাও তার বিষয়ে ছিলেন নমনীয়। সূত্র মতে, ঘটনা প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে সর্বত্র। পাইলট যখন ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন, তখন আসলে কী ঘটেছিল? ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার কাছে পাসপোর্ট চেয়েছিলেন কিনা? ওই সময়ে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেছেন। ঘটনার পরপরই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ৭ জুন বিকালের মধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ঘটনাটি প্রকাশের পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে কড়া নির্দেশনা যায় বিমানবন্দরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে পাইলট কাতার গেলেন, আমরা তা জানতে চেয়েছি। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে ইতোমধ্যে এই বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশও দিয়েছি।
পাইলট ফজল মাহমুদকে আটক করেনি কাতার: বিমান
পাসপোর্ট ছাড়াই কাতারে যাওয়া বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীকে দোহা ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করেনি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজের পাঠানো এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, দোহা ইমিগ্রেশন পুলিশ বিমানের পাইলটকে আটক বা গ্রেপ্তার করেছে বলে কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে যা মোটেও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কোনো বিমান পাইলট আটক, গ্রেপ্তার বা আটকে দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বিমানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘গত ৫ জুন বিমান এর ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা রুটে বিজি ১২৫ ফ্লাইটের অপারেটিং ক্যাপ্টেন হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। দোহায় অবতরণ করার পর তিনি লক্ষ্যে করেন যে, তাঁর পাসপোর্টটি সঙ্গে নেই। এ অবস্থায় তিনি ইমিগ্রেশনে না গিয়ে দোহা এয়ারপোর্টে বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ও ঢাকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পর তিনি দোহা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টের আগে ট্রানজিট হোটেল অরিক্সে চলে যান। পরদিন অর্থাৎ ৬ জুন সন্ধ্যায় তাঁর পাসপোর্ট দোহায় পাঠানো হয়। তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই কোনো জটিলতা ছাড়াই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দোহা নগরে বিমান ক্রুদের নির্ধারিত হোটেল ক্রাউন প্লাজায় চলে যান। বর্তমানে তিনি ওই হোটেলে অবস্থান করছেন। বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জুন ভোরে দোহা থেকে বিজি ১২৬ ফ্লাইট অপারেট (পরিচালনা) করে ঢাকা আসবেন তিনি।’
এদিকে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় কাতার ইমিগ্রেশনে পাইলট ফজল মাহমুদ ‘আটক’ হওয়ার ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট পাইলটসহ পাসপোর্টবিহীন বিমানে ভ্রমণ এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য গতকাল ওই আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমকে প্রধান করে গঠিত ৪ সদস্যের ওই কমিটিকে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় দোহা ভ্রমণের কারণ অনুসন্ধান, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার্যপদ্ধতির ত্রুটি নিরূপণ করতে বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পাইলট ফজল অবশ্য তাকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের কথা অস্বীকার করেছেন। তার দাবি পাসপোর্ট ছেড়ে যাওয়ায় তিনি বিমানবন্দরের ভেতরে একটি হোটেলে কাটিয়েছেন। ঢাকা থেকে পরের ফ্লাইটে তার পাসপোর্ট যাওয়ার পর তিনি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছেন। মিস্টার চৌধুরী যাই দাবি করেন না কেন- তিনি যে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন এটা মানছেন প্রায় সবাই। তার এ ঘটনায় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন কতৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি ফের সামনে আসছে। বিশেষ করে নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হলেন। বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায় সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের যে কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে পাইলট, কেবিন ক্রুদের জেনারেল ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হয়।
এই ফরমে পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, গন্তব্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হয়। এ ছাড়া তাদের ব্যক্তিগত পাসপোর্ট অবশ্যই সঙ্গে নিতে হয়। এরপর বিদেশে পৌঁছার পর ওই দেশের বিমানবন্দরে পাসপোর্ট প্রদর্শন করেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। এতে কোন ছাড় নেই। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে গণমাধ্যমে খবর এসেছে বুধবার রাতে ঢাকা ছেড়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের স্টাফদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে যেতে পারেননি তিনি। তাকে সেখানেই আটকে দেয় কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আটক বা গ্রেফতারের খবর নাকচ করে কাতারে অবস্থান করা ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ গতকাল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেন ভুলে তিনি পাসপোর্ট সঙ্গে নেননি। তার বক্তব্যটি ছিল এরকম ‘আমি ফ্লাইটে যাওয়ার সময় যে ব্যাগ সঙ্গে নিই, সেখানেই আমার পাসপোর্ট থাকে। গত ৩ জুন ব্যাংকের কাজে সেখানে পাসপোর্ট নিয়ে যাই। পরবর্তীতে ভুলে আর পাসপোর্টটি আমার ফ্লাইটের ব্যাগে নেয়া হয়নি।
