রাঙামাটিতে হাত বাড়ালেই ইয়াবা by আলমগীর মানিক
মায়ানমারে
উৎপাদিত ইয়াবা যার অর্থ পাগলা ট্যাবলেট। মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইনের
মিশ্রণে তৈরি নেশাজাতীয় এই ট্যাবলেট পার্বত্য রাঙামাটি শহরে এখন হাত
বাড়ালেই মিলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অনেকটা অসহায়। কিছুতেই নাগাল পাচ্ছে না
মাদক ব্যবসায়ীদের। বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা ডালে ডালে চললেও
মাদক ব্যবসায়ীরা চলছে পাতায় পাতায়। নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে।
ফলে সব অভিযানে মাদক সনাক্ত বা জব্দ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বলা যায়,
ইয়াবার দুষ্প্রাপ্যতা বাড়লেও কমেনি সরবরাহ।
জেলার অন্যতম কাপ্তাই হ্রদের মধ্যদিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে নিয়ে আসা হচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। এ অবস্থায় ইয়াবার ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর। মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই দুই কর্মকর্তা রাঙামাটিতে মাদকের ব্যবহার বেড়েছে মন্তব্য করেন। এই পরিস্থিতিতে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারেও একমত হন তারা।
সভায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয়ে নতুনভাবে যোগদান করা সহকারী পরিচালক আবদুল হানিফের পরিচয় তুলে ধরার সময় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উভয়েই দৃঢ় কন্ঠে বলেছেন, এতদিন রাঙামাটিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম তেমন একটা দৃশ্যমান ছিলো না। এ অবস্থায় রাঙামাটিতে মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাড়াশি অভিযান পরিচালনার আহবান জানিয়ে ডিসি-এসপি জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে, যাতে করে তাদের সঙ্গে নিয়ে অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করতে পারে।
এক্ষেত্রে কারও কোনো প্রকার তদবিরে কান না দিয়ে নিজেদের অস্থিত্বের জানান দিতে রাঙামাটির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত সহকারী পরিচালক আবদুল হানিফের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রশাসনের এই উর্ধতন দুই কর্মকর্তা।
এদিকে, সরজমিনে শহর ঘুরে এবং জেলার বিভিন্ন সংস্থা ও পুলিশের বিশেষ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দোর্দন্ড প্রতাপের সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া এই মাদক সিন্ডিকেটকে নানাভাবে ব্যাকআপ দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এই ব্যাকআপের জ্বালানী হিসেবে কাজ করছে নেতাদের বাড়তি পাওনা।
মাদকের খুচরা বাজার মধ্যম বয়সী কিছু ‘বড় ভাই’ এতদিন নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে তারা ব্যবহার করছে অল্প বয়সী কিশোরদের। আড়াল থেকে তাদের হাতে যারা মাদক পৌঁছে দিচ্ছে, তারা মূলতঃ বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের খোলস পড়ে নিজেদের নেতৃত্বের আড়ালে নেতাদের বিভ্রান্ত করছে।
মধ্যমসারীর এই নেতাদের রাজনৈতিক কোন উচ্চাভিলাস বা আদর্শ নেই। তাদের একটাই চাহিদা- দলের ছত্রছায়ায় থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া। ইতিমধ্যে সরকারদলের ছাত্রসংগঠনসহ কয়েকটি সংগঠনের কয়েকজন নেতা দামি দামি গাড়ি, সিএনজি অটোরিক্সা-মোটর সাইকেলসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। যেগুলো পরিচালিত হচ্ছে ভিন্নভাবে। এই সকল নেতার বেশি সংখ্যকই শহরের রিজার্ভ বাজার এবং বাকি কয়েকজন তবলছড়ি, বনরূপা ও ভেদভেদী এলাকার বাসিন্দা।
প্রাপ্ত তালিকানুসারে শহরে অন্তত: ৮০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী খুচরা পর্যায়ে প্রত্যক্ষভাবে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ইয়াবা বিক্রির ক্ষেত্রে রাঙামাটি শহরের অন্যতম প্রধান হাট হলো রিজার্ভ বাজার এলাকা। আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী, ডেকোরেশন ব্যবসায়ী, সিএনজি মালিক-চালক, আপেলের দোকানদার, তেলের দোকানদার, ট্রাক ড্রাইভার থেকে কসাই পরিবারের সদস্যও রিজার্ভ বাজার এলাকায় ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
