কত হাত ওই হাত ধরবে
দু’জনের ঘাড়ে ভর দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন অসুস্থ লোকটি। খুব কষ্ট করে এসেছিলেন এখানে। তাকে বয়ে নিয়ে যাওয়া এ দু’জনের একজন তার সন্তান, আরেকজন তার পরিচিত কেউ। একই গ্রামের মানুষ তারা। এদের মাঝে দ্বিতীয়জনের চেনা এ জায়গাটি। ধানমণ্ডির ৩ নম্বর সড়ক ধরে একেবারে শেষ প্রান্তে লেকের ধারে একটি বাড়ি। তিনিও ঠিক এভাবেই এসেছিলেন এখানে একদিন। তখন মুমূর্ষু সহায়-সম্বলহীন মানুষটি কোনোমতে শুধু গ্রাম থেকে যাতায়াতের টাকা ধার করে এখানে পৌঁছেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার প্রত্যাবর্তন হয়েছিল সুস্থ, সবল, এককভাবে নিজের পায়ে ভর দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন স্বপ্ন দেখা মানুষ হিসেবে। যিনি আবার খুঁজে পেয়েছেন জীবন চলার নতুন শক্তি। নিজের বাইরে অন্যের কাজে একটু সহায়তার জন্য সবল বাহু। কিন্তু আজ তিনিই ব্যর্থ মনোরথে তার পরিচিত একই রোগে আক্রান্ত মানুষটিকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামে। এবার অন্যের জন্য ব্যর্থ তিনি। কে দেবে আর ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির চিকিৎসা, প্রায় বিনা খরচে? বাড়িটিতে ওই প্রতিষ্ঠানটি যে আর নেই! তারা এও জানেন না, প্রতিষ্ঠানটি অন্য কোথাও সরে গেছে কিনা।
এবার একটি গল্প বলি, যার থিম হল ‘একটি জীবনের অবসান থেকে অগণিত জীবনের এক মহতী প্রয়াস’। বাবা আর মায়ের তৈরি এই বাক্যমালা। তাদের খুব প্রিয় সন্তান ‘মোসাব্বির’। যার জন্ম ১৯৮৫-তে, আর এ পৃথিবী থেকে বিদায় ২০০৩ সালে। ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই স্নেহময় ছেলেটির প্রস্থান হয় পৃথিবী থেকে অনন্তলোকে। মা-বাবা শোকের দুর্বিষহ অবস্থায় ভেসে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বপ্নে উপরের থিমে সৃষ্টি করেছেন ‘মোসাব্বির ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার’। অগণিত দরিদ্র মানুষ সেখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন আর সুস্থ হয়ে ফিরছেন। অন্য অসুস্থ সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষদের এনে বিনা খরচায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলে পরিবারের মুখে আবার হাঁসি ফোটাচ্ছেন। মনে হচ্ছে তাদের প্রাণপ্রিয় মোসাব্বির যেন হেসে উঠছে। কিন্তু এ লেখার শুরুর দৃশ্যপট খেয়াল করলে দেখবেন, একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে এসেছিলেন আরেকজন ‘মোসাব্বির’ থেকে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হওয়া রোগী ও তার সন্তান। কিন্তু ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। কারণ আগেই বলেছি, হাসপাতালটি আর সেখানে নেই। কষ্ট লাগবে সবার নিশ্চয়ই। কারণ মৃত্যুর আগমনী বার্তাসহ দরিদ্র মানুষটিকে গ্রামে ফিরিয়ে নেয়ার ভাড়াটি পর্যন্ত তাদের নেই। এটা কি মেনে নেয়া যায়? আমি একটি ব্যাংকে কাজ করি।
এবার একটি গল্প বলি, যার থিম হল ‘একটি জীবনের অবসান থেকে অগণিত জীবনের এক মহতী প্রয়াস’। বাবা আর মায়ের তৈরি এই বাক্যমালা। তাদের খুব প্রিয় সন্তান ‘মোসাব্বির’। যার জন্ম ১৯৮৫-তে, আর এ পৃথিবী থেকে বিদায় ২০০৩ সালে। ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই স্নেহময় ছেলেটির প্রস্থান হয় পৃথিবী থেকে অনন্তলোকে। মা-বাবা শোকের দুর্বিষহ অবস্থায় ভেসে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বপ্নে উপরের থিমে সৃষ্টি করেছেন ‘মোসাব্বির ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার’। অগণিত দরিদ্র মানুষ সেখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন আর সুস্থ হয়ে ফিরছেন। অন্য অসুস্থ সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষদের এনে বিনা খরচায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলে পরিবারের মুখে আবার হাঁসি ফোটাচ্ছেন। মনে হচ্ছে তাদের প্রাণপ্রিয় মোসাব্বির যেন হেসে উঠছে। কিন্তু এ লেখার শুরুর দৃশ্যপট খেয়াল করলে দেখবেন, একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে এসেছিলেন আরেকজন ‘মোসাব্বির’ থেকে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হওয়া রোগী ও তার সন্তান। কিন্তু ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। কারণ আগেই বলেছি, হাসপাতালটি আর সেখানে নেই। কষ্ট লাগবে সবার নিশ্চয়ই। কারণ মৃত্যুর আগমনী বার্তাসহ দরিদ্র মানুষটিকে গ্রামে ফিরিয়ে নেয়ার ভাড়াটি পর্যন্ত তাদের নেই। এটা কি মেনে নেয়া যায়? আমি একটি ব্যাংকে কাজ করি।
