পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফার ভোট: তিন কেন্দ্রেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই by পরিতোষ পাল
পশ্চিমবঙ্গে
দ্বিতীয় দফায় ১৮ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের তিনটি লোকসভা আসনে ভোট
হবে। এই তিনটি আসন হলো রায়গঞ্জ, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং। প্রথম দফায় ভোট
হয়েছে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে। দ্বিতীয় দফার ভোটে তিনটি আসনে লড়াই হবে
হাড্ডাহাড্ডি। চতুর্মুখী এই লড়াইয়ে সবাই জয়ের আশা করছেন। উত্তর দিনাজপুরের
রায়গঞ্জ আসন থেকে গতবার জয়ী হয়েছিলেন সিপিআইএমের মো. সেলিম।
এবারও তিনি নিজের আসন দখলে রাখার লড়াইয়ে অবতীর্ণ। তার বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করা হয়েছে কিছুদিন আগে কংগ্রেস থেকে আসা কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে।
কংগ্রেস অবশ্য দীপা দাশ মুনশির জেদের কাছে হার মেনে এই কেন্দ্রে দীপাকেই মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছে। দীপা আগে দু’বার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেও গতবার পরাজিত হয়েছিলেন। সাবেক সাংসদ দীপার জেদের কারণেই রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা ভেঙে গেছে। দীপা পুরনো জমি খুঁজে পেতে লড়াই করছেন বিজেপির পাশাপাশি সিপিআইএম ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা দেবশ্রী চৌধুরীকে। বহিরাগত বলে বিজেপি প্রার্থী নিয়ে প্রথমে মতান্তর তৈরি হলেও প্রচার যত এগিয়েছে ততই তা কেটে গেছে। সকলেই এখন একাট্টা হয়ে জয়ের লক্ষ্যে প্রচারে ব্যস্ত। রায়গঞ্জে গতবছর একটি স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দুই ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাটিই নির্বাচনে কাঁটা হয়ে উঠেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। নিহত দুই ছাত্রের পরিবার সিবিআই তদন্ত চেয়ে এখনো মৃতদেহের সৎকার করেননি। দিদি মমতা একবারও সেখানে যাননি বলে ক্ষোভও রয়েছে। সেখানেই বিজেপির অ্যাডভানটেজ।
বিজেপির স্থানীয় নেতাদের মতে, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার প্রভাব পড়বে গোটা জেলার ভোটে। এ ছাড়া রায়গঞ্জে বিজেপি গত কয়েক বছরে নিজেদের ভিত্তি বেশ শক্তপোক্ত করেছে। সিপিআইএমের মো. সেলিম একাই জোরদার প্রচার করছেন। ডিজিটাল প্রচারেও সেলিম সকলকে টেক্কা দিয়েছেন। কিন্তু দলের সাংগঠনিক অবস্থা এখনো বেশ দুর্বল। ফলে গতবারের ভোট ধরে রাখা তার কাছে এক কঠিন লড়াই। অবশ্য সেলিম জানিয়েছেন, বিজেপি বিরোধী ভোট কাটার জন্যই কংগ্রেস এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে। গতবার এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেলেও কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশ মুনসি পুরনো কংগ্রেস ভোটের ওপর ভরসা করছেন। প্রয়াত প্রিয়রঞ্জনের একটা প্রভাব এখনো রায়গঞ্জে রয়েছে বলে কংগ্রেসীরা মনে করেন। আর এর ওপর ভরসা করেই প্রিয়রঞ্জন জায়া দীপা জয়ের আশা করছেন। অবশ্য রায়গঞ্জে প্রায় ৩৬ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। সেই ভোটের দিকে নজর বিজেপি বিরোধী তিন দলেরই। ফলে মেরুকরণের রাজনীতিও রায়গঞ্জে বেশ তীব্র হয়েছে। অবশ্য রায়গঞ্জের মানুষ ভাবছেন, ভোট কতটা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে তা নিয়ে। মানুষ ভোট অবাধে দিতে পারলে কাটাকাটির অঙ্কে অনেক অঘটন ঘটতে পারে।
রায়গঞ্জের মতো অ্যাডভানটেজ অবস্থা না থাকলেও জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে বিজেপির উপস্থিতিই অন্য দলের প্রার্থীদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গতবার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এই কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত বিধানসভা কেন্দ্রগুলোতেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব বেশ। আসলে চা বাগান সমৃদ্ধ এই আসনে এক সময়ে বাম আধিপত্য ছিল প্রবল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে বামদের প্রভাব অনেকটা কমে গেছে। তবুও গতবার এই কেন্দ্রে বাম প্রার্থী ৩৩ শতাংশ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। তবে এবারের প্রার্থী ভগীরথ রায় এলাকায় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হলেও দলের সংগঠন এখনো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেনি। বরং বামদের প্রভাবের বলয়ে ঢুকে পড়েছে বিজেপি।