রিজার্ভ বাজার, পৌর ট্রাক টার্মিনাল, উন্নয়ন বোর্ড, পার্ক এলাকা, আবদুল আলী এলাকা, হোটেল সৈকতের পেছনে, চেঙ্গী মুখ, নীচের রাস্তা ও পুলিশ লাইন স্কুল এলাকায় ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্যতম হলো- বেলাল, রোমান, ডেঞ্জু, ইউছুপ, দিদারুল আলম, বাদশা, হুমায়ুন, সোহাগ, সজিব, রাজু, রুবেল ওরফে কবির, পারভেজ, আক্তার, হাবিব, কাদের, মোকতার, কাশেম, রতন, আনোয়ার, নাছির, সাবু, রুবেল, আরজু, ফোরকান, জুয়েল, বাবু ড্রাইভার, সোহেল, রাজু মারমা।
অপরদিকে, শহরের তবলছড়িতে ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ছোট নুরুন্নবী, নুরুল আমিন, মোতালেব ভান্তে, দিপু, সারোয়ার, আনিছ, দোকানদার সম্ভু, উৎপল, রনি, সাদ্দাম, মানিক, মিন্টু, শহিদুল ইসলাম ধনি, রেজা, সুমন, নুনু, সাগর, জনি চাকমা, রুবেল ড্রাইভার, পান্না, নাঈম, ফার্মেসী বাবু, সিএনজি দিদার, পারভেজ, খোকন চাকমা, দুলু, কাউছার, লিটন, বাবা সেলিম, আলমগীর ও আলাউদ্দিন।
এসব ব্যক্তিরা তবলছড়ির পর্যটন এলাকা, কেরানী পাহাড়, সিলেটি পাড়া, বিডিআর রোড, ব্রাক্ষ্মন টিলা, নারিকেল বাগান, মালিপাড়া, মাশরুম এলাকা ও আসামবস্তি এলাকায় সার্বক্ষণিক বিচরণ করে ইয়াবা বিক্রি করছে অবাধে।
এদিকে শহরের বাসটার্মিনাল, কাঁঠালতলী, আলম ডকইয়ার্ড থেকে শুরু করে বনরূপা, কোর্ট বিল্ডিং, পাবলিক হেলথ ও সদর হাসপাতাল এলাকা, কলেজ গেট ও ভেদভেদী পর্যন্ত ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা হলো- আজিজ, সুমন, ছোটন, সজল, মনসুর (সস্ত্রীক), হাশেম (সস্ত্রীক), নুর নাহার, মেজবাহ, বাপ্পী, বাবু, জসিম, রুবেল, সোহেল, রুহুল আমিন, সুজন, আলিফ, শিমূল, আরিফ, জনৈক কালামের ছেলে, সুমন দাশ, ডোম সুজন, শাহীন আলম, বেলাল ও সিওঅফিসের জনৈক ফার্নিচার ব্যবসায়ী।
একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিয়ত ইয়াবা বিক্রির অভিনব কৌশল ব্যবহার করছে সরবরাহকারীরা। তাদেরই একজন ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে হাতে নগদ টাকা গ্রহণ করে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, ‘নারিকেল বাগান এলাকায় নির্দিষ্ট নাম্বারের গাছের গোড়ায় ইয়াবা রাখা আছে, সেগুলো নিয়ে নিন।’
অপরদিকে পুলিশের কয়েকজন অফিসারের তৎপরতার মুখে ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা এখন শহরের রাজপথ ছেড়ে নদীকেই বেছে নিয়েছে নিরাপদ রুট হিসেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নদীতে আনাঘোনা কম থাকাসহ অভিযানের সময় নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে ধোকা দেয়া যায়। এছাড়াও পানিতে ঝাপ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করা যায়। এ কারণেই কাপ্তাই হ্রদকেই বর্তমানে ইয়াবা বিক্রির অন্যতম হাট বানিয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী আকস্মিকভাবেই বোটের মালিক বনে গেছে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা নির্ভর বোট বানিয়ে নদীতে চালাচ্ছে। এ সকল বোটের মাধ্যমে একমাত্র ইয়াবা বিক্রির কাজটিই করে থাকে ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি ট্যাবলেট ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্য নিয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়া হয়।
এদিকে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমরা অনেক সময় রাজনৈতিক তদবিরে অসহায়বোধ করি। কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতার অতিমাত্রার তদবিরে অতিষ্ট হয়ে উঠে আমাদের অফিসাররা। তাই অনেক সময় আমাদের সদিচ্ছা থাকলেও অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পারছেন না।
এদিকে, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহেদুল হক রনি জানিয়েছেন, গত দেড়মাসে কোতয়ালী থানায় ২৩টি মাদকের মামলা রুজু হয়েছে। এতে ২৫ জন আসামী গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও তালিকাভুক্ত অনেকেই বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে প্রতিদিনই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।
কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা জানিয়েছেন, রাঙামাটি শহরে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও নিয়মিত ইয়াবা সেবনসহ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত হয়ে ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে। এদের কারণেই যেকোনো সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে তাদের স্ব-স্ব বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। তাই শর্ষের মধ্যে ভূতগুলো তাড়াতে না পারলে সরকার ঘোষিত ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শ্লোগানটি কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
জেলার অন্যতম কাপ্তাই হ্রদের মধ্যদিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে নিয়ে আসা হচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। এ অবস্থায় ইয়াবার ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর। মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই দুই কর্মকর্তা রাঙামাটিতে মাদকের ব্যবহার বেড়েছে মন্তব্য করেন। এই পরিস্থিতিতে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারেও একমত হন তারা।
সভায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয়ে নতুনভাবে যোগদান করা সহকারী পরিচালক আবদুল হানিফের পরিচয় তুলে ধরার সময় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উভয়েই দৃঢ় কন্ঠে বলেছেন, এতদিন রাঙামাটিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম তেমন একটা দৃশ্যমান ছিলো না। এ অবস্থায় রাঙামাটিতে মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাড়াশি অভিযান পরিচালনার আহবান জানিয়ে ডিসি-এসপি জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে, যাতে করে তাদের সঙ্গে নিয়ে অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করতে পারে।
এক্ষেত্রে কারও কোনো প্রকার তদবিরে কান না দিয়ে নিজেদের অস্থিত্বের জানান দিতে রাঙামাটির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত সহকারী পরিচালক আবদুল হানিফের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রশাসনের এই উর্ধতন দুই কর্মকর্তা।
এদিকে, সরজমিনে শহর ঘুরে এবং জেলার বিভিন্ন সংস্থা ও পুলিশের বিশেষ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দোর্দন্ড প্রতাপের সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া এই মাদক সিন্ডিকেটকে নানাভাবে ব্যাকআপ দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এই ব্যাকআপের জ্বালানী হিসেবে কাজ করছে নেতাদের বাড়তি পাওনা।
মাদকের খুচরা বাজার মধ্যম বয়সী কিছু ‘বড় ভাই’ এতদিন নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে তারা ব্যবহার করছে অল্প বয়সী কিশোরদের। আড়াল থেকে তাদের হাতে যারা মাদক পৌঁছে দিচ্ছে, তারা মূলতঃ বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের খোলস পড়ে নিজেদের নেতৃত্বের আড়ালে নেতাদের বিভ্রান্ত করছে।
মধ্যমসারীর এই নেতাদের রাজনৈতিক কোন উচ্চাভিলাস বা আদর্শ নেই। তাদের একটাই চাহিদা- দলের ছত্রছায়ায় থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া। ইতিমধ্যে সরকারদলের ছাত্রসংগঠনসহ কয়েকটি সংগঠনের কয়েকজন নেতা দামি দামি গাড়ি, সিএনজি অটোরিক্সা-মোটর সাইকেলসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। যেগুলো পরিচালিত হচ্ছে ভিন্নভাবে। এই সকল নেতার বেশি সংখ্যকই শহরের রিজার্ভ বাজার এবং বাকি কয়েকজন তবলছড়ি, বনরূপা ও ভেদভেদী এলাকার বাসিন্দা।
প্রাপ্ত তালিকানুসারে শহরে অন্তত: ৮০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী খুচরা পর্যায়ে প্রত্যক্ষভাবে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ইয়াবা বিক্রির ক্ষেত্রে রাঙামাটি শহরের অন্যতম প্রধান হাট হলো রিজার্ভ বাজার এলাকা। আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী, ডেকোরেশন ব্যবসায়ী, সিএনজি মালিক-চালক, আপেলের দোকানদার, তেলের দোকানদার, ট্রাক ড্রাইভার থেকে কসাই পরিবারের সদস্যও রিজার্ভ বাজার এলাকায় ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
রিজার্ভ বাজার, পৌর ট্রাক টার্মিনাল, উন্নয়ন বোর্ড, পার্ক এলাকা, আবদুল আলী এলাকা, হোটেল সৈকতের পেছনে, চেঙ্গী মুখ, নীচের রাস্তা ও পুলিশ লাইন স্কুল এলাকায় ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্যতম হলো- বেলাল, রোমান, ডেঞ্জু, ইউছুপ, দিদারুল আলম, বাদশা, হুমায়ুন, সোহাগ, সজিব, রাজু, রুবেল ওরফে কবির, পারভেজ, আক্তার, হাবিব, কাদের, মোকতার, কাশেম, রতন, আনোয়ার, নাছির, সাবু, রুবেল, আরজু, ফোরকান, জুয়েল, বাবু ড্রাইভার, সোহেল, রাজু মারমা।
