মের সামনে ব্রেক্সিটের দুঃস্বপ্ন
ডেভিড ক্যামেরন যখন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হলেন, তখন আমরা তাঁর দলটাকে বদলে ফেলার সংকল্পকে খাটো করতে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু কোনো কিছুতেই তেমন উৎসাহ সৃষ্টি হচ্ছিল না। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ‘আপনাদের কাছে কি এমন কিছু আছে যাতে ডানপন্থীরা আরও কিছুটা বিরক্ত হবে?’ ক্যামেরনের শুরুর দিকের অবস্থাটা এমনই ছিল, যখন তিনি টোরি পার্টিকে মধ্যপন্থায় রাখার এবং ইউরোপ নিয়ে বাকোয়াসি বন্ধের জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। আজ ১১ বছর পর সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই তিনি ডাউনিং স্ট্রিট ছেড়ে যাচ্ছেন, যখন তাঁর সব অর্জন এক অনাবশ্যক গণভোটের আড়ালে হারিয়ে গেছে। তিনি ইউরোপের ভবিষ্যতের ব্যাপারে চরমপন্থী ডানদের শান্ত করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিণামে দেখা গেল, এই ডানপন্থীরা এক ছোট ক্ষতের মুখ চিরে বিশাল হাঁ বানিয়ে দিলেন, আর ক্যামেরনকে পদত্যাগে বাধ্য করলেন।
ছয় বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করার পর ক্যামেরন বিদায় নিলেন। তবে আমরা ধন্যবাদ দিতে পারি, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে ডানপন্থীদের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক একদল গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারী রক্ষণশীল ক্যামেরনকে তাড়ালেন, যাঁদের সঙ্গে ছিল আরেক দল বেকুব মধ্যপন্থী, যাঁরা ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সাধারণ বোধবুদ্ধির ওপরে স্থান দিয়েছিলেন। এখন ব্রিটেনকে ব্রেক্সিটের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু অন্তত এটা তো হয়েছে যে এই কট্টর ডানপন্থীরা পার্টি দখল করতে বা তাঁদের মনোনীত কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারেননি। কথা হচ্ছে, নারীবাদ, পুরুষ সমকামিতা ও কর্মক্ষেত্রে সমতাবিষয়ক অ্যান্ড্রিয়া লিডসমের ধারণা এতটা সেকেলে যে তাঁকে ডাউনিং স্ট্রিটে বসানো হলে তা ভোটারদের অবজ্ঞা করার শামিল হতো। তিনি যেমন এ কাজের জন্য যোগ্য নন, তেমনি তিনি একেবারেই অনভিজ্ঞ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ৮৪ জন টোরি এমপি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। লিডসমের শোচনীয় প্রচারণা অভিযান যে এত দ্রুত ভেঙে পড়ল, তাতে বোঝা যায়, টোরি পার্টির ক্ষমতা-ক্ষুধা আছে। লেবার পার্টির সঙ্গে এ ক্ষেত্রে তাদের পার্থক্য খুবই দৃষ্টিগ্রাহ্য। মনে হচ্ছে, লেবার পার্টি নিজেদের দলের নেতৃত্বের সংকট দীর্ঘায়িত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
টেরেসা মে কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের। রাজনীতিক হিসেবে তাঁকে বিরলই বলতে হয়, কারণ এত দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে থেকেও তিনি লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন। টেরেসা বেশ কঠিন স্বভাবের একজন মানুষ। তিনি টোরি পার্টির প্রতিনিধিদের মুখের ওপর বলে দেন, লোকে তাদের জঘন্য পার্টি মনে করে, আবার পুলিশের কাছে কঠিন সত্য বলতেও তিনি পিছপা হন না। তবে অভিবাসন-বিষয়ক তাঁর মনোভাবের ব্যাপারে আমি ভীত। এমনকি তিনি বিদেশি ছাত্রদেরও ছাড় দিতে নারাজ। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, সরকারি সেবাব্যবস্থা যে বহুদিন ধরে ব্যর্থ হচ্ছে, তার দায় সবাই বিদেশিদের ঘাড়ে চাপাতে চায়, নিজেদের নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও টেরেসা মে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। যাজকের মেয়ে হিসেবে তাঁর মধ্যে বোধবুদ্ধিসম্পন্ন প্রধান শিক্ষিকার চরিত্র আছে, যিনি কথা বলেন খুব কম, যাকে প্রায়ই প্রথাগত শায়ার টোরি বলা হয়। তবে তিনি নিশ্চিতভাবে ব্যবহারিক প্রকৃতির মানুষ, যিনি মেপে মেপে সিদ্ধান্ত নেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নও করেন। তিনি অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাশী, যাকে ডাউনিং স্ট্রিটের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনা বা সমঝোতার শিল্পটা শিখতে হবে। তিনি দেশকে নাড়া দেওয়ার মতো আদর্শবাদী নন, ফলে তিনি সাধারণ ব্যঙ্গ চরিত্রের চেয়ে বেশি জটিল ও আকর্ষণীয়।
