সমন্বিত গণমাধ্যম নীতিমালা দরকার by গোলাম রহমান
বিশেষ সাক্ষাৎকার: সরকার প্রণীত জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমানের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো- সরকারকে সমালোচনা করছি আমরা। কিন্তু শূন্যস্থানটা মিডিয়াই সৃষ্টি করে রেখেছিল কি না? তারা নিজেরা আচরণবিধি করেনি।
গোলাম রহমান- তারা করেনি, এটা ঠিক। সম্প্রচারমাধ্যমের বিকাশ দুই দশকেরও নয়।
প্রথম আলো- আপনি কি যথার্থতা দিচ্ছেন যে তারা যথেষ্ট সময় পায়নি?
গোলাম রহমান- না। প্রেক্ষাপট বলছি। বেসরকারি চ্যানেলের আকস্মিক একটা রমরমা অবস্থা এল। এফএম রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিওর অবশ্য কিছু নিয়ম আছে।
প্রথম আলো- সেটা ছাড়পত্র-সংক্রান্ত। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ যে যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ বলেছে, তার আলোকে তারা কিছু করেছে কি? রেডিও-টিভির জবাবদিহি আছে কি?
গোলাম রহমান- ৩৯ অনুচ্ছেদের প্রভাব কখনো কখনো পড়েছে। রামমন্দিরের ওপর সিএনএনের সম্প্রচার দেখানো হলেও পরে তারা নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার আগে বন্ধ করতে বলেছিল।
প্রথম আলো- তার মানে সরকারকেই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। মিডিয়া নিজ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেনি। কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
গোলাম রহমান- এটা সত্যি। শুধু ছিল না, তাই নয়। এর তদারকিও সহজ নয়। কারণ, এটা তাৎক্ষণিক সম্প্রচার। ফিল্টার করে তথ্য প্রদানের কার্যসাধন-পদ্ধতি নেই। এটা সম্ভবও নয়।
প্রথম আলো- মুম্বাইয়ের হোটেলে সন্ত্রাসী হামলার লাইভ দেখানো নিয়ে বেশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলো। সরকারও আপত্তি তুলল। এরপর মিডিয়াই কিন্তু ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন করল। আচরণবিধি বানাল। এ রকম চিন্তার আকাল এখানে কেন? এটা অসম্ভব?
গোলাম রহমান- সম্ভব। তবে তারা তো অনেক ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা চায়। সেদিন এক টক শোতে এমন দাবি করতে শুনলাম। বললাম, এটায় আমি বিশ্বাস করি না।
প্রথম আলো- তবে আপনি কিছু ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা চাইতে পারেন।
গোলাম রহমান- সেখানে দায়িত্ববোধের ব্যাপার আছে। আমাদের গণমাধ্যম, বিশেষ করে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে জবাবদিহির জায়গা কতটা তৈরি হয়েছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।
প্রথম আলো- বাংলাদেশে এটা কী মাত্রায় আছে?
গোলাম রহমান- সংবাদপত্রের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে।
প্রথম আলো- নীতিমালা করার ক্ষেত্রে সরকারের মূল উদ্দেশ্য কী?
গোলাম রহমান- সম্প্রচার-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দিক থেকে দাবি ছিল। এটা চাওয়ার দরকার ছিল না। কিন্তু তাঁরা অনেকটা চেয়ে নিয়েছেন। সরকারও একটা সুযোগ নিয়েছে। নৈতিক দিক থেকে একটি সংবাদপত্র কীভাবে চলবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার হওয়া উচিত। অবশ্য একটি আইনি ব্যাপার আছে। অন্যটি নীতিনির্ধারণী। দুটিকে এক করা যাবে না।
প্রথম আলো- মিডিয়ার কোনো কোনো প্রতিনিধি বলছেন, তাঁদের অভিমত সরকার অগ্রাহ্য করেছে।
গোলাম রহমান- প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার সরকারি দাবি আংশিক সত্য।
প্রথম আলো- বাংলাদেশের মিডিয়া ন্যায়পাল নিয়োগে অনীহা দেখাচ্ছে। তারা জবাবদিহির পরিসর বাড়াতে কুণ্ঠিত নয় কি? এটা গণতন্ত্র পিছিয়ে থাকা, নাকি তাদের যোগ্যতা-সামর্থ্যের সূচক?
