ডাউকী নড়লেই কাঁপে সিলেট, ভূমিকম্প আতঙ্ক by ওয়েছ খছরু
ভূমিকম্পে সচেতনতা বাড়াতে সিলেটে মহড়া |
সিলেটের
গা ঘেঁষে ভারতের ডাউকী। স্থলভাগ তামাবিল আর পাহাড়ময় ডাউকী। সমতল ও পাহাড়
আলাদ করে দিয়েছে দু-দেশের মানচিত্র। কিন্তু এই বিভক্তি দমাতে পারবে না
বিপদ। কারণ, ডাউকীতেই রয়েছে ভূমিকম্পের ডেঞ্জার প্লেট। সেটি নড়লেই কেঁপে
ওঠে সিলেট। মাত্রাতিরিক্তভাবে কেঁপে উঠে নেপালের মতো বিপর্যয় নেমে আসতে
পারে সিলেটে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই শহরটি সু-উচ্চ ভবনের শহর। বড় বড়
বিল্ডিং সিলেট নগরকে যেমনি করেছে আধুনিক, তেমনি নিরাপত্তাহীনও। বিশেষজ্ঞরা
জানিয়েছেন, ডাউকি পয়েন্টে ৬ মাত্রার ভূকম্পও হলে সিলেটে ভয়াবহ পরিণতি হবে।
আর যদি ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূকম্প হয়, তবে সিলেট নগরী বলে কিছুই থাকবে না।
এর ফলে কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর সিলেটে আতঙ্ক ঝেঁকে বসেছে। এই অবস্থায় বসে
নেই প্রশাসনও। সিলেট নগরজুড়ে নেয়া হচ্ছে সতর্কাবস্থা। দেয়া হচ্ছে মহড়া। এসব
মহড়ায় ভূমিকম্প হলে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এদিকে, ৬ মাসে
সিলেটে সরকারি বেসরকারিভাবে ভূমিকম্পবিষয়ক বেশ কয়েকটি কর্মশালায় আয়োজন করা
হয়। এসব কর্মশালায় ভূমিকম্পের ক্ষতি কমাতে নানা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা
হয়েছে। একই সঙ্গে সিলেট ভূমিকম্পের কতটুকু ‘ডেঞ্জার জোন’-এ এ নিয়ে তথ্য
দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতি একশ’ বছর পরপর বড় ধরনের ভূমিকম্প
হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সিলেটে প্রায় ১১৮ বছর আগে একটি বড় ধরনের
ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পের শতবছর পূর্তি হয়েছে ১৯৯৭ সালে ১২ই জুন। এ
জন্য গত ১৮ বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা সিলেটসহ বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের
সতর্কতা দিয়ে আসছেন। সেজন্য প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি ক্ষতি কমাতে
যথাযথ নিয়মে ভবন নির্মাণ করা জরুরি।
কিন্তু তাদের সেই আশঙ্কা কিংবা উদ্বেগের প্রতি কান না দিয়ে আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা বেড়েই চলছে সিলেটে। গত এক দশকে হাজারও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এ নগরীতে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৫৪৮ সালে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে সিলেট এলাকায় ব্যাপক ভূপরিবর্তন ঘটে। উঁচু-নিচু ভূমি সমতলে পরিণত হয়। এরপর ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৮১২ ও ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পে সিলেটের মানচিত্র অনেকটাই পাল্টে যায়। সিলেটে এ যাবৎকালের মধ্যে ১৮৯৭ সালের ১২ই জুন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে সংঘটিত ভূমিকম্প ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থ কোয়াক’ নামে পরিচিত। ৮ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ বর্গকিমি এলাকার পাকা দালান-কোঠার ব্যাপক ক্ষতি হয়। শুধু সিলেট জেলারই ৫৪৫টি ভবন ভেঙে পড়ে। মারা যান অসংখ্য মানুষ। ওই ভূকম্পের ফলেই সিলেটজুড়ে সৃষ্টি হয় বিশালাকারের হাওর, বিল, জলাশয়ের। পরবর্তীকালে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূকম্পন হয়েছিল।
এদিকে সিলেটের কাছাকাছি এলাকার প্লেটটি ক্রমেই উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। এক শতাব্দীতে তা এক মিটার করে সরেছে। এ কারণে এ অঞ্চল প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলা দেশে ৩টি ভূকম্প বলয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তথা প্রথম বলয়েই রয়েছে সিলেট। এদিকে, ভুমিকম্প হলে সিলেটের ক্ষতি কেমন হবে এসব নিয়ে গবেষণা, তথ্য প্রকাশসহ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম। একই সঙ্গে সিলেটের মানুষকে নানাভাবে সচেতন করারও চেষ্টা চালাচ্ছেন।
নেপালের ভূমিকম্পের পর তিনি বলেন, সাধারণ ভূমিকম্পের সময়সীমা থাকে ৩০-৪০ সেকেন্ড। ২৫শে এপ্রিল যে ভূকম্প হয়েছে ৯০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। এবং এটি ক্ষতি করেছে নেপালে। তিনি নেপালের এই ভূমিকম্পকে বিপদ সংকেত বলে মনে করেন।
চলছে মহড়ার পর মহড়া: নেপালে ভূমিকম্পের বিপর্যের পর সতর্কতা স্বরূপ সিলেটে চলছে মহড়ার পর মহড়া। সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলোয় দেয়া হচ্ছে এ মহড়া। এতে ভূমিকম্প হলে করণীয় কি এসব বিষয় নিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। নগরীর দরগাহ গেট এলাকায় নূরজাহান হাসপাতাল, মুসলিম সাহিত্য সংসদে মহড়া দেয়া হয়। এতে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, নূরজাহান হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. নাসিম আহমদসহ কমিউনিটি ভলেন্টিয়াররা উপস্থিত ছিলেন। মহড়ায় দমকল কর্মীরা ভূমিকম্প হলে বহুতল ভবন ধসে গেলে সেখান থেকে যতটুকু সম্ভব কম সময়ে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারের কৌশলের মহড়া দেন।
