বিউটি, বোন আমার by সাজেদুল হক
সবুজ
ঘাস। নিথর, নিস্তব্ধ দেহ। উৎসুক জনতার ভিড়। যেন বাংলাদেশের মানচিত্রে শুয়ে
থাকা এক কিশোরীর লাশ। ছবিটি এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল কথাটাও অবশ্য
আজকাল ভাইরাল। হঠাৎই কোনো ঘটনা নাড়া দেয় মানুষকে। বিশেষ করে তরুণ
প্রজন্মকে। কয়দিন পর তারা সেটা আবার ভুলেও যায়।
সে যাই হোক। বিউটি নামের মেয়েটির কথায় ফিরে আসি। মেয়েটি বাঁচতে চেয়েছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী বখাটে বাবুলের উৎপীড়নে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। রেহাই মেলেনি তারপরও। গত ২১শে জানুয়ারি বিউটিকে অপহরণ করে বাবুল। আটকে রেখে ধর্ষণ করে টানা। ৯ই ফেব্রুয়ারি মেয়েটি উদ্ধার হয়। থানায় মামলা করতে চেয়েছিলেন বিউটির বাবা। অভিযোগ, থানা মামলা নেয়নি। পরে দ্বারস্থ হন আদালতের। এতে ক্ষুব্ধ হয় বাবুল। হুমকি দেয় ধর্ষিতার পরিবারকে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নানাবাড়ি। কিন্তু এতেও রক্ষা হয় না। সেখান থেকে বাবুল ও তার সহযোগীরা ফের মেয়েটিকে অপহরণ। ১৭ই মার্চ সবুজ মাঠে বিউটির লাশ মেলে। এই পুরো কাহিনী এরইমধ্যে সবার জানা হয়ে গেছে। এটাও জানা যাচ্ছে, বাবুল নামের অমানুষটি আজো ধরা পড়েনি।
এটাও আমাদের একটা রোগ, পতাকা আর মানচিত্রের ওপর দোষ চাপিয়ে আমরা নিজেরা বাঁচতে চাই। এটা অসহায় মানুষের আর্তিও হতে পারে। সাম্য, ন্যায় বিচার আর মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মহান স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন লাখো মানুষ। ৩০ লাখের বেশি মানুষ তাদের জীবনদান করেছেন এই সংগ্রামে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কী তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক মুক্তিই কি কেবল তাদের স্বপ্ন ছিল। সাম্য, ন্যায়বিচার আর মানবিক মর্যাদা আজ কোথায়।
কী নিদারুণ কষ্ট। পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে কী যন্ত্রণা নিয়েই না মেয়েটা চলে গেল। এমন জীবন কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে কি কারো হতে পারে। কী অন্যায় করেছিল মেয়েটি। এই বয়সে সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে গল্পে মত্ত হওয়ার কথা ছিল তার। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দে মেতে থাকার কথা ছিল। অথচ তাকে কি-না ধর্ষণের পর ধর্ষণের শিকার হতে হলো। শিকার হতে হলো হত্যার। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা তার জীবন রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নিতে পারলো না। তার হত্যার পর আজো পর্যন্ত ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করতে পারল না। মিডিয়া যদি লেগে না থাকে এ ঘটনা হারিয়ে যেতেও হয়তো বেশি সময় লাগবে না।
বিউটি, বোন আমার। ওই ওপারে নিশ্চয়ই তুমি ভালো আছো। আর হয়তো অভিশাপ দিচ্ছ এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাসিন্দাদের। দোষ তো এই মানুষেরই। সময় বা স্থানের কোনো দোষ নেই। পবিত্র গ্রন্থেও তাই বলা আছে। আমরা আসলে অভিশাপেরই যোগ্য। শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থাই নয়, এই দেশের নাগরিক সমাজ, কথিত নারীবাদী সমাজ, সর্বোপরি মানুষ আমরা অন্যায়কে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ভোগবাদী এই সমাজে, এই সময়ে অন্য কারো কোনো কিছুতেই আমাদের কিছু যায় আসে না। কালের চাকা ঘুরছে। চারদিকে সংঘটিত হচ্ছে অসংখ্য অন্যায়। আর আমরা বসে বসে দেখছি। কোথাও কোনো প্রতিবাদ নেই, কোথাও কোনো দ্রোহ নেই। এমনকি পরিস্থিতি ওই পর্যায়ে গেছে, নিপীড়িত হয়ে অনেকে থানায় বা আদালতে গিয়ে বিচার চাওয়ারও সাহস রাখছেন না। তারা ফেসবুকে ফরিয়াদ জানাচ্ছেন। কেউ কেউ তাও করতে পারছেন না।
বিউটির গল্প একার নয়। এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এর যেন কোনো প্রতিকার নেই। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি তৈরি করেছে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। শাসন বা শোষণের আইন নয়, আইনের শাসনই কেবল পারে বিউটিদের বাঁচাতে। না হয় সবুজ মাঠে বিউটিদের লাশ পড়তেই থাকবে আর আমরা অভিশাপ বহন করেই চলবো। আগে একবার লিখেছিলাম। বিউটি তোমাকেও লিখি। তুমি আমাদের ক্ষমা করো না, বোন। অভিশাপ দিও।