বিজেপি গত এক বছরে জেলায় দলের প্রভাব অনেকটাই বাড়াতে পেরেছে বলে বিরোধীরাও মেনে নিয়েছেন। ফলে সর্বত্রই লড়াই হচ্ছে বিজেপির সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এবারও প্রার্থী করেছে গতবারের বিজয়ী বিজয়চন্দ্র বর্মনকে। তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপির প্রভাব নেই এমন জায়গগুীর থেকে যথেষ্ট লিড নিতে পারলে জয়ের পথে কোনো বাধা থাকবে না। কংগ্রেসে মণিকুমার ডার্নাল প্রার্থী হয়েছেন দলের হয়ে লড়াইটা টিকিয়ে রাখতে। চা বাগান শ্রমিকদের নেতা মণিকুমার তাকিয়ে রয়েছেন চা বাগানের শ্রমিকদের ভোটের দিকেই। বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায় এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক। তিনি মনে করছেন, মানুষ এবার ভোট দেবে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে। তার অভিমত, মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকেই ভোট দেবেন। ফলে আপাত নিস্তরঙ্গ জলপাইগুড়িতে এবার লড়াইটা বিজেপির সঙ্গে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের।
রায়গঞ্জ ও জলপাইগুড়ির পাশাপাশি দার্জিলিং কেন্দ্রেও বিজেপিই প্রধান শক্তি হিসেবে লড়াই করছে। অবশ্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে বিজেপির এসএস আলুয়ালিয়া এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তবে কেন্দ্রে যখন সংকট চলছিল তখল আলুয়ালিয়া দূরে সরেই ছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল পাহাড়ের মানুষের। ফলে এবার আলুয়ালিয়ার পরিবর্তে বিজেপি প্রার্থী করেছে তরুণ ব্যবসায়ী রাজু সিং বিস্তকে। বিস্তকে প্রার্থী করা নিয়ে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ থাকলেও বিস্তের পেছনে সমর্থন দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং গোষ্ঠী এবং সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। এই দুই দলের সমর্থন পেয়ে বিজেপি বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। অবশ্য দার্জিলিং কেন্দ্রে কংগ্রেস, সিপিআইএম, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি ছাড়াও প্রার্থী রয়েছে জন আন্দোলন পার্টির নেতা হরকা বাহাদুর ছেত্রীও। দুই দশকে এবারই প্রথম দাজিংলিংয়ের নির্বাচনের আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি কোনো দলই ইস্যু করেনি।
এবারের নির্বাচনে জাতিসত্তার ইস্যুটি চাপা পড়ে গেছে। কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার এই এলাকার একটি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী বিধায়ক হলেও দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে কংগ্রেসের তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। এই কেন্দ্রের সমতল এক অংশের ভোটই কংগ্রেস প্রার্থী পাবেন বলে সকলে মনে করছেন। সিপিআইএম প্রার্থী দার্জিলিংয়ের সাবেক সাংসদ আনন্দ পাঠকের পুত্র সমন পাঠক চা বাগানে শ্রমিক ভোটে ভাগ বসাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া সমতলে সিপিআইএমের সংগঠনের জোরেও বেশ ভালো ভোট পাবেন সমন পাঠক। তাই দার্জিলিংয়ে লড়াইটা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অমর সিং রাইয়ের সঙ্গে বিজেপির রাজু সিং বিস্তের। অমর সিং রাই আসলে গোর্খা মুক্তি মোর্চার বিধায়ক ছিলেন। তাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের প্রতীকে প্রার্থী করেছেন। ফলে এ নিয়ে গোর্খাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং গোষ্ঠী অমর সিং রাইকে সমর্থন দিয়েছে। আসলে দিদি কৌশলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে একটি অংশকে নিজের অনুগত হিসেবে পরিচিত করেছেন। কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং গোষ্ঠী বিজেপির পাশে দাঁড়ানোয় গোর্খা ভোট আড়াআড়ি ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত রোববারও গোপন ডেরা থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তার অনুগতদের বিমল গুরুং চুপচাপ বিজেপিতে ছাপ দেবার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জিএনএল এফ দলেরও প্রভাব রয়েছে পাহাড়ে। তাদেরও সমর্থনের ফলে গোর্খাদের একটা বড় অংশের ভোট বিজেপির দিকে আসার সম্ভবাবনাই বেশি। এই সব বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে লড়াই করতে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অমর সিং রাইকে। সার্বিকভাবে দ্বিতীয় দফায় যে তিনটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে তাতে বিজেপিই অ্যাডভানটেজে রয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। তবে অনেকের মতে, ভোট কাটাকুটির অঙ্কে অনেক হিসাব পাল্টে যেতে পারে।
