সুন্দরবন ধ্বংস মানে অরক্ষিত বাংলাদেশ by আনু মুহাম্মদ
বিশেষজ্ঞ মত ও জাতীয় জাগরণ উপেক্ষা করে গত
৫ অক্টোবর, নির্ধারিত তারিখের ১৭ দিন আগে, ২৫০ কিলোমিটার দূর থেকে রিমোট
কন্ট্রোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে রামপালে ১৩২০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ভিত্তিফলক উšে§াচন করেছেন। লংমার্চের
মধ্য দিয়ে সুন্দরবন রক্ষার জাতীয় জাগরণের মুখে এটা বেশ চাতুর্যপূর্ণ
পদক্ষেপ সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব ‘চালাকি’ সরকারের শক্তির নিদর্শন নয়, বরং
তাদের নৈতিক পরাজয়ের লক্ষণ। এটা প্রমাণ করে যে, বৈজ্ঞানিক তথ্য-যুক্তির
সামনে দাঁড়ানোর কোনো তথ্য-যুক্তি সরকারের নেই; গণরায়ের সামনে দাঁড়ানোর
নৈতিক সাহস তাদের নেই। সে জন্যই এই ফলক বাংলাদেশ সরকারের জাতীয়
স্বার্থবিরোধী সুন্দরবন ধ্বংসের তৎপরতার একটি চিহ্ন হয়ে থাকবে। ‘উন্নয়ন’
নামের এই ধ্বংসের প্রকল্পকে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে
আখ্যায়িত করা হলেও এটি কার্যত ভারতের সঙ্গে বৈরিতা বৃদ্ধির একটি প্রকল্প।
সরকার এ প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের পথ আরও
সংকুচিত করেছে। ভারতের আগ্রাসী নীতি এবং দুই দেশের কতিপয় গোষ্ঠীর মুনাফা
আগ্রাসী তৎপরতার কাছে সরকার আÍসমর্পণ করেছে। সুন্দরবনকে ধ্বংস করার এই
প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ফলক উšে§াচনের দিনটি তাই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও
একটি কলংক হয়ে থাকবে।
এর আগে গত ৩-৫ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি ঢাকায় প্রদত্ত বক্তব্যে সুন্দরবন রক্ষায় দুই দেশের যৌথ ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু ক্রমান্বয়ে দেখতে পাচ্ছি, দুই দেশের সরকার যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্টের মাধ্যমে বরং সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন করছে। আশার কথা এই যে, দুই দেশের জনগণের পক্ষ থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সংগঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবন রক্ষার লক্ষ্যে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বানে লংমার্চ কর্মসূচিতে অসংখ্য মানুষ সাড়া দিয়েছেন।
দেশের শিল্প, কৃষি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবনযাপন এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব কম দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যাবশ্যক। এর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাবলীর সুপারিশ আমরা বিভিন্ন সময়ে করেছি। আমাদের এসব সুপারিশের মূল কথা হল, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের সম্পদ শতভাগ জনগণের মালিকানায় রেখে তার পুরোটা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে দেশের কাজে লাগানো, খনিজ সম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ, নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানির সংমিশ্রণে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। দেশ ও জনগণ এতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট থেকে খুব দ্রুত মুক্ত হতে পারত। কিন্তু এভাবে অগ্রসর হলে বহুজাতিক কোম্পানি, দেশী কতিপয় ব্যবসায়ী ও কমিশনভোগী বিরাট লুটপাট থেকে বঞ্চিত হতোÑ সেটাই নীতিনির্ধারকদের জন্য সমস্যা।
সুন্দরবনের আঙিনায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ সময় ধরে সমীক্ষা করে এ প্রকল্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে এর আগেই সতর্ক করেছেন। পরে এ নিয়ে অন্য বিশেষজ্ঞরাও প্রায় একই রকম বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ মত ও জনগণের বিরোধিতা উপেক্ষা করে, পরিবেশ অভিমত সমীক্ষা (ইআইএ) না করে সরকার এলাকার মানুষের জমি দখল করেছে এবং মানুষ উচ্ছেদ করেছে। প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বহুবার। জমি অধিগ্রহণ ও প্রাথমিক চুক্তি সম্পন্ন করার পরেই ইআইএ রিপোর্ট সম্পন্ন করা হয়েছে।
গত ১২ এপ্রিল ইআইএ রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় একটি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। ওই সভায় বিশেষজ্ঞরা ইআইএ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে নতুন ইআইএ রিপোর্ট প্রণয়নের দাবি জানান। একই সভায় নতুন রিপোর্ট না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখারও দাবি জানানো হয়। ইআইএ রিপোর্ট এভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও গত ২০ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যে চুক্তি স্বাক্ষর করে, তাতে দুই দেশের সরকার যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বিধি লংঘন করে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রাণবৈচিত্র্যের অসাধারণ আধার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম সুন্দরবন ধ্বংস করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। উপরন্তু এ চুক্তিতে ভারতীয় কোম্পানির উচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য কর মওকুফ, বিদ্যুতের দাম অনির্ধারিত রাখাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মারাÍক পরিবেশ দূষণ ঘটায় বলে সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় না। ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে সুন্দরবনের ৯-১৪ কিলোমিটারের মধ্যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে। বাফার জোন বিবেচনা করলে এই দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। অথচ ভারতেরই ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট ১৯৭২’ অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে এবং ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রণীত পরিবেশ সমীক্ষা বা ইআইএ গাইডলাইন ম্যানুয়াল ২০১০ অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাঘ/হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জৈব বৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কিংবা অন্য কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকা অনুমোদন করা হয় না। ভারতীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ‘তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত গাইডলাইন, ১৯৮৭’ অনুসারেও কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ স্থাপন করা যায় না। এ জন্য গত কয়েক বছরে ভারতের কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসিকে বাংলাদেশে সুন্দরবনের যত কাছে পরিবেশ ধ্বংসকারী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেয়া হচ্ছে, তার নিজ দেশ ভারতে হলে সেখানকার আইন অনুযায়ী তা তারা করতে পারত না!
ভারতীয় কোম্পানির মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করতে ও দেশী কিছু সুবিধাভোগীর স্বার্থে প্রণীত এই ধ্বংসাÍক প্রকল্পের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হচ্ছে যে, এই প্রকল্পে সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে, সে জন্য সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। আমাদের প্রশ্নÑ প্রথমত, এই প্রযুক্তিতে কিছু ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ ক্ষতি কম হয় ঠিক, কিন্তু তাতে সুন্দরবনের ধ্বংসের সামগ্রিক ক্ষতি কীভাবে কমবে? দ্বিতীয়ত, এই প্রযুক্তি যদি সুন্দরবনের ধ্বংস ঠেকানোর মতো এত নিশ্চিত প্রযুক্তি হয়, তাহলে ভারতীয় কোম্পানি কেন ভারতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব ক্ষতি দূরীভূত করে না? কেন গত তিন বছরে তাদের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল হয়?
সরকার যখন একদিকে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানের কথা বলে সুন্দরবন ধ্বংসী তৎপরতায় লিপ্ত, ঠিক সে সময়ই বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্ভাব্য মজুদের ওপর বাংলাদেশের কর্তৃত্ব বিনাশ করে এ সম্পদের বিশাল সম্ভাবনা নষ্ট করছে। গ্যাস সংকট চলছে, কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে রফতানিমুখী চুক্তিও বলবৎ আছে। এর মধ্যে পুঁজির অভাবের কথা বলে অগভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লক দুটি মার্কিন ও ভারতীয় কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। অথচ তারা পাঁচ বছরে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, তার সমপরিমাণ ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে’ অলস পড়ে আছে।
সম্প্রতি সরকার বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির দাবি অনুযায়ী পিএসসি-২০১২ সংশোধন করে আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই সংশোধনীতে কোম্পানিগুলোর সুবিধা এত বেশি বাড়ানো হয়েছে, এরপর থেকে বাংলাদেশকে নিজের গ্যাস আমদানি করা আন্তর্জাতিক দামের বেশি খরচে কিনতে হবে। উপরন্তু সম্পূর্ণ জিম্মি থাকতে হবে এসব কোম্পানির হাতে। তাদের কাছ থেকে গ্যাস কেনার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে শতকরা প্রায় ৫০ থেকে ৭০ ভাগ। তাছাড়া যে কোনো দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুবিধা দিয়ে পুরো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে অসম্ভব ব্যয়বহুল করে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরপরও বিদেশী কোম্পানির কর মওকুফ করা হচ্ছে। গ্যাসের ওপর তাদের কর্তৃত্বের অনুপাতও বাড়ানো হচ্ছে। কস্ট রিকভারি হিসেবে তাদের মালিকানা শতকরা ৫৫ ভাগের স্থলে করা হচ্ছে ৭০ ভাগ। জ্বালানি নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকট সমাধানের যে শক্তিশালী সম্ভাবনা বাংলাদেশে আছে, পিএসসি ২০১২ অনুযায়ী চুক্তি স্বাক্ষর হতে থাকলে তা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হবে। সম্পদ পরিণত হবে অভিশাপে।
