এফটিএ করতে রাজি বাংলাদেশ ও ভুটান
মুক্ত
বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী বাংলাদেশ ও ভুটান। এফটিএ হলে দুই
দেশের মধ্যে সব ধরনের পণ্য ও সেবা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা যাবে। এ
ছাড়া স্থলপথে ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি
স্থলবন্দর খুলে দেওয়া হচ্ছে। গত ২১ ও ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত উভয়
দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের সভায় উভয় পক্ষ এফটিএ করার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে
একমত হয়। দুই দিনের ওই সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যসচিব
শুভাশীষ বসু। ভুটানের নেতৃত্ব দেন দেশটির অর্থনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক
মন্ত্রণালয়ের সচিব দাসো ইয়েশি ওয়াংদি। ভুটান বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে
১৯টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পায়। বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের সভায় ভুটানের
পক্ষ থেকে চুনাপাথর, বোল্ডারসহ আরও ১৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা
দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভুটান বিশ্ব
বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য নয়। ডব্লিউটিওর চেতনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ
ওই সংস্থাটির সদস্য নয়—এমন কোনো দেশকে পুরোপুরি শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে
পারে না। তাই দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে এফটিএ করাটাই দুই দেশের জন্য লাভজনক।
বাংলাদেশের এমন প্রস্তাবে ভুটানের প্রতিনিধিরা মত দেন।
তাঁরা জানান, দুই
দেশের মধ্যে এফটিএর বিষয়ে ভুটান একটি পর্যালোচনা সমীক্ষা করছে। এফটিএ কিংবা
অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট)
সম্পর্কে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশকে জানানো হবে।
কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই সভায় অংশ
নেওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে
বলেন, এফটিএ হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য
সম্প্রসারিত হবে। শিগগিরই এফটিএ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হবে। তিনি
মনে করেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও ওষুধের নতুন বাজার হতে পারে ভুটান। এই
দুই দেশের বাণিজ্য এখনো ব্যাপকভাবে ভুটানের অনুকূলে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে
ভুটান থেকে ৩ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে
অন্যতম হলো কমলা, দারুচিনি ও পাথর। গত অর্থবছরে ভুটান থেকে প্রায় ১ কোটি
ডলারের কমলা এবং ৯১ লাখ ডলারের দারুচিনি আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ
থেকে গত অর্থবছরে ভুটানে রপ্তানি হয় ৩২ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে ৬ লাখ
ডলারের পাউরুটি, বিস্কুট ও কেক আছে। ভুটানের সঙ্গে এফটিএ হলে তা হবে কোনো
দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম এফটিএ। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে
এফটিএ আলোচনা হলেও কোনোটিই সম্ভব হয়নি। যেসব দেশের সঙ্গে এফটিএ আলোচনা
চলছে, এর মধ্যে অন্যতম হলো শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, তুরস্ক। গত বছরের এপ্রিল
মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরকালে ট্রানজিট বিষয়ে সমঝোতা
স্মারক হয়। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী ভুটান। গত নভেম্বর
মাসে দুই দেশের যৌথ কার্যদলের সভায় এটি নিয়ে আলোচনা হয়। এবারের বাণিজ্যসচিব
পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ট্রানজিটের চুক্তি ও প্রটোকল চূড়ান্ত
করার তাগিদ দেওয়া হয়। তবে ভুটানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ট্রানজিটের বিষয়টি
নিয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই ওই কমিটি প্রতিবেদন দেবে,
এরপর ভুটান ট্রানজিট আলোচনা শুরু করবে। অন্যদিকে তামাবিল, বাংলাবান্ধা ও
নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে ভুটান। বর্তমানে বুড়িমারী,
বাংলাবান্ধা ও তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে আমদানি–রপ্তানির
অনুমোদন আছে। শুধু বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়েই পণ্য আনা–নেওয়া হয়। অন্য দুটি
স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় না। বাংলাদেশ বলেছে, এসব বন্দরের
অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভুটান চাইলে ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া
দুই দেশের মধ্যে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে
বাংলাদেশ। ভুটানের প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, দ্বৈত কর পরিহার চুক্তিটি
বাস্তবায়নের জন্য ভুটানের সংসদের উচ্চকক্ষ এখনো অনুমোদন দেয়নি।
No comments