আলেপ্পোতে পুতিনেরই জয় হলো?
বাশার আল-আসাদের হাতকে শক্তিশালী করতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছর সিরিয়ায় যখন ক্রেমলিনের সমরাভিযানের সূচনা করেন, তখন বাশার ছিলেন চরম কোণঠাসা। আইএস, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহী, কুর্দি বাহিনী—এ রকমের বিভিন্ন শক্তি চারদিক থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের ঘিরে ফেলছিল। বাশারের পতন আসন্ন মনে করে পশ্চিমা শক্তিগুলো সিরিয়ার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, নতুন সরকারে কোন পক্ষের কতটুকু অংশীদারি সে ভাগ-বাঁটোয়ারাও প্রায় ঠিকঠাক করে ফেলেছিল। কিন্তু বাশারবিরোধীদের আশার আগুনে জল ঢেলে দৃশ্যপটে হাজির হন পুতিন। তাঁর নির্দেশে লাগাতার বিমান হামলা চলতে থাকায় একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে বিদ্রোহীরা। এখন বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি পূর্ব আলেপ্পোর পতনের আনন্দ উদ্যাপন করছে দামেস্ক। পাঁচ বছর আগে এই এলাকার দখল নেওয়া বাশারবিরোধীরা প্রাণ বাঁচানোর জন্য মরিয়া। আলেপ্পো পুনর্দখলের এই বিষয়টিকে বাশার আল-আসাদ গৃহযুদ্ধ অবসানের একটি ‘বৃহৎ পর্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, প্রকৃত অর্থে এই জয় যতখানি না বাশারের, তার চেয়ে অনেক বেশি পুতিনের। মস্কোর কার্নেগির সেন্টারের বিশ্লেষক আলেক্সি মালাশেঙ্কো বলেন, ‘রাশিয়ার সহায়তা ছাড়া আলেপ্পোতে কোনো অগ্রগতি অর্জন সম্ভব ছিল না। আলেপ্পোর ওপরই সব পক্ষের দৃষ্টি ছিল।’ মস্কো বরাবরই বলে এসেছে তারা সেখানে পদাতিক সেনা পাঠায়নি। তবে প্রেসিডেন্ট বাশারের অনুগত পদাতিক বাহিনীকে তারা সামরিক পরামর্শ ও বিমান অভিযানে সহায়তা দিয়েছে। তবে মালাশেঙ্কো মনে করেন, বাশার বাহিনীকে রাশিয়া পরামর্শের চেয়েও বেশি কিছু দিয়েছে।
বিশেষত, আলেপ্পোতে একজন রুশ ট্যাংক কমান্ডারের নিহত হওয়ার খবর সে রকমই আভাস দেয়। এই বিশ্লেষক মনে করেন, আলেপ্পোতে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি বাশার আল-আসাদকে এ বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত করতে পেরেছিল যে সেখানে পশ্চিমা বাহিনীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতি থাকবে না। রাশিয়া পর্যায়ক্রমে সেখানে বিমান হামলা তীব্র করেছে এবং সর্বশেষ সেখানে একটি রণতরীও পাঠিয়েছে। পুতিনের এই আলেপ্পো অভিযান তাঁর ১৯৯৯-২০০০ সালের চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে চালানো রক্তক্ষয়ী অভিযানের কথা মনে করিয়ে দেয়। আলেপ্পো জয়কে রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের জন্য এক বড় জয় বলে মনে করতেই পারে। ওয়াশিংটন ও অন্য পশ্চিমাদের সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীদের পরাজিত করার মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করায় মস্কোর সঙ্গে যে পশ্চিমাদের সম্পর্কের অবনতি হবে, তা নিশ্চিত। কিন্তু এর বিপরীতে পুতিন পেয়েছেনও অনেক। এ মুহূর্তে তিনি সিরিয়ার একচ্ছত্র ‘কিং মেকার’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির মাঠেও তিনি অন্যতম খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। আলেপ্পো নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে তিনি পাশ কাটিয়ে গেছেন। এ কারণে পশ্চিমারা পুতিনের ওপর প্রথম থেকেই নাখোশ। রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞ আলেকসান্দার গোল্টস বলেছেন, রাশিয়ার সিরিয়া অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হলো পশ্চিমাদের পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য করা। তিনি মনে করেন, আলেপ্পো জয়ের ফলস্বরূপ রাশিয়া এখন সিরিয়া ইস্যুতে পশ্চিমাদের থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থা সামাল দেওয়াই এখন পুতিনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
No comments