গোলাম রহমান- গণতন্ত্র তো সংবাদপত্রের চেয়ে পিছিয়ে আছে। সংবাদপত্র অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। এই ভোগের ক্ষেত্রে কোথাও পদস্খলন ঘটছে। পিছলে পড়ছে। স্বাধীনতা দেখাতে গিয়ে তারা কখনো জনগণকে থোরাই কেয়ার করছে। ভুল সংবাদে ব্যথিত ব্যক্তিকে বেশির ভাগ পত্রিকা তোয়াক্কা করে না। তারা প্রতিবাদ ছাপে না। কোথাওবা দু-চার লাইন ছাপে। এর মানে দাঁড়াল, মিডিয়া এই প্রবণতা দেখাচ্ছে যে তারা যা বলছে, সেটাই চূড়ান্ত। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, স্বাধীনতা তারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করছে কি না? প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস আইন যে সরকার গভীরভাবে প্রয়োগ করছে, তাও নয়। সে কারণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার একটি ঐতিহ্য দাঁড়িয়ে গেছে।
প্রথম আলো- যাকে ঐতিহ্য বলছেন, সেটা কি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে?
গোলাম রহমান- সব সংবাদপত্রকে এক করে দেখা সম্ভব নয়। কোথাও কোথাও সহনীয় মাত্রা অতিক্রান্ত। মিথ্যা খবর, মিথ্যা ছবি বের হচ্ছে, তবে সাধারণীকরণ করতে চাই না।
প্রথম আলো- কোনো সম্পাদক যদি নীতির বাইরে ধর্মকে উপজীব্য করেন, বানানো ছবি প্রকাশ করেন আর সংবাদপত্রজগৎ থেকে তা বন্ধের চেষ্টা না থাকে এবং সরকার বাড়াবাড়ি করে ফেলে। তখন সংকট হয়।
গোলাম রহমান- সেটাই হয়েছে। অনেক বেশি পেশাজীবীত্ব থাকলে এমনটা হয়তো ঘটত না। ঢালাওভাবে অপবাদ দেওয়া যাবে না। কোনো কোনো গণমাধ্যম বাড়াবাড়ি করেছে, অথচ প্রচলিত আইনে তার প্রতিকার হতে পারত। সেটা তো হয়নি। নতুন আইন লাগবে না। আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার।
প্রথম আলো- সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির কথা মিডিয়ায় আসে। মিডিয়াও কি এসব থেকে মুক্ত?
গোলাম রহমান- মিডিয়া কীভাবে সংযুক্ত তা পরিষ্কার নয়, তবে মিডিয়া দুর্নীতির প্রচুর খবর ছাপে। টিআই যে সূচক ছাপে, তার অন্যতম সূত্র মিডিয়া।
প্রথম আলো- তার মানে মিডিয়ার দুর্নীতি সম্পর্কে আপনি সন্দিহান?
গোলাম রহমান- প্রমাণ তো নেই। তবে ধারণা করি, ব্যাপক দুর্নীতি আছে। মিডিয়ার অনেক মালিক বা অংশীদার মিডিয়ার নাম করে অন্য ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছেন। মিডিয়া তাঁদের ঢাল।
প্রথম আলো- প্রতিকার কী? এর জবাবদিহি কে নিশ্চিত করবে?
গোলাম রহমান- আইনের শাসন। আমি মনে করি, মিডিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির মাত্রা এখনো কম।
প্রথম আলো- সরকার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে? সরকার এই নীতিমালা আকস্মিকভাবে করেনি। মিডিয়া তাকে রুখতে পারেনি। কারণ, তার দুর্বলতার কারণে।
গোলাম রহমান- অব্যবস্থাপনাগত কারণটাই প্রধান। তার ভেতরের অস্থিরতা তাকে দুর্বল করছে।
প্রথম আলো- সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা কি হুমকির মুখে?
গোলাম রহমান- না। আমি সেটা বলব না। খেলার তো একটা নিয়ম থাকবে।
প্রথম আলো- সম্প্রচার নীতিমালার কোনগুলো বাতিলযোগ্য?