এ কারণেই এই ভুল হয়েছে।’ তিনি বলেন, আমাকে আটক করা হবে? আমি তো ইমিগ্রেশনেই যাইনি। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কারণ নেই। আমি তাদের মুখোমুখিও হইনি। ফ্লাইট নিয়ে গেলে কাতার শহরের ক্রাউন প্লাজা হোটেলে ওঠেন বিমানের পাইলটরা। কিন্তু আমার সঙ্গে পাসপোর্ট না থাকায় আমি আর সেখানে যাইনি। অন্য পাইলট ও ক্রুরা ইমিগ্রেশন হয়ে ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে যান। আমি দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকার হোটেল অরিস এয়ারপোর্টে উঠি। পাসপোর্ট পৌছার পর আমি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করি এবং ক্রাউন প্লাজায় যাই। বাংলাদেশ থেকে কাতারে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট দেখানো প্রসঙ্গে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, ‘ঈদের দিন বিকালে আমরা রওনা হই। ঈদের দিন হওয়ায় সবাই ফেস্টিভেল মুডেই ছিলেন। শাহজালালে ইমিগ্রেশনে আমার পাসপোর্ট দেখতে চাইলে এ ভুলটি আর হতো না। আমি তখনই পাসপোর্ট এনে ফ্লাইটে যেতাম। আসলে আমি যেমন ভুল করেছি, ঢাকার ইমিগ্রেশনও ভুল করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার ইমিগ্রেশনে আমাদের জেনারেল ডিক্লেয়ারেশনের (জিডি) কপি দেয়ার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হয়। দেখানো ছাড়া পাসপোর্ট আর কোনও কাজে লাগে না। কারণ, জিডি কপি আর ফিঙ্গারপ্রিন্টেই সব তথ্য পেয়ে যায় ইমিগ্রেশন। তবে অনেক দেশে পাসপোর্ট স্ক্যান করে রাখে।’
বরখাস্ত হচ্ছেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা: পাসপোর্ট ছাড়া পাইলটকে ইমিগ্রেশনে পার হওয়ার অনুমতি দেয়ার ঘটনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে এ খবর বেরিয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় চার থেকে পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় পাইলট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেননি। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাও তার বিষয়ে ছিলেন নমনীয়। সূত্র মতে, ঘটনা প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে সর্বত্র। পাইলট যখন ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন, তখন আসলে কী ঘটেছিল? ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার কাছে পাসপোর্ট চেয়েছিলেন কিনা? ওই সময়ে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেছেন। ঘটনার পরপরই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ৭ জুন বিকালের মধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ঘটনাটি প্রকাশের পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে কড়া নির্দেশনা যায় বিমানবন্দরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে পাইলট কাতার গেলেন, আমরা তা জানতে চেয়েছি। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে ইতোমধ্যে এই বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশও দিয়েছি।
পাইলট ফজল মাহমুদকে আটক করেনি কাতার: বিমান
পাসপোর্ট ছাড়াই কাতারে যাওয়া বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীকে দোহা ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করেনি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজের পাঠানো এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, দোহা ইমিগ্রেশন পুলিশ বিমানের পাইলটকে আটক বা গ্রেপ্তার করেছে বলে কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে যা মোটেও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কোনো বিমান পাইলট আটক, গ্রেপ্তার বা আটকে দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বিমানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘গত ৫ জুন বিমান এর ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা রুটে বিজি ১২৫ ফ্লাইটের অপারেটিং ক্যাপ্টেন হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। দোহায় অবতরণ করার পর তিনি লক্ষ্যে করেন যে, তাঁর পাসপোর্টটি সঙ্গে নেই। এ অবস্থায় তিনি ইমিগ্রেশনে না গিয়ে দোহা এয়ারপোর্টে বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ও ঢাকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পর তিনি দোহা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টের আগে ট্রানজিট হোটেল অরিক্সে চলে যান। পরদিন অর্থাৎ ৬ জুন সন্ধ্যায় তাঁর পাসপোর্ট দোহায় পাঠানো হয়। তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই কোনো জটিলতা ছাড়াই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দোহা নগরে বিমান ক্রুদের নির্ধারিত হোটেল ক্রাউন প্লাজায় চলে যান। বর্তমানে তিনি ওই হোটেলে অবস্থান করছেন। বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জুন ভোরে দোহা থেকে বিজি ১২৬ ফ্লাইট অপারেট (পরিচালনা) করে ঢাকা আসবেন তিনি।’
No comments