প্রেসিডেন্ট জিয়া তখন সার্কিট হাউসে ঘুমিয়ে
জিয়া
হত্যার পূর্বাপর নিয়ে প্রোব নিউজ এর প্রধান সম্পাদক ইরতিজা নাসিম আলীর
একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ১৯৯৪ সালের মে মাসে মতিউর রহমান সম্পাদিত দৈনিক
ভোরের কাগজে ধারাবাহিকভাবে আট কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। এই রিপোর্টে জানা যায়
যে চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে ২৯ ও ৩০ নভেম্বরের মধ্যবর্তী রাত সাড়ে তিনটায়
তিনটি গাড়ি নিয়ে ১৬ জন সেনা কর্মকর্তা প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে রওনা হন।
প্রেসিডেন্ট জিয়া তখন সার্কিট হাউসে ঘুমিয়ে। গুলি করতে করতে তাদের একটি দল
দোতলায় উঠে যায়। গোলাগুলির শব্দ শুনে বাইরে কী হচ্ছে দরজা ফাঁক করে দেখার
চেষ্টা করলেন জিয়া। গর্জে উঠল আততায়ীর হাতের অস্ত্র। নয় মিনিটেই অপারেশন
শেষ। ভোর সাড়ে চারটার কিছু পরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ২৪ ডিভিশনের কমান্ডার
মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে মেজর মোজাফফর হোসেন ফোন করে জানালেন, দ্য
প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড। এটা শুনেই মঞ্জুর চুপচাপ বসে থাকেন কিছুক্ষণ।
একটু ধাতস্থ হয়ে মোজাফফরকে বললেন, সব সিনিয়র সামরিক অফিসার যেন সকাল সাতটায়
তার দপ্তরে হাজির থাকে। যথাসময়ে উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মঞ্জুর
বললেন, কিছু সেনা অফিসার প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করেছে। এর পেছনে অবশ্যই
অফিসারদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ কাজ করেছে। ঘটনাটি যখন ঘটেই গেছে আমাদের এগিয়ে
যেতে হবে।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের সদ্য প্রকাশিত ‘বিএনপি সময়-অসময়’ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা লেখা হয়েছে। তিনি আরও লিখেছেন, দুই দিনের মধ্যেই এই বিদ্রোহের অবসান হয়। ১ জুন রাত আড়াইটায় মঞ্জুর কয়েকজন সহযোগীসহ সেনানিবাস ছেড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। পথে হাটহাজারী থানার একদল পুলিশের হাকে ধরা পড়েন। তাকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এনে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা গ্রেপ্তার হন। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করেন। বিদ্রোহীদের অন্যতম মেজর মোজাফফর হোসেন ও মেজর সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ খালেদ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
৩০ মে ঢাকায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার এবং এতে জিয়াউর রহমানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। জিয়ার মৃত্যুসংবাদ শুনে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। ওই সময়ের ঘটনাবলির একটা চিত্র পাওয়া যায় ছাত্রদলের নেতা সাজ্জাদ হোসেনের বয়ান থেকে:
ভোরে আমি শহীদুল্লাহ হল থেকে কয়েকজন সঙ্গীসহ গোলাপ শাহ মাজারের কাছে নিউ স্টার রেস্তোরাঁয় নাশতা খেতে গিয়েছিলাম। রেডিওতে জিয়া হত্যার খবর শুনে হলে ফিরে যাই। তারপর কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে রওনা হই মিন্টো রোডে ভাইস প্রেসিডেন্ট সাত্তারের বাড়ির উদ্দেশে। জিপিওর মোড়ে আসতেই দেখলাম অনেক লোক জড়ো হয়েছে। জালাল একটা স্লোগান দিল- এক জিয়ার রক্ত থেকে লক্ষ জিয়া জন্ম নিবে। কয়েক হাজার লোকের ভিড় জমে গেল। আমারা মিছিল করে মিন্টো রোড হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গেলাম। তারপর জহুরুল হক হলে। এই প্রথম ছাত্রদলের মিছিল নিয়ে জহু হলে ঢুকলাম। তারপর শহীদ মিনারে গিয়ে মিছিল শেষ হলো। সন্ধ্যায় ৩০ টা বেবিট্যাক্সিতে ‘তাহের মাইক’ লাগিয়ে পরদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে জিয়ার জানাজা হবে এটা প্রচারের ব্যবস্থা করলাম। ইচ্ছে করেই ‘গায়েবানা’ শব্দটার ব্যবহার করিনি। ভেবেছিলাম মানুষ মনে করবে জিয়ার লাশ এসে গেছে এবং তারা বেশি সংখ্যায় জানাজায় হাজির হবে।
সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শামসুল হুদা চৌধুরী, শাজ আজিজ আর ডা. মতিন ছিলেন। তারা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনবে ডেকে এনে হম্বিতম্বি করলেন-কার হুকুমে জানাজা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তারা বললেন, ক্যান্টনমেন্টের পরিস্থিতি আমরা জানি না। বিশেষ করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট জানাজায় যাবেন না।
৩১ মে সকাল নয়টায় ঢাকা স্টেডিয়ামে জানাজা হলো। মোনজাতের ঠিক আগের মুহূর্তে জাস্টিস সাত্তার এসে উপস্থিত হলেন। তখন এটা অফিসিয়াল জানাজা হয়ে গেল। জিয়ার লাশ ঢাকায় আসার পর মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হলো স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের সদ্য প্রকাশিত ‘বিএনপি সময়-অসময়’ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা লেখা হয়েছে। তিনি আরও লিখেছেন, দুই দিনের মধ্যেই এই বিদ্রোহের অবসান হয়। ১ জুন রাত আড়াইটায় মঞ্জুর কয়েকজন সহযোগীসহ সেনানিবাস ছেড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। পথে হাটহাজারী থানার একদল পুলিশের হাকে ধরা পড়েন। তাকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এনে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা গ্রেপ্তার হন। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করেন। বিদ্রোহীদের অন্যতম মেজর মোজাফফর হোসেন ও মেজর সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ খালেদ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
৩০ মে ঢাকায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার এবং এতে জিয়াউর রহমানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। জিয়ার মৃত্যুসংবাদ শুনে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। ওই সময়ের ঘটনাবলির একটা চিত্র পাওয়া যায় ছাত্রদলের নেতা সাজ্জাদ হোসেনের বয়ান থেকে:
ভোরে আমি শহীদুল্লাহ হল থেকে কয়েকজন সঙ্গীসহ গোলাপ শাহ মাজারের কাছে নিউ স্টার রেস্তোরাঁয় নাশতা খেতে গিয়েছিলাম। রেডিওতে জিয়া হত্যার খবর শুনে হলে ফিরে যাই। তারপর কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে রওনা হই মিন্টো রোডে ভাইস প্রেসিডেন্ট সাত্তারের বাড়ির উদ্দেশে। জিপিওর মোড়ে আসতেই দেখলাম অনেক লোক জড়ো হয়েছে। জালাল একটা স্লোগান দিল- এক জিয়ার রক্ত থেকে লক্ষ জিয়া জন্ম নিবে। কয়েক হাজার লোকের ভিড় জমে গেল। আমারা মিছিল করে মিন্টো রোড হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গেলাম। তারপর জহুরুল হক হলে। এই প্রথম ছাত্রদলের মিছিল নিয়ে জহু হলে ঢুকলাম। তারপর শহীদ মিনারে গিয়ে মিছিল শেষ হলো। সন্ধ্যায় ৩০ টা বেবিট্যাক্সিতে ‘তাহের মাইক’ লাগিয়ে পরদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে জিয়ার জানাজা হবে এটা প্রচারের ব্যবস্থা করলাম। ইচ্ছে করেই ‘গায়েবানা’ শব্দটার ব্যবহার করিনি। ভেবেছিলাম মানুষ মনে করবে জিয়ার লাশ এসে গেছে এবং তারা বেশি সংখ্যায় জানাজায় হাজির হবে।
সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শামসুল হুদা চৌধুরী, শাজ আজিজ আর ডা. মতিন ছিলেন। তারা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনবে ডেকে এনে হম্বিতম্বি করলেন-কার হুকুমে জানাজা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তারা বললেন, ক্যান্টনমেন্টের পরিস্থিতি আমরা জানি না। বিশেষ করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট জানাজায় যাবেন না।
৩১ মে সকাল নয়টায় ঢাকা স্টেডিয়ামে জানাজা হলো। মোনজাতের ঠিক আগের মুহূর্তে জাস্টিস সাত্তার এসে উপস্থিত হলেন। তখন এটা অফিসিয়াল জানাজা হয়ে গেল। জিয়ার লাশ ঢাকায় আসার পর মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হলো স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা।
No comments