অপরদিকে, শহরের তবলছড়িতে ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ছোট নুরুন্নবী, নুরুল আমিন, মোতালেব ভান্তে, দিপু, সারোয়ার, আনিছ, দোকানদার সম্ভু, উৎপল, রনি, সাদ্দাম, মানিক, মিন্টু, শহিদুল ইসলাম ধনি, রেজা, সুমন, নুনু, সাগর, জনি চাকমা, রুবেল ড্রাইভার, পান্না, নাঈম, ফার্মেসী বাবু, সিএনজি দিদার, পারভেজ, খোকন চাকমা, দুলু, কাউছার, লিটন, বাবা সেলিম, আলমগীর ও আলাউদ্দিন।
এসব ব্যক্তিরা তবলছড়ির পর্যটন এলাকা, কেরানী পাহাড়, সিলেটি পাড়া, বিডিআর রোড, ব্রাক্ষ্মন টিলা, নারিকেল বাগান, মালিপাড়া, মাশরুম এলাকা ও আসামবস্তি এলাকায় সার্বক্ষণিক বিচরণ করে ইয়াবা বিক্রি করছে অবাধে।
এদিকে শহরের বাসটার্মিনাল, কাঁঠালতলী, আলম ডকইয়ার্ড থেকে শুরু করে বনরূপা, কোর্ট বিল্ডিং, পাবলিক হেলথ ও সদর হাসপাতাল এলাকা, কলেজ গেট ও ভেদভেদী পর্যন্ত ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা হলো- আজিজ, সুমন, ছোটন, সজল, মনসুর (সস্ত্রীক), হাশেম (সস্ত্রীক), নুর নাহার, মেজবাহ, বাপ্পী, বাবু, জসিম, রুবেল, সোহেল, রুহুল আমিন, সুজন, আলিফ, শিমূল, আরিফ, জনৈক কালামের ছেলে, সুমন দাশ, ডোম সুজন, শাহীন আলম, বেলাল ও সিওঅফিসের জনৈক ফার্নিচার ব্যবসায়ী।
একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিয়ত ইয়াবা বিক্রির অভিনব কৌশল ব্যবহার করছে সরবরাহকারীরা। তাদেরই একজন ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে হাতে নগদ টাকা গ্রহণ করে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, ‘নারিকেল বাগান এলাকায় নির্দিষ্ট নাম্বারের গাছের গোড়ায় ইয়াবা রাখা আছে, সেগুলো নিয়ে নিন।’
অপরদিকে পুলিশের কয়েকজন অফিসারের তৎপরতার মুখে ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা এখন শহরের রাজপথ ছেড়ে নদীকেই বেছে নিয়েছে নিরাপদ রুট হিসেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নদীতে আনাঘোনা কম থাকাসহ অভিযানের সময় নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে ধোকা দেয়া যায়। এছাড়াও পানিতে ঝাপ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করা যায়। এ কারণেই কাপ্তাই হ্রদকেই বর্তমানে ইয়াবা বিক্রির অন্যতম হাট বানিয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী আকস্মিকভাবেই বোটের মালিক বনে গেছে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা নির্ভর বোট বানিয়ে নদীতে চালাচ্ছে। এ সকল বোটের মাধ্যমে একমাত্র ইয়াবা বিক্রির কাজটিই করে থাকে ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি ট্যাবলেট ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্য নিয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়া হয়।
এদিকে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমরা অনেক সময় রাজনৈতিক তদবিরে অসহায়বোধ করি। কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতার অতিমাত্রার তদবিরে অতিষ্ট হয়ে উঠে আমাদের অফিসাররা। তাই অনেক সময় আমাদের সদিচ্ছা থাকলেও অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পারছেন না।
এদিকে, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহেদুল হক রনি জানিয়েছেন, গত দেড়মাসে কোতয়ালী থানায় ২৩টি মাদকের মামলা রুজু হয়েছে। এতে ২৫ জন আসামী গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও তালিকাভুক্ত অনেকেই বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে প্রতিদিনই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।
কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা জানিয়েছেন, রাঙামাটি শহরে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও নিয়মিত ইয়াবা সেবনসহ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত হয়ে ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে। এদের কারণেই যেকোনো সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে তাদের স্ব-স্ব বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। তাই শর্ষের মধ্যে ভূতগুলো তাড়াতে না পারলে সরকার ঘোষিত ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শ্লোগানটি কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
No comments