কী হবে পঁচিশে অক্টোবর? by পলাশ কুমার রায়
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয়
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করার পর থেকেই প্রধান বিরোধী দল
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে নানাভাবে
আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। বিরোধী দলের এসব আন্দোলন সরকার শুরু থেকে
অদ্যাবধি পাত্তাই