সিইসির কাছে তাবিথের কিছু প্রশ্ন
সিটি
করপোরেশন নির্বাচনের অনিয়ম ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রধান
নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের কাছে একটি খোলা চিঠি
দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাবিথ
আউয়াল। চিঠিতে তিনি বিভিন্ন অনিয়মের প্রসঙ্গে দেশী-বিদেশী মহলের পর্যবেক্ষণ
এবং কমিশনের নির্লিপ্ততার বিষয়গুলো তুলে ধরে সিইসির বিবেকের কাছে কিছু
প্রশ্ন রেখেছেন। কোন দল নয় গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশকে বিজয়ী করতে
দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। চিঠিতে তাবিথ বলেন,
নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয়
নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন পরিচালনা করা নির্বাচন
কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সাংবিধানিকভাবেই নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন থাকে। যাতে
দলমতের উর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ ও কঠোরভাবে এ দায়িত্ব পালন সম্ভব হয়। অথচ
আমাদের দুর্ভাগ্য, সাংবিধানিক ও আইনানুগ ক্ষমতার অধিকারী হয়েও বর্তমান
নির্বাচন কমিশন তাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনে কেবল ব্যর্থতার পরিচয়ই
দেয়নি, এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের আজ্ঞাবহ অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে অনেকেই
মনে করেন। তাবিথ লিখেছেন, ২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন
নির্বাচনে একজন মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের আগে আচরণবিধি ভঙ্গ ও
নির্বাচনের দিন সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে শতাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের
করেছি। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা কর্তৃক সংরক্ষিত অধিকার অনুযায়ী সেসব
আভিযোগের যথাযথ প্রতিকার আশা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে,
উত্থাপিত অভিযোগগুলো আমলে না নিয়ে, কোন তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে ফলাফলের
গেজেট প্রকাশ করা হলো। অথচ এই নির্বাচন যে কোনভাবেই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ
ও গ্রহণযোগ্য হয়নি সে সম্পর্কে বেশি বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। বিষয়টি
ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ, কূটনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, প্রতিটি প্রচারমাধ্যম এবং
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার। সকলেই বলেছে, এ নির্বাচন
ছিল প্রহসনের নির্বাচন, নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির কলংকিত
নির্বাচন। তাবিথ বলেছেন, ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন সংঘটিত অনিয়মের ঘটনাগুলো
নিরপেক্ষভাবে আমলে নিয়ে শক্তভাবে মোকাবিলা করলে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারতো না। কিন্তু
নির্বাচন কমিশন ছিল একেবারেই নির্লিপ্ত। জাতি হতবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করল
নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচক কমিশনার হিসেবে আপনি ঘোষণা করলেন কিছু
বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর মদদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতাসীনদের এত নগ্ন তাণ্ডব এবং কেন্দ্র দখল করে ভোট
ডাকাতির মহোৎসবের পরও আপনি কিভাবে এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু আখ্যা দিলেন
তা আপনার বিবেক এবং নৈতিকতার কাছে আমার প্রশ্ন। চিঠিতে লিখেছেন, নির্বাচনী
তফসিল ঘোষিত হলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা সামান্য বৃদ্ধির জন্য আদর্শ
ঢাকা আন্দোলনের প্রস্তাব আপনি নিজে নিজেই নাকচ করে দিয়েছেন। কমিশনের সঙ্গে
আলোচনার আবশ্যকতা অনুভব করেননি। অথচ যৌক্তিক কারণেই সময়সীমা বাড়ানো যেত এবং
তাতে আইনের বা অন্য কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না। সরকারের ইচ্ছাতেই সময়সীমা
বাড়ানো হয়নি বলে অনেকে মনে করেন।
সিইসিকে তাবিথ লিখেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে আপনাকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। এছাড়া আমি ও আমার নির্বাচনী এজেন্টের মাধ্যমে মৌখিক ও টেলিফোনের কথা বাদ দিয়েও চিঠি এবং ফ্যাক্স যোগে কমিশনে ১১৩টি অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন এক মন্ত্রী বলেন, যেভাবেই হোক এ নির্বাচনে জিততেই হবে। অথচ তার বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে কমিশনকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা গেল না। বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচন বিধিমালা ভঙ্গ করে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে ভোটদান ও ভোট আদায়ে কাজ করার নির্দেশ দিলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে আপনার কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ছিল নির্বিকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য নানাভাবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট জালিয়াতিতে মদত দেয়, আমার পোলিং এজেন্ট ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার করে আতংকের সৃষ্টি করে। নির্বাচনের দিন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন থাকা সত্ত্বেও কমিশন তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানা নেই। সিইসিকে তাবিথ লিখেছেন, নির্বাচনের সময় প্রাথমিকভাবে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিতে গিয়ে আপনি নিজে বলেছিলেন- এতে মানুষ স্বস্তিতে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই আপনি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা পাল্টে দিলেন। নির্বাচনের দিন তারা যেন তাদের আবাসস্থলেই থাকে সে ঘোষণা দিলেন। অনেকে মনে করে নির্বাচনের দিন সেনাবহিনী নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভোট ডাকাতির তাণ্ডব মঞ্চস্থ করা সম্ভব হবে না এ কারণেই সরকারের ইশারায় আপনি রাতারাতি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা পাল্টে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি নির্বাচনী মাঠে যে ভোট জালিয়াতি ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং তাদের অধিকাংশই যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে মদদ দেয়। ভোট জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে। তা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সুবাদে, মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগের মাধ্যমে সবই আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন বা গোচরীভূত হয়েছে। এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দিন সেনা মোতায়েন ছিল অত্যাবশক ও সময়ের দাবি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ছিল একেবারেই নীরব, নির্লিপ্ত। চিঠিতে লেখা হয়, নির্বাচনের পরপরই জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট কারচুপির বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন তাদের কাছে রয়েছে। সকলেই এ অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের আহবান জানান। নির্বাচনের দিনই এসব অনিয়ম ও ব্যত্যয়ের নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য আমি নিজে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সরকারি ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ না করতেও লিখিত অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু কমিশন কোন ভূমিকা পালন করেনি।
তাবিথ লিখেছেন, নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যও তাই। আমি বিশ্বাস করি, এই নির্বাচন শুধু ব্যক্তি বিশেষের হার-জিতের নির্বাচন বা নিয়ম রক্ষা বা একটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার নির্বাচন ছিল না। এই নির্বাচন ছিল দেশের সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার একটা চমৎকার সুযোগ। এই নির্বাচন ছিল নগরবাসীর জন্য নির্ভয়ে ভোট প্রদানের মৌলিক অধিকার। অথচ এই নির্বাচনে অধিকাংশ নবীন ভোটারের প্রথমবারের ভোটদানের স্বপ্ন, রোমাঞ্চ ও আকাঙ্ক্ষা ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হলো। তাদের বেশির ভাগ জীবনে প্রথমবার ভোট প্রদান থেকে বঞ্চিত হলো। যে ক’জন প্রথমবার ভোট দিতে গিয়েছিলন, ভোট কেন্দ্রের তাণ্ডব তাদের প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের অভিজ্ঞতাকে চিরতরে তিক্ত ও বিষাদময় করে দিল। যে অশীতিপর মানুষটি হয়তো জীবনের শেষ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু ভোট দিতে পারলেন না তাকে আপনি কি জবাব দেবেন? চিঠিতে লেখা হয়, এবারের প্রকাশ্য ভোট জালিয়াতি আর ভোট কারচুপির ফলে গণতন্ত্রের তথা জাতির কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল তা কিভাবে পূরণ হবে? চোখের সামনে বারবার ভোটের এ ধরনের প্রহসন মঞ্চস্থ হতে দেখে জনমনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে- নির্বাচন মানে কি মানুষ আর নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে না? তাহলে আপনার বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন- এমন একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে কে বা কারা হারলেন সেটা বড়, না জাতি হিসাবে আমরা কি হারালাম সেটা বড় বিবেচ্য। হয়তো জালিয়াতির এ ভোট গণনায় কাউকে না কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র হেরে গেছে। জনগণ আপনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের উপর, চলমান পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আপনারা আবারও প্রমাণ করলেন এ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য আর কোন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সিইসিকে তাবিথ লিখেছেন, আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে জানি ও বিশ্বাস করি- এসব প্রশ্নের জবাব পাবো না। তবে আপনাকে নিজের বিবেক ও নৈতিকতার কাছে প্রশ্ন করতে বিনীত অনুরোধ করছি। আপনি নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং আপনার উপর অর্পিত সাধারণ নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার সুরক্ষার পবিত্র দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে সক্ষম হয়েছেন? আপনার বিবেকের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, আপনাদের এহেন কর্মকাণ্ড ও নির্লিপ্ততার কারণে যখন পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উপরই জনগণের আস্থা চুরমার হয়ে গেছে তারপরও আপনি কি মনে করেন সাংবিধানিক এ পদটির প্রতি আপনি আদৌ সুবিচার করছেন? আশা করি জাতির বৃহত্তর কল্যাণে আপনি এখন এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেবেন। যার ইতিবাচক সুফল হিসেবে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা দলের জয় পরাজয় নয়, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে- জিতবে বাংলাদেশ।
সিইসিকে তাবিথ লিখেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে আপনাকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। এছাড়া আমি ও আমার নির্বাচনী এজেন্টের মাধ্যমে মৌখিক ও টেলিফোনের কথা বাদ দিয়েও চিঠি এবং ফ্যাক্স যোগে কমিশনে ১১৩টি অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন এক মন্ত্রী বলেন, যেভাবেই হোক এ নির্বাচনে জিততেই হবে। অথচ তার বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে কমিশনকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা গেল না। বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচন বিধিমালা ভঙ্গ করে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে ভোটদান ও ভোট আদায়ে কাজ করার নির্দেশ দিলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে আপনার কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ছিল