‘চাঁদ’ কি তাহলে ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়েছিল? by মারুফ কিবরিয়া
ঈদুল
ফিতরের চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক চলছে। ইফতারের পর পর গোটা দেশ কমিটির
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। সময় গড়িয়ে যায়। কিন্তু সিদ্ধান্ত আসে না। এরই মধ্যে
এশার আজানও দেয়া হয়ে গেছে। চাঁদ দেখা না গেলে পড়তে হবে তারাবির নামাজ।
মসজিদে মসজিদে মুসুল্লির অপেক্ষা। কি করবে? তারাবি পড়বে নাকি এশার সালাত
আদায় করবে? দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীতে থাকা স্বজনদের কাছে ফোন।
সবার জিজ্ঞাসা চাঁদের খবর কি? না কেউ কোন খবর দিতে পারছেনা। এমন টানাপড়েনের মধ্যেই তারাবির নামাজ শুরু হয়। রাত তখন প্রায় ৯টা। চাঁদ দেখা কমিটি ঘোষণা দেয় দেশের কোথায় চাঁদ দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার ঈদ।
এ ঘোষণার পরই সারাদেশে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ভারতে চাঁদ দেখা গেছে। পাকিস্তানেও চাঁদ দেখা গেছে। দুই দেশেই বুধবার ঈদ। স্বাভাবিকভাবে সৌদি আরবে চাঁদ দেখার পরদিন বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়। সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য তিন ঘণ্টার। প্রশ্ন উঠে সেটা ৪৮ ঘণ্টা হয় কি করে? সৌদি আরবের হিসাবে সারাদেশ প্রস্তুত ছিল বুধবার বাংলাদেশে ঈদ। চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার পর বদলে যায় দৃশ্যপট। গৃহিনীরা সবাই ফের সেহরি রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চাঁদ রাত ভেবে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটে। সময় গড়িয়ে যায়। রাত ১১টার পর খবর আসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ফের বৈঠকে বসেছে। এবার ঘোষণা এলো দেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে।
বুধবার ঈদ। ইতিমধ্যে তারাবির নামাজ পড়াও শেষ। বাসা বাড়িতে যারা প্রবেশ করেছিল তারাও বেরিয়ে আসে রাস্তায়। শূন্য এবং হতাশ মার্কেটগুলোও নড়েচড়ে বসে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন এটা কি হলো? চাঁদ নিয়ে এমন বিভ্রান্তি গোটা দেশের মানুষকে ফেলে দেয় ভোগান্তিতে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট নয় দেশবাসী। তারা এটিকে চাঁদ দেখা কমিটির ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তীর্যক মন্তব্যের ঝড় উঠে। কেউ কেউ লিখেন- চাঁদ কি তাহলে ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়েছিল? কেউবা লিখেছেন- চাঁদ মামা ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওদিকে, বুধবারই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। তবে চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের রেশ চলছে এখনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
চাঁদ দেখার খবরে জনমনে যতটা উচ্ছ্বাস কাজ করে ঠিক ততটাই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে এবারের ঈদে। টানা আড়াই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে থাকতে হয়েছে বিভ্রান্তির মাঝে। সে সঙ্গে শিকার হতে হয়েছে হয়রানিরও। গত ৪ঠা জুন ছিল ২৯শে রমজান। ইফতারের পরপরই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শুরু হয়। ঈদের চাঁদ দেখার খবরের জন্য সবার দৃষ্টি টিভি চ্যানেলগুলোতে। অনেকেই কান পেতে ছিলেন বেতারে। আর কেউ বা অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি কমিটি। দেশের ৬৪ জেলার কোথাও চাঁদের হদিস পাওয়া যায়নি। ঠিক সেই মুহূর্তেই ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে জানান, রাত ৮টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত দেশের কোথাও চাঁদ দেখার খবর পাওয়া যায়নি। তাই ৩০টি রোজা পূর্ণ করে বাংলাদেশে ঈদ পালন করা হবে বৃহস্পতিবার। প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সবাই নিজ নিজ প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। শেষ রোজা রাখার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তারাবির নামাজও আদায় করে নেন। কেউ কেউ সেহরির জন্য রান্নার কাজও সারেন।
