মাঠের অভাবে ঘরবন্দী কৈশোর by সুমনকুমার দাশ
একটা
সময় ছিল যখন বিকেল হলেই এক ছুটে শিশুরা চলে যেত বাড়ির পাশের মাঠে।
ক্রিকেট, ফুটবল, গোল্লাছুটসহ নানা রকম খেলা চলত। মাত্র কয়েক বছরের
ব্যবধানে এখন মাঠের অভাবে শিশুরা খেলে বাড়ির গ্যারেজে কিংবা রাস্তার
গলিতে। তাদের দিন কাটে এখন কম্পিউটার, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনে গেম খেলে।
সিলেট নগরে একযুগের মধ্যে হারিয়ে গেছে ৩৯টি উন্মুক্ত খেলার মাঠ। নগরজুড়ে এখন মাত্র ১৫টি খেলার মাঠ আছে, যার ১৩টি-ই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে অবস্থিত। ফলে খেলার সুযোগ না থাকায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠন ব্যাহত হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, খেলার মাঠগুলোর মধ্যে উপশহরে দুটি, বালুচর, পাঠানটোলা, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, তাঁতীপাড়া, গোটাটিকর এলাকায় একটি করে সুবিশাল মাঠ রয়েছে। এর বাইরে কয়েক দশক আগেও ব্যক্তি মালিকানাধীনে থাকা উন্মুক্ত স্থানগুলোতে ভবন নির্মিত হয়েছে। নগরের জালালাবাদ আবাসিক এলাকায় এক যুগ আগে মুরীরের মাঠ নামে পরিচিত ৭০ থেকে ৮০ একরের ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি উন্মুক্ত জায়গা ছিল। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ভবন। দেয়ালে ঘেরা ১০ থেকে ১৫ একর জায়গায় শিশুরা এখন খেলাধুলা করে। এর বাইরে নগরের লামাবাজার এলাকায় একটি স্টেডিয়াম থাকলেও সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।
২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মেয়র (বর্তমানে বরখাস্ত) আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরের উন্মুক্ত স্থান ও মাঠ নিয়ে একটি ব্যক্তিগত অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। ২০০২ সালে নগরে ৫৪টি মাঠ ছিল বলে তিনি অনুসন্ধান করে বের করলেও এর কোনো তালিকা সিটি করপোরেশনে রক্ষিত নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় মেয়র কারাবন্দী থাকায় এ নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্র আরও জানায়, ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তখন নগরের লোকসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার ১৯৭ জন। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ। ২০০১ সালে নগরে নয় বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৮০০ এবং ২০১১ সালে একই বয়সী শিশুর সংখ্যা ৯৪ হাজার ৫৫৪ জন। ২০১১ সালের পর পরিসংখ্যান অধিদপ্তর নতুন জরিপ না চালালেও বর্তমানে নগরে প্রায় এই বয়সের দেড় লাখ শিশু রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
শিশুরা খেলাধুলা করতে না পারার প্রভাব সম্পর্কে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাত রঞ্জন দে জানান, শারীরিক কোনো পরিশ্রম না হওয়ায় অসংখ্য শিশু মোটা হয়ে পড়ছে।
এর সূত্র ধরে নগরের তিনটি এলাকার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অভিভাবক ও শিশুদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা লিলি বেগম ছেলেকে ভালো বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য দুই বছর আগে নগরের বালুচর এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেন। তাঁর স্বামী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। তাঁদের নয় বছরের ছেলে মুস্তাকীন নাইম জানায়, গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় বড় মাঠে সে খেলাধুলা করত। এখন ফ্ল্যাটের নিচে গ্যারেজে এক চিলতে খালি জায়গায় খেলে।
নাইমের মা লিলি বেগম বলেন, ‘সিলেটে আসার দুই বছরে ছেলের চোখে চশমা লেগেছে, ওজনও আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গেছে। বাসার পাশে শাহি ঈদগাহ খেলার মাঠ রয়েছে। তবে নিরাপত্তার অভাবে তাকে সেখানে খেলতে দিই না।’
নগরের কুয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শিপ্রা দেবনাথের দুই মেয়ে ঐন্দ্রিলা নাথ ও মৌনতা নাথ সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। দুই বোন অভিন্ন কণ্ঠে বলে, ‘খেলি তো। কম্পিউটারে ফুটবল, ক্রিকেট খেলি। খুব মজা লাগে।’
নগরের লোহারপাড়া এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মারজান আহমেদের বাবা একটি দোকানের কর্মচারী এবং মা গৃহপরিচারিকা। মারজান জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই। তাই বিদ্যালয়ে সে সহপাঠীদের নিয়ে ক্লাসরুমেই খেলাধুলা করে। তার মা শেওলা বেগম বলেন, ‘আমরার পাড়াত কুনু খেলার মাঠ নাই। স্কুল থেইক্যা আইসা মারজান পাড়ার গলির মুখও খেলাত যায়। তয় তারে আমি যাইতে দিই না। কুনসময় যে রিকশা-গাড়ির নিচে চাপাত পড়ব, হের তো ঠিক-ঠিকানা নাই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ‘আগের মেয়রের হিসাব অনুযায়ী মাঠের সংখ্যা ৫৪টি হলেও হতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা নেই। এ ছাড়া লোকসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে অন্তত নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোট ২৭টি খেলার মাঠ থাকা উচিত ছিল, যেটি আমাদের নেই।’
