সংরক্ষিত বন ঘোষণার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন
টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনের একটা বড় অংশকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করায় ওই প্রাকৃতিক বনের অধিবাসীদের মনে উচ্ছেদ–আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগ মধুপুর বনের অরণখোলা মৌজার ৯১৪৫ দশমিক ৭ একর জমি সংরক্ষিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ১৯২৭ সালের বন আইনের ৩ থেকে ২০ ধারায় কোনো বন সংরক্ষিত ঘোষণা করতে হলে তার কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণের বিধান আছে। প্রথমে ফরেস্ট সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা নোটিশ জারি করবেন। তারপর সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীগুলোর মানুষের মতামত শুনতে হবে, তাঁদের আপত্তি থাকলে, তার নিষ্পত্তি করতে হবে। সবশেষে স্থানীয় ভাষায় মাইকিং করে বা ঢেরা পিটিয়ে জানাতে হবে যে সরকার বনের কিছু অংশকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু মধুপুরের শালবন এলাকায় এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
ফলে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে এই খবর পৌঁছেছে আকস্মিক এক বিপদ হিসেবে। বনের সংরক্ষিত ঘোষণা করা অংশটিতে প্রায় ছয় হাজার গারো নৃগোষ্ঠীর মানুষের বাস, আরও আছে কোচ নৃগোষ্ঠী এবং কিছু বাঙালি পরিবার। বাড়িঘর, আবাদি জমি মিলিয়ে ২ হাজার ৭৫ একর জমি গারো ও কোচরা ভোগ করছেন বহুদিন ধরে। এখন তাঁরা কোথায় যাবেন? কী হবে তাঁদের বাসস্থানের, জমি হারানোর পর তাঁদের জীবিকার উৎস হবে কী? সাধারণত প্রাকৃতিক বনকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় তাকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। সংরক্ষিত ঘোষিত বনে আইনত জনবসতি থাকতে পারে না। কিন্তু মধুপুরের শালবনে গারো নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা বাস করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। তাঁরা ওই বনেরই অংশ। এখন সেখান থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। ওই প্রাকৃতিক বনটি টিকে থাকুক, এটা আমরা যেমন চাই, তার চেয়ে বেশি চান তাঁরাই। তাই সংরক্ষিত বন ঘোষণার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
No comments