রদ্রিগেজের স্বপ্নের অভিষেক ম্লান
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মূল পার্থক্যটা কোথায়? মৌসুমের প্রথম মাদ্রিদ ডার্বির আগে যুতসই একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ডিয়েগো সিমিওনে, ‘৯৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে রিয়াল কেনে দু’জন খেলোয়াড় আর আমরা কিনি নয়জন। এটাই পার্থক্য।’ কিন্তু প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মনের জোর অনেক সময় ধনী-গরিবের মেরু ব্যবধান ঘুচিয়ে দিতে পারে। গত মৌসুমে স্প্যানিশ লীগ জিতে ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠে সেটাই করে দেখিয়েছিল অ্যাটলেটিকো। সেই ঐতিহাসিক সাফল্যের চার প্রধান কুশীলব কস্তা, ভিয়া, ফিলিপ লুইস ও থিবো কোর্তুয়া দল ছেড়ে গেছেন। কিন্তু ভাঙা হাট হলেও অ্যাটলেটিকোর লড়াকু মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। নতুন মৌসুমের শুরুতেই তার প্রমাণ মিলল। মঙ্গলবার স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম লেগে রিয়ালকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছে অ্যাটলেটিকো। বার্নাব্যুতে জেমস রদ্রিগেজের অভিষেকটা স্বপ্নের মতোই হতে যাচ্ছিল। ঘরের মাঠে বদলি হিসেবে নেমে ৮০ মিনিটে রিয়ালকে এগিয়ে দিয়েছিলেন এই কলম্বিয়ান সেনসেশন। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দুয়েক আগে রদ্রিগেজের হাসি কেড়ে নেন অ্যাটলেটিকোর হিরো রাউল গার্সিয়া। তার দারুণ এক গোলেই জয়বঞ্চিত হতে হয় রিয়ালকে। মহামূল্যবান এই অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে শুক্রবারের দ্বিতীয় লেগে মানসিকভাবে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে ডিয়েগো সিমিওনের দল। গতবার দুই লেগেই বার্সেলোনাকে রুখে দিয়েছিল অ্যাটলেটিকো। কিন্তু ঝুলিতে অ্যাওয়ে গোল না থাকায় কপাল পুড়েছিল তাদের। আগামীকাল ভিসেন্তে ক্যালডেরনে ফিরতি ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হলে এবার কপাল চাপড়াতে হবে রিয়ালকে। তার ওপর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর খেলা নিয়ে রয়েছে প্রবল অনিশ্চয়তা। পরশু পায়ের পেশিতে টান লাগায় দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে নামতে পারেননি রিয়ালের প্রাণভোমরা। গত সপ্তাহে রোনাল্ডোর জোড়া গোলেই সেভিয়াকে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ জিতেছে রিয়াল। পরশু প্রথম একাদশে থাকলেও সিআর সেভেন ছিলেন নিষ্প্রভ।
বরং বাঁ-পায়ের চোটের কারণে দ্বিতীয়ার্ধে তাকে তুলে নিতে বাধ্য হন কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি। রোনাল্ডোর পরিবর্তেই রিয়ালের জার্সি গায়ে ঘরের মাঠে অভিষেক হয় বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটজয়ী কলম্বিয়ান প্লেমেকার রদ্রিগেজের। ম্যাচটি ছিল আবার গত মৌসুমের চ্যাম্পিন্স লীগ ফাইনালের পুনর্মঞ্চায়ন। রিয়াল মোটেও গোছাল ফুটবল খেলতে পারেনি। যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে পুরো ম্যাচেই তুলনামূলক শক্তিধর প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছিল প্রতিশোধের মন্ত্রে উজ্জীবিত অ্যাটলেটিকো। বলের দখলে পিছিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধে মারিও মান্দজুকিচ ও রাউল গার্সিয়ার মাধ্যমে গোলের নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল অ্যাটলেটিকোই। রিয়ালকে বাঁচিয়ে দেন শেষ প্রহরী ইকার ক্যাসিয়াস। স্বাগতিকদের পক্ষে ভালো সুযোগ হাতছাড়া করেন গ্যারেথ বেল ও টনি ক্রুস। ৮০ মিনিটে রদ্রিগেজের গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। করিম বেনজেমার একটি শট প্রতিহত হয়ে ফিরে এলে ফিরতি শট নেন রদ্রিগেজ। তার শট অ্যাটলেটিকোর এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বোকা বানায় গোলকিপারকে। ৮৮ মিনিটে কোকের কর্নার থেকে দারুণ এক ফ্লিকে রিয়াল সমর্থকদের হতাশ করেন গার্সিয়া (১-১)। ম্যাচ শেষে রোনাল্ডোর চোট নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি আন্সেলোত্তি। পরীক্ষার পর বোঝা যাবে চোট কতটা গুরুতর। তবে অ্যাটলেটিকোর মাঠে সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী রিয়াল বস, ‘জানি কাজটা কঠিন হয়ে গেল। ক্যালডেরনে এখন গোল করতেই হবে আমাদের। কিন্তু আমি মনে করি, এই খেলাটা খেলতে পারলে আমরাই সুপার কাপ জিতব।’ এএফপি।
No comments