রাত সাড়ে দশটার দিকে টেলিভিশন ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর আসে চাঁদ দেখা কমিটি আবারো বসেছে। নতুন করে কি খবর আসবে। ঈদ হবে কি হবে না! জনমনে এ নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না। রাত সোয়া এগারোটার দিকে নতুন খবর। আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ঈদের ঘোষণা। বৃহস্পতি নয় বুধবারই ঈদ। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ এবার ব্রিফিংয়ে জানান, দেশের প্রখ্যাত আলেম ও হাক্কানী ওলামারা চাঁদ দেখার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়ায় আমরা আগের সিদ্ধান্ত সংশোধন করেছি। তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম ও দেশের কয়েকটি স্থানে স্থানীয়রা জানিয়েছেন চাঁদ দেখার কথা। এরপর রাতে আবার বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। এ খবরে দেশবাসীকে পড়তে হয়েছে বিপত্তিতে। অনেকেই মনে করছেন চাঁদ দেখা কমিটির দুই রকম সিদ্ধান্তের ফসলই এই বিপত্তি।
সামাজিক মাধ্যমে যত সমালোচনা
চাঁদ দেখা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও চলে নানা সমালোচনা। শুধু তাই নয়, চাঁদ দেখা কমিটি নিয়ে হাস্যরসেও মেতে উঠেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
রহমান অর্না শেখ নামের একজন লিখেছেন, ‘এই জাতির কপাল ভাল যে চাঁদ দেখা কমিটি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ছিলোনা, যদি থাকতো তাহলে দেখা যেত একদল লোক রাতেই ঈদের নামাজ পড়তো, আরেক দল লোক সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনত ঈদ শেষ। যাই হোক সেহেরী না খেয়ে ঈদের নামাজ পড়ে সেমাই খান!!!! সবাইকে ঈদ মোবারক’
ফয়সাল দীপ নামের একজন লিখেছেন, নোয়াখালীতেও চাঁদ দেখা যায়নি, সো! আপনারা নোয়াখালীকে পাশের দেশ ভাব্বেন নাহ ! ও ওকে?
আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ঈদের নামাজ পড়ার আগ পর্যন্ত আবার পরিবর্তন হয় কিনা আল্লাহ জানে।
মির্জা হাসান তার টাইমলাইনে পোস্ট করেন, এসব মিথ্যা ও মনগড়া কথা? জনগণের সমালোচনায় চাঁদ না দেখে বলে চাঁদ দেখেছি ? উন্নতমানের দূরবীনের টাকা খেয়ে পূরানা দূরবীন দিয়ে আকাশের পাখিটাও দেখা যায় না ?
তারিক রহমান নামের এক ইউজার লিখেছেন, রাত ১১টায় নতুন করে চাঁদ দেখতে পাওয়ার ঘোষণা !! মানুষকে হয়রানির একটা সীমা থাকা প্রয়োজন। ব্যর্থ চাঁদ দেখা কমিটির সকল সদস্যের পদত্যাগ করা উচিত।
তারেক রাহয়ান নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্লেখ করেন. এটাই কি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপ। গলা ফাটিয়ে যে, সকল ভাইয়েরা বলেন যে বাংলাদেশ এখন অত্যাধুনিক ডিজিটাল হয়েছে। এই কি তার প্রমাণ মিললো ১১.৩০ মিনিটে চাঁদ দেখা গেছে বলে নিশ্চিত হলো। তাহলে সন্ধার সময় থেকে চাঁদ দেখা কমিটি বলে আসছিলো কেন বাংলাদেশের কোথাও চাঁদ দেখা যাইনি, তাই আগামি বৃহস্পতিবারে ঈদ উদযাপন হবে ... এখন আমরা কোনটা সঠিক বলে ধরে নিবো, দেশ ডিজিটাল হয়েছে নাকি চাঁদ ডিজিটাল হয়ে সন্ধা ৭টার সময় আকাশে না উঠে ডিজিটাল হয়ে ১১.৩০মিনিটে উঠেছে...? নাকি চাঁদ দেখা কমিটিগুলোই অযোগ্য ছিল...?
