আমি অসুস্থ ন্যায়বিচার পাবো না যত ইচ্ছা সাজা দিন: হুইল চেয়ারে করে এজলাসে খালেদা ,বাম হাত-পা প্রায় প্যারালাইজড
হুইল
চেয়ারে বসা। পরনে গোলাপি শাড়ি। পায়ে সাদা জুতা। ঊর্ধ্বাঙ্গ থেকে পা
পর্যন্ত সাদা চাদরে ঢাকা। চেহারায় অসুস্থতা আর যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট।
কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন বারবার। দৃশ্যত বাম হাত একেবারেই নাড়াতে পারছিলেন না। এই
অবস্থাতেই গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে
স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজির করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। এ
সময় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার গৃহকর্মী ফাতেমা। আদালতের কার্যক্রম যতক্ষণ চলেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হুইল চেয়ারেই বসেছিলেন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কারাগারে এজলাস স্থাপন করায় খালেদা জিয়ার অসন্তোষও ছিল স্পষ্ট। আইনজীবীদের বক্তব্যের একপর্যায়ে সেই অভিব্যক্তিও প্রকাশ করেন তিনি। অসুস্থতার বিষয়টি তুলে ধরে আদালতের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, আমি এ অবস্থায় বারবার আসতে পারবো না। এই আদালত চলতে পারে না। এই আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না। আদালতের কার্যক্রম শেষে চলে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদেরও তিনি জানান, তিনি খুবই অসুস্থ। বাম হাত দেখিয়ে বলেন, এই হাত নাড়াতে পারেন না। বাম পা বাঁকাতে পারেন না। প্যারালাইজডের মতো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বার বার তিনি আদালতে আসতে পারবেন না।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নতুন এই এজলাসে বিচার কার্যক্রম শুরুর পর খালেদা জিয়াসহ এ মামলার অন্য দুই আসামিকে হাজির করা হলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কেউ আসেননি। ফলে, এ মামলায় অসমাপ্ত যুক্তিতর্কের শুনানিও শুরু করা যায়নি। প্রায় ২৫ মিনিটের মতো আদালতের কার্যক্রম চলার পর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান আগামী ১২ ও ১৩ই সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম এতদিন চলছিল বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিশেষ এজলাসে। তবে, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এখন থেকে এই মামলার বিচারকাজ হবে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত আদালতে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে এই কারাগারের ভেতরে আরেকটি ভবনে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মানবজমিনকে মুঠোফোনে জানান, এই মামলায় আদালত পরিবর্তনের বিষয়ে তাদেরকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। বুধবার শুনানির দিনেও তাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। আদালত থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অবহিত করা না হবে ততক্ষণ তারা কারাগারের ওই আদালতে আসবেন না। এরপর জানা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা অবস্থান করেন বকশীবাজারের ওই আদালতে। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, এ সংক্রান্ত আইন মন্ত্রণালয়ের গেজেট মঙ্গলবারই প্রকাশিত হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীদেরও অবগত করা হয়েছে। মিডিয়াতেও বিষয়টি প্রচার হয়েছে। কিন্তু তারা আসেননি।
নতুন এই আদালতের পরিবেশ
নাজিম উদ্দিন রোডের ওই কারাগারের মূল ফটক পেরিয়ে ডানদিকে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ৭ নম্বর কক্ষে সাজানো হয়েছে অস্থায়ী এই আদালতের এজলাস। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ২০ ফুট এজলাস কক্ষের প্রবেশমুখের ডানদিকের একটি কক্ষকে বিচারকের খাস কামরা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বিচারকের এজলাসের বাঁ পাশে তৈরি করা হয়েছে আসামির কাঠগড়া। গতকাল সেই কাঠগড়ার সামনে খালেদা জিয়ার জন্য রাখা ছিল একটি চেয়ার ও সাদা কাপড়ে মোড়া একটি ছোট টেবিল। উল্টোদিকে সাক্ষীর জন্য রক্ষিত জায়গা। আদালতের এজলাসের ডানপাশে প্রসিকিউশনের বসার ব্যবস্থা এবং এজলাসের সামনের দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা ও ডায়াস রাখা হয়েছে।