সেই ব্যাংকের পক্ষ থেকে কয়েকজন সহকর্মীসহ আজ সেখানে গিয়েছিলাম। আমি খুব গর্ব অনুভব করেছি মোসাব্বিরের বাবার মুখে এ কথা শুনে যে, আমার প্রতিষ্ঠান তাদের পেছনে রয়েছে এবং তাদের অনেকটা সহায়তা করছে। অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক গিয়েছিলেন সেখানে। তারাও তাদের সর্বোত্তম চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন বিনা খরচে। সবার চোখে একটিই স্বপ্ন- একখণ্ড ছোট্ট জমি হলে তারা চিরস্থায়ীভাবে তাদের এই দরিদ্র-অসহায় মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন আরও ভালোভাবে। এ লেখার শুরুতে রোগীটির ফিরে যাওয়ার প্রেক্ষাপটটি আমার মনে দানা বাঁধল একটি খবর দেখে। সেটি হল তাদের এ বাড়িটি ছেড়ে দিতে হবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। কারণ বাড়িটি ডেভেলপারকে দিয়ে দিচ্ছেন বাড়ির মালিক। তাছাড়া এখন আবাসিক এলাকায় এ রকম হাসপাতাল চালানো নিয়ম অনুযায়ী সম্ভব নয়। এভাবে বারবার ভাড়া নিয়ে এ রকম প্রতিষ্ঠান চালানো খুব কষ্টের এবং বাস্তবে সম্ভবপর নয়। তাছাড়া কেমোথেরাপিসহ বিভিন্ন রেডিয়েশন মেশিনারি এনে রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা দেয়ার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ রয়েছে তাদের। এ জন্য তাদের প্রয়োজন একখণ্ড ছোট্ট জমি, অনেক অর্থের পাশাপাশি। আর এ মেশিনগুলো প্রতিস্থাপনের ঘরটি তৈরি করতে হবে আরও শক্তপোক্ত করে যেন রেডিয়েশন ছড়াতে না পারে।
লিও টলস্টয় বলেছিলেন, ‘মানুষের আর কতটুকুই বা জমির প্রয়োজন।’ আমার মতে, শুধুই সাড়ে তিন হাত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক টুকরো জমি আর মানুষের সহায়তা কী দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোকে! ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ রকম ছোট ছোট সংগঠনগুলো কী বিরাট অবদান রাখতে পারে মানুষের কল্যাণে! এদের সঙ্গে হাত মেলাতে নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবেন হাজারও মানুষ। আমাদের দেশের মানুষের আতিথেয়তা আর পরোপকারের ইতিহাস সবাই জানেন। তাদের কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন নিশ্চয়ই, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে দরিদ্র-অসহায় মানুষ আর তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। তাই বলতে ইচ্ছে করে, ‘তুমি দেখবে, তুমি দেখবে ওই দুটো হাত বাড়ালে কত হাত ওই হাত ধরবে তুমি তোমার মাটিতে দাঁড়ালে।’ পুত্র হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাবা-মা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য দাঁড়িয়েছেন। নিশ্চয়ই হাজার হাত মিলিত হবেই সে হাতে। আর উপরের ওই দৃশ্যাবলী পরিবর্তিত হয়ে নতুন রোগীটি জানবে মোসাব্বির ক্যান্সার কেয়ারের নতুন ঠিকানা। কেউ না কেউ এসে তাদের জানিয়ে দেবেন ‘মোসাব্বিরের’ নতুন আরও উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার ঠিকানা- যেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হওয়ার স্বপ্নে শক্তি সঞ্চয় করবেন তিনি। এ আশাই রইল আজ।
চৌধুরী মনজুর লিয়াকত : ব্যাংকার
লিও টলস্টয় বলেছিলেন, ‘মানুষের আর কতটুকুই বা জমির প্রয়োজন।’ আমার মতে, শুধুই সাড়ে তিন হাত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক টুকরো জমি আর মানুষের সহায়তা কী দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোকে! ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ রকম ছোট ছোট সংগঠনগুলো কী বিরাট অবদান রাখতে পারে মানুষের কল্যাণে! এদের সঙ্গে হাত মেলাতে নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবেন হাজারও মানুষ। আমাদের দেশের মানুষের আতিথেয়তা আর পরোপকারের ইতিহাস সবাই জানেন। তাদের কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন নিশ্চয়ই, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে দরিদ্র-অসহায় মানুষ আর তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। তাই বলতে ইচ্ছে করে, ‘তুমি দেখবে, তুমি দেখবে ওই দুটো হাত বাড়ালে কত হাত ওই হাত ধরবে তুমি তোমার মাটিতে দাঁড়ালে।’ পুত্র হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাবা-মা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য দাঁড়িয়েছেন। নিশ্চয়ই হাজার হাত মিলিত হবেই সে হাতে। আর উপরের ওই দৃশ্যাবলী পরিবর্তিত হয়ে নতুন রোগীটি জানবে মোসাব্বির ক্যান্সার কেয়ারের নতুন ঠিকানা। কেউ না কেউ এসে তাদের জানিয়ে দেবেন ‘মোসাব্বিরের’ নতুন আরও উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার ঠিকানা- যেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হওয়ার স্বপ্নে শক্তি সঞ্চয় করবেন তিনি। এ আশাই রইল আজ।
চৌধুরী মনজুর লিয়াকত : ব্যাংকার
No comments