বিশেষজ্ঞরা তো বটেই, এমনকি পিডিবির মধ্য থেকেও বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট মেরামত করলে খুব কম খরচে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। সেটা না করে ৮ গুণ বেশি দামে তার থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের ফাঁদে দেশকে ফেলে ভয়াবহ ঋণের বোঝা তৈরি করেছে সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশাল সম্ভাবনাও ক্ষুদ্র কিছু উদ্যোগের মধ্যে আটকে রেখে বিদেশী কোম্পানির ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে বিপজ্জনকভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট অনুমোদন করা হয়েছে। সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন চলছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট নিরসনের নামে দেশী-বিদেশী এই লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সরকার বারবার দেশের জন্য সর্বনাশা পথ গ্রহণ করছে। এ কাজে বৃহৎ দল ও তাদের সরকারগুলোর মধ্যে আমরা নীতিগত পার্থক্য দেখি না। জনস্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে কিছু দেশী-বিদেশী গোষ্ঠীর স্বার্থে পরিচালিত হওয়ায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের নামে যেসব তৎপরতা চলছে, তা দেশের জন্য একের পর এক বিপদ তৈরি করছে। সুন্দরবন-কৃষিজমি-শহরধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাটি-পানি-মানুষ বিনাশী ফুলবাড়ী-বড়পুকুরিয়ার উš§ুক্ত খনির চক্রান্ত অব্যাহত রাখা, বঙ্গোপসাগরের গ্যাস ব্লক একতরফা সুবিধা দিয়ে বিদেশী কোম্পানির কাছে ইজারা, কুইক রেন্টালের নামে ১৪ থেকে ১৭ টাকা কিংবা তারও বেশি দরে বিদ্যুৎ ক্রয়, কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি না করে, জনবল তৈরি না করে, প্রয়োজনীয় সমীক্ষা না করে বিদেশী কোম্পানিনির্ভর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্যোগ ইত্যাদি প্রকৃতপক্ষে জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা ও লুটপাটের আয়োজন ছাড়া আর কিছু নয়।
আমরা বারবার বলছি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। সুন্দরবন না থাকলে একেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ জীবন হারাবেন। সুন্দরবন ধ্বংস মানে অরক্ষিত বাংলাদেশ। এই পথ থেকে সরকারকে অবশ্যই সরে আসতে হবে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবন ধ্বংসী সব তৎপরতা বন্ধ করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফার ভিত্তিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে টেকসই বিদ্যুতের জোগানও সুলভ ও নিশ্চিত হবে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোনো সরকারই সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে পারবে না, কারণ সুন্দরবন রক্ষায় এখন জাতীয় জাগরণ তৈরি হয়েছে। ভারতের কোনো সরকার সুন্দরবন ধ্বংসের প্রকল্প গায়ের জোরে বাংলাদেশের ওপর চাপাতে পারবে না, কারণ ভারতের সজাগ মানুষরাও আমাদের এ আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। সেখানে এই ধ্বংসাÍক প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যে এনটিপিসিকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে, স্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে। কলকাতা থেকে সুন্দরবন অভিমুখে লংমার্চেরও প্রস্তুতি চলছে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের সজাগ মানুষও সুন্দরবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী, লেখক, শিল্পী, রাজনৈতিক কর্মীরা উদ্বেগ নিয়ে যোগাযোগ করছেন। কারণ এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বেরও সম্পদ।
আনু মুহাম্মদ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
এর আগে গত ৩-৫ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি ঢাকায় প্রদত্ত বক্তব্যে সুন্দরবন রক্ষায় দুই দেশের যৌথ ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু ক্রমান্বয়ে দেখতে পাচ্ছি, দুই দেশের সরকার যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্টের মাধ্যমে বরং সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন করছে। আশার কথা এই যে, দুই দেশের জনগণের পক্ষ থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সংগঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবন রক্ষার লক্ষ্যে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বানে লংমার্চ কর্মসূচিতে অসংখ্য মানুষ সাড়া দিয়েছেন।
