নুরুন্নাহার এখন কোথায় যাবে? by মরিয়ম চম্পা
এটা
শুধু একদল নারীর স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প নয়। বরং তাদের নিয়তি আর জীবন কীভাবে
তছনছ হয়ে গেছে এটা সেই গল্প। বর্ণনা করা যায় না, বলা যায় না, লেখা যায় না।
অসহ্য আর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে ফিরছে ওরা। বিমানবন্দরে নেমেই ভেঙে পড়ছে
কান্নায়। কেউবা লজ্জায় মুখ ঢাকছে। কেউবা করছে আত্মহত্যার চেষ্টা। সৌদি ফেরত
নারীদের জীবনের অবর্ণনীয় পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার মরিয়ম চম্পা।
নুরুন্নাহার বেগম। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর ইটাখোলায়। ১০ বছর আগে একই গ্রামের ভ্যানচালক সাগরের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের সংসারে ৭ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ায় বিয়ের কয়েক বছর পর ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান তিনি। ভাগ্য পরিবর্তনের আসায় চলতি বছরের ১০ই এপ্রিল স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেছেন দেশে। বলেন, দেশে ফিরেও ভালো নেই। সমাজ তাকে ভালো চোখে দেখছে না। বাইরে বের হতে পারি না। মানুষ নানা বাজে কথা বলে। এই অবস্থায় কি করবো বুঝতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি সৌদি আরবে নারীকর্মীদের ভিসা বন্ধের দাবিও জানান।
নুরুন্নাহার মানবজমিনকে বলেন, ভালো নেই। খুব অসুস্থ। গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে। জোরে কথা বলতে পারি না। শরীর ব্যথা। পায়ের ঘা এখনো শুকায় নি। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর রাতে ৬৫ জন নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে আমিও দেশে ফিরেছি। সৌদি থেকে কেনো ফেরত এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, এসব বলে আর কি হবে! আমার যা ক্ষতি হওয়ার, তা তো হয়ে গেছে। ৪ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে আমি তৃতীয়। বাবা মোহাম্মদ আলী ফুটপাথে পিঠা বিক্রি করেন। মা আউশি বেগম গার্মেন্টে সুতা কাটার কাজ করেন। আমাদের নিজস্ব ১ ডেসিমেল জায়গাও নেই। বাবা আমাদের নিয়ে সরকারি জমিতে থাকেন। অভাবের সংসারে এলাকার পরিচিত দালালের হাত ধরে বিদেশে পাড়ি জমাই। দালাল মিথ্যা কথা বলে নিয়ে গিয়ে খারাপ মালিকের বাসায় কাজে দেয়। সৌদিতে অন্যান্য গৃহকর্মী নারীদের ভাগ্যে যা ঘটেছে আমার ভাগ্যে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
তিনি বলেন, ১ মাস ১৫ দিন কাজ করার পর মালিক আকামা বানাতে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়। মেডিকেল থেকে বাসায় ফিরে মালিক জানায় আমার শরীরে সমস্যা পাওয়া গেছে। কি সমস্যা সেটা বলেনি। বাসার ম্যাডাম ছিল খুবই খারাপ। সে কথায় কথায় খুন্তি গরম করে ছেঁকা দিতো। তেল গরম করে মাথায় ঢেলে দিতো। গরম পানি করে শরীরে ঢেলে দিতো। এভাবে দুই মাস চলে যায়। এরপর মালিকের কাছে বেতনের টাকা চাই। বলি, দেশে আমার একটা ছোট ছেলে আছে। গরিব মা-বাবা আছে। বেতনের টাকা পাঠালে তারা ভালো মন্দ একটু খেতে পারবে। হঠাৎ একদিন মালিক আমাকে মক্তবে (অফিসে) রেখে আসে।
এরপর মক্তবে শুরু হয় অমানবিক ও ভয়ঙ্কর নির্যাতন। সেখানে সৌদির লোকেরা আমাকে প্রায় দুই মাস বাথরুমে আটকে রাখে। পায়ে তারকাঁটা (লোহার পেরেক) ঢুকিয়ে দেয়। মাথায় ও শরীরে বৈদ্যুতিক শক দেয়। কাঁচামরিচ চিবিয়ে খাওয়ায়। বুট জুতা দিয়ে গলা চেপে ধরে। কেনো এভাবে নির্যাতন করে তার কারণ খুঁজে পেতাম না। আমাকে অত্যাচার করতো আর ওরা উল্লাস করতো। শুধু আমাকেই না মক্তবে আরো বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে এভাবে মারা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের চোখের সামনে সিলেটের বৃষ্টিকে হত্যা করে ফ্রিজে ভরে রেখেছে। যার খবর আমরা অনেকেই জানি না। শত শত বৃষ্টি এভাবে খুন ও জখমের শিকার হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নুরুন্নাহার বলেন, মক্তবে টানা দুই মাস নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ওখান থেকে পালিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশের দূতাবাসে চলে যাই। সেখানে দুই মাসের বেশি সময় ছিলাম। তিনি সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন। বলেন, সেখানে তারাও আমাদের ওপর অত্যাচার করে। এক সময় আমাদের মাহারা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে বসেই আমাদের অত্যাচারের ভিডিও বাংলাদেশে পাঠাই।
নুরুন্নাহার বলেন, দেশে আসার পরে নতুন বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। ঘরের বাইরে বের হতে পারি না। মানুষজন বাজে কথা বলে। স্বামী ভালো হলে আজ আমার এই করুণ পরিণতি হতো না। ছেলেকে মাদরাসায় ভর্তির চেষ্টা করছি। পারবো কি-না জানি না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমাদের দেশ থেকে সৌদিতে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর সকল ভিসা যেনো বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্যথায় শত শত নারীকে তাদের সম্ভ্রম, সম্মান এমনকি নিজের প্রিয় জীবনটাকে হারাতে হবে।