এ কথা ভোলা যাবে না যে আজ থেকে ১৪ বছর আগে এই টেরেসা মে টোরি দলের সম্মেলনে সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন, সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে টোরি দল ঠিক পথে নেই। প্রচারকেরা এটা ভালো বলতে পারবেন, টেরেসা মে সাধারণত পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও স্টপ অ্যান্ড সার্চের সময় বর্ণবৈষম্যের ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পুরুষ সমকামীর বিয়েতে সমর্থন দেওয়ার জন্য উদার গণতন্ত্রী মন্ত্রীরা তাঁকে আলাদাভাবে প্রশংসা করেছেন। ঝানু রাজনীতিক হিসেবে মে জানেন, কনজারভেটিভ পার্টির তেড়েফুঁড়ে ডান দিক ধরে না হেঁটে মাঝপথ বরাবর হাঁটার মহিমা কী, বিশেষ করে লেবার পার্টি যখন নিজের সমস্যা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। তাঁর শেষ বক্তৃতার কথাই ধরুন, সেখানে মে বলেছেন, তাঁর সরকার গরিব, কালো, শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক ও মানসিক রোগীদের জন্য কাজ করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, করপোরেট কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই চালালে দেশকে যেমন আবার একত্র করা যাবে, তেমনি ‘অভিজাতদের’ ব্যাপারে মোহভঙ্গ ভোটারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাবে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে তিনি এটা করতে পারেন, যখন করপোরেট কর্তারাই বিশ্বাস করছেন, তাঁদের বেতন অনৈতিক পর্যায়ে চলে গেছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদে একটি প্রশ্ন তাঁর মাথার ওপর ঝুলবে, সেটা হলো কীভাবে ব্রেক্সিটের দুঃস্বপ্নের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তাঁর একজন সহযোগী পরামর্শ দিয়েছেন, ব্রেক্সিটের ফলে অনিবার্যভাবে যে মন্দা হবে, তাতে অভিবাসন এমনিতেই কমে আসবে, যেটা তাঁকে সীমান্ত বন্ধ না করে মুক্তবাজারের পক্ষে থাকার সুযোগ করে দেবে, যার মাধ্যমে আবার ভোটারদেরও নিশ্চিন্ত রাখা যাবে। কিন্তু খুব ছোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও তিক্ত ডানপন্থীদের নিয়ে সমস্যার সমাধান বের করা তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, যেখানে তাঁকে রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে অর্থনৈতিক চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো, টেরেসা মে হয়তো আরও একজন টোরি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, যাঁর শাসনামল সংকীর্ণমনা ইংরেজদের কারণে ক্ষতবিক্ষত হবে, যাঁরা ইউরোপের চেয়ে নিজেদের স্বার্থপরতাকেই বেশি মূল্য দেয়।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া।
ইয়ান বিরেল: দ্য গার্ডিয়ান–এর সাবেক উপসম্পাদক।
ছয় বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করার পর ক্যামেরন বিদায় নিলেন। তবে আমরা ধন্যবাদ দিতে পারি, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে ডানপন্থীদের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক একদল গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারী রক্ষণশীল ক্যামেরনকে তাড়ালেন, যাঁদের সঙ্গে ছিল আরেক দল বেকুব মধ্যপন্থী, যাঁরা ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সাধারণ বোধবুদ্ধির ওপরে স্থান দিয়েছিলেন। এখন ব্রিটেনকে ব্রেক্সিটের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু অন্তত এটা তো হয়েছে যে এই কট্টর ডানপন্থীরা পার্টি দখল করতে বা তাঁদের মনোনীত কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারেননি। কথা হচ্ছে, নারীবাদ, পুরুষ সমকামিতা ও কর্মক্ষেত্রে সমতাবিষয়ক অ্যান্ড্রিয়া লিডসমের ধারণা এতটা সেকেলে যে তাঁকে ডাউনিং স্ট্রিটে বসানো হলে তা ভোটারদের অবজ্ঞা করার শামিল হতো। তিনি যেমন এ কাজের জন্য যোগ্য নন, তেমনি তিনি একেবারেই অনভিজ্ঞ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ৮৪ জন টোরি এমপি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। লিডসমের শোচনীয় প্রচারণা অভিযান যে এত দ্রুত ভেঙে পড়ল, তাতে বোঝা যায়, টোরি পার্টির ক্ষমতা-ক্ষুধা আছে। লেবার পার্টির সঙ্গে এ ক্ষেত্রে তাদের পার্থক্য খুবই দৃষ্টিগ্রাহ্য। মনে হচ্ছে, লেবার পার্টি নিজেদের দলের নেতৃত্বের সংকট দীর্ঘায়িত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