দেশের শিল্প, কৃষি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবনযাপন এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব কম দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যাবশ্যক। এর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাবলীর সুপারিশ আমরা বিভিন্ন সময়ে করেছি। আমাদের এসব সুপারিশের মূল কথা হল, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের সম্পদ শতভাগ জনগণের মালিকানায় রেখে তার পুরোটা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে দেশের কাজে লাগানো, খনিজ সম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ, নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানির সংমিশ্রণে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। দেশ ও জনগণ এতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট থেকে খুব দ্রুত মুক্ত হতে পারত। কিন্তু এভাবে অগ্রসর হলে বহুজাতিক কোম্পানি, দেশী কতিপয় ব্যবসায়ী ও কমিশনভোগী বিরাট লুটপাট থেকে বঞ্চিত হতোÑ সেটাই নীতিনির্ধারকদের জন্য সমস্যা।
সুন্দরবনের আঙিনায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ সময় ধরে সমীক্ষা করে এ প্রকল্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে এর আগেই সতর্ক করেছেন। পরে এ নিয়ে অন্য বিশেষজ্ঞরাও প্রায় একই রকম বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ মত ও জনগণের বিরোধিতা উপেক্ষা করে, পরিবেশ অভিমত সমীক্ষা (ইআইএ) না করে সরকার এলাকার মানুষের জমি দখল করেছে এবং মানুষ উচ্ছেদ করেছে। প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বহুবার। জমি অধিগ্রহণ ও প্রাথমিক চুক্তি সম্পন্ন করার পরেই ইআইএ রিপোর্ট সম্পন্ন করা হয়েছে।
গত ১২ এপ্রিল ইআইএ রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় একটি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। ওই সভায় বিশেষজ্ঞরা ইআইএ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে নতুন ইআইএ রিপোর্ট প্রণয়নের দাবি জানান। একই সভায় নতুন রিপোর্ট না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখারও দাবি জানানো হয়। ইআইএ রিপোর্ট এভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও গত ২০ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যে চুক্তি স্বাক্ষর করে, তাতে দুই দেশের সরকার যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বিধি লংঘন করে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রাণবৈচিত্র্যের অসাধারণ আধার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম সুন্দরবন ধ্বংস করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। উপরন্তু এ চুক্তিতে ভারতীয় কোম্পানির উচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য কর মওকুফ, বিদ্যুতের দাম অনির্ধারিত রাখাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মারাÍক পরিবেশ দূষণ ঘটায় বলে সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় না। ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে সুন্দরবনের ৯-১৪ কিলোমিটারের মধ্যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে। বাফার জোন বিবেচনা করলে এই দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। অথচ ভারতেরই ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট ১৯৭২’ অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে এবং ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রণীত পরিবেশ সমীক্ষা বা ইআইএ গাইডলাইন ম্যানুয়াল ২০১০ অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাঘ/হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জৈব বৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কিংবা অন্য কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকা অনুমোদন করা হয় না। ভারতীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ‘তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত গাইডলাইন, ১৯৮৭’ অনুসারেও কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ স্থাপন করা যায় না। এ জন্য গত কয়েক বছরে ভারতের কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসিকে বাংলাদেশে সুন্দরবনের যত কাছে পরিবেশ ধ্বংসকারী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেয়া হচ্ছে, তার নিজ দেশ ভারতে হলে সেখানকার আইন অনুযায়ী তা তারা করতে পারত না!
ভারতীয় কোম্পানির মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করতে ও দেশী কিছু সুবিধাভোগীর স্বার্থে প্রণীত এই ধ্বংসাÍক প্রকল্পের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হচ্ছে যে, এই প্রকল্পে সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে, সে জন্য সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। আমাদের প্রশ্নÑ প্রথমত, এই প্রযুক্তিতে কিছু ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ ক্ষতি কম হয় ঠিক, কিন্তু তাতে সুন্দরবনের ধ্বংসের সামগ্রিক ক্ষতি কীভাবে কমবে? দ্বিতীয়ত, এই প্রযুক্তি যদি সুন্দরবনের ধ্বংস ঠেকানোর মতো এত নিশ্চিত প্রযুক্তি হয়, তাহলে ভারতীয় কোম্পানি কেন ভারতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব ক্ষতি দূরীভূত করে না? কেন গত তিন বছরে তাদের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল হয়?
