ঝুলন্ত পার্লামেন্টের পথেই কি বৃটেন?
বৃটেনের
রাজনীতিতে তীব্র এক অনিশ্চয়তা। কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, সরকার গঠন করবে
কোন দল- কোন বিশেষজ্ঞই এ বিষয়ে পূর্বাভাস দিতে পারেন নি। উল্টো তারা
বলেছেন, এ যাবৎকাল সেখানে যত নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে গতকালের নির্বাচন
হয়েছে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না
বলে বিভিন্ন জরিপে তথ্য উঠে এসেছে। তবে কি ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রিত্ব
ধরে রাখতে পারবেন! উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ দখল করবেন তার আসন? নাকি
তাদের কেউ অন্য আর একটি বা একাধিক দলের কাঁধে ভর করে উঠে দাঁড়াবেন? এমন
জিজ্ঞাসা জনে জনে। এ নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১১ জন প্রার্থী বিভিন্ন
পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের ঘিরে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে এক রকম
উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তারা সবাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এখন অপেক্ষা ফল
প্রকাশের জন্য। বাংলাদেশ সময় গতরাত চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই ফল আসা
শুরু হবে। দিনশেষে হয়তো ঠাহর করা যেতে পারে কোনদিকে গড়াচ্ছে নির্বাচনের
ফল। প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের জরিপে বলা হয়েছে, নির্বাচনে
কনজার্ভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি দুদলই ২৭৩টি করে আসন পেতে পারে। এসএনপি
পেতে পারে ৫২ আসন। লিব-ডেম পেতে পারে ২৭ আসন। সে ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা
পেতে কনজার্ভেটিভ বা লেবার দলকে আরও ৫৩টি বাড়তি আসন সংগ্রহ করতে হবে ছোট
দলগুলোর কাছ থেকে। এমন যদি হয় অবস্থা তাহলে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে
প্রধানমন্ত্রী পড়ে থাকার জন্য প্রয়োজন হতে পারে পার্লামেন্টে আস্থা ভোট
আহ্বান করা। এমন আস্থাভোটে তিনি অন্য কোন দলের সমর্থন নাও পেতে পারেন।
সাবেক কেবিনেট সেক্রেটারি গাস ও’ডোনেল পূর্বাভাস দিয়েছেন, যদি ডেভিড
ক্যামেরন সমর্থন না পান তাহলে দ্রুততম সময়ে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। গতকাল
স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় বৃটেনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে স্থানীয় সময় রাত ১০টা
পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই ভোট দিয়েছেন কনজার্ভেটিভ নেতা বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা ও
উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ, লেবার দলের নেতা এডওয়ার্ড মিলিব্যান্ড, ইউকিপ
নেতা নাইজেল ফারাজে, গ্রিনস দলনেতা নাতালি বেনেট, এসএনপি দলীয় নেতা নিকোলা
স্টারজিওন ও প্লেইড কিমরু নেতা লিনি উড। পুরো যুক্তরাজ্যে ৫০ হাজার
ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ করা হয়। এ ভোটের মাধ্যমে সেখানকার প্রায় ৫
কোটি ভোটার তাদের ওয়েস্টমিনস্টার এমপি নির্বাচিত করেন। এমন মোট ৬৫০ জন এমপি
নির্বাচনের পক্ষে তারা তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের
পাশাপাশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ২৭৯ জনের বেশি কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। একই
সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেডফোর্ড, কপল্যান্ড, লিসেস্টার, ম্যানসফিল্ড,
মিডলবরো ও টরবের জন্য ৬ জন মেয়র। বেডফোর্ডশায়ারে অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিলের
ট্যাক্স বাড়ানো নিয়ে গণভোট। তবে গতকাল ভোট শুরুর আগেই অনেক ভোটার তাদের ভোট
দিয়েছেন অনলাইনে। স্থানীয় সময় গত মধ্যরাতে কিছু কিছু আসনের ফল ঘোষণার কথা
রয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ ফল বৃটেনের আজকের বিকেল নাগাদ পাওয়া যেতে পারে। রাত
১০টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলেও ওই সময়ে যদি কোন ভোটকেন্দ্রের লাইনে দাঁড়ানো থাকেন
তাকেও ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। নির্বাচনের ফল সরাসরি সম্প্রচার করবে
বিশ্বের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল। স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৫৫ মিনিট থেকে
নির্বাচনবিষয়ক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বিবিসি। বিবিসি রেডিও ৪ ও ৫
থেকেও সরাসরি ফল ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া সরাসরি ফল ঘোষণা করবে আইটিভি, স্কাই
নিউজ, চ্যানেল ৪, সিএনএনসহ বিভিন্ন টিভি ও রেডিও। গতকাল গার্ডিয়ান যে জরিপ
প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, কনজার্ভেটিভ পার্টির সমর্থন অনেকটা বেড়েছে।
তবে এড মিলিব্যান্ডের সমর্থন অটুট রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডেভিড ক্যামেরনের
কনজার্ভেটি পার্টি মোট ভোটের শতকরা ৩৪ ভাগ ভোট পেতে পারে। লেবার পার্টি
পেতে পারে শতকরা ৩৩.৫ ভাগ ভোট। লিবারেল ডেমোক্র্যাট পেতে পারে শতকরা ৯ ভাগ,
ইউকিপ পেতে পারে শতকরা ১২.৫ ভাগ ও গ্রিনস দল পেতে পারে শতকরা ৫ ভাগ ভোট।
এতে বলা হয়, নিক ক্লেগকে সামনের ৫টি বছর জটিল পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হবে।
তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পাশাপাশি তার দলের সমর্থন আগের চেয়ে কিছুটা
অগ্রসর হয়েছে। ইউকিপ দলের সমর্থন জানুয়ারিতে ছিল ১৫ ভাগ। তা এখনও সেভাবেই
আছে। তবে স্কটল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন এবার সবাই। সেখানে স্কটিশ
ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) শতকরা ৪৮ ভাগ ভোট পেতে পারে। লেবার দল পেতে
পারে শতকরা ২৬.৫ ভাগ, টোরিরা পেতে পারে শতকরা ১৫ ভাগ, লিব-ডেম পেতে পারে ৬
ভাগ, ইউকিপ ও গ্রিনস পাবে শতকরা ২ ভাগ ভোট। এর অর্থ হলো, স্কটল্যান্ড থেকে
লেবার দলের সুইং ভোটের শতকরা ২০ ভাগ চলে যেতে পারে এসএনপির ঘরে। ২০১০ সালের
নির্বাচনে এখানে লেবার দল পেয়েছিল শতকরা ৪২ ভাগ, এসএনপি ২০ ভাগ, লিব-ডেম
১৯ ভাগ ও কনজার্ভেটিভ ১৬.৫ ভাগ ভোট।
No comments