এই সমস্ত অযোগ্য চাঁদ দেখা কমিটিগুলোকে নিন্দা জানাচ্ছি সেই সাথে সাথে অপসারণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি...।
তারাবির নামাজ আদায়
রাত নয়টা পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এশার নামাজের সঙ্গে সবাই তারাবির নামাজও আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। পরদিন রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সবাই এই নামাজটি আদায় করে নেন। কিন্তু রাতের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে খানিকটা বিব্রতই হতে হয়েছে তাদের। নামাজ আদায় করিয়ে নেয়ার পর কেন এমন সিদ্ধান্ত? এই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। আরিফুল ইসলাম নামের একজন জানান, মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর বাসায় গেলাম। বাসার লোকজন জানালো ঈদের চাঁদ দেখা কমিটি আবার বসেছে। তখনই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ভেবেছিলাম ত্রিশটি রোজা আদায় করা হবে। কিন্তু সেটা আর হলো না। চাঁদ দেখা কমিটির এত দুর্বলতা কেন? আহমুদুল নামের আরেকজন বলেন, আমি তো সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি। চাঁদ যেহেতু দেখা যায়নি তাই রোজা রাখা লাগবে। বাসায় স্ত্রীও তার কাজ সেরে নিয়েছে। দুরকম খবরে কিছুটা ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে আমাদের।
রান্নার কাজে যত বিপত্তি
২৯শে রমজান সাধারণত বাড়ির মহিলাদের রান্নাঘরের ব্যস্ততা বেশি থাকে। পরদিন ঈদ হোক না হোক ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই রান্নার কাজটি এগিয়ে রাখেন। সবসময়ের মতো এবারো তাই করছিলেন অনেকে। সন্ধ্যা থেকে ঈদের দিনের জন্য বিশেষ খাবার রান্না করা অনেকটাই সেরে ফেলেছেন। ঈদ না হলেও সেগুলো করতে হবে। কিছু কাজ চাঁদরাতে করবেন এমন প্রস্তুতি নিয়ে ৩০শে রমজানের জন্য ব্যবস্থাও হয়ে গেছে সবার। সেহরিতে খাওয়ার জন্য রান্না করে রাখেন। কিন্তু হঠাৎ ১১টার পর নতুন ঘোষণা সব ওলোটপালোট করে দিলো তাদের। সেহরির রান্নাও করা হলো। এখন আবার সকাল হলেই ঈদের ঘোষণা। চট জলদি ফ্রিজে জমা করা ঈদের রান্নাগুলো বের করে আবার তাতে হাত লাগাতে হলো। এই রান্নার কাজ শেষ করতে অনেকের কেটে গেছে পুরো রাত।
উত্তর বাড্ডার ইয়াসমিন আক্তার নামের এক গৃহবধু বলেন, বড় পরিবার। তাই ব্যস্ততাও একটু বেশি। কাজও বেশি। ঈদ হবে না এমনটা ভেবে সেহরির ব্যবস্থা করলাম। কিছুক্ষণ পর নতুন ঘোষণায় সব হ-য-ব-র-ল। সেহরির খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে দিতে হয়েছে। আর পরদিন ঈদের জন্য খাবারগুলো ফ্রিজ থেকে নামিয়ে নতুন কাজ শুরু করা। শেষ যেন হয় না। রাত ৩টার পর গিয়ে কিছুটা স্বস্তি। তাও যেন কাজ আর শেষ হয়নি। ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে এত কাহিনী কখনো হতে দেখিনি। আমার মনে হয় আমাকেই বেশি নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে।
রামপুরার বাসিন্দা আফরোজা রহমান জানান, ঈদ হবে না বলে আবার ঈদের ঘোষণা। এক হাতে সংসার সামলাতে হয়। ঈদের চাঁদ না দেখা যাওয়ার খবরে পরদিন রোজার প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু আবার নতুন সিদ্ধান্তে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে আমাদের। যে কাজগুলো বুধবার করার কথা সেগুলো আবার রাতেই করতে হয়েছে। শেষ করতে করতে রাত পার হয়ে গেল।
