তুরস্কে পতনের মুখে এরদোয়ানের একেপি!
এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন ১৯ বছর বয়সী তুর্কি শিক্ষার্থী এলিফ। তুরস্কে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে (একেপি) তিনি ভোট দেবেন না। তবে কাকে ভোট দেবেন, তা-ও ঠিক করতে পারেননি। এই এলিফের মতো অবস্থা তুরস্কের অনেক ভোটারেরই। একেপির প্রতি বিমুখ তাঁরা। ২০০২ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় নিয়ে সরকার গঠন করার পর এখনো প্রায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করছে দলটি। দল গঠনের মাত্র এক বছরের মাথায় ক্ষমতার স্বাদ পায় একেপি।
তবে প্রতিষ্ঠার এক যুগের ইতিহাসে এবারই বড় সংকটে পড়েছে দলটি। ছয় সপ্তাহ আগে দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এর ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত অনেকে অর্থ পাচার, ঘুষ, সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত। এসব ঘটনায় এরদোয়ানের ‘দুর্নীতিমুক্ত অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসেবে তুরস্ককে গড়ে তোলার অঙ্গীকার বিশাল এক ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সমালোচকেরা বলছেন, দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর পুলিশ ও বিচার বিভাগে কিছু কর্মকর্তাকে অপসারণ করে সরকার নিজের ভাবমূর্তি ফেরানোর চেষ্টা করছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ববাদী আচরণই প্রকাশ পাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। দুর্নীতির ঘটনা ও এরপর সরকারের নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে অন্তত ছয়জন আইনপ্রণেতা ও শত শত স্থানীয় কর্মী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
তাঁরা এরদোয়ানের কর্তৃত্ববাদী আচরণেরও সমালোচনা করেন। একেপির সাবেক আইনপ্রণেতা এরদাল কালকান অভিযোগ করেন, দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান এমন আচরণ করেন, যেন একেপি তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। তবে এরদোয়ানের কর্তৃত্ববাদী আচরণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির সোনার ক্যাগাপটি বলেন, এমন একজন নেতা ছাড়া একেপি ‘ভেঙে পড়তে’ পারে। একেপির সুবিধা হলো, তাদের মতো সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি নেই। এক জরিপে দেখা যায়, এই সময়েও একেপির ৪২ শতাংশ জনসমর্থন রয়েছে। বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির সমর্থন ২৯ শতাংশ। তবে বর্তমান সংকট মোকাবিলা করে এরদোয়ান ও একেপি কতটা শক্তিশালী থাকতে পারে, তার প্রথম জবাব মিলবে আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় নির্বাচনে। এরপর আগস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও আগামী বছর আইনসভা নির্বাচনেও দলটির শক্তির পরীক্ষা হবে।
No comments