নির্বিকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য নানাভাবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট জালিয়াতিতে মদত দেয়, আমার পোলিং এজেন্ট ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার করে আতংকের সৃষ্টি করে। নির্বাচনের দিন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন থাকা সত্ত্বেও কমিশন তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানা নেই। সিইসিকে তাবিথ লিখেছেন, নির্বাচনের সময় প্রাথমিকভাবে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিতে গিয়ে আপনি নিজে বলেছিলেন- এতে মানুষ স্বস্তিতে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই আপনি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা পাল্টে দিলেন। নির্বাচনের দিন তারা যেন তাদের আবাসস্থলেই থাকে সে ঘোষণা দিলেন। অনেকে মনে করে নির্বাচনের দিন সেনাবহিনী নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভোট ডাকাতির তাণ্ডব মঞ্চস্থ করা সম্ভব হবে না এ কারণেই সরকারের ইশারায় আপনি রাতারাতি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা পাল্টে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি নির্বাচনী মাঠে যে ভোট জালিয়াতি ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং তাদের অধিকাংশই যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে মদদ দেয়। ভোট জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে। তা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সুবাদে, মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগের মাধ্যমে সবই আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন বা গোচরীভূত হয়েছে। এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দিন সেনা মোতায়েন ছিল অত্যাবশক ও সময়ের দাবি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ছিল একেবারেই নীরব, নির্লিপ্ত। চিঠিতে লেখা হয়, নির্বাচনের পরপরই জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট কারচুপির বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন তাদের কাছে রয়েছে। সকলেই এ অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের আহবান জানান। নির্বাচনের দিনই এসব অনিয়ম ও ব্যত্যয়ের নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য আমি নিজে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সরকারি ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ না করতেও লিখিত অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু কমিশন কোন ভূমিকা পালন করেনি।
তাবিথ লিখেছেন, নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যও তাই। আমি বিশ্বাস করি, এই নির্বাচন শুধু ব্যক্তি বিশেষের হার-জিতের নির্বাচন বা নিয়ম রক্ষা বা একটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার নির্বাচন ছিল না। এই নির্বাচন ছিল দেশের সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার একটা চমৎকার সুযোগ। এই নির্বাচন ছিল নগরবাসীর জন্য নির্ভয়ে ভোট প্রদানের মৌলিক অধিকার। অথচ এই নির্বাচনে অধিকাংশ নবীন ভোটারের প্রথমবারের ভোটদানের স্বপ্ন, রোমাঞ্চ ও আকাঙ্ক্ষা ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হলো। তাদের বেশির ভাগ জীবনে প্রথমবার ভোট প্রদান থেকে বঞ্চিত হলো। যে ক’জন প্রথমবার ভোট দিতে গিয়েছিলন, ভোট কেন্দ্রের তাণ্ডব তাদের প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের অভিজ্ঞতাকে চিরতরে তিক্ত ও বিষাদময় করে দিল। যে অশীতিপর মানুষটি হয়তো জীবনের শেষ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু ভোট দিতে পারলেন না তাকে আপনি কি জবাব দেবেন? চিঠিতে লেখা হয়, এবারের প্রকাশ্য ভোট জালিয়াতি আর ভোট কারচুপির ফলে গণতন্ত্রের তথা জাতির কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল তা কিভাবে পূরণ হবে? চোখের সামনে বারবার ভোটের এ ধরনের প্রহসন মঞ্চস্থ হতে দেখে জনমনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে- নির্বাচন মানে কি মানুষ আর নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে না? তাহলে আপনার বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন- এমন একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে কে বা কারা হারলেন সেটা বড়, না জাতি হিসাবে আমরা কি হারালাম সেটা বড় বিবেচ্য। হয়তো জালিয়াতির এ ভোট গণনায় কাউকে না কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র হেরে গেছে। জনগণ আপনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের উপর, চলমান পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আপনারা আবারও প্রমাণ করলেন এ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য আর কোন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সিইসিকে তাবিথ লিখেছেন, আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে জানি ও বিশ্বাস করি- এসব প্রশ্নের জবাব পাবো না। তবে আপনাকে নিজের বিবেক ও নৈতিকতার কাছে প্রশ্ন করতে বিনীত অনুরোধ করছি। আপনি নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং আপনার উপর অর্পিত সাধারণ নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার সুরক্ষার পবিত্র দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে সক্ষম হয়েছেন? আপনার বিবেকের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, আপনাদের এহেন কর্মকাণ্ড ও নির্লিপ্ততার কারণে যখন পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উপরই জনগণের আস্থা চুরমার হয়ে গেছে তারপরও আপনি কি মনে করেন সাংবিধানিক এ পদটির প্রতি আপনি আদৌ সুবিচার করছেন? আশা করি জাতির বৃহত্তর কল্যাণে আপনি এখন এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেবেন। যার ইতিবাচক সুফল হিসেবে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা দলের জয় পরাজয় নয়, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে- জিতবে বাংলাদেশ।
No comments