ব্রাজিলের কারাগারে ফুটবল তৈরি করে সাজা মাফ
হুগো আলভেস একসময় পেশাদার ফুটবল খেলে
জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখনও সম্পৃক্ত আছেন প্রিয় ফুটবলের সঙ্গে। কিন্তু ঠিক
যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে নয়। কারান্তরীণ হুগো বন্দিশালার কারখানায় ফুটবল
তৈরি করার কাজ করেন। ব্রাজিলের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারাগার নেলসন
হুংরিয়া’র নির্দিষ্ট সংখ্যক বন্দিকে দিয়ে ফুটবল বানানোর কাজ করানো হয়।
তাদের মধ্যে একজন হুগো। এ কাজের বদলে বন্দিদের সাজার মেয়াদ মওকুফ করে দেয়া
হয়। প্রতি তিন দিন কাজের জন্য মওকুফ হয় একদিনের সাজা। মাদক মামলায় ৫ বছরের
সাজা ভোগ করছেন ৩১ বছর বয়সী হুগো। ফুটবল বানানোর চেয়ে খেলার মাঠে থাকার
আকাঙক্ষাটাই বেশি। তারপরও অন্তত পছন্দের কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন
বলে সেটাকেই সান্ত্বনা মনে করছেন হুগো। দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের বেলো
হরাইজোন্তে শহরের নিকটবর্তী এ কারাগারে ফুটবল বানানোর কাজে হুগো সহ আছেন
মোট ৮০ জন বন্দি। এদের মধ্যে ৪০ জন প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে বল বানানোর কাজ
করেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন। বাকিরা বলের অংশগুলো সেলাইয়ের কাজ করে। এ দলের
কর্মপ্রক্রিয়া অপরদের তুলনায় ভিন্ন। ২০১১ সালে ব্রাজিলজুড়ে কারাগারে থাকা
বন্দিদের মনোবল উন্নীত করার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে নেলসন
হুংরিয়া’তে ফুটবল তৈরি করার কারখানা বানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন
কারাজীবনের পর বন্দিরা স্বাভাবিক জীবনের জন্য কর্মদক্ষতা অর্জন করছেন,
অন্যদিকে কাজের বিনিময়ে সাজার মেয়াদ কমিয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও সাজার
মেয়াদ কমিয়ে নিতে বন্দিদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, সাহিত্য পাঠ ও পুস্তক
প্রতিবেদন লেখার কার্যক্রম। কারাগারের এ কারখানার বন্দিরা দিনে ৪০০টি করে
ফুটবল তৈরি করে। এতে করে তারা প্রতি মাসে আয় করে ৫৪৩ ব্রাজিলিয়ান রিয়াল। এর
চার ভাগের এক ভাগ যায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। বন্দি পায় অর্ধেক। আর বাকি এক
চতুর্থাংশ একটি একাউন্টে গচ্ছিত রাখা হয় যা ওই বন্দি মুক্তি পাওয়ার সময়
নিতে পারবে। কারাগারের কারখানায় ট্রাইভেলা নামক এক প্রতিষ্ঠানের জন্য
ফুটবলগুলো বানানো হয়। প্রতিষ্ঠানের খরচে নির্মিত হয়েছে কারখানাগুলো। প্রতি
মাসে আনুষঙ্গিক খরচও তারা দিয়ে থাকে। তবে কর্মীদের মজুরি, ওভারটাইম,
ট্যাক্সের দিক দিয়ে অনেক বেশি অর্থ বাঁচাতে সক্ষম হচ্ছে তারা। শ্রমিকদেরকে
বোনাসও দিতে হচ্ছে না তাদেরকে। ব্রাজিলের প্রচলিত বোনাস বছরের ১৩তম মজুরি
হিসেবে পরিচিত। কেননা, এর পরিমাণ প্রায় মাসিক বেতনের সমান হয়ে থাকে।
বন্দিদের হাতে তৈরি বলগুলো বিক্রি করে ট্রাইভেলা প্রতি মাসে ১ লাখ ৯০ হাজার
ডলার আয় করে। প্রতি মাসে বেতন বাবদ সার্বিক ব্যয় মাত্র ২০ হাজার ডলার।
প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট আর ক্রুজ বলেন, বাইরের শ্রমিকদের তুলনায়
কারাগারের শ্রমিকরা ১০ গুণ ভালো। তাদের চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে। সেই সঙ্গে
আছে কাজ করার উদ্যম। কখনও শ্রমিকদের নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি বলে তিনি জানান।
বন্দিদের তৈরি বলগুলো বিশ্বকাপে ব্যবহার হচ্ছে না ঠিকই তারপরও নিজেদের হাতে
বানানো বল নিয়ে গর্বিত তারা। প্রদেশের পেশাদার প্রতিযোগিতায় ব্যবহার করা
হচ্ছে তাদের বানানো বল। কর্মকর্তারা জানালেন, কারাগারের কাজগুলোর মধ্যে
ফুটবল বানানোর কাজকে সব থেকে দামি কাজ বিবেচনা করা হয়। সহসা এ কাজের সুযোগ
আসে না। প্রদেশের ৪টি কারাগার মিলে মাত্র ১২০ জন বন্দি এ কাজে নিয়োজিত আছে
বলে তিনি উল্লেখ করেন। হুগোকে সুযোগ পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল একটি বছর।
কখনও কখনও বন্দিদের আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবের কাছে তৈরি ফুটবল পাঠানোর
সুযোগ দেয়া হয়। গ্রাসিয়ানো অ্যান্টোনিও নামক এক বন্দি তার ১৪ বছরের ছেলের
জন্য তার নাম লিখে একটি বল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। হুগোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে
অনেকেই জানায়, এ কাজ তাদেরকে প্রতিদিনের একঘেয়ে কারাজীবন থেকে কিছুটা হলেও
মুক্তি দেয়। কাজের মধ্যে সময়ও পার হয় দ্রুত। নেলসন হুংগারিয়াতে ফুটবল তৈরি
কাজে নিয়োজিত বন্দিদের মধ্যে একজন খুবই সুপরিচিত। তিনি ২৯ বছর বয়সী ব্রুনো
ফার্নান্দেজ। রিও ডি জেনিরোর খ্যাতিমান ক্লাব ফ্লামিঙ্গোর সাবেক ফুটবলার ও
দলপতি ছিলেন তিনি। ব্রাজিল বিশ্বকাপ দলের অংশ হবার সম্ভাবনাও ছিল। গত বছর
নিজের বান্ধবীকে হত্যা করার হুকুম দেয়ার অপরাধে তাকে ২২ বছরের কারাদ-
দিয়েছে আদালত। ব্রাজিলের একটি আইনের আওতায় ব্রুনো মিনান গেরেইসের সেকেন্ড
ডিভিশন একটি দলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। কর্ম-মুক্তি কার্যক্রমের
আওতায় তিনি খেলার সুযোগের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে বিচারক তার এ
আবেদন নাকচ করে দেয়। তবে তাকে শিগগিরই ওই দলের নিকটবর্তী কোন কারাগারে
স্থানান্তরিত করা হবে। নতুন করে আবার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন বলে আশা
করছেন তিনি।
No comments