গোলাম রহমান- এতে দ্বিরুক্তি আছে। অনেক জায়গায় ঢালাও বলা আছে। একই বিষয় এক স্থানে নির্দেশনামূলক, আবার অন্যত্র নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে সম্প্রচারমাধ্যম খবর প্রকাশ করতে পারবে না।
প্রথম আলো- পাঁচটির কম ধারা বাতিল করলেই চলে কি না?
গোলাম রহমান- সেভাবে দেখলে চলবে না। অনেক ধারা আছে, যেগুলো বহাল রাখলে অপব্যবহারের সুযোগ আছে। কোনো কোনোটি তথ্য অধিকার, কপিরাইট আইন, এমনকি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা টিকতে পারে না। এর প্রায়োগিক ভিত্তি দাঁড়াবে না। সরকার বলছে আইন করবে। তাহলে এটা করা হলো কেন? সংবিধানের ৩৯ ধারাটা মাথায় রেখে আইন করলেই চলত।
প্রথম আলো- আপনার এই মন্তব্য আপনার আগের বক্তব্য খণ্ডন করল কি না?
গোলাম রহমান- যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ অনেক ক্ষেত্রে আরোপ হয়নি। মিডিয়ার বর্তমান প্র্যাকটিস এবং প্রযুক্তির সম্প্রসারণ লক্ষ করলেই আপনি নতুন প্রেক্ষাপট পাচ্ছেন যে, এর চলার জন্য নতুন কানুন লাগবে। সব মিডিয়ার একই কেন্দ্র অভিমুখে যাত্রা (কনভারজেন্স অব মিডিয়া) দেখতে পাচ্ছি। তাদের আলাদা পরিচয় লোপ পাচ্ছে। একটি চিপস সব মিডিয়াকে ধারণ করবে।
প্রথম আলো- তাহলে আরেকটি কমিশন করা কেন, প্রেস কাউন্সিলকে মিডিয়া কাউন্সিল করলেই তো চলে।
গোলাম রহমান- আমি একমত। নীতিমালা অনুমোদনের দিনেই বলেছি, কেন আপনারা আলাদা সম্প্রচার নীতিমালা করছেন। একটি সমন্বিত গণমাধ্যম নীতিমালা এর সমাধান। এটাই করা সমীচীন।
প্রথম আলো- আপনাকে ধন্যবাদ।
গোলাম রহমান- ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো- সরকারকে সমালোচনা করছি আমরা। কিন্তু শূন্যস্থানটা মিডিয়াই সৃষ্টি করে রেখেছিল কি না? তারা নিজেরা আচরণবিধি করেনি।
গোলাম রহমান- তারা করেনি, এটা ঠিক। সম্প্রচারমাধ্যমের বিকাশ দুই দশকেরও নয়।
প্রথম আলো- আপনি কি যথার্থতা দিচ্ছেন যে তারা যথেষ্ট সময় পায়নি?
গোলাম রহমান- না। প্রেক্ষাপট বলছি। বেসরকারি চ্যানেলের আকস্মিক একটা রমরমা অবস্থা এল। এফএম রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিওর অবশ্য কিছু নিয়ম আছে।
প্রথম আলো- সেটা ছাড়পত্র-সংক্রান্ত। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ যে যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ বলেছে, তার আলোকে তারা কিছু করেছে কি? রেডিও-টিভির জবাবদিহি আছে কি?
গোলাম রহমান- ৩৯ অনুচ্ছেদের প্রভাব কখনো কখনো পড়েছে। রামমন্দিরের ওপর সিএনএনের সম্প্রচার দেখানো হলেও পরে তারা নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার আগে বন্ধ করতে বলেছিল।
প্রথম আলো- তার মানে সরকারকেই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। মিডিয়া নিজ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেনি। কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
গোলাম রহমান- এটা সত্যি। শুধু ছিল না, তাই নয়। এর তদারকিও সহজ নয়। কারণ, এটা তাৎক্ষণিক সম্প্রচার। ফিল্টার করে তথ্য প্রদানের কার্যসাধন-পদ্ধতি নেই। এটা সম্ভবও নয়।
প্রথম আলো- মুম্বাইয়ের হোটেলে সন্ত্রাসী হামলার লাইভ দেখানো নিয়ে বেশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলো। সরকারও আপত্তি তুলল। এরপর মিডিয়াই কিন্তু ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন করল। আচরণবিধি বানাল। এ রকম চিন্তার আকাল এখানে কেন? এটা অসম্ভব?