মাহবুবা মাহবুব নামের আরেক নারী বলেন, সকালে ঈদ জানতে পারলাম রাত ১১টার পর। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম প্রায়। মসজিদে ঈদ হবে এমন ঘোষণা শুনে লাফ দিয়ে উঠে পড়ি। রান্নার কাজ শুরু করতে হয়। আর ঘুমাতে পারিনি। রাতটা কাটাতে হলো রান্না ঘরেই। এভাবে হুলস্থুল পরিস্থিতিতে পড়তে হবে কখনো ভাবিনি।
তোড়জোড় করে বাকি থাকা কেনাকাটা
যেহেতু বুধবার ঈদ হচ্ছে না তাই অনেকেই আর শপিং মলে গিয়ে বাকি থাকা কেনাকাটায় নামেননি। বৃহস্পতিবার ঈদকে সামনে রেখে বেশ আরামই করছিলেন সবাই। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন ঘোষণা। বুধবারই ঈদ। তাতেই শুরু হলো লঙ্কা কাণ্ড। বিছনা ছেড়ে সবাই ছুটলেন শপিং মলে। আবার কেউ কেউ মুদি বাজারে।
শান্তিনগরের বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমার সব কেনাকাটা শেষ। চাঁদরাতের জন্য প্রতিবারই কিছু কাজ বাকি রেখে দিই। এবারও তাই রেখেছি। যেহেতু বুধবার ঈদ হচ্ছে না। তাই আর বাইরে যাইনি। দ্বিতীয়বার চাঁদ দেখা কমিটির নতুন ঘোষণায় পড়তে হলো বিপাকে। রাত ১২টায় বেরিয়ে পড়লাম মার্কেটে। যে কেনাকাটাগুলো বাকি ছিল সেগুলো কিনতে বেরিয়ে পড়লাম। এতটা প্রেশার কখনো যায়নি।
আসিফউদ দৌলা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আমার কাছে ঈদ যতটা খুশির ততটাই ভোগান্তির হয়েছে এবার। বৃহস্পতিবার ঈদ জেনে কিছু মুদি বাজার করা বাকি ছিল। বাজারটাও দূরে ছিল। এত দূরে গিয়ে রাতের বেলায় বাজার করাটা কতটা ঝামেলার ছিল আমিই বুঝেছি।
বিউটি পার্লার ও সেলুনে হঠাৎ ভিড়
ঈদ হচ্ছে না এমন খবরে নিশ্চিন্তেই ছিলেন অনেক সাজগোজপ্রেমী তরুণ তরুণীরা। কিন্তু রাত সোয়া এগারোটায় হঠাৎ ঈদের খবরে অনেকটা লাফিয়ে উঠেই দৌঁড়াতে হয়েছে বিউটি পার্লার ও সেলুনে। সুবাস্তু নজর ভ্যালিতে পার্লারে আসা নিলুফার নামের এক তরুণী বলেন, ঈদ হবে না বলে পার্লারে আজ আর আসিনি। ভেবেছি বুধবার ইফতারের পর যাবো। এখন ঈদ হয়ে যাওয়ায় তোড়জোড় করে আসতে হলো। পার্লারে এসে তো সেই ভিড়। কিছুতেই সিরিয়াল পাচ্ছি না।
একই অবস্থা ধানমন্ডির এক জেন্টস পার্লারেও দেখা গেল। হঠাৎ ঈদের খবরে ব্যস্ততার তীব্রতা যেন বেড়ে যায় সেখানে। কেউ চুল, কেউ ফেসওয়াস আবার কেউ অন্য কাজ সারতে দ্রুত চলে এসেছেন সেলুনটিতে। কিন্তু হঠাৎ ঈদ হওয়ার সিদ্ধান্তে গভীর রাত অবধি অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় সিরিয়ালে জন্য।
বাসে লঞ্চেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না
ব্যবসায়ী, দোকানে চাকরি করেন- এমন অনেকেই রয়েছেন যারা চাঁদ রাতে বাড়ি ফেরেন। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার অনেকই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। যাবেন বুধবার। কিন্তু আকস্মিক সিদ্ধান্ত বদলে সব ওলোটপালোট। আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে যান। বাস লঞ্চ টার্মিনালে প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে পড়েন কেউ কেউ। ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককেই। শেষ সময়ে ঈদের ঘোষণায় বাস লঞ্চের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
