গণধর্ষণের মামলা করে জীবন শঙ্কায় বাদী by জিয়া চৌধুরী
সুবর্ণচরের
চরজব্বর ইউনিয়নের উত্তর বাগ্যা এলাকায় গণধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার এখন
জীবন শঙ্কায় সময় পার করছে। ধর্ষণ মামলার বাদী নির্যাতিতার স্বামী ও তার
মেয়েকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষ। এমনকি তার মেয়েকে এসিডে ঝলসে
দেয়ার কথাও বলছে আসামি পক্ষের লোকেরা। এ অবস্থায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত
পরিবারটি। গত ৩১শে মার্চ ওই গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় করা মামলায়
অভিযুক্ত প্রধান আসামি আবুল কালাম বেচু ওরফে বেচু মাঝি পার পেয়ে যেতে
পারেন বলে শঙ্কা রয়েছে নির্যাতিত পরিবারের। ধর্ষণের ঘটনার সময় তার ব্যবহৃত
মুঠোফোনের অবস্থান ঘিরে এমন ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও
জেলা পুলিশের কয়েকটি সূত্রে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এজন্য তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ কাউকে দিয়ে মামলাটির তদন্ত করারও দাবি উঠেছে।
এদিকে, সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় নির্বাচনের ঠিক দুই দিন পরে সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে দাবি করেছেন তার স্বামী ও মামলার বাদী মো. শাহাজাহান। ঘটনার পরদিন মামলা দায়েরের পর থেকে বাদী, তার পরিবারের সদস্য ও মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য না দিতে ও মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত হুমকি ও চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ধর্ষণের শিকার নারীর কন্যাকেও ঘটনার পর নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এসিডে ঝলসে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে। মামলার কয়েকজন স্বাক্ষী, ঘটনার শিকার নারীর স্বজন ও স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। জীবনের নিরাপত্তায় ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী মো. শাহাজাহান বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
মামলার আসামিদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য ছালা উদ্দিন, আলা উদ্দিন, আবদুল খালেক, আবদুল মতলব, কামাল উদ্দিন, নেছার উদ্দিন, আরিফ, ইলিয়াছ, মিরাজ, মেহরাজ, রেখা বেগম, রোজিনা বেগম ও জামাল উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে ও সাক্ষীদের চাপ দিচ্ছেন। এসব বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাক্ষী ও বাদীর পরিবারের সাথে কথা বলেন। মামলা তুলে নেয়ার হুমকির বিষয়ে সত্যতা পেয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। মো. আবদুল ওয়াদুদ গতকাল মঙ্গলবার রাতে মানবজমিনকে বলেন, সাক্ষীসহ কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। তারা সবসময় বাড়িতে থাকেন। বাদীর পরিবারে মেয়েও রয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে আমি থানাকে বলেছি। এদিকে, চর জব্বর থানার পুলিশ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আট আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের থেকে কোন ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বাদী।
একই সঙ্গে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ১৩ জনের মধ্যে আট জন আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও বাকি অজ্ঞাত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কোন তৎপরতা দেখাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি মানবজমিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মামলার দুই ও চার নম্বর আসামি যথাক্রমে আবুল বাশার ও ইউছুপ মাঝি এই ধর্ষণের ঘটনার আগেও অন্তত আটটি ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে, যেগুলোর বিচার চলমান রয়েছে। নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছর ধরে তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চর জব্বর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। আগের মামলাগুলোর এখনো কোন সুরাহা না হওয়ায় আতঙ্কে আছেন ওইসব মামলার বাদী ও সাক্ষীরাও।
সবশেষ চতুর্থ ধাপে গত ৩১শে মার্চ সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জেরে মো. শাহাজাহানের স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে বাগ্যা এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। তবে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আসামি আবুল কালাম বেচু ওরফে বেচু মাঝির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও তার মোবাইল ফোনের লোকেশন নিয়ে ধাঁধায় পড়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধর্ষণের শিকার নারী, তার স্বামী ও মামলার বাদী এবং ভিকটিমের পরিবার বেচু মাঝির যে মুঠোফোন নম্বর দিয়েছেন ঘটনার সময় সেই মুঠোফোন নম্বরের লোকেশন ঘটনাস্থলে ছিলো না। এমনকি আসামি বেচু মাঝির নামে নিবন্ধন করা সিমটির অবস্থান ধর্ষণের সময় চর জব্বর ইউনিয়নের বাগ্যা এলাকার ঘটনাস্থলে ছিল না বলে মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একাধিক সূত্র। তবে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বেচু মাঝির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও এ বিষয়ে পুলিশকে প্রমাণ করতে কাঠখড় পোহাতে হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের এক ঘণ্টা আগেও বাগ্যা এলাকায় রুহুল আমিনের প্রজেক্টের আশেপাশে বেচু মাঝির ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করা গেছে। কিন্তু ধর্ষণের সময় ও