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা সকাল ১০টার কিছু পরে আদালতকক্ষে এসে হাজির হন। তবে, আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে আসেননি। ঢাকা বারের সভাপতি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে তিনি তার বক্তব্যও পেশ করেন। তিনি আদালতকে জানান, অবজারভার হিসেবে তিনি এই আদালতে এসেছেন। এই মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানকে আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগেই আসামির কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর সোয়া ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে আদালত কক্ষে নিয়ে আসা হয়। এ সময় গোলাম মোস্তফা এগিয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। পরে খালেদা জিয়াকে উদ্ধৃত করে গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বলেছেন, ‘তার অবস্থা খুব ক্ষীণ। শরীর খুব খারাপ। সিনিয়র আইনজীবীরা না এলে তিনি আর আসবেন না।’
একপর্যায়ে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এই মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি ও নতুন এই আদালতের স্থান নির্ধারণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি আদালতকে জানান, এই মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্যেই কয়েকমাস ধরে শুনানি হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের এই স্থানে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করে গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীর কাছেও প্রজ্ঞাপনের কপি পাঠানো হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে খবর প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত নেই।’ একপর্যায়ে শুনানি শুরুর আর্জি জানান দুদকের এই আইনজীবী। এ সময় আদালতের বিচারক বলেন, যেহেতু তারিখ নির্ধারিত ছিল, কিন্তু আইনজীবীরা উপস্থিত হননি। তাদের উপস্থিত হওয়ার জন্য আদালতের কার্যক্রম এক ঘণ্টা মূলতবি করা হচ্ছে।
এ সময় ঢাকা বারের সভাপতি এডভোকেট গোলাম মোস্তফা খান বলেন, প্রজ্ঞাপন রাতে জারি হয়েছে। এর আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অবহিত ছিলেন না। আমরাও টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখেছি। তিনি বলেন, আইনজীবীরা যেহেতু সঠিকভাবে অবহিত হননি সেহেতু তারা হয়তো জানেন-ই না যে এখানে বিচারকাজ হচ্ছে। এ কারণেই তারা বকশীবাজারের আদালতে গেছেন।
বিচারক বলেন, ‘আজকে যে তারিখ এটাতো তারা জানেন।’
গোলাম মোস্তফা বলেন, তারিখ জানলেও গেজেট যে প্রকাশিত হয়েছে এটাতো জানেন না। এ সময় আদালত কক্ষের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তুলে তিনি বলেন, একটি যৌক্তিক সময় দেয়া হোক।
বিচারক বলেন, ‘তারিখ দিতে হলেও তো আইনজীবীদের পিটিশন লাগবে। জামিনের দরখাস্তও দিতে হবে।’
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘৫০ ফুট বাই ২০ ফুটের এই ছোট জায়গার অবস্থাও তেমন ভালো নয়। আইনজীবী, সাংবাদিকদের সবার বসার জায়গা নেই। আমাদের মোবাইল ফোনও বাইরে রেখে আসতে হয়েছে। আমার মনে হয় এমন পরিস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম শুরু করা সমীচীন হবে না।’ এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি শুরুর পক্ষে মত ব্যক্ত করে আবারো বক্তব্য দেন।
একপর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার সিনিয়র আইনজীবীদের কেউ এখানে নেই। আমার শারীরিক অবস্থাও ভালো না। এভাবে এখানে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যেতে পারে। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। এ অবস্থায় আদালত চলতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় বার বার আদালতে আসা সম্ভব না, আপনাদের যা মন চায় যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন। আমি বার বার আসতে পারবো না। এখানে প্রসিকিউশনের ইচ্ছায় সব হয়। এখানে ন্যায় বিচার হবে না।’