এবারও তিনি নিজের আসন দখলে রাখার লড়াইয়ে অবতীর্ণ। তার বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করা হয়েছে কিছুদিন আগে কংগ্রেস থেকে আসা কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে।
কংগ্রেস অবশ্য দীপা দাশ মুনশির জেদের কাছে হার মেনে এই কেন্দ্রে দীপাকেই মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছে। দীপা আগে দু’বার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেও গতবার পরাজিত হয়েছিলেন। সাবেক সাংসদ দীপার জেদের কারণেই রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা ভেঙে গেছে। দীপা পুরনো জমি খুঁজে পেতে লড়াই করছেন বিজেপির পাশাপাশি সিপিআইএম ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা দেবশ্রী চৌধুরীকে। বহিরাগত বলে বিজেপি প্রার্থী নিয়ে প্রথমে মতান্তর তৈরি হলেও প্রচার যত এগিয়েছে ততই তা কেটে গেছে। সকলেই এখন একাট্টা হয়ে জয়ের লক্ষ্যে প্রচারে ব্যস্ত। রায়গঞ্জে গতবছর একটি স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দুই ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাটিই নির্বাচনে কাঁটা হয়ে উঠেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। নিহত দুই ছাত্রের পরিবার সিবিআই তদন্ত চেয়ে এখনো মৃতদেহের সৎকার করেননি। দিদি মমতা একবারও সেখানে যাননি বলে ক্ষোভও রয়েছে। সেখানেই বিজেপির অ্যাডভানটেজ।
বিজেপির স্থানীয় নেতাদের মতে, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার প্রভাব পড়বে গোটা জেলার ভোটে। এ ছাড়া রায়গঞ্জে বিজেপি গত কয়েক বছরে নিজেদের ভিত্তি বেশ শক্তপোক্ত করেছে। সিপিআইএমের মো. সেলিম একাই জোরদার প্রচার করছেন। ডিজিটাল প্রচারেও সেলিম সকলকে টেক্কা দিয়েছেন। কিন্তু দলের সাংগঠনিক অবস্থা এখনো বেশ দুর্বল। ফলে গতবারের ভোট ধরে রাখা তার কাছে এক কঠিন লড়াই। অবশ্য সেলিম জানিয়েছেন, বিজেপি বিরোধী ভোট কাটার জন্যই কংগ্রেস এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে। গতবার এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেলেও কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশ মুনসি পুরনো কংগ্রেস ভোটের ওপর ভরসা করছেন। প্রয়াত প্রিয়রঞ্জনের একটা প্রভাব এখনো রায়গঞ্জে রয়েছে বলে কংগ্রেসীরা মনে করেন। আর এর ওপর ভরসা করেই প্রিয়রঞ্জন জায়া দীপা জয়ের আশা করছেন। অবশ্য রায়গঞ্জে প্রায় ৩৬ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। সেই ভোটের দিকে নজর বিজেপি বিরোধী তিন দলেরই। ফলে মেরুকরণের রাজনীতিও রায়গঞ্জে বেশ তীব্র হয়েছে। অবশ্য রায়গঞ্জের মানুষ ভাবছেন, ভোট কতটা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে তা নিয়ে। মানুষ ভোট অবাধে দিতে পারলে কাটাকাটির অঙ্কে অনেক অঘটন ঘটতে পারে।
রায়গঞ্জের মতো অ্যাডভানটেজ অবস্থা না থাকলেও জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে বিজেপির উপস্থিতিই অন্য দলের প্রার্থীদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গতবার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এই কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত বিধানসভা কেন্দ্রগুলোতেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব বেশ। আসলে চা বাগান সমৃদ্ধ এই আসনে এক সময়ে বাম আধিপত্য ছিল প্রবল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে বামদের প্রভাব অনেকটা কমে গেছে। তবুও গতবার এই কেন্দ্রে বাম প্রার্থী ৩৩ শতাংশ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। তবে এবারের প্রার্থী ভগীরথ রায় এলাকায় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হলেও দলের সংগঠন এখনো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেনি। বরং বামদের প্রভাবের বলয়ে ঢুকে পড়েছে বিজেপি।
