ইসরাইলের নারকীয় হামলায় গাজায় বইছে রক্তগঙ্গা
ইসরাইলের
নারকীয় হামলায় রক্তগঙ্গা বইছে গাজায়। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে অবিরাম
গাজার রাফা এলাকায় তীব্র থেকে তীব্রতর হামলা করে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে
কমপক্ষে ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলের সেনা সদস্য হাদার গোল্ডিন এই
রাফায় নিখোঁজ হয়েছে। এর জবাব দিতে রাফার মাটিকে তামা বানিয়ে দিচ্ছে
ইসরাইল। বাতাসে শুধু লাশের পচা গন্ধ। বারুদের উৎকট উপস্থিতি। গাজা, বিশেষ
করে রাফা এখন কোন শহর কিনা বাইরে থেকে কেউ দেখে তা বুঝতে পারবে না। রাতের
ওই হামলায় ধসে পড়েছে একের পর এক ভবন। তার নিচে চাপা পড়েছেন কত ফিলিস্তিনি
তার সঠিক কোন হিসাব নেই। ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে
জীবিতদের। কিন্তু সেখানে জীবিত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সবই মৃতদেহ। ইসরাইল
বরাবরের মতো এবারও বলছে, তারা হামাসের রকেট হামলার জবাবে এমন হামলা চালিয়ে
যাচ্ছে। শক্তি প্রয়োগের এ ধারা কোন সামঞ্জস্য বিধান করে না। শুক্রবার সকাল
থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়া নিয়ে দু’পক্ষই সম্মত হয়। ৭২ ঘন্টার
ওই চুক্তি কার্যকর হওয়ার দু’এক ঘন্টার মধ্যেই তা ভঙ্গ করে ইসরাইল হামলা
চালায় গাজায়। এ নিয়ে সেখানে কমপক্ষে ১৬৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। এর বেশির
ভাগই বেসামরিক। অন্যদিকে ইসরাইলে নিহত হয়েছে ৬৩ জন। এর বেশির ভাগই সেনা
সদস্য। শান্তিচুক্তি ভঙ্গের দায়ে দু’পক্ষ একে অন্যকে দায়ী করছে। আজ শনিবার
মিশরের সাবেক সেনাপ্রধান ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি
বলেছেন, মিশর যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে তার মধ্যেই এই রক্তপাত বন্ধের
বাস্তব সুযোগ রয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে শিশুদের নিয়ে পিতামাতা যখন গভীর
ঘুমে আচ্ছন্ন তখনই ইসরাইল আকাশপথে হামলা চালায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই
পিতামাতা সহ তার বুকের সন্তান লাশে পরিণত হন। ওই রাতেই নিহতের সংখ্যা
কমপক্ষে ৩৫। এ রাতেই ইসরাইলের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৪০টি বাড়ি, তিনটি মসজিদ
ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইলি মিডিয়া বলছে, শুক্রবারের
রাতটি ছিল তাদের কাছে মোটামুটি শান্ত। কিন্তু আজ ভোরের দিকে রাজধানী তেল
আবিবে কয়েকটি রকেট এসে আঘাত হেনেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগ্রেড
স্বীকার করেছে যে, তারা তেল আবিবে তিনটি রকেট ছুড়েছে। কমপক্ষে দুটি রকেট
নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া আয়রন
ডোম। শুক্রবার যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে গাজার মানুষ বাড়ি থেকে বের হন। তারা
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহে নেমে পড়েন। জেলেরা সমুদ্রে নেমে পড়েন।
শিশুরা সৈকতে খেলতে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু ইসরাইল আক্রমণ তীব্র করার ফলে তারা
দ্রুত ফিরে আসে মায়ের কোলে। গাজায় পরিস্থিতি এখন অবর্ণনীয়। দুর্গত মানুষ
মরতে বসেছে। তাদের খাবার নেই। পানি নেই। বিদ্যুত নেই। বোমার আঘাতে রক্ত
ঝরছে সব স্থান দিয়ে। এ অবস্থায় মিশর রাফা সীমান্ত খুলে দিয়েছে মানবিক
কারণে। সেখান দিয়ে গাজার মানুষ যারা মিশরের দিকে ছুটে যাচ্ছে তাদের সহায়তা
করছে তারা। ওদিকে কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেছে, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট
হাদার গোল্ডিন (২৩)-এর ভাগ্যে কি ঘটেছে সে সম্পর্কে তাদের কাছে কোন তথ্য
নেই। তারা তার সম্পর্কে কোন খবর জানে না। তবে হাদার গোল্ডিনের নিঃশর্ত
মুক্তি দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ইসরাইলের
দাবি, এক ঘেরাওয়ের সময় হাদারকে আটক করেছে হামাস। কাসাম ব্রিগেড বলেছে, রাফা
এলাকায় যেখানে ইসরাইলি সেনা নিখোঁজ হয়েছে সেই এলাকায় তাদের যে গ্রুপটি
ছিল তাদের সঙ্গে তারা সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের ভাষায়, আমাদের মনে হয়
ইসরাইলের বোমা হামলায় ইসরাইলি সেনা সহ তারা সবাই নিহত হয়েছে। ওদিকে ইসরাইলি
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আয়রন ডোম ব্যবস্থাপনায় অস্ত্রের মজুদ বাড়াতে
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একটি বিল পাস করেছে।
No comments