চাপের মুখে মধ্যবিত্ত -ওইসিডির প্রতিবেদন
মধ্যবিত্ত শ্রেণিই গণতন্ত্রের ভিত্তি।
মধ্যবিত্তের উপার্জন থমকে গেছে।
পশ্চিমা রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে।
সারা পৃথিবীতেই কিছু মানুষের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংকুচিত হচ্ছে। বাড়ছে অতিধনীর সংখ্যা।
বিশ্বের ৩৬টি ধনী দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্সের হিসাবে, অতিধনীর সংখ্যা বাড়ার হারের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
ওইসিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক পরিসরে মধ্যবিত্তের উপার্জন থমকে গেছে। মূলত অতিধনীদের সম্পদ বাড়ার কারণে তারা চাপে পড়ছে।
‘আন্ডার প্রেশার: দ্য স্কুইজড মিডল ক্লাস’ (চাপের মুখে মধ্যবিত্ত সংকুচিত হচ্ছে) শীর্ষক ওই প্রতিবেদন গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়। এতে ধনী দেশগুলোতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকোচন ও অতিধনীদের উত্থানের চিত্র তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত দেশগুলো থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি একরকম হারিয়ে যাচ্ছে।
ওইসিডি বলছে, যেহেতু মধ্যবিত্ত মানুষেরাই গণতন্ত্রের ভিত্তি, সেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোতে এর রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। রাজনীতিতে যখন জনতুষ্টিবাদের প্রভাব বাড়ছে এবং চরমপন্থা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, তখন ঐতিহ্যগতভাবে এই মধ্যপন্থী মধ্যবিত্তের মনে ‘পিছিয়ে পড়ার’ বোধ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা যেন সমাজের মূল স্রোতোধারার বাইরে চলে যাচ্ছে। এ কারণে তাদের মধ্যে ‘ক্ষমতাকাঠামো’বিরোধী রাজনীতিতে সমর্থন দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
ওইসিডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মধ্যবিত্ত মানুষেরাই সমাজের মূল চলনশক্তি। ব্রিটেনের ৬০ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। ফলে এই সমাজ যদি মনে করতে শুরু করে যে সমৃদ্ধি তাদের অধরা থেকে যাচ্ছে, তাহলে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ওইসিডি আন্তর্জাতিক পরিসরের এক পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক মডেল হাজির করেছে। এতে তারা দেখিয়েছে, অতিধনীদের সম্পদ বাড়লেও মধ্যবিত্তদের আয় বাড়ার হার হতাশাজনক। ক্ষেত্রবিশেষে তারা পিছিয়েও পড়ছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর আয় মধ্যম আয়ের মানুষের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বেশি হারে বেড়েছে।
ওইসিডির হিসাবে, যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মধ্যবিত্ত পরিবার মাস শেষে খরচের হিসাব মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। আর গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর বার্ষিক আয় ১১ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে মধ্যম আয়ের মানুষের আয় গত এক দশকে খুব সামান্যই বেড়েছে।
আবাসন খরচ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের একটা বাড়ি ও উচ্চশিক্ষা হচ্ছে মধ্যবিত্তের স্বপ্ন। কিন্তু এগুলো ধীরে ধীরে ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। সম্পদের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়া তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই অনেক অভিভাবক সন্তানের মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই রেখে যেতে চান। মধ্যবিত্তের আরেকটি চাওয়া হচ্ছে নিরাপদ চাকরি। কিন্তু নিরাপদ/নিশ্চিত চাকরিও যেন সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছে।
ওইসিডির সাধারণ সম্পাদক অ্যাঞ্জেল গুরিয়া বলেন, মধ্যবিত্তের অবস্থা এখন মাঝসমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়া নৌকার যাত্রীদের মতো।
অন্যদিকে ওইসিডি আরেকটি প্রজন্মগত পার্থক্য দেখিয়েছে। তারা বলেছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে তরুণদের সংখ্যা কমেছে। বৈষম্য মানুষকে সম্পদ ও দারিদ্র্যের চূড়ান্ত জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। মাঝামাঝি কিছু থাকছে না। সে কারণে সহস্রাব্দের প্রজন্মের যে তরুণদের বয়স এখন ২০-এর কোটায়, তাঁদের পক্ষে মধ্যবিত্তের কাতারে আসা কঠিন। যেটা তাঁদের আগের বেবি বুমার (যাদের জন্ম ১৯৪৬-৬৪ সালের মধ্যে) প্রজন্মের মানুষের পক্ষে ততটা কঠিন ছিল না।
বাংলাদেশের অবস্থা
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্সের হিসাবে, অতিধনীর সংখ্যা বাড়ার হারের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে দেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি। একই সংস্থার আরেক হিসাবে দেখা যায়, ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
অবশ্য দেশে দরিদ্র মানুষের আয় কমছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময় সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ।
