পাকিস্তানে অগণতান্ত্রিক সরকার মানবে না যুক্তরাষ্ট্র -রেড জোনে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান
পাকিস্তানের রেড জোনে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান যতক্ষণ জীবন আছে ততক্ষণ রেড জোনে থাকার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। সব প্রদেশে ফের তিনি অসহযোগের ডাক দিয়েছেন। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিববর্তে সংবিধানবহির্ভূত কোন পরিবর্তনকে তারা সমর্থন করেন না। তারা পাকিস্তান পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছেন। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেরি হার্ফ জানিয়েছেন, আমরা পাকিস্তানের সংবিধানকে সমর্থন করি। সমর্থন করি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে। নওয়াজ শরীফ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। সে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার আছে। এ অবস্থায় আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানাই। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবো। যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে ইমরান খান বলেছেন, তারা পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পদত্যাগ দাবিতে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ও তাহিরুল কাদরির পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক (পিএটি) আন্দোলন করছে। তারা দেশটির সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা রেড জোনে অবস্থান করছেন প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে। নওয়াজ শরীফকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছে এমন অভিযোগে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের গোলাম। এ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পদলেহন করে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটিশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে চান। তবে একটি কারচুপির নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের মেনে নেয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হতো এবং একজন কংগ্রেসম্যান বলতেন, বেশির ভাগ ভোট যাচাই করা যাচ্ছে না, তাতে কি যুক্তরাষ্ট্রে পুর্ণাঙ্গ তদন্ত হতো না? এ সময় তিনি পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ওলসকে বলেন, আপনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার বার্তা পৌঁছে দিন। কেন আমাদের জন্য এক আইন এবং আপনাদের জন্য আরেক আইন? কেন আমাদের গণতন্ত্র ভিন্ন? নওয়াজ শরীফ এখন সেনাবাহিনীর আড়ালে লুকিয়েছেন। আর যুক্তরাষ্ট্র কারচুপির নির্বাচনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ওদিকে পিটিআই ও পিএটির দাবি অগণতান্ত্রিক আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ। গতকাল জাতীয় পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ খান আচাকজাই একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে সবার উপরে সংবিধান ও আইনের শাসনকে প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানানো হয়। এর পর আজ পর্যন্ত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। গতকালের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার আয়াজ সাদিক। এতে মোহাম্মদ খান আচাকজাই বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট রাজনীতিবিদ অগণতান্ত্রিক, অসংযত ভাষা ব্যবহার করছেন। তিনি এর নিন্দা জানান। ওদিকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট পিটিআই ও পিএটি নেতাদের মার্জিত ভাষা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। পিটিআই প্রধান ইমরান খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা বিষয়ক মামলার রায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিচারপতি আনওয়ার জহির জামালি ওই পরামর্শ দেন। পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে পিটিআই ও পিএটির নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন তিনি তাতে আপত্তি করেন। এর আগে আদালত ইমরান খান ও তাহিরুল কাদরির বিরুদ্ধে সমন পাঠিয়েছিল। তাদেরকে গতকাল আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের একজনও উপস্থিত হন নি। গতকাল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান সরকারকে সংবিধান রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে ইমরান খান ক্রমশ তেজি হয়ে উঠছেন। তিনি গতকালও দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। সব প্রদেশে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ইসলামাবাদের নতুন আইজি ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ আমি বেঁচে থাকবো রেড জোনেই থাকবো। প্রতিবাদ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা আইন অমান্য করছি না। যেসব কন্টেইনার বসানো হয়েছে সেগুলো সরিয়ে দিতে আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ করেছি, যাতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়। এর আগে তিনি সব প্রদেশের নেতাকর্মীকে তিনি ইসলামাবাদে গিয়ে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা আপনাকে ছেড়ে দেবো না নওয়াজ। আপনি যে সম্পদ লুট করেছেন তা আমরা উদ্ধার করবো। স্বরাষ্ট্র সচিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ভাববেন না যে আপনি ছাড় পাবেন। সেনাবাহিনী পিটিআই ও পিএটি উভয় পক্ষকেই সরকারের সঙ্গে সঙ্কট উত্তরণের পন্থা বের করতে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দু’পক্ষই সরকারের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন আলোচনা হচ্ছে, পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। ওই নির্বাচনকে বিদেশী পর্যটকরা সুষ্ঠু ও অবাধ বলে আখ্যায়িত করেছিল। সরকারের বিরুদ্ধে বড় কোন দুর্নীতির অভিযোগও ওঠেনি। তাহলে কেন? কোন শক্তিতে ইমরান খান এমন আন্দোলন, বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন? এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। কেউ কেউ বলছেন, ইমরান খানকে পর্দার আড়াল থেকে সমর্থন দিচ্ছে সেনাবাহিনীর একটি অংশ। তবে তা গুজবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ বিষয়ে সুনিশ্চিত কোন তথ্য মেলেনি।
No comments