গোলাম রহমান- সম্ভব। তবে তারা তো অনেক ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা চায়। সেদিন এক টক শোতে এমন দাবি করতে শুনলাম। বললাম, এটায় আমি বিশ্বাস করি না।
প্রথম আলো- তবে আপনি কিছু ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা চাইতে পারেন।
গোলাম রহমান- সেখানে দায়িত্ববোধের ব্যাপার আছে। আমাদের গণমাধ্যম, বিশেষ করে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে জবাবদিহির জায়গা কতটা তৈরি হয়েছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।
প্রথম আলো- বাংলাদেশে এটা কী মাত্রায় আছে?
গোলাম রহমান- সংবাদপত্রের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে।
প্রথম আলো- নীতিমালা করার ক্ষেত্রে সরকারের মূল উদ্দেশ্য কী?
গোলাম রহমান- সম্প্রচার-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দিক থেকে দাবি ছিল। এটা চাওয়ার দরকার ছিল না। কিন্তু তাঁরা অনেকটা চেয়ে নিয়েছেন। সরকারও একটা সুযোগ নিয়েছে। নৈতিক দিক থেকে একটি সংবাদপত্র কীভাবে চলবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার হওয়া উচিত। অবশ্য একটি আইনি ব্যাপার আছে। অন্যটি নীতিনির্ধারণী। দুটিকে এক করা যাবে না।
প্রথম আলো- মিডিয়ার কোনো কোনো প্রতিনিধি বলছেন, তাঁদের অভিমত সরকার অগ্রাহ্য করেছে।
গোলাম রহমান- প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার সরকারি দাবি আংশিক সত্য।
প্রথম আলো- বাংলাদেশের মিডিয়া ন্যায়পাল নিয়োগে অনীহা দেখাচ্ছে। তারা জবাবদিহির পরিসর বাড়াতে কুণ্ঠিত নয় কি? এটা গণতন্ত্র পিছিয়ে থাকা, নাকি তাদের যোগ্যতা-সামর্থ্যের সূচক?
গোলাম রহমান- গণতন্ত্র তো সংবাদপত্রের চেয়ে পিছিয়ে আছে। সংবাদপত্র অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। এই ভোগের ক্ষেত্রে কোথাও পদস্খলন ঘটছে। পিছলে পড়ছে। স্বাধীনতা দেখাতে গিয়ে তারা কখনো জনগণকে থোরাই কেয়ার করছে। ভুল সংবাদে ব্যথিত ব্যক্তিকে বেশির ভাগ পত্রিকা তোয়াক্কা করে না। তারা প্রতিবাদ ছাপে না। কোথাওবা দু-চার লাইন ছাপে। এর মানে দাঁড়াল, মিডিয়া এই প্রবণতা দেখাচ্ছে যে তারা যা বলছে, সেটাই চূড়ান্ত। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, স্বাধীনতা তারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করছে কি না? প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস আইন যে সরকার গভীরভাবে প্রয়োগ করছে, তাও নয়। সে কারণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার একটি ঐতিহ্য দাঁড়িয়ে গেছে।
প্রথম আলো- যাকে ঐতিহ্য বলছেন, সেটা কি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে?
গোলাম রহমান- সব সংবাদপত্রকে এক করে দেখা সম্ভব নয়। কোথাও কোথাও সহনীয় মাত্রা অতিক্রান্ত। মিথ্যা খবর, মিথ্যা ছবি বের হচ্ছে, তবে সাধারণীকরণ করতে চাই না।
প্রথম আলো- কোনো সম্পাদক যদি নীতির বাইরে ধর্মকে উপজীব্য করেন, বানানো ছবি প্রকাশ করেন আর সংবাদপত্রজগৎ থেকে তা বন্ধের চেষ্টা না থাকে এবং সরকার বাড়াবাড়ি করে ফেলে। তখন সংকট হয়।
গোলাম রহমান- সেটাই হয়েছে। অনেক বেশি পেশাজীবীত্ব থাকলে এমনটা হয়তো ঘটত না। ঢালাওভাবে অপবাদ দেওয়া যাবে না। কোনো কোনো গণমাধ্যম বাড়াবাড়ি করেছে, অথচ প্রচলিত আইনে তার প্রতিকার হতে পারত। সেটা তো হয়নি। নতুন আইন লাগবে না। আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার।
প্রথম আলো- সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির কথা মিডিয়ায় আসে। মিডিয়াও কি এসব থেকে মুক্ত?