মধ্যবিত্তের উপার্জন থমকে গেছে।
পশ্চিমা রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে।
সারা পৃথিবীতেই কিছু মানুষের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংকুচিত হচ্ছে। বাড়ছে অতিধনীর সংখ্যা।
বিশ্বের ৩৬টি ধনী দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্সের হিসাবে, অতিধনীর সংখ্যা বাড়ার হারের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
ওইসিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক পরিসরে মধ্যবিত্তের উপার্জন থমকে গেছে। মূলত অতিধনীদের সম্পদ বাড়ার কারণে তারা চাপে পড়ছে।
‘আন্ডার প্রেশার: দ্য স্কুইজড মিডল ক্লাস’ (চাপের মুখে মধ্যবিত্ত সংকুচিত হচ্ছে) শীর্ষক ওই প্রতিবেদন গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়। এতে ধনী দেশগুলোতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকোচন ও অতিধনীদের উত্থানের চিত্র তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত দেশগুলো থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি একরকম হারিয়ে যাচ্ছে।
ওইসিডি বলছে, যেহেতু মধ্যবিত্ত মানুষেরাই গণতন্ত্রের ভিত্তি, সেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোতে এর রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। রাজনীতিতে যখন জনতুষ্টিবাদের প্রভাব বাড়ছে এবং চরমপন্থা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, তখন ঐতিহ্যগতভাবে এই মধ্যপন্থী মধ্যবিত্তের মনে ‘পিছিয়ে পড়ার’ বোধ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা যেন সমাজের মূল স্রোতোধারার বাইরে চলে যাচ্ছে। এ কারণে তাদের মধ্যে ‘ক্ষমতাকাঠামো’বিরোধী রাজনীতিতে সমর্থন দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
ওইসিডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মধ্যবিত্ত মানুষেরাই সমাজের মূল চলনশক্তি। ব্রিটেনের ৬০ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। ফলে এই সমাজ যদি মনে করতে শুরু করে যে সমৃদ্ধি তাদের অধরা থেকে যাচ্ছে, তাহলে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ওইসিডি আন্তর্জাতিক পরিসরের এক পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক মডেল হাজির করেছে। এতে তারা দেখিয়েছে, অতিধনীদের সম্পদ বাড়লেও মধ্যবিত্তদের আয় বাড়ার হার হতাশাজনক। ক্ষেত্রবিশেষে তারা পিছিয়েও পড়ছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর আয় মধ্যম আয়ের মানুষের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বেশি হারে বেড়েছে।
ওইসিডির হিসাবে, যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মধ্যবিত্ত পরিবার মাস শেষে খরচের হিসাব মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। আর গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর বার্ষিক আয় ১১ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে মধ্যম আয়ের মানুষের আয় গত এক দশকে খুব সামান্যই বেড়েছে।
আবাসন খরচ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের একটা বাড়ি ও উচ্চশিক্ষা হচ্ছে মধ্যবিত্তের স্বপ্ন। কিন্তু এগুলো ধীরে ধীরে ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। সম্পদের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়া তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই অনেক অভিভাবক সন্তানের মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই রেখে যেতে চান। মধ্যবিত্তের আরেকটি চাওয়া হচ্ছে নিরাপদ চাকরি। কিন্তু নিরাপদ/নিশ্চিত চাকরিও যেন সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছে।
ওইসিডির সাধারণ সম্পাদক অ্যাঞ্জেল গুরিয়া বলেন, মধ্যবিত্তের অবস্থা এখন মাঝসমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়া নৌকার যাত্রীদের মতো।
অন্যদিকে ওইসিডি আরেকটি প্রজন্মগত পার্থক্য দেখিয়েছে। তারা বলেছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে তরুণদের সংখ্যা কমেছে। বৈষম্য মানুষকে সম্পদ ও দারিদ্র্যের চূড়ান্ত জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। মাঝামাঝি কিছু থাকছে না। সে কারণে সহস্রাব্দের প্রজন্মের যে তরুণদের বয়স এখন ২০-এর কোটায়, তাঁদের পক্ষে মধ্যবিত্তের কাতারে আসা কঠিন। যেটা তাঁদের আগের বেবি বুমার (যাদের জন্ম ১৯৪৬-৬৪ সালের মধ্যে) প্রজন্মের মানুষের পক্ষে ততটা কঠিন ছিল না।
বাংলাদেশের অবস্থা
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্সের হিসাবে, অতিধনীর সংখ্যা বাড়ার হারের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে দেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি। একই সংস্থার আরেক হিসাবে দেখা যায়, ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
অবশ্য দেশে দরিদ্র মানুষের আয় কমছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময় সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ।
No comments