একপর্যায়ে আদালতের বিচারক দুদকের আইনজীবীর কিছু বক্তব্য শুনে আদেশে জানান, আগামী ১২ ও ১৩ই সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে এবং খালেদা জিয়াসহ অন্য দুই আসামি ওই সময় পর্যন্ত জামিনে থাকবেন। এ সময় মহানগর দায়রা আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) আবদুুল্লাহ আবু উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দেখতেই পারছেন। ‘এখানে আদালত হওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সাতদিন আগে। কিন্তু গেজেট কালকে (মঙ্গলবার) জারি করা হলো কেন? গেজেটের কপি আমার আইনজীবীরা পায়নি। আদালত বসল, আমার সিনিয়র আইনজীবীরা জানেন না। তাহলে আদালত চলে কীভাবে? এখানে ন্যায় বিচার হবে না।’ নিজের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। বা পা ঠিকমতো বাঁকাতে পারি না, প্যারালাইজডের মতো হয়ে গেছে। বাঁ হাতও নাড়াতে পারি না। আমি খুবই অসুস্থ। আমি এখানে বার বার আসতে পারবো না। এখানে ন্যায়বিচার নেই। যা খুশি তাই করুক।’
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক পুলিশের সাবেক পরিচালক জিয়াউল ইসলাম ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার ঘিরে কড়া নিরাপত্তা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিকে ঘিরে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চকবাজার মোড় থেকে শুরু করে বকশীবাজার মোড় এবং কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নাজিম উদ্দিন রোড পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অবস্থান নেন সেখানে। আশপাশের এলাকায় বন্ধ করে দেয়া হয় সকল ধরনের গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল। মানুষের চলাচলেও আনা হয় নিয়ন্ত্রণ। কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের তল্লাশি করে পুলিশ। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের পেশকার তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে আসামিপক্ষের ৫ জন আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। আসামিপক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক মিলিয়ে সর্বমোট ১২ জন আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। এছাড়া, প্রতিটি গণমাধ্যম থেকে একজন করে সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের মোবাইল ফোন বা রেকর্র্ড করার মতো যন্ত্র নিতে দেয়া হবে না।
খালেদার আইনজীবীদের অভিযোগ
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি অফিসিয়ালি জানানো হয়নি তার আইনজীবীদের। তাই কারাগারের ভেতরে অবস্থিত আদালতে না গিয়ে তারা বকশীবাজার আলীয়া মাদরাসায় স্থাপিত আদালতে যান। কারাগারের ভেতরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আলীয়া মাদরাসা মাঠের আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন। বিএনপির আইন সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বকশীবাজার আলীয়া মাদরাসায় অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতে অবস্থান করছি। কারণ আমরা এখনো জানি আদালত এখানেই বসবে। নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারের আদালত থেকে অবহিত করলে আমরা ওই আদালতে যাবো। এখন পর্যন্ত আমাদের অবহিত করা হয়নি। অন্যদিকে দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আদালত স্থানান্তরের বিষয়টি আমাদের যদি নোটিশ দিয়ে জানানো হয় তাহলে সকলে বসে সিদ্ধান্ত নেবো সেই আদালতে অংশ নেবো কিনা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার জন্য আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা যথারীতি আলীয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে গিয়েছিলাম। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমরা সেখানে অবস্থান করেছি। কিন্তু এই আদালত আলীয়া মাদরাসা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেটা আমাদের নোটিশ দিয়ে অবহিত করা হয়নি। সে কারণে আমাদের আলীয়া মাদরাসা মাঠে যেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে কারাগারের ভেতর আদালত বসানোর বিষয়ে বারণ করা আছে। আদালত বসবে প্রকাশ্যে। যেখানে সাংবাদিকরাসহ সাধারণের প্রবেশাধিকার থাকবে। জেলখানার মধ্যে যে আদালত বসানো হয়েছে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই ধরনের আদালত বসানোর কোনো সুযোগ নেই। সেই কারণে আজ আমরা জেলখানার ভেতরের আদালতে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে কারাগারে থাকে সেটাকে আপনি বলবেন সাবেক কারাগার? যেখানে ২০ হাজার বন্দিকে রাখা হতো সেখানে একজনকে রাখা হয়েছে সলিটারি কনফাইন করে। আর আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন সেটা কারাগার কিনা। কাগজপত্রে কতকিছু থাকতে পারে। এটার প্রতিক্রিয়া নেই কোনো। বাস্তবতা বলছি। এই সরকার খালেদা জিয়াকে মোকাবিলা করতে না পেরে আগামী নির্বাচনে পাস করার জন্য যতো অপকৌশল করেছে। জেলখানার ভেতরে বিচারও সেই অপকৌশলের অংশ।
ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার গৃহকর্মী ফাতেমা। আদালতের কার্যক্রম যতক্ষণ চলেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হুইল চেয়ারেই বসেছিলেন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কারাগারে এজলাস স্থাপন করায় খালেদা জিয়ার অসন্তোষও ছিল স্পষ্ট। আইনজীবীদের বক্তব্যের একপর্যায়ে সেই অভিব্যক্তিও প্রকাশ করেন তিনি। অসুস্থতার বিষয়টি তুলে ধরে আদালতের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, আমি এ অবস্থায় বারবার আসতে পারবো না। এই আদালত চলতে পারে না। এই আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না। আদালতের কার্যক্রম শেষে চলে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদেরও তিনি জানান, তিনি খুবই অসুস্থ। বাম হাত দেখিয়ে বলেন, এই হাত নাড়াতে পারেন না। বাম পা বাঁকাতে পারেন না। প্যারালাইজডের মতো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বার বার তিনি আদালতে আসতে পারবেন না।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নতুন এই এজলাসে বিচার কার্যক্রম শুরুর পর খালেদা জিয়াসহ এ মামলার অন্য দুই আসামিকে হাজির করা হলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কেউ আসেননি। ফলে, এ মামলায় অসমাপ্ত যুক্তিতর্কের শুনানিও শুরু করা যায়নি। প্রায় ২৫ মিনিটের মতো আদালতের কার্যক্রম চলার পর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান আগামী ১২ ও ১৩ই সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম এতদিন চলছিল বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিশেষ এজলাসে। তবে, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এখন থেকে এই মামলার বিচারকাজ হবে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত আদালতে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে এই কারাগারের ভেতরে আরেকটি ভবনে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মানবজমিনকে মুঠোফোনে জানান, এই মামলায় আদালত পরিবর্তনের বিষয়ে তাদেরকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। বুধবার শুনানির দিনেও তাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। আদালত থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অবহিত করা না হবে ততক্ষণ তারা কারাগারের ওই আদালতে আসবেন না। এরপর জানা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা অবস্থান করেন বকশীবাজারের ওই আদালতে। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, এ সংক্রান্ত আইন মন্ত্রণালয়ের গেজেট মঙ্গলবারই প্রকাশিত হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীদেরও অবগত করা হয়েছে। মিডিয়াতেও বিষয়টি প্রচার হয়েছে। কিন্তু তারা আসেননি।
নতুন এই আদালতের পরিবেশ
নাজিম উদ্দিন রোডের ওই কারাগারের মূল ফটক পেরিয়ে ডানদিকে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ৭ নম্বর কক্ষে সাজানো হয়েছে অস্থায়ী এই আদালতের এজলাস। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ২০ ফুট এজলাস কক্ষের প্রবেশমুখের ডানদিকের একটি কক্ষকে বিচারকের খাস কামরা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বিচারকের এজলাসের বাঁ পাশে তৈরি করা হয়েছে আসামির কাঠগড়া। গতকাল সেই কাঠগড়ার সামনে খালেদা জিয়ার জন্য রাখা ছিল একটি চেয়ার ও সাদা কাপড়ে মোড়া একটি ছোট টেবিল। উল্টোদিকে সাক্ষীর জন্য রক্ষিত জায়গা। আদালতের এজলাসের ডানপাশে প্রসিকিউশনের বসার ব্যবস্থা এবং এজলাসের সামনের দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা ও ডায়াস রাখা হয়েছে।