প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ‘আইনসম্মত প্রয়োগ’
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আদালতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ‘আইনসম্মত প্রয়োগের’ পক্ষে যুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতাবলে জারি করা বিতর্কিত ওই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালতে গতকাল মঙ্গলবারই (বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে) শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের যুক্তি দিয়ে হোয়াইট হাউস গত সোমবার ওই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে আদালতের প্রতি আবেদন জানায়। এর তিন দিন আগে ওয়াশিংটনের সিয়াটলের ফেডারেল আদালতের একজন বিচারক প্রথম স্থগিতাদেশ দিয়ে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আটকে দেন। আলোচিত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ লাগবে বলে মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের ওপর দেশব্যাপী আরোপিত স্থগিতাদেশকে ‘অতিমাত্রায় অসহযোগিতা’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগের আইনজীবীরা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। নতুন দুটি জনমত জরিপের ফল বলছে, বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিক শরণার্থী এবং মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের মানুষের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরোধী। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নিন্দা শুরু হয়। তবে ট্রাম্প নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তিনি টুইটারে সোমবার লিখেছেন, ‘কট্টর ইসলামি সন্ত্রাসের হুমকি খুবই সত্যি, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলির দিকে তাকান। আদালতকে অবশ্যই দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে!’ ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সব ধরনের শরণার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ১২০ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে পড়েছিল। পাশাপাশি ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ ৯০ দিনের জন্য আটকে যায়।
সমালোচকেরা বলছেন, এ রকম নিষেধাজ্ঞায় অর্থনীতিসহ মার্কিন স্বার্থেরই ক্ষতি হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তি, বিদেশি সন্ত্রাসীদের হুমকি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাঁচাতে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। এ বিষয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার উদাহরণ দেন। যদিও ওই ঘটনায় নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়টি দেশের কোনোটিরই সম্পর্ক ছিল না। সিয়াটলের আদালত গত শুক্রবার ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর বহু মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ভিসাধারী ব্যক্তিরা ওই সাত দেশের নাগরিক হলেও যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতে পারবেন। তাঁদের কাগজপত্র ঠিক থাকলেই চলবে। ফেডারেল আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন আপিল করেছিল। কিন্তু আপিল আদালত তা গত রোববার খারিজ করে দিয়েছেন। ওয়াশিংটন ও মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরাও ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সাময়িক স্থগিতাদেশের আবেদন করে সফল হয়েছেন। পরে আরও ১৬টি অঙ্গরাজ্য এতে যোগ দিয়েছে। বেশ কয়েকটি আইনি ও অধিকার সংগঠন ওই অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
No comments