সিলেট নগরে একযুগের মধ্যে হারিয়ে গেছে ৩৯টি উন্মুক্ত খেলার মাঠ। নগরজুড়ে এখন মাত্র ১৫টি খেলার মাঠ আছে, যার ১৩টি-ই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে অবস্থিত। ফলে খেলার সুযোগ না থাকায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠন ব্যাহত হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, খেলার মাঠগুলোর মধ্যে উপশহরে দুটি, বালুচর, পাঠানটোলা, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, তাঁতীপাড়া, গোটাটিকর এলাকায় একটি করে সুবিশাল মাঠ রয়েছে। এর বাইরে কয়েক দশক আগেও ব্যক্তি মালিকানাধীনে থাকা উন্মুক্ত স্থানগুলোতে ভবন নির্মিত হয়েছে। নগরের জালালাবাদ আবাসিক এলাকায় এক যুগ আগে মুরীরের মাঠ নামে পরিচিত ৭০ থেকে ৮০ একরের ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি উন্মুক্ত জায়গা ছিল। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ভবন। দেয়ালে ঘেরা ১০ থেকে ১৫ একর জায়গায় শিশুরা এখন খেলাধুলা করে। এর বাইরে নগরের লামাবাজার এলাকায় একটি স্টেডিয়াম থাকলেও সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।
২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মেয়র (বর্তমানে বরখাস্ত) আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরের উন্মুক্ত স্থান ও মাঠ নিয়ে একটি ব্যক্তিগত অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। ২০০২ সালে নগরে ৫৪টি মাঠ ছিল বলে তিনি অনুসন্ধান করে বের করলেও এর কোনো তালিকা সিটি করপোরেশনে রক্ষিত নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় মেয়র কারাবন্দী থাকায় এ নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্র আরও জানায়, ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তখন নগরের লোকসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার ১৯৭ জন। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ। ২০০১ সালে নগরে নয় বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৮০০ এবং ২০১১ সালে একই বয়সী শিশুর সংখ্যা ৯৪ হাজার ৫৫৪ জন। ২০১১ সালের পর পরিসংখ্যান অধিদপ্তর নতুন জরিপ না চালালেও বর্তমানে নগরে প্রায় এই বয়সের দেড় লাখ শিশু রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
শিশুরা খেলাধুলা করতে না পারার প্রভাব সম্পর্কে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাত রঞ্জন দে জানান, শারীরিক কোনো পরিশ্রম না হওয়ায় অসংখ্য শিশু মোটা হয়ে পড়ছে।
এর সূত্র ধরে নগরের তিনটি এলাকার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অভিভাবক ও শিশুদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা লিলি বেগম ছেলেকে ভালো বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য দুই বছর আগে নগরের বালুচর এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেন। তাঁর স্বামী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। তাঁদের নয় বছরের ছেলে মুস্তাকীন নাইম জানায়, গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় বড় মাঠে সে খেলাধুলা করত। এখন ফ্ল্যাটের নিচে গ্যারেজে এক চিলতে খালি জায়গায় খেলে।
নাইমের মা লিলি বেগম বলেন, ‘সিলেটে আসার দুই বছরে ছেলের চোখে চশমা লেগেছে, ওজনও আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গেছে। বাসার পাশে শাহি ঈদগাহ খেলার মাঠ রয়েছে। তবে নিরাপত্তার অভাবে তাকে সেখানে খেলতে দিই না।’
নগরের কুয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শিপ্রা দেবনাথের দুই মেয়ে ঐন্দ্রিলা নাথ ও মৌনতা নাথ সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। দুই বোন অভিন্ন কণ্ঠে বলে, ‘খেলি তো। কম্পিউটারে ফুটবল, ক্রিকেট খেলি। খুব মজা লাগে।’
নগরের লোহারপাড়া এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মারজান আহমেদের বাবা একটি দোকানের কর্মচারী এবং মা গৃহপরিচারিকা। মারজান জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই। তাই বিদ্যালয়ে সে সহপাঠীদের নিয়ে ক্লাসরুমেই খেলাধুলা করে। তার মা শেওলা বেগম বলেন, ‘আমরার পাড়াত কুনু খেলার মাঠ নাই। স্কুল থেইক্যা আইসা মারজান পাড়ার গলির মুখও খেলাত যায়। তয় তারে আমি যাইতে দিই না। কুনসময় যে রিকশা-গাড়ির নিচে চাপাত পড়ব, হের তো ঠিক-ঠিকানা নাই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ‘আগের মেয়রের হিসাব অনুযায়ী মাঠের সংখ্যা ৫৪টি হলেও হতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা নেই। এ ছাড়া লোকসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে অন্তত নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোট ২৭টি খেলার মাঠ থাকা উচিত ছিল, যেটি আমাদের নেই।’
No comments