গোলাম রহমান- মিডিয়া কীভাবে সংযুক্ত তা পরিষ্কার নয়, তবে মিডিয়া দুর্নীতির প্রচুর খবর ছাপে। টিআই যে সূচক ছাপে, তার অন্যতম সূত্র মিডিয়া।
প্রথম আলো- তার মানে মিডিয়ার দুর্নীতি সম্পর্কে আপনি সন্দিহান?
গোলাম রহমান- প্রমাণ তো নেই। তবে ধারণা করি, ব্যাপক দুর্নীতি আছে। মিডিয়ার অনেক মালিক বা অংশীদার মিডিয়ার নাম করে অন্য ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছেন। মিডিয়া তাঁদের ঢাল।
প্রথম আলো- প্রতিকার কী? এর জবাবদিহি কে নিশ্চিত করবে?
গোলাম রহমান- আইনের শাসন। আমি মনে করি, মিডিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির মাত্রা এখনো কম।
প্রথম আলো- সরকার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে? সরকার এই নীতিমালা আকস্মিকভাবে করেনি। মিডিয়া তাকে রুখতে পারেনি। কারণ, তার দুর্বলতার কারণে।
গোলাম রহমান- অব্যবস্থাপনাগত কারণটাই প্রধান। তার ভেতরের অস্থিরতা তাকে দুর্বল করছে।
প্রথম আলো- সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা কি হুমকির মুখে?
গোলাম রহমান- না। আমি সেটা বলব না। খেলার তো একটা নিয়ম থাকবে।
প্রথম আলো- সম্প্রচার নীতিমালার কোনগুলো বাতিলযোগ্য?
গোলাম রহমান- এতে দ্বিরুক্তি আছে। অনেক জায়গায় ঢালাও বলা আছে। একই বিষয় এক স্থানে নির্দেশনামূলক, আবার অন্যত্র নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে সম্প্রচারমাধ্যম খবর প্রকাশ করতে পারবে না।
প্রথম আলো- পাঁচটির কম ধারা বাতিল করলেই চলে কি না?
গোলাম রহমান- সেভাবে দেখলে চলবে না। অনেক ধারা আছে, যেগুলো বহাল রাখলে অপব্যবহারের সুযোগ আছে। কোনো কোনোটি তথ্য অধিকার, কপিরাইট আইন, এমনকি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা টিকতে পারে না। এর প্রায়োগিক ভিত্তি দাঁড়াবে না। সরকার বলছে আইন করবে। তাহলে এটা করা হলো কেন? সংবিধানের ৩৯ ধারাটা মাথায় রেখে আইন করলেই চলত।
প্রথম আলো- আপনার এই মন্তব্য আপনার আগের বক্তব্য খণ্ডন করল কি না?
গোলাম রহমান- যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ অনেক ক্ষেত্রে আরোপ হয়নি। মিডিয়ার বর্তমান প্র্যাকটিস এবং প্রযুক্তির সম্প্রসারণ লক্ষ করলেই আপনি নতুন প্রেক্ষাপট পাচ্ছেন যে, এর চলার জন্য নতুন কানুন লাগবে। সব মিডিয়ার একই কেন্দ্র অভিমুখে যাত্রা (কনভারজেন্স অব মিডিয়া) দেখতে পাচ্ছি। তাদের আলাদা পরিচয় লোপ পাচ্ছে। একটি চিপস সব মিডিয়াকে ধারণ করবে।
প্রথম আলো- তাহলে আরেকটি কমিশন করা কেন, প্রেস কাউন্সিলকে মিডিয়া কাউন্সিল করলেই তো চলে।
গোলাম রহমান- আমি একমত। নীতিমালা অনুমোদনের দিনেই বলেছি, কেন আপনারা আলাদা সম্প্রচার নীতিমালা করছেন। একটি সমন্বিত গণমাধ্যম নীতিমালা এর সমাধান। এটাই করা সমীচীন।
প্রথম আলো- আপনাকে ধন্যবাদ।
গোলাম রহমান- ধন্যবাদ।
No comments