সবার জিজ্ঞাসা চাঁদের খবর কি? না কেউ কোন খবর দিতে পারছেনা। এমন টানাপড়েনের মধ্যেই তারাবির নামাজ শুরু হয়। রাত তখন প্রায় ৯টা। চাঁদ দেখা কমিটি ঘোষণা দেয় দেশের কোথায় চাঁদ দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার ঈদ।
এ ঘোষণার পরই সারাদেশে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ভারতে চাঁদ দেখা গেছে। পাকিস্তানেও চাঁদ দেখা গেছে। দুই দেশেই বুধবার ঈদ। স্বাভাবিকভাবে সৌদি আরবে চাঁদ দেখার পরদিন বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়। সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য তিন ঘণ্টার। প্রশ্ন উঠে সেটা ৪৮ ঘণ্টা হয় কি করে? সৌদি আরবের হিসাবে সারাদেশ প্রস্তুত ছিল বুধবার বাংলাদেশে ঈদ। চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার পর বদলে যায় দৃশ্যপট। গৃহিনীরা সবাই ফের সেহরি রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চাঁদ রাত ভেবে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটে। সময় গড়িয়ে যায়। রাত ১১টার পর খবর আসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ফের বৈঠকে বসেছে। এবার ঘোষণা এলো দেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে।
বুধবার ঈদ। ইতিমধ্যে তারাবির নামাজ পড়াও শেষ। বাসা বাড়িতে যারা প্রবেশ করেছিল তারাও বেরিয়ে আসে রাস্তায়। শূন্য এবং হতাশ মার্কেটগুলোও নড়েচড়ে বসে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন এটা কি হলো? চাঁদ নিয়ে এমন বিভ্রান্তি গোটা দেশের মানুষকে ফেলে দেয় ভোগান্তিতে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট নয় দেশবাসী। তারা এটিকে চাঁদ দেখা কমিটির ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তীর্যক মন্তব্যের ঝড় উঠে। কেউ কেউ লিখেন- চাঁদ কি তাহলে ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়েছিল? কেউবা লিখেছেন- চাঁদ মামা ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওদিকে, বুধবারই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। তবে চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের রেশ চলছে এখনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
চাঁদ দেখার খবরে জনমনে যতটা উচ্ছ্বাস কাজ করে ঠিক ততটাই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে এবারের ঈদে। টানা আড়াই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে থাকতে হয়েছে বিভ্রান্তির মাঝে। সে সঙ্গে শিকার হতে হয়েছে হয়রানিরও। গত ৪ঠা জুন ছিল ২৯শে রমজান। ইফতারের পরপরই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শুরু হয়। ঈদের চাঁদ দেখার খবরের জন্য সবার দৃষ্টি টিভি চ্যানেলগুলোতে। অনেকেই কান পেতে ছিলেন বেতারে। আর কেউ বা অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি কমিটি। দেশের ৬৪ জেলার কোথাও চাঁদের হদিস পাওয়া যায়নি। ঠিক সেই মুহূর্তেই ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে জানান, রাত ৮টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত দেশের কোথাও চাঁদ দেখার খবর পাওয়া যায়নি। তাই ৩০টি রোজা পূর্ণ করে বাংলাদেশে ঈদ পালন করা হবে বৃহস্পতিবার। প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সবাই নিজ নিজ প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। শেষ রোজা রাখার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তারাবির নামাজও আদায় করে নেন। কেউ কেউ সেহরির জন্য রান্নার কাজও সারেন।