তারপর বেচু মাঝির মুঠোফোনের লোকেশন পাওয়া যায় পাশের জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়। ওই কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের পরে নিজেকে ঘটনায় নির্দোষ প্রমাণ করতে এমন ফাঁদ পাতা হয়ে থাকতে পারে। টেলিভিশনের ক্রাইম পেট্রোল ও অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো থেকে প্রধান অভিযুক্ত এমন পরিকল্পনা করতে পারে। তিনি জানান, ঘটনার আগে একটি মোটরসাইকেলে করে ধর্ষণের শিকার নারীকে ফলো করতে থাকে কয়েকজন আসামি। এ সময় বেচু মাঝির মুঠোফোন মোটরসাইকেলে করে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। নইলে ধর্ষণের আগে বেচু মাঝির মুঠোফোন থেকে তার নামে নিবন্ধিত সিম অন্য সিম লাগিয়ে আসল নম্বরটি লক্ষ্মীপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। মামলার বিচার থেকে নিরাপদে থাকতে বেচু মাঝি এমন কৌশল করতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তার এমন কৌশল মামলার বিচারে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছে কয়েকজন। তবে আদালত সূত্র ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছে, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেচু মিয়ার সংশ্লিষ্টা থাকলেই তাকে সাজা দিতে সমস্যা হবার কথা নয়। তবে, মামলার আরো দুই আসামি আবুল বাশার ও ইউছুপ মাঝির বিরুদ্ধে আরো অন্তত আটটি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও অপহরণের মামলার খোঁজ মিলেছে মানবজমিনের অনুসন্ধানে। ২০১৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৬০৩ নম্বর মামলা, ৬৮৭ নম্বর মামলা, ২০১৪ সালে জিআর ২৪১ নম্বর মামলা, ২০১৫ সালের ৬৫ নম্বর, ২০১৮ সালে ১৮৭ নম্বর মামলাসহ আরো কয়েকটি মামলায় অন্যতম আসামি করা হয় এই দুইজনকে। একই সঙ্গে ২০১৭ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি মামলায় সুবিচার চেয়ে পুলিশ সদর দফতরের ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ও নোয়াখালীর পুলিশ সুপার বরাবরও আবেদন করেন ভিকটিম একটি পরিবার। তবে এসবের কোন কিছুই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তার আগে ২০১৫ সালে জেলা শিশু ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা একটি প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ তুলে ধরেন। যেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কাছেও পাঠান ওই কর্মকর্তা। এদিকে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. ইব্রাহিম খলিল গতকাল রাতে মানবজমিনকে জানান, বাদীর পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে জিডির বিষয়টি আমি নিজেই তদন্ত করছি। তবে এখনো কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাইনি। তবে বাদীর অভিযোগকে আমি পুরোপুরি ভিত্তিহীনও বলছি না। আমরা সচেষ্ট আছি। সব সময় টহল পুলিশ বাদীর পরিবারের নিরাপত্তায় কাজ করছে। আসামিদের এখনো জবানবন্দি নেয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রিমান্ডে নিয়ে তাদের থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কোন তথ্য দিচ্ছে না। আর অজ্ঞাত আরো ৫ আসামিকে এখনো পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি বলেও মানবজমনিকে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এজন্য তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ কাউকে দিয়ে মামলাটির তদন্ত করারও দাবি উঠেছে।
এদিকে, সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় নির্বাচনের ঠিক দুই দিন পরে সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে দাবি করেছেন তার স্বামী ও মামলার বাদী মো. শাহাজাহান। ঘটনার পরদিন মামলা দায়েরের পর থেকে বাদী, তার পরিবারের সদস্য ও মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য না দিতে ও মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত হুমকি ও চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ধর্ষণের শিকার নারীর কন্যাকেও ঘটনার পর নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এসিডে ঝলসে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে। মামলার কয়েকজন স্বাক্ষী, ঘটনার শিকার নারীর স্বজন ও স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। জীবনের নিরাপত্তায় ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী মো. শাহাজাহান বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
মামলার আসামিদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য ছালা উদ্দিন, আলা উদ্দিন, আবদুল খালেক, আবদুল মতলব, কামাল উদ্দিন, নেছার উদ্দিন, আরিফ, ইলিয়াছ, মিরাজ, মেহরাজ, রেখা বেগম, রোজিনা বেগম ও জামাল উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে ও সাক্ষীদের চাপ দিচ্ছেন। এসব বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাক্ষী ও বাদীর পরিবারের সাথে কথা বলেন। মামলা তুলে নেয়ার হুমকির বিষয়ে সত্যতা পেয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। মো. আবদুল ওয়াদুদ গতকাল মঙ্গলবার রাতে মানবজমিনকে বলেন, সাক্ষীসহ কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। তারা সবসময় বাড়িতে থাকেন। বাদীর পরিবারে মেয়েও রয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে আমি থানাকে বলেছি। এদিকে, চর জব্বর থানার পুলিশ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আট আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের থেকে কোন ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বাদী।
