তুরস্কের সীমান্তের সংঘাত দেশের ভেতর ছড়াচ্ছে
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত মঙ্গলবার রাতে জোড়া বিস্ফোরণ ও নির্বিচারে গুলির ঘটনার পর সেখানে পুলিশের সতর্ক প্রহরা। এএফপি |
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতের আত্মঘাতী বোমা হামলা এ বছরে দেশটিতে সংঘটিত হামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। তবে নিশ্চিতভাবেই এ ধরনের হামলা দেশটিতে প্রথম নয়। গণমাধ্যমে তুরস্কের পুলিশের দেওয়া ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে এবং এর সীমান্ত এলাকাগুলোয় আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ব্যাপকসংখ্যক লোকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব গ্রেপ্তারের সময় দেশটির শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, আইএস এর প্রতিশোধ নিতে পারে। সাম্প্রতিকতম এ হামলার আগে ইস্তাম্বুলে এ বছরেই তিন-তিনটি সন্ত্রাসী হামলা হয়। আর এ কারণেই শহরটিতে উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আগের তিন হামলার সঙ্গে আইএস ছাড়াও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সশস্ত্র শাখা কুর্দিস্তান ফ্রিডম হোয়াকসের (টিএকে) সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এক মাসেরও কম সময় আগে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ইস্তাম্বুলে ১২ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ওই হামলার দায়ও স্বীকার করে টিএকে। সংগঠনটি তাদের ওয়েবসাইটে তুরস্কে আসতে চাওয়া পর্যটকদের উদ্দেশ্যে সাবধানবাণী প্রকাশ করে, ‘আপনাদের জন্য তুরস্ক আর নিরাপদ নয়।’ ওই হামলার কারণ প্রসঙ্গে টিএকে বলে, কুর্দি অধ্যুষিত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই তারা এ হামলা চালিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে আঙ্কারায় দুটি প্রথম বোমা হামলারও দায় স্বীকার করে সংগঠনটি। ওই দুই হামলায় ২৯ জন নিহত হয়। গত বছরের অক্টোবরে আঙ্কারায় কুর্দি এবং বামপন্থী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত এক শান্তি মিছিলে দুটো আত্মঘাতী হামলা হয়। ভয়াবহ ওই হামলায় নিহত হয় ১০৩ জন। আড়াই শতাধিক মানুষ এতে আহত হয়। এখন পর্যন্ত কোনো সংগঠন ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে বোমা হামলাকারী একজন মুসলিম জঙ্গি ছিল বলে তদন্তকারীরা শনাক্ত করেন। ইস্তাম্বুলে এবারের হামলায় আইএসকে দায়ী করার পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের মানুষের মধ্যে এখন যে শঙ্কাটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো, সীমান্তে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাত এখন দেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ছে।
গত বছর পিকেকের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে কুর্দি-অধ্যুষিত দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ঘটতে শুরু করে।তুরস্কের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ বাড়ছে। আগের হামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের পর্যটনশিল্প বেশ ধাক্কা খেয়েছে। পর্যটন তুরস্কের অর্থনীতির একটি বড় ভিত্তি। টুইটারে তুরস্কের নাগরিক সেদা জেন বলেছেন, ‘যেকোনো জনবহুল এলাকায় বোমা হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা মানুষের মধ্যে জেঁকে বসেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে মোটেও তৎপর বলে মনে হয় না। মানুষের ভীতির বিষয়েও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশে এই প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য।’ টুইটারে মন্তব্যকারীদের অনেকেই তুরস্কের অভ্যন্তরে এসব হামলায় বাইরের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করেন। তেভিক ওকুতান নামে একজন টুইট করেছেন, ‘আমাদের শত্রুরা চায় না দেশে পর্যটক আসুক। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়।’
No comments