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা সকাল ১০টার কিছু পরে আদালতকক্ষে এসে হাজির হন। তবে, আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে আসেননি। ঢাকা বারের সভাপতি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে তিনি তার বক্তব্যও পেশ করেন। তিনি আদালতকে জানান, অবজারভার হিসেবে তিনি এই আদালতে এসেছেন। এই মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানকে আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগেই আসামির কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর সোয়া ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে আদালত কক্ষে নিয়ে আসা হয়। এ সময় গোলাম মোস্তফা এগিয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। পরে খালেদা জিয়াকে উদ্ধৃত করে গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বলেছেন, ‘তার অবস্থা খুব ক্ষীণ। শরীর খুব খারাপ। সিনিয়র আইনজীবীরা না এলে তিনি আর আসবেন না।’
একপর্যায়ে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এই মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি ও নতুন এই আদালতের স্থান নির্ধারণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি আদালতকে জানান, এই মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্যেই কয়েকমাস ধরে শুনানি হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের এই স্থানে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করে গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীর কাছেও প্রজ্ঞাপনের কপি পাঠানো হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে খবর প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত নেই।’ একপর্যায়ে শুনানি শুরুর আর্জি জানান দুদকের এই আইনজীবী। এ সময় আদালতের বিচারক বলেন, যেহেতু তারিখ নির্ধারিত ছিল, কিন্তু আইনজীবীরা উপস্থিত হননি। তাদের উপস্থিত হওয়ার জন্য আদালতের কার্যক্রম এক ঘণ্টা মূলতবি করা হচ্ছে।
এ সময় ঢাকা বারের সভাপতি এডভোকেট গোলাম মোস্তফা খান বলেন, প্রজ্ঞাপন রাতে জারি হয়েছে। এর আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অবহিত ছিলেন না। আমরাও টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখেছি। তিনি বলেন, আইনজীবীরা যেহেতু সঠিকভাবে অবহিত হননি সেহেতু তারা হয়তো জানেন-ই না যে এখানে বিচারকাজ হচ্ছে। এ কারণেই তারা বকশীবাজারের আদালতে গেছেন।
বিচারক বলেন, ‘আজকে যে তারিখ এটাতো তারা জানেন।’
গোলাম মোস্তফা বলেন, তারিখ জানলেও গেজেট যে প্রকাশিত হয়েছে এটাতো জানেন না। এ সময় আদালত কক্ষের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তুলে তিনি বলেন, একটি যৌক্তিক সময় দেয়া হোক।
বিচারক বলেন, ‘তারিখ দিতে হলেও তো আইনজীবীদের পিটিশন লাগবে। জামিনের দরখাস্তও দিতে হবে।’
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘৫০ ফুট বাই ২০ ফুটের এই ছোট জায়গার অবস্থাও তেমন ভালো নয়। আইনজীবী, সাংবাদিকদের সবার বসার জায়গা নেই। আমাদের মোবাইল ফোনও বাইরে রেখে আসতে হয়েছে। আমার মনে হয় এমন পরিস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম শুরু করা সমীচীন হবে না।’ এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি শুরুর পক্ষে মত ব্যক্ত করে আবারো বক্তব্য দেন।
একপর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার সিনিয়র আইনজীবীদের কেউ এখানে নেই। আমার শারীরিক অবস্থাও ভালো না। এভাবে এখানে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যেতে পারে। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। এ অবস্থায় আদালত চলতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় বার বার আদালতে আসা সম্ভব না, আপনাদের যা মন চায় যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন। আমি বার বার আসতে পারবো না। এখানে প্রসিকিউশনের ইচ্ছায় সব হয়। এখানে ন্যায় বিচার হবে না।’
একপর্যায়ে আদালতের বিচারক দুদকের আইনজীবীর কিছু বক্তব্য শুনে আদেশে জানান, আগামী ১২ ও ১৩ই সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে এবং খালেদা জিয়াসহ অন্য দুই আসামি ওই সময় পর্যন্ত জামিনে থাকবেন। এ সময় মহানগর দায়রা আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) আবদুুল্লাহ আবু উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দেখতেই পারছেন। ‘এখানে আদালত হওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সাতদিন আগে। কিন্তু গেজেট কালকে (মঙ্গলবার) জারি করা হলো কেন? গেজেটের কপি আমার আইনজীবীরা পায়নি। আদালত বসল, আমার সিনিয়র আইনজীবীরা জানেন না। তাহলে আদালত চলে কীভাবে? এখানে ন্যায় বিচার হবে না।’ নিজের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। বা পা ঠিকমতো বাঁকাতে পারি না, প্যারালাইজডের মতো হয়ে গেছে। বাঁ হাতও নাড়াতে পারি না। আমি খুবই অসুস্থ। আমি এখানে বার বার আসতে পারবো না। এখানে ন্যায়বিচার নেই। যা খুশি তাই করুক।’