একই সঙ্গে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ১৩ জনের মধ্যে আট জন আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও বাকি অজ্ঞাত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কোন তৎপরতা দেখাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি মানবজমিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মামলার দুই ও চার নম্বর আসামি যথাক্রমে আবুল বাশার ও ইউছুপ মাঝি এই ধর্ষণের ঘটনার আগেও অন্তত আটটি ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে, যেগুলোর বিচার চলমান রয়েছে। নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছর ধরে তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চর জব্বর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। আগের মামলাগুলোর এখনো কোন সুরাহা না হওয়ায় আতঙ্কে আছেন ওইসব মামলার বাদী ও সাক্ষীরাও।
সবশেষ চতুর্থ ধাপে গত ৩১শে মার্চ সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জেরে মো. শাহাজাহানের স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে বাগ্যা এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। তবে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আসামি আবুল কালাম বেচু ওরফে বেচু মাঝির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও তার মোবাইল ফোনের লোকেশন নিয়ে ধাঁধায় পড়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধর্ষণের শিকার নারী, তার স্বামী ও মামলার বাদী এবং ভিকটিমের পরিবার বেচু মাঝির যে মুঠোফোন নম্বর দিয়েছেন ঘটনার সময় সেই মুঠোফোন নম্বরের লোকেশন ঘটনাস্থলে ছিলো না। এমনকি আসামি বেচু মাঝির নামে নিবন্ধন করা সিমটির অবস্থান ধর্ষণের সময় চর জব্বর ইউনিয়নের বাগ্যা এলাকার ঘটনাস্থলে ছিল না বলে মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একাধিক সূত্র। তবে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বেচু মাঝির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও এ বিষয়ে পুলিশকে প্রমাণ করতে কাঠখড় পোহাতে হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের এক ঘণ্টা আগেও বাগ্যা এলাকায় রুহুল আমিনের প্রজেক্টের আশেপাশে বেচু মাঝির ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করা গেছে। কিন্তু ধর্ষণের সময় ও তারপর বেচু মাঝির মুঠোফোনের লোকেশন পাওয়া যায় পাশের জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়। ওই কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের পরে নিজেকে ঘটনায় নির্দোষ প্রমাণ করতে এমন ফাঁদ পাতা হয়ে থাকতে পারে। টেলিভিশনের ক্রাইম পেট্রোল ও অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো থেকে প্রধান অভিযুক্ত এমন পরিকল্পনা করতে পারে। তিনি জানান, ঘটনার আগে একটি মোটরসাইকেলে করে ধর্ষণের শিকার নারীকে ফলো করতে থাকে কয়েকজন আসামি। এ সময় বেচু মাঝির মুঠোফোন মোটরসাইকেলে করে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। নইলে ধর্ষণের আগে বেচু মাঝির মুঠোফোন থেকে তার নামে নিবন্ধিত সিম অন্য সিম লাগিয়ে আসল নম্বরটি লক্ষ্মীপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। মামলার বিচার থেকে নিরাপদে থাকতে বেচু মাঝি এমন কৌশল করতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তার এমন কৌশল মামলার বিচারে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছে কয়েকজন। তবে আদালত সূত্র ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছে, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেচু মিয়ার সংশ্লিষ্টা থাকলেই তাকে সাজা দিতে সমস্যা হবার কথা নয়। তবে, মামলার আরো দুই আসামি আবুল বাশার ও ইউছুপ মাঝির বিরুদ্ধে আরো অন্তত আটটি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও অপহরণের মামলার খোঁজ মিলেছে মানবজমিনের অনুসন্ধানে। ২০১৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৬০৩ নম্বর মামলা, ৬৮৭ নম্বর মামলা, ২০১৪ সালে জিআর ২৪১ নম্বর মামলা, ২০১৫ সালের ৬৫ নম্বর, ২০১৮ সালে ১৮৭ নম্বর মামলাসহ আরো কয়েকটি মামলায় অন্যতম আসামি করা হয় এই দুইজনকে। একই সঙ্গে ২০১৭ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি মামলায় সুবিচার চেয়ে পুলিশ সদর দফতরের ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ও নোয়াখালীর পুলিশ সুপার বরাবরও আবেদন করেন ভিকটিম একটি পরিবার। তবে এসবের কোন কিছুই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তার আগে ২০১৫ সালে জেলা শিশু ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা একটি প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ তুলে ধরেন। যেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কাছেও পাঠান ওই কর্মকর্তা। এদিকে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. ইব্রাহিম খলিল গতকাল রাতে মানবজমিনকে জানান, বাদীর পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে জিডির বিষয়টি আমি নিজেই তদন্ত করছি। তবে এখনো কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাইনি। তবে বাদীর অভিযোগকে আমি পুরোপুরি ভিত্তিহীনও বলছি না। আমরা সচেষ্ট আছি। সব সময় টহল পুলিশ বাদীর পরিবারের নিরাপত্তায় কাজ করছে। আসামিদের এখনো জবানবন্দি নেয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রিমান্ডে নিয়ে তাদের থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কোন তথ্য দিচ্ছে না। আর অজ্ঞাত আরো ৫ আসামিকে এখনো পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি বলেও মানবজমনিকে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
No comments