সে যাই হোক। বিউটি নামের মেয়েটির কথায় ফিরে আসি। মেয়েটি বাঁচতে চেয়েছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী বখাটে বাবুলের উৎপীড়নে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। রেহাই মেলেনি তারপরও। গত ২১শে জানুয়ারি বিউটিকে অপহরণ করে বাবুল। আটকে রেখে ধর্ষণ করে টানা। ৯ই ফেব্রুয়ারি মেয়েটি উদ্ধার হয়। থানায় মামলা করতে চেয়েছিলেন বিউটির বাবা। অভিযোগ, থানা মামলা নেয়নি। পরে দ্বারস্থ হন আদালতের। এতে ক্ষুব্ধ হয় বাবুল। হুমকি দেয় ধর্ষিতার পরিবারকে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নানাবাড়ি। কিন্তু এতেও রক্ষা হয় না। সেখান থেকে বাবুল ও তার সহযোগীরা ফের মেয়েটিকে অপহরণ। ১৭ই মার্চ সবুজ মাঠে বিউটির লাশ মেলে। এই পুরো কাহিনী এরইমধ্যে সবার জানা হয়ে গেছে। এটাও জানা যাচ্ছে, বাবুল নামের অমানুষটি আজো ধরা পড়েনি।
এটাও আমাদের একটা রোগ, পতাকা আর মানচিত্রের ওপর দোষ চাপিয়ে আমরা নিজেরা বাঁচতে চাই। এটা অসহায় মানুষের আর্তিও হতে পারে। সাম্য, ন্যায় বিচার আর মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মহান স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন লাখো মানুষ। ৩০ লাখের বেশি মানুষ তাদের জীবনদান করেছেন এই সংগ্রামে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কী তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক মুক্তিই কি কেবল তাদের স্বপ্ন ছিল। সাম্য, ন্যায়বিচার আর মানবিক মর্যাদা আজ কোথায়।
কী নিদারুণ কষ্ট। পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে কী যন্ত্রণা নিয়েই না মেয়েটা চলে গেল। এমন জীবন কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে কি কারো হতে পারে। কী অন্যায় করেছিল মেয়েটি। এই বয়সে সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে গল্পে মত্ত হওয়ার কথা ছিল তার। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দে মেতে থাকার কথা ছিল। অথচ তাকে কি-না ধর্ষণের পর ধর্ষণের শিকার হতে হলো। শিকার হতে হলো হত্যার। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা তার জীবন রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নিতে পারলো না। তার হত্যার পর আজো পর্যন্ত ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করতে পারল না। মিডিয়া যদি লেগে না থাকে এ ঘটনা হারিয়ে যেতেও হয়তো বেশি সময় লাগবে না।
বিউটি, বোন আমার। ওই ওপারে নিশ্চয়ই তুমি ভালো আছো। আর হয়তো অভিশাপ দিচ্ছ এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাসিন্দাদের। দোষ তো এই মানুষেরই। সময় বা স্থানের কোনো দোষ নেই। পবিত্র গ্রন্থেও তাই বলা আছে। আমরা আসলে অভিশাপেরই যোগ্য। শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থাই নয়, এই দেশের নাগরিক সমাজ, কথিত নারীবাদী সমাজ, সর্বোপরি মানুষ আমরা অন্যায়কে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ভোগবাদী এই সমাজে, এই সময়ে অন্য কারো কোনো কিছুতেই আমাদের কিছু যায় আসে না। কালের চাকা ঘুরছে। চারদিকে সংঘটিত হচ্ছে অসংখ্য অন্যায়। আর আমরা বসে বসে দেখছি। কোথাও কোনো প্রতিবাদ নেই, কোথাও কোনো দ্রোহ নেই। এমনকি পরিস্থিতি ওই পর্যায়ে গেছে, নিপীড়িত হয়ে অনেকে থানায় বা আদালতে গিয়ে বিচার চাওয়ারও সাহস রাখছেন না। তারা ফেসবুকে ফরিয়াদ জানাচ্ছেন। কেউ কেউ তাও করতে পারছেন না।
বিউটির গল্প একার নয়। এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এর যেন কোনো প্রতিকার নেই। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি তৈরি করেছে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। শাসন বা শোষণের আইন নয়, আইনের শাসনই কেবল পারে বিউটিদের বাঁচাতে। না হয় সবুজ মাঠে বিউটিদের লাশ পড়তেই থাকবে আর আমরা অভিশাপ বহন করেই চলবো। আগে একবার লিখেছিলাম। বিউটি তোমাকেও লিখি। তুমি আমাদের ক্ষমা করো না, বোন। অভিশাপ দিও।
No comments