সরকার যখন একদিকে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানের কথা বলে সুন্দরবন ধ্বংসী তৎপরতায় লিপ্ত, ঠিক সে সময়ই বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্ভাব্য মজুদের ওপর বাংলাদেশের কর্তৃত্ব বিনাশ করে এ সম্পদের বিশাল সম্ভাবনা নষ্ট করছে। গ্যাস সংকট চলছে, কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে রফতানিমুখী চুক্তিও বলবৎ আছে। এর মধ্যে পুঁজির অভাবের কথা বলে অগভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লক দুটি মার্কিন ও ভারতীয় কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। অথচ তারা পাঁচ বছরে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, তার সমপরিমাণ ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে’ অলস পড়ে আছে।
সম্প্রতি সরকার বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির দাবি অনুযায়ী পিএসসি-২০১২ সংশোধন করে আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই সংশোধনীতে কোম্পানিগুলোর সুবিধা এত বেশি বাড়ানো হয়েছে, এরপর থেকে বাংলাদেশকে নিজের গ্যাস আমদানি করা আন্তর্জাতিক দামের বেশি খরচে কিনতে হবে। উপরন্তু সম্পূর্ণ জিম্মি থাকতে হবে এসব কোম্পানির হাতে। তাদের কাছ থেকে গ্যাস কেনার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে শতকরা প্রায় ৫০ থেকে ৭০ ভাগ। তাছাড়া যে কোনো দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুবিধা দিয়ে পুরো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে অসম্ভব ব্যয়বহুল করে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরপরও বিদেশী কোম্পানির কর মওকুফ করা হচ্ছে। গ্যাসের ওপর তাদের কর্তৃত্বের অনুপাতও বাড়ানো হচ্ছে। কস্ট রিকভারি হিসেবে তাদের মালিকানা শতকরা ৫৫ ভাগের স্থলে করা হচ্ছে ৭০ ভাগ। জ্বালানি নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকট সমাধানের যে শক্তিশালী সম্ভাবনা বাংলাদেশে আছে, পিএসসি ২০১২ অনুযায়ী চুক্তি স্বাক্ষর হতে থাকলে তা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হবে। সম্পদ পরিণত হবে অভিশাপে।
বিশেষজ্ঞরা তো বটেই, এমনকি পিডিবির মধ্য থেকেও বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট মেরামত করলে খুব কম খরচে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। সেটা না করে ৮ গুণ বেশি দামে তার থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের ফাঁদে দেশকে ফেলে ভয়াবহ ঋণের বোঝা তৈরি করেছে সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশাল সম্ভাবনাও ক্ষুদ্র কিছু উদ্যোগের মধ্যে আটকে রেখে বিদেশী কোম্পানির ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে বিপজ্জনকভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট অনুমোদন করা হয়েছে। সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন চলছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট নিরসনের নামে দেশী-বিদেশী এই লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সরকার বারবার দেশের জন্য সর্বনাশা পথ গ্রহণ করছে। এ কাজে বৃহৎ দল ও তাদের সরকারগুলোর মধ্যে আমরা নীতিগত পার্থক্য দেখি না। জনস্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে কিছু দেশী-বিদেশী গোষ্ঠীর স্বার্থে পরিচালিত হওয়ায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের নামে যেসব তৎপরতা চলছে, তা দেশের জন্য একের পর এক বিপদ তৈরি করছে। সুন্দরবন-কৃষিজমি-শহরধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাটি-পানি-মানুষ বিনাশী ফুলবাড়ী-বড়পুকুরিয়ার উš§ুক্ত খনির চক্রান্ত অব্যাহত রাখা, বঙ্গোপসাগরের গ্যাস ব্লক একতরফা সুবিধা দিয়ে বিদেশী কোম্পানির কাছে ইজারা, কুইক রেন্টালের নামে ১৪ থেকে ১৭ টাকা কিংবা তারও বেশি দরে বিদ্যুৎ ক্রয়, কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি না করে, জনবল তৈরি না করে, প্রয়োজনীয় সমীক্ষা না করে বিদেশী কোম্পানিনির্ভর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্যোগ ইত্যাদি প্রকৃতপক্ষে জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা ও লুটপাটের আয়োজন ছাড়া আর কিছু নয়।
আমরা বারবার বলছি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। সুন্দরবন না থাকলে একেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ জীবন হারাবেন। সুন্দরবন ধ্বংস মানে অরক্ষিত বাংলাদেশ। এই পথ থেকে সরকারকে অবশ্যই সরে আসতে হবে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবন ধ্বংসী সব তৎপরতা বন্ধ করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফার ভিত্তিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে টেকসই বিদ্যুতের জোগানও সুলভ ও নিশ্চিত হবে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোনো সরকারই সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে পারবে না, কারণ সুন্দরবন রক্ষায় এখন জাতীয় জাগরণ তৈরি হয়েছে। ভারতের কোনো সরকার সুন্দরবন ধ্বংসের প্রকল্প গায়ের জোরে বাংলাদেশের ওপর চাপাতে পারবে না, কারণ ভারতের সজাগ মানুষরাও আমাদের এ আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। সেখানে এই ধ্বংসাÍক প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যে এনটিপিসিকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে, স্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে। কলকাতা থেকে সুন্দরবন অভিমুখে লংমার্চেরও প্রস্তুতি চলছে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের সজাগ মানুষও সুন্দরবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী, লেখক, শিল্পী, রাজনৈতিক কর্মীরা উদ্বেগ নিয়ে যোগাযোগ করছেন। কারণ এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বেরও সম্পদ।
আনু মুহাম্মদ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
No comments