রাত সাড়ে দশটার দিকে টেলিভিশন ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর আসে চাঁদ দেখা কমিটি আবারো বসেছে। নতুন করে কি খবর আসবে। ঈদ হবে কি হবে না! জনমনে এ নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না। রাত সোয়া এগারোটার দিকে নতুন খবর। আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ঈদের ঘোষণা। বৃহস্পতি নয় বুধবারই ঈদ। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ এবার ব্রিফিংয়ে জানান, দেশের প্রখ্যাত আলেম ও হাক্কানী ওলামারা চাঁদ দেখার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়ায় আমরা আগের সিদ্ধান্ত সংশোধন করেছি। তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম ও দেশের কয়েকটি স্থানে স্থানীয়রা জানিয়েছেন চাঁদ দেখার কথা। এরপর রাতে আবার বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। এ খবরে দেশবাসীকে পড়তে হয়েছে বিপত্তিতে। অনেকেই মনে করছেন চাঁদ দেখা কমিটির দুই রকম সিদ্ধান্তের ফসলই এই বিপত্তি।
সামাজিক মাধ্যমে যত সমালোচনা
চাঁদ দেখা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও চলে নানা সমালোচনা। শুধু তাই নয়, চাঁদ দেখা কমিটি নিয়ে হাস্যরসেও মেতে উঠেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
রহমান অর্না শেখ নামের একজন লিখেছেন, ‘এই জাতির কপাল ভাল যে চাঁদ দেখা কমিটি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ছিলোনা, যদি থাকতো তাহলে দেখা যেত একদল লোক রাতেই ঈদের নামাজ পড়তো, আরেক দল লোক সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনত ঈদ শেষ। যাই হোক সেহেরী না খেয়ে ঈদের নামাজ পড়ে সেমাই খান!!!! সবাইকে ঈদ মোবারক’
ফয়সাল দীপ নামের একজন লিখেছেন, নোয়াখালীতেও চাঁদ দেখা যায়নি, সো! আপনারা নোয়াখালীকে পাশের দেশ ভাব্বেন নাহ ! ও ওকে?
আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ঈদের নামাজ পড়ার আগ পর্যন্ত আবার পরিবর্তন হয় কিনা আল্লাহ জানে।
মির্জা হাসান তার টাইমলাইনে পোস্ট করেন, এসব মিথ্যা ও মনগড়া কথা? জনগণের সমালোচনায় চাঁদ না দেখে বলে চাঁদ দেখেছি ? উন্নতমানের দূরবীনের টাকা খেয়ে পূরানা দূরবীন দিয়ে আকাশের পাখিটাও দেখা যায় না ?
তারিক রহমান নামের এক ইউজার লিখেছেন, রাত ১১টায় নতুন করে চাঁদ দেখতে পাওয়ার ঘোষণা !! মানুষকে হয়রানির একটা সীমা থাকা প্রয়োজন। ব্যর্থ চাঁদ দেখা কমিটির সকল সদস্যের পদত্যাগ করা উচিত।
তারেক রাহয়ান নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্লেখ করেন. এটাই কি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপ। গলা ফাটিয়ে যে, সকল ভাইয়েরা বলেন যে বাংলাদেশ এখন অত্যাধুনিক ডিজিটাল হয়েছে। এই কি তার প্রমাণ মিললো ১১.৩০ মিনিটে চাঁদ দেখা গেছে বলে নিশ্চিত হলো। তাহলে সন্ধার সময় থেকে চাঁদ দেখা কমিটি বলে আসছিলো কেন বাংলাদেশের কোথাও চাঁদ দেখা যাইনি, তাই আগামি বৃহস্পতিবারে ঈদ উদযাপন হবে ... এখন আমরা কোনটা সঠিক বলে ধরে নিবো, দেশ ডিজিটাল হয়েছে নাকি চাঁদ ডিজিটাল হয়ে সন্ধা ৭টার সময় আকাশে না উঠে ডিজিটাল হয়ে ১১.৩০মিনিটে উঠেছে...? নাকি চাঁদ দেখা কমিটিগুলোই অযোগ্য ছিল...?
