মেয়েদের মূত্রাশয়ের প্রদাহ by ডা: হামিদা বেগম
মহিলাদের
মূত্রাশয়ের প্রদাহ বা (সিস্টাইটিস) সব সময়েই পুরুষের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক
ধরনের হয়। এটি হয় মেয়েদের মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য খুব কম (৪ সেন্টিমিটার) বলে,
ভালভা বা স্ত্রী বহিঃজনন অঙ্গ খুব কাছাকাছি থাকে বলে, মাসিকের সময় ও যৌন
মিলনের সময় ঝুঁকি বেশি থাকে বলে, গর্ভবতী হওয়ার জন্য, বারবার ক্যাথেটার
করার জন্যও হয়, প্রস্রাবের বেগ হওয়ার পরও পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থার কাঠামোগত
সমস্যার জন্য দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখার জন্য।
রোগের কারণ : স্বাভাবিক জীবাণুমুক্ত নিম্নমূত্রপথ (মূত্রনালী ও মূত্রাশয়) ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হলে সিস্টাইটিস হয়। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী অন্ত্র পথের নিচের অংশে দেখা যায়। এটি যৌন মিলনের ঝুঁকি বাড়ায়। এ সময় ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালী দিয়ে মূত্রাশয়ে ঢুকতে পারে। একবার ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ে ঢুকলে সাধারণত প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায় কিন্তু এর আগেই যদি ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করে, তাহলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটায়। এর পরও যদি রোগীর ডায়াবেটিস থাকে, রোগী এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে, ব্যথানাশক ওষুধ বেশি নিলে এর প্রবণতা বেড়ে যায়। সাধারণত ই:কলাই (৭৫%) ক্লেবসেলা (১০%), প্রোটিয়াস বা গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াই এর জন্য দায়ী।
পর্যাপ্ত তরল পান না করলে, দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকলে (অবশ বা প্যারালাইসিস রোগী), পায়খানা বা প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারলে, প্রস্রাবের বেগ হওয়ার পরও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
গর্ভবর্তী অবস্থায় কেন বেশি হয় : স্ত্রী হরমোনজনিত কারণে কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রাশয়ে অনেক পরিবর্তন হয়, আয়তনে ও প্রস্থে কিছুটা প্রসারণ ঘটে। তা ছাড়া গর্ভস্থ শিশুসহ জরায়ু ওই মূত্রাশয়ের ওপর কিছুটা চাপ ফেলে। তাই এখানে স্টাসিস বা শ্লথগতি পরিলক্ষিত হয়। ২-১০ শতাংশ গর্ভবতী মহিলার কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই ব্যাকটেরিয়া দ্রুতগতিতে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। সাধারণত দরিদ্র মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বেশি সন্তান জন্মদানের পর, বেশি বয়সে, বেশি যৌন মিলনের পর, ডায়াবেটিস ও রক্তশূন্যতার জন্য এটি হতে পারে।
উপসর্গ : নিম্ন মূত্র পথে প্রচণ্ড জ্বালা ও প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হওয়া, গা কাঁপিয়ে জ্বর আসা, বমি বমি ভাব হওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব করা বা প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছা জাগা বা বেগ হওয়ার সাথে সাথেই প্রস্রাব হয়ে যাওয়া, রাতে প্রস্রাবের ইচ্ছা জাগা, তলপেটে ব্যথা অনুভব করা, প্রস্রাব ঘোলাটে হওয়া বা প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে। উল্লেখ্য, বারবার সংক্রমণ হলে রোগীর রক্তশূন্যতা হতে পারে।
চিকিৎসা : যেহেতু ইনফেকশন কিডনিতে ছড়ানোর ঝুঁকি ও বিভিন্ন রকম জটিলতার ঝুঁকি থাকে তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা দিতে হবে। সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ও সময়সহ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে পূর্ণাঙ্গ ডোজ ও সময়সহ।
সম্ভাব্য জটিলতা : বারবার মূত্রপথে সংক্রমণ বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হতে পারে, জটিল মূত্রপথে সংক্রমণ বা পাইলোনেফ্রাইটিস হতে পারে, ধীরে ধীরে কিডনির কার্যকারিতা লোপ পেতে পারে।