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক পুলিশের সাবেক পরিচালক জিয়াউল ইসলাম ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার ঘিরে কড়া নিরাপত্তা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিকে ঘিরে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চকবাজার মোড় থেকে শুরু করে বকশীবাজার মোড় এবং কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নাজিম উদ্দিন রোড পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অবস্থান নেন সেখানে। আশপাশের এলাকায় বন্ধ করে দেয়া হয় সকল ধরনের গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল। মানুষের চলাচলেও আনা হয় নিয়ন্ত্রণ। কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের তল্লাশি করে পুলিশ। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের পেশকার তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে আসামিপক্ষের ৫ জন আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। আসামিপক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক মিলিয়ে সর্বমোট ১২ জন আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। এছাড়া, প্রতিটি গণমাধ্যম থেকে একজন করে সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের মোবাইল ফোন বা রেকর্র্ড করার মতো যন্ত্র নিতে দেয়া হবে না।
খালেদার আইনজীবীদের অভিযোগ
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি অফিসিয়ালি জানানো হয়নি তার আইনজীবীদের। তাই কারাগারের ভেতরে অবস্থিত আদালতে না গিয়ে তারা বকশীবাজার আলীয়া মাদরাসায় স্থাপিত আদালতে যান। কারাগারের ভেতরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আলীয়া মাদরাসা মাঠের আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন। বিএনপির আইন সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বকশীবাজার আলীয়া মাদরাসায় অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতে অবস্থান করছি। কারণ আমরা এখনো জানি আদালত এখানেই বসবে। নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারের আদালত থেকে অবহিত করলে আমরা ওই আদালতে যাবো। এখন পর্যন্ত আমাদের অবহিত করা হয়নি। অন্যদিকে দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আদালত স্থানান্তরের বিষয়টি আমাদের যদি নোটিশ দিয়ে জানানো হয় তাহলে সকলে বসে সিদ্ধান্ত নেবো সেই আদালতে অংশ নেবো কিনা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার জন্য আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা যথারীতি আলীয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে গিয়েছিলাম। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমরা সেখানে অবস্থান করেছি। কিন্তু এই আদালত আলীয়া মাদরাসা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেটা আমাদের নোটিশ দিয়ে অবহিত করা হয়নি। সে কারণে আমাদের আলীয়া মাদরাসা মাঠে যেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে কারাগারের ভেতর আদালত বসানোর বিষয়ে বারণ করা আছে। আদালত বসবে প্রকাশ্যে। যেখানে সাংবাদিকরাসহ সাধারণের প্রবেশাধিকার থাকবে। জেলখানার মধ্যে যে আদালত বসানো হয়েছে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই ধরনের আদালত বসানোর কোনো সুযোগ নেই। সেই কারণে আজ আমরা জেলখানার ভেতরের আদালতে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে কারাগারে থাকে সেটাকে আপনি বলবেন সাবেক কারাগার? যেখানে ২০ হাজার বন্দিকে রাখা হতো সেখানে একজনকে রাখা হয়েছে সলিটারি কনফাইন করে। আর আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন সেটা কারাগার কিনা। কাগজপত্রে কতকিছু থাকতে পারে। এটার প্রতিক্রিয়া নেই কোনো। বাস্তবতা বলছি। এই সরকার খালেদা জিয়াকে মোকাবিলা করতে না পেরে আগামী নির্বাচনে পাস করার জন্য যতো অপকৌশল করেছে। জেলখানার ভেতরে বিচারও সেই অপকৌশলের অংশ।
No comments