এই সমস্ত অযোগ্য চাঁদ দেখা কমিটিগুলোকে নিন্দা জানাচ্ছি সেই সাথে সাথে অপসারণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি...।
তারাবির নামাজ আদায়
রাত নয়টা পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এশার নামাজের সঙ্গে সবাই তারাবির নামাজও আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। পরদিন রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সবাই এই নামাজটি আদায় করে নেন। কিন্তু রাতের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে খানিকটা বিব্রতই হতে হয়েছে তাদের। নামাজ আদায় করিয়ে নেয়ার পর কেন এমন সিদ্ধান্ত? এই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। আরিফুল ইসলাম নামের একজন জানান, মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর বাসায় গেলাম। বাসার লোকজন জানালো ঈদের চাঁদ দেখা কমিটি আবার বসেছে। তখনই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ভেবেছিলাম ত্রিশটি রোজা আদায় করা হবে। কিন্তু সেটা আর হলো না। চাঁদ দেখা কমিটির এত দুর্বলতা কেন? আহমুদুল নামের আরেকজন বলেন, আমি তো সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি। চাঁদ যেহেতু দেখা যায়নি তাই রোজা রাখা লাগবে। বাসায় স্ত্রীও তার কাজ সেরে নিয়েছে। দুরকম খবরে কিছুটা ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে আমাদের।
রান্নার কাজে যত বিপত্তি
২৯শে রমজান সাধারণত বাড়ির মহিলাদের রান্নাঘরের ব্যস্ততা বেশি থাকে। পরদিন ঈদ হোক না হোক ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই রান্নার কাজটি এগিয়ে রাখেন। সবসময়ের মতো এবারো তাই করছিলেন অনেকে। সন্ধ্যা থেকে ঈদের দিনের জন্য বিশেষ খাবার রান্না করা অনেকটাই সেরে ফেলেছেন। ঈদ না হলেও সেগুলো করতে হবে। কিছু কাজ চাঁদরাতে করবেন এমন প্রস্তুতি নিয়ে ৩০শে রমজানের জন্য ব্যবস্থাও হয়ে গেছে সবার। সেহরিতে খাওয়ার জন্য রান্না করে রাখেন। কিন্তু হঠাৎ ১১টার পর নতুন ঘোষণা সব ওলোটপালোট করে দিলো তাদের। সেহরির রান্নাও করা হলো। এখন আবার সকাল হলেই ঈদের ঘোষণা। চট জলদি ফ্রিজে জমা করা ঈদের রান্নাগুলো বের করে আবার তাতে হাত লাগাতে হলো। এই রান্নার কাজ শেষ করতে অনেকের কেটে গেছে পুরো রাত।
উত্তর বাড্ডার ইয়াসমিন আক্তার নামের এক গৃহবধু বলেন, বড় পরিবার। তাই ব্যস্ততাও একটু বেশি। কাজও বেশি। ঈদ হবে না এমনটা ভেবে সেহরির ব্যবস্থা করলাম। কিছুক্ষণ পর নতুন ঘোষণায় সব হ-য-ব-র-ল। সেহরির খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে দিতে হয়েছে। আর পরদিন ঈদের জন্য খাবারগুলো ফ্রিজ থেকে নামিয়ে নতুন কাজ শুরু করা। শেষ যেন হয় না। রাত ৩টার পর গিয়ে কিছুটা স্বস্তি। তাও যেন কাজ আর শেষ হয়নি। ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে এত কাহিনী কখনো হতে দেখিনি। আমার মনে হয় আমাকেই বেশি নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে।
রামপুরার বাসিন্দা আফরোজা রহমান জানান, ঈদ হবে না বলে আবার ঈদের ঘোষণা। এক হাতে সংসার সামলাতে হয়। ঈদের চাঁদ না দেখা যাওয়ার খবরে পরদিন রোজার প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু আবার নতুন সিদ্ধান্তে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে আমাদের। যে কাজগুলো বুধবার করার কথা সেগুলো আবার রাতেই করতে হয়েছে। শেষ করতে করতে রাত পার হয়ে গেল।