বিজেপি গত এক বছরে জেলায় দলের প্রভাব অনেকটাই বাড়াতে পেরেছে বলে বিরোধীরাও মেনে নিয়েছেন। ফলে সর্বত্রই লড়াই হচ্ছে বিজেপির সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এবারও প্রার্থী করেছে গতবারের বিজয়ী বিজয়চন্দ্র বর্মনকে। তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপির প্রভাব নেই এমন জায়গগুীর থেকে যথেষ্ট লিড নিতে পারলে জয়ের পথে কোনো বাধা থাকবে না। কংগ্রেসে মণিকুমার ডার্নাল প্রার্থী হয়েছেন দলের হয়ে লড়াইটা টিকিয়ে রাখতে। চা বাগান শ্রমিকদের নেতা মণিকুমার তাকিয়ে রয়েছেন চা বাগানের শ্রমিকদের ভোটের দিকেই। বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায় এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক। তিনি মনে করছেন, মানুষ এবার ভোট দেবে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে। তার অভিমত, মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকেই ভোট দেবেন। ফলে আপাত নিস্তরঙ্গ জলপাইগুড়িতে এবার লড়াইটা বিজেপির সঙ্গে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের।
রায়গঞ্জ ও জলপাইগুড়ির পাশাপাশি দার্জিলিং কেন্দ্রেও বিজেপিই প্রধান শক্তি হিসেবে লড়াই করছে। অবশ্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে বিজেপির এসএস আলুয়ালিয়া এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তবে কেন্দ্রে যখন সংকট চলছিল তখল আলুয়ালিয়া দূরে সরেই ছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল পাহাড়ের মানুষের। ফলে এবার আলুয়ালিয়ার পরিবর্তে বিজেপি প্রার্থী করেছে তরুণ ব্যবসায়ী রাজু সিং বিস্তকে। বিস্তকে প্রার্থী করা নিয়ে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ থাকলেও বিস্তের পেছনে সমর্থন দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং গোষ্ঠী এবং সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। এই দুই দলের সমর্থন পেয়ে বিজেপি বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। অবশ্য দার্জিলিং কেন্দ্রে কংগ্রেস, সিপিআইএম, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি ছাড়াও প্রার্থী রয়েছে জন আন্দোলন পার্টির নেতা হরকা বাহাদুর ছেত্রীও। দুই দশকে এবারই প্রথম দাজিংলিংয়ের নির্বাচনের আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি কোনো দলই ইস্যু করেনি।
এবারের নির্বাচনে জাতিসত্তার ইস্যুটি চাপা পড়ে গেছে। কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার এই এলাকার একটি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী বিধায়ক হলেও দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে কংগ্রেসের তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। এই কেন্দ্রের সমতল এক অংশের ভোটই কংগ্রেস প্রার্থী পাবেন বলে সকলে মনে করছেন। সিপিআইএম প্রার্থী দার্জিলিংয়ের সাবেক সাংসদ আনন্দ পাঠকের পুত্র সমন পাঠক চা বাগানে শ্রমিক ভোটে ভাগ বসাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া সমতলে সিপিআইএমের সংগঠনের জোরেও বেশ ভালো ভোট পাবেন সমন পাঠক। তাই দার্জিলিংয়ে লড়াইটা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অমর সিং রাইয়ের সঙ্গে বিজেপির রাজু সিং বিস্তের। অমর সিং রাই আসলে গোর্খা মুক্তি মোর্চার বিধায়ক ছিলেন। তাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের প্রতীকে প্রার্থী করেছেন। ফলে এ নিয়ে গোর্খাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং গোষ্ঠী অমর সিং রাইকে সমর্থন দিয়েছে। আসলে দিদি কৌশলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে একটি অংশকে নিজের অনুগত হিসেবে পরিচিত করেছেন। কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং গোষ্ঠী বিজেপির পাশে দাঁড়ানোয় গোর্খা ভোট আড়াআড়ি ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত রোববারও গোপন ডেরা থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তার অনুগতদের বিমল গুরুং চুপচাপ বিজেপিতে ছাপ দেবার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জিএনএল এফ দলেরও প্রভাব রয়েছে পাহাড়ে। তাদেরও সমর্থনের ফলে গোর্খাদের একটা বড় অংশের ভোট বিজেপির দিকে আসার সম্ভবাবনাই বেশি। এই সব বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে লড়াই করতে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অমর সিং রাইকে। সার্বিকভাবে দ্বিতীয় দফায় যে তিনটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে তাতে বিজেপিই অ্যাডভানটেজে রয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। তবে অনেকের মতে, ভোট কাটাকুটির অঙ্কে অনেক হিসাব পাল্টে যেতে পারে।
No comments