নুরুন্নাহার বেগম। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর ইটাখোলায়। ১০ বছর আগে একই গ্রামের ভ্যানচালক সাগরের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের সংসারে ৭ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ায় বিয়ের কয়েক বছর পর ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান তিনি। ভাগ্য পরিবর্তনের আসায় চলতি বছরের ১০ই এপ্রিল স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেছেন দেশে। বলেন, দেশে ফিরেও ভালো নেই। সমাজ তাকে ভালো চোখে দেখছে না। বাইরে বের হতে পারি না। মানুষ নানা বাজে কথা বলে। এই অবস্থায় কি করবো বুঝতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি সৌদি আরবে নারীকর্মীদের ভিসা বন্ধের দাবিও জানান।
নুরুন্নাহার মানবজমিনকে বলেন, ভালো নেই। খুব অসুস্থ। গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে। জোরে কথা বলতে পারি না। শরীর ব্যথা। পায়ের ঘা এখনো শুকায় নি। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর রাতে ৬৫ জন নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে আমিও দেশে ফিরেছি। সৌদি থেকে কেনো ফেরত এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, এসব বলে আর কি হবে! আমার যা ক্ষতি হওয়ার, তা তো হয়ে গেছে। ৪ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে আমি তৃতীয়। বাবা মোহাম্মদ আলী ফুটপাথে পিঠা বিক্রি করেন। মা আউশি বেগম গার্মেন্টে সুতা কাটার কাজ করেন। আমাদের নিজস্ব ১ ডেসিমেল জায়গাও নেই। বাবা আমাদের নিয়ে সরকারি জমিতে থাকেন। অভাবের সংসারে এলাকার পরিচিত দালালের হাত ধরে বিদেশে পাড়ি জমাই। দালাল মিথ্যা কথা বলে নিয়ে গিয়ে খারাপ মালিকের বাসায় কাজে দেয়। সৌদিতে অন্যান্য গৃহকর্মী নারীদের ভাগ্যে যা ঘটেছে আমার ভাগ্যে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
তিনি বলেন, ১ মাস ১৫ দিন কাজ করার পর মালিক আকামা বানাতে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়। মেডিকেল থেকে বাসায় ফিরে মালিক জানায় আমার শরীরে সমস্যা পাওয়া গেছে। কি সমস্যা সেটা বলেনি। বাসার ম্যাডাম ছিল খুবই খারাপ। সে কথায় কথায় খুন্তি গরম করে ছেঁকা দিতো। তেল গরম করে মাথায় ঢেলে দিতো। গরম পানি করে শরীরে ঢেলে দিতো। এভাবে দুই মাস চলে যায়। এরপর মালিকের কাছে বেতনের টাকা চাই। বলি, দেশে আমার একটা ছোট ছেলে আছে। গরিব মা-বাবা আছে। বেতনের টাকা পাঠালে তারা ভালো মন্দ একটু খেতে পারবে। হঠাৎ একদিন মালিক আমাকে মক্তবে (অফিসে) রেখে আসে।
এরপর মক্তবে শুরু হয় অমানবিক ও ভয়ঙ্কর নির্যাতন। সেখানে সৌদির লোকেরা আমাকে প্রায় দুই মাস বাথরুমে আটকে রাখে। পায়ে তারকাঁটা (লোহার পেরেক) ঢুকিয়ে দেয়। মাথায় ও শরীরে বৈদ্যুতিক শক দেয়। কাঁচামরিচ চিবিয়ে খাওয়ায়। বুট জুতা দিয়ে গলা চেপে ধরে। কেনো এভাবে নির্যাতন করে তার কারণ খুঁজে পেতাম না। আমাকে অত্যাচার করতো আর ওরা উল্লাস করতো। শুধু আমাকেই না মক্তবে আরো বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে এভাবে মারা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের চোখের সামনে সিলেটের বৃষ্টিকে হত্যা করে ফ্রিজে ভরে রেখেছে। যার খবর আমরা অনেকেই জানি না। শত শত বৃষ্টি এভাবে খুন ও জখমের শিকার হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নুরুন্নাহার বলেন, মক্তবে টানা দুই মাস নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ওখান থেকে পালিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশের দূতাবাসে চলে যাই। সেখানে দুই মাসের বেশি সময় ছিলাম। তিনি সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন। বলেন, সেখানে তারাও আমাদের ওপর অত্যাচার করে। এক সময় আমাদের মাহারা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে বসেই আমাদের অত্যাচারের ভিডিও বাংলাদেশে পাঠাই।
নুরুন্নাহার বলেন, দেশে আসার পরে নতুন বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। ঘরের বাইরে বের হতে পারি না। মানুষজন বাজে কথা বলে। স্বামী ভালো হলে আজ আমার এই করুণ পরিণতি হতো না। ছেলেকে মাদরাসায় ভর্তির চেষ্টা করছি। পারবো কি-না জানি না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমাদের দেশ থেকে সৌদিতে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর সকল ভিসা যেনো বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্যথায় শত শত নারীকে তাদের সম্ভ্রম, সম্মান এমনকি নিজের প্রিয় জীবনটাকে হারাতে হবে।
No comments