বাঘের সঙ্গে লড়াই করে ফেরা আতিয়ারের আর্তনাদ by জাহিদ সুমন
যন্ত্রণা
নিয়ে বেঁচে আছি। দুই হাতে, দুই কাঁধে, মুখে, পেটে, ঘাড়ে ও মাথায় বাঘের
কামড়ের ক্ষত। গুনে গুনে ঘাড় ও মাথা যন্ত্রণা করে। মাঝে মাঝে শরীর অবশ হয়ে
যায়। এক চোখে কম দেখি, চোখের পলক পড়ে না। কষ্টের কাজ করতে পারি না। জীবনের
করুণ আর্তনাদের কাহিনী এভাবে বর্ণনা করেন শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সেন্ট্রাল কালিনগর গ্রামের বাঘ আক্রমণে পঙ্গু আতিয়ার
মল্লিক (৬২)। আতিয়ার মল্লিকের ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। বর্তমানে পরিবারের সদস্য
সংখ্যা ৬ জন। নিজের কোনো জমি জায়গা নেই। পিতার আড়াই কাঠা ভিটা। পিতার ভিটায়
তার দুই ভাই বসবাস করে। আতিয়ার মল্লিক অন্যের জমিতে মাটির ঘর বেঁধে বসবাস
করছে। ছোট বেলা থেকে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতো। বিয়ের পরে ঠিকমত সংসার চলতো
না। তখন সে পশ্চিম সুন্দরবনের নদী ও খালে বাগদা চিংড়ি পোনা (রেনু) ধরার কাজ
শুরু করেন। সুন্দরবনের মালঞ্চ, কলাগাছি, দোবেকী, হরি, পশুর ও বিবির খালে
রেনু ধরে যে টাকা আয় করতো তাতে তার সংসার সুখে চলছিল। আতিয়ার মল্লিক
বলেন,“২০০৭ সালের বৈশাখ মাসের ১৪ তারিখে দুপুরের দিকে লেবুনিয়া খালে জাল
টানা শুরু করি। দলে আমরা ৩ জন ছিলাম। ২ জন এক দিকে এবং আমি একা একদিক থেকে
জাল টেনে রেনু ধরতে থাকি। হঠাৎ ওই ২ জন এসে বলে আজ কেন জানি মন ভালো লাগছে
না। আজ আর রেনু ধরতে হবে না। আমি বাধা দেয়। এরপর আমি এক দেড় হাজার রেনু
ধরি। সেগুলো একজনকে বেছে নিতে বলি এবং আরেক জনকে নিয়ে আমি আবারও নদীর ধার
দিয়ে রেনু ধরার জন্য জাল টানা শুরু করি। কিছু দূর জাল টেনে চলে যাই। হঠাৎ
বনের একটি পশুর গাছের আবডাল (আড়াল) থেকে বাঘ আমার কানে থাবা (চড়) মেরে ফেলে
দেয় এবং পানিতে চেপে ধরে। বাঘের ২ পা মাটিতে এবং ২ পা দিয়ে আমাকে চেপে
ধরে। কামড় দিয়ে আমার ঘাড়ের হাড় ক্ষত করে দেয়। আমার শরীরে রক্ত ভেসে যেতে
থাকে। আমার সঙ্গে যে ছিল সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আমি বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে
থাকি। বাঘের গলা চেপে ধরি। দেখতে থাকি আমাকে কেউ বাঁচাতে আসছে কিনা। বাঘ
আমাকে উপরে তোলার চেষ্টা করতে থাকে। আমি ভাবি যদি একবার আমাকে উপরে তুলতে
পারে তাহলে আমাকে খেয়ে ফেলবে। আমি বাঘের মুখের ভেতর আমার বাম হাত ঢুকিয়ে
দেই। এক পর্যায়ে বাঘ আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুদূর গিয়ে বসে থাকে। আমি তখন
অজ্ঞান প্রায়। আল্লাহর রহমত তখন ৪ জনের একটি নৌকা আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার
সময় আমাকে দেখতে পায়। তারা এসে তখন বাঘকে পেটাতে থাকে, এক পর্যায়ে তখন বাঘ
বনের মধ্যে চলে যায় এবং আমাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসে। এক দেড় বছর সুশীল
নামের এক কবিরাজ আমাকে চিকিৎসা করে। আমি ৬ মাস কথা বলতে পারিনি, বুঝতে
পারিনি, কাউকে চিনতেও পারিনি। সারাক্ষণ শরীরে জ্বালা যন্ত্রণা হতো। কিছু
খেতে পারতাম না। আস্তে আস্তে আমি স্বাভাবিক হতে থাকি। আমার জীবনের সব শেষ
হয়ে গেছে। এখন কোনো কাজ করতে গেলে কষ্ট হয়। প্রতিদিন ব্যথা ও যন্ত্রণার
ওষুধ খেতে হয়। পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে আছি। মাঝে ১টি ভ্যান জোগাড় করে
চালাতাম। কিছু আয় করতাম। কিন্তু ভ্যানটি ভেঙে যাওয়ায় আমি বেকার বসে আছি।
আতিয়ার মল্লিক আরো জানান, ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছি। ২ বছর এই চাল পাবো। ভাতের ব্যবস্থা সরকার করেছে ঠিকই কিন্তু ওষুধ কিনতে পারছি না। নিজের স্ত্রী ও ছোট ছেলে শ্রমিকের কাজ করে। ১ বেলা ওষুধ খেতে পারি তো অন্য বেলা পারি না। আতিয়ার মল্লিকের আবেদন কেউ যদি তাকে একটি ভ্যান সহযোগিতা করতো তাহলে ঠিকমত ওষুধ খেয়ে শরীরের ব্যথা/যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতাম। কিছু আয় করতে পারলে পরিবারের অবহেলা থেকে মুক্তিও পেতাম। নিজে আয় করতে না পারলে আপন জনও ভালো চোখে দেখে না।
আতিয়ার মল্লিক আক্ষেপ করে বলেন,“সিএসআরএল ও প্রগতি এনজিও আমাকে নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান করেছে। জলবায়ু মেলায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও ঢাকায় নিয়ে গেছে কিন্তু আমার কোনো উপকার হয়নি।
আতিয়ার মল্লিক আরো জানান, ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছি। ২ বছর এই চাল পাবো। ভাতের ব্যবস্থা সরকার করেছে ঠিকই কিন্তু ওষুধ কিনতে পারছি না। নিজের স্ত্রী ও ছোট ছেলে শ্রমিকের কাজ করে। ১ বেলা ওষুধ খেতে পারি তো অন্য বেলা পারি না। আতিয়ার মল্লিকের আবেদন কেউ যদি তাকে একটি ভ্যান সহযোগিতা করতো তাহলে ঠিকমত ওষুধ খেয়ে শরীরের ব্যথা/যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতাম। কিছু আয় করতে পারলে পরিবারের অবহেলা থেকে মুক্তিও পেতাম। নিজে আয় করতে না পারলে আপন জনও ভালো চোখে দেখে না।
আতিয়ার মল্লিক আক্ষেপ করে বলেন,“সিএসআরএল ও প্রগতি এনজিও আমাকে নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান করেছে। জলবায়ু মেলায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও ঢাকায় নিয়ে গেছে কিন্তু আমার কোনো উপকার হয়নি।
No comments