প্রতিরোধ : প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে, মল ত্যাগের পর পায়ু এলাকা সামনে থেকে পেছনে ধুয়ে ফেলতে হবে, তাতে পায়ু এলাকা থেকে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের ঝুঁকি কমবে। মাসিকের সময়, যৌন মিলনের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কর্মরত মহিলাদের, স্কুল-কলেজের মেয়েদের প্রয়োজনে সাধ্যমতো উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চেম্বার : গ্যালাক্সি হসপিটাল (প্রা.) লি., মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিসের দক্ষিণ পাশে।
ফোন : ০১৮১৯২৪৩৬১৯
রোগের কারণ : স্বাভাবিক জীবাণুমুক্ত নিম্নমূত্রপথ (মূত্রনালী ও মূত্রাশয়) ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হলে সিস্টাইটিস হয়। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী অন্ত্র পথের নিচের অংশে দেখা যায়। এটি যৌন মিলনের ঝুঁকি বাড়ায়। এ সময় ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালী দিয়ে মূত্রাশয়ে ঢুকতে পারে। একবার ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ে ঢুকলে সাধারণত প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায় কিন্তু এর আগেই যদি ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করে, তাহলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটায়। এর পরও যদি রোগীর ডায়াবেটিস থাকে, রোগী এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে, ব্যথানাশক ওষুধ বেশি নিলে এর প্রবণতা বেড়ে যায়। সাধারণত ই:কলাই (৭৫%) ক্লেবসেলা (১০%), প্রোটিয়াস বা গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াই এর জন্য দায়ী।
পর্যাপ্ত তরল পান না করলে, দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকলে (অবশ বা প্যারালাইসিস রোগী), পায়খানা বা প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারলে, প্রস্রাবের বেগ হওয়ার পরও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
গর্ভবর্তী অবস্থায় কেন বেশি হয় : স্ত্রী হরমোনজনিত কারণে কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রাশয়ে অনেক পরিবর্তন হয়, আয়তনে ও প্রস্থে কিছুটা প্রসারণ ঘটে। তা ছাড়া গর্ভস্থ শিশুসহ জরায়ু ওই মূত্রাশয়ের ওপর কিছুটা চাপ ফেলে। তাই এখানে স্টাসিস বা শ্লথগতি পরিলক্ষিত হয়। ২-১০ শতাংশ গর্ভবতী মহিলার কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই ব্যাকটেরিয়া দ্রুতগতিতে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। সাধারণত দরিদ্র মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বেশি সন্তান জন্মদানের পর, বেশি বয়সে, বেশি যৌন মিলনের পর, ডায়াবেটিস ও রক্তশূন্যতার জন্য এটি হতে পারে।
উপসর্গ : নিম্ন মূত্র পথে প্রচণ্ড জ্বালা ও প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হওয়া, গা কাঁপিয়ে জ্বর আসা, বমি বমি ভাব হওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব করা বা প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছা জাগা বা বেগ হওয়ার সাথে সাথেই প্রস্রাব হয়ে যাওয়া, রাতে প্রস্রাবের ইচ্ছা জাগা, তলপেটে ব্যথা অনুভব করা, প্রস্রাব ঘোলাটে হওয়া বা প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে। উল্লেখ্য, বারবার সংক্রমণ হলে রোগীর রক্তশূন্যতা হতে পারে।
চিকিৎসা : যেহেতু ইনফেকশন কিডনিতে ছড়ানোর ঝুঁকি ও বিভিন্ন রকম জটিলতার ঝুঁকি থাকে তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা দিতে হবে। সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ও সময়সহ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে পূর্ণাঙ্গ ডোজ ও সময়সহ।
সম্ভাব্য জটিলতা : বারবার মূত্রপথে সংক্রমণ বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হতে পারে, জটিল মূত্রপথে সংক্রমণ বা পাইলোনেফ্রাইটিস হতে পারে, ধীরে ধীরে কিডনির কার্যকারিতা লোপ পেতে পারে।
প্রতিরোধ : প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে, মল ত্যাগের পর পায়ু এলাকা সামনে থেকে পেছনে ধুয়ে ফেলতে হবে, তাতে পায়ু এলাকা থেকে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের ঝুঁকি কমবে। মাসিকের সময়, যৌন মিলনের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কর্মরত মহিলাদের, স্কুল-কলেজের মেয়েদের প্রয়োজনে সাধ্যমতো উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চেম্বার : গ্যালাক্সি হসপিটাল (প্রা.) লি., মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিসের দক্ষিণ পাশে।
ফোন : ০১৮১৯২৪৩৬১৯
No comments