এছাড়াও নূরজাহান হাসপাতালে দুর্যোগকালীন মুহূর্তে কিভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে, তার মহড়া দেয়া হয়। সমপ্রতি নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে কেঁপে ওঠে সিলেটও। পৃথিবীর দীর্ঘতম ফল্টলাইন ডাউকির অবস্থান মাত্র আড়াইশ’ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হওয়ায় সিলেট ভূমিকম্প ঝুকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেন বিশেষজ্ঞরা। আর সিলেটে বহুতল ভবনের সংখ্যা বেশি হওয়াতে অধিক ক্ষতির আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পরপর কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর ফায়ার সার্ভিস বিশেষ প্রশিক্ষণসহ নগরীরর বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভির ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সিলেট ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ একটি নগরী। তাই স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। জনসচেতনা বৃদ্ধিতে এই মহড়া দেয়া হচ্ছে। মহড়া অব্যাহত থাকবে। স্বেচ্ছাসেবীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে।
কিন্তু তাদের সেই আশঙ্কা কিংবা উদ্বেগের প্রতি কান না দিয়ে আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা বেড়েই চলছে সিলেটে। গত এক দশকে হাজারও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এ নগরীতে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৫৪৮ সালে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে সিলেট এলাকায় ব্যাপক ভূপরিবর্তন ঘটে। উঁচু-নিচু ভূমি সমতলে পরিণত হয়। এরপর ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৮১২ ও ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পে সিলেটের মানচিত্র অনেকটাই পাল্টে যায়। সিলেটে এ যাবৎকালের মধ্যে ১৮৯৭ সালের ১২ই জুন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে সংঘটিত ভূমিকম্প ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থ কোয়াক’ নামে পরিচিত। ৮ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ বর্গকিমি এলাকার পাকা দালান-কোঠার ব্যাপক ক্ষতি হয়। শুধু সিলেট জেলারই ৫৪৫টি ভবন ভেঙে পড়ে। মারা যান অসংখ্য মানুষ। ওই ভূকম্পের ফলেই সিলেটজুড়ে সৃষ্টি হয় বিশালাকারের হাওর, বিল, জলাশয়ের। পরবর্তীকালে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূকম্পন হয়েছিল।
এদিকে সিলেটের কাছাকাছি এলাকার প্লেটটি ক্রমেই উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। এক শতাব্দীতে তা এক মিটার করে সরেছে। এ কারণে এ অঞ্চল প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলা দেশে ৩টি ভূকম্প বলয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তথা প্রথম বলয়েই রয়েছে সিলেট। এদিকে, ভুমিকম্প হলে সিলেটের ক্ষতি কেমন হবে এসব নিয়ে গবেষণা, তথ্য প্রকাশসহ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম। একই সঙ্গে সিলেটের মানুষকে নানাভাবে সচেতন করারও চেষ্টা চালাচ্ছেন।
নেপালের ভূমিকম্পের পর তিনি বলেন, সাধারণ ভূমিকম্পের সময়সীমা থাকে ৩০-৪০ সেকেন্ড। ২৫শে এপ্রিল যে ভূকম্প হয়েছে ৯০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। এবং এটি ক্ষতি করেছে নেপালে। তিনি নেপালের এই ভূমিকম্পকে বিপদ সংকেত বলে মনে করেন।
চলছে মহড়ার পর মহড়া: নেপালে ভূমিকম্পের বিপর্যের পর সতর্কতা স্বরূপ সিলেটে চলছে মহড়ার পর মহড়া। সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলোয় দেয়া হচ্ছে এ মহড়া। এতে ভূমিকম্প হলে করণীয় কি এসব বিষয় নিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। নগরীর দরগাহ গেট এলাকায় নূরজাহান হাসপাতাল, মুসলিম সাহিত্য সংসদে মহড়া দেয়া হয়। এতে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, নূরজাহান হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. নাসিম আহমদসহ কমিউনিটি ভলেন্টিয়াররা উপস্থিত ছিলেন। মহড়ায় দমকল কর্মীরা ভূমিকম্প হলে বহুতল ভবন ধসে গেলে সেখান থেকে যতটুকু সম্ভব কম সময়ে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারের কৌশলের মহড়া দেন।
এছাড়াও নূরজাহান হাসপাতালে দুর্যোগকালীন মুহূর্তে কিভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে, তার মহড়া দেয়া হয়। সমপ্রতি নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে কেঁপে ওঠে সিলেটও। পৃথিবীর দীর্ঘতম ফল্টলাইন ডাউকির অবস্থান মাত্র আড়াইশ’ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হওয়ায় সিলেট ভূমিকম্প ঝুকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেন বিশেষজ্ঞরা। আর সিলেটে বহুতল ভবনের সংখ্যা বেশি হওয়াতে অধিক ক্ষতির আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পরপর কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর ফায়ার সার্ভিস বিশেষ প্রশিক্ষণসহ নগরীরর বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভির ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সিলেট ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ একটি নগরী। তাই স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। জনসচেতনা বৃদ্ধিতে এই মহড়া দেয়া হচ্ছে। মহড়া অব্যাহত থাকবে। স্বেচ্ছাসেবীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে।
No comments