মাহবুবা মাহবুব নামের আরেক নারী বলেন, সকালে ঈদ জানতে পারলাম রাত ১১টার পর। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম প্রায়। মসজিদে ঈদ হবে এমন ঘোষণা শুনে লাফ দিয়ে উঠে পড়ি। রান্নার কাজ শুরু করতে হয়। আর ঘুমাতে পারিনি। রাতটা কাটাতে হলো রান্না ঘরেই। এভাবে হুলস্থুল পরিস্থিতিতে পড়তে হবে কখনো ভাবিনি।
তোড়জোড় করে বাকি থাকা কেনাকাটা
যেহেতু বুধবার ঈদ হচ্ছে না তাই অনেকেই আর শপিং মলে গিয়ে বাকি থাকা কেনাকাটায় নামেননি। বৃহস্পতিবার ঈদকে সামনে রেখে বেশ আরামই করছিলেন সবাই। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন ঘোষণা। বুধবারই ঈদ। তাতেই শুরু হলো লঙ্কা কাণ্ড। বিছনা ছেড়ে সবাই ছুটলেন শপিং মলে। আবার কেউ কেউ মুদি বাজারে।
শান্তিনগরের বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমার সব কেনাকাটা শেষ। চাঁদরাতের জন্য প্রতিবারই কিছু কাজ বাকি রেখে দিই। এবারও তাই রেখেছি। যেহেতু বুধবার ঈদ হচ্ছে না। তাই আর বাইরে যাইনি। দ্বিতীয়বার চাঁদ দেখা কমিটির নতুন ঘোষণায় পড়তে হলো বিপাকে। রাত ১২টায় বেরিয়ে পড়লাম মার্কেটে। যে কেনাকাটাগুলো বাকি ছিল সেগুলো কিনতে বেরিয়ে পড়লাম। এতটা প্রেশার কখনো যায়নি।
আসিফউদ দৌলা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আমার কাছে ঈদ যতটা খুশির ততটাই ভোগান্তির হয়েছে এবার। বৃহস্পতিবার ঈদ জেনে কিছু মুদি বাজার করা বাকি ছিল। বাজারটাও দূরে ছিল। এত দূরে গিয়ে রাতের বেলায় বাজার করাটা কতটা ঝামেলার ছিল আমিই বুঝেছি।
বিউটি পার্লার ও সেলুনে হঠাৎ ভিড়
ঈদ হচ্ছে না এমন খবরে নিশ্চিন্তেই ছিলেন অনেক সাজগোজপ্রেমী তরুণ তরুণীরা। কিন্তু রাত সোয়া এগারোটায় হঠাৎ ঈদের খবরে অনেকটা লাফিয়ে উঠেই দৌঁড়াতে হয়েছে বিউটি পার্লার ও সেলুনে। সুবাস্তু নজর ভ্যালিতে পার্লারে আসা নিলুফার নামের এক তরুণী বলেন, ঈদ হবে না বলে পার্লারে আজ আর আসিনি। ভেবেছি বুধবার ইফতারের পর যাবো। এখন ঈদ হয়ে যাওয়ায় তোড়জোড় করে আসতে হলো। পার্লারে এসে তো সেই ভিড়। কিছুতেই সিরিয়াল পাচ্ছি না।
একই অবস্থা ধানমন্ডির এক জেন্টস পার্লারেও দেখা গেল। হঠাৎ ঈদের খবরে ব্যস্ততার তীব্রতা যেন বেড়ে যায় সেখানে। কেউ চুল, কেউ ফেসওয়াস আবার কেউ অন্য কাজ সারতে দ্রুত চলে এসেছেন সেলুনটিতে। কিন্তু হঠাৎ ঈদ হওয়ার সিদ্ধান্তে গভীর রাত অবধি অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় সিরিয়ালে জন্য।
বাসে লঞ্চেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না
ব্যবসায়ী, দোকানে চাকরি করেন- এমন অনেকেই রয়েছেন যারা চাঁদ রাতে বাড়ি ফেরেন। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার অনেকই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। যাবেন বুধবার। কিন্তু আকস্মিক সিদ্ধান্ত বদলে সব ওলোটপালোট। আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে যান। বাস লঞ্চ টার্মিনালে প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে পড়েন কেউ কেউ। ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককেই। শেষ সময়ে ঈদের ঘোষণায় বাস লঞ্চের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
No comments