টেরেসা মে কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের। রাজনীতিক হিসেবে তাঁকে বিরলই বলতে হয়, কারণ এত দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে থেকেও তিনি লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন। টেরেসা বেশ কঠিন স্বভাবের একজন মানুষ। তিনি টোরি পার্টির প্রতিনিধিদের মুখের ওপর বলে দেন, লোকে তাদের জঘন্য পার্টি মনে করে, আবার পুলিশের কাছে কঠিন সত্য বলতেও তিনি পিছপা হন না। তবে অভিবাসন-বিষয়ক তাঁর মনোভাবের ব্যাপারে আমি ভীত। এমনকি তিনি বিদেশি ছাত্রদেরও ছাড় দিতে নারাজ। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, সরকারি সেবাব্যবস্থা যে বহুদিন ধরে ব্যর্থ হচ্ছে, তার দায় সবাই বিদেশিদের ঘাড়ে চাপাতে চায়, নিজেদের নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও টেরেসা মে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। যাজকের মেয়ে হিসেবে তাঁর মধ্যে বোধবুদ্ধিসম্পন্ন প্রধান শিক্ষিকার চরিত্র আছে, যিনি কথা বলেন খুব কম, যাকে প্রায়ই প্রথাগত শায়ার টোরি বলা হয়। তবে তিনি নিশ্চিতভাবে ব্যবহারিক প্রকৃতির মানুষ, যিনি মেপে মেপে সিদ্ধান্ত নেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নও করেন। তিনি অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাশী, যাকে ডাউনিং স্ট্রিটের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনা বা সমঝোতার শিল্পটা শিখতে হবে। তিনি দেশকে নাড়া দেওয়ার মতো আদর্শবাদী নন, ফলে তিনি সাধারণ ব্যঙ্গ চরিত্রের চেয়ে বেশি জটিল ও আকর্ষণীয়।
এ কথা ভোলা যাবে না যে আজ থেকে ১৪ বছর আগে এই টেরেসা মে টোরি দলের সম্মেলনে সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন, সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে টোরি দল ঠিক পথে নেই। প্রচারকেরা এটা ভালো বলতে পারবেন, টেরেসা মে সাধারণত পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও স্টপ অ্যান্ড সার্চের সময় বর্ণবৈষম্যের ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পুরুষ সমকামীর বিয়েতে সমর্থন দেওয়ার জন্য উদার গণতন্ত্রী মন্ত্রীরা তাঁকে আলাদাভাবে প্রশংসা করেছেন। ঝানু রাজনীতিক হিসেবে মে জানেন, কনজারভেটিভ পার্টির তেড়েফুঁড়ে ডান দিক ধরে না হেঁটে মাঝপথ বরাবর হাঁটার মহিমা কী, বিশেষ করে লেবার পার্টি যখন নিজের সমস্যা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। তাঁর শেষ বক্তৃতার কথাই ধরুন, সেখানে মে বলেছেন, তাঁর সরকার গরিব, কালো, শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক ও মানসিক রোগীদের জন্য কাজ করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, করপোরেট কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই চালালে দেশকে যেমন আবার একত্র করা যাবে, তেমনি ‘অভিজাতদের’ ব্যাপারে মোহভঙ্গ ভোটারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাবে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে তিনি এটা করতে পারেন, যখন করপোরেট কর্তারাই বিশ্বাস করছেন, তাঁদের বেতন অনৈতিক পর্যায়ে চলে গেছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদে একটি প্রশ্ন তাঁর মাথার ওপর ঝুলবে, সেটা হলো কীভাবে ব্রেক্সিটের দুঃস্বপ্নের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তাঁর একজন সহযোগী পরামর্শ দিয়েছেন, ব্রেক্সিটের ফলে অনিবার্যভাবে যে মন্দা হবে, তাতে অভিবাসন এমনিতেই কমে আসবে, যেটা তাঁকে সীমান্ত বন্ধ না করে মুক্তবাজারের পক্ষে থাকার সুযোগ করে দেবে, যার মাধ্যমে আবার ভোটারদেরও নিশ্চিন্ত রাখা যাবে। কিন্তু খুব ছোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও তিক্ত ডানপন্থীদের নিয়ে সমস্যার সমাধান বের করা তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, যেখানে তাঁকে রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে অর্থনৈতিক চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো, টেরেসা মে হয়তো আরও একজন টোরি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, যাঁর শাসনামল সংকীর্ণমনা ইংরেজদের কারণে ক্ষতবিক্ষত হবে, যাঁরা ইউরোপের চেয়ে নিজেদের স্বার্থপরতাকেই বেশি মূল্য দেয়।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া।
ইয়ান বিরেল: দ্য গার্ডিয়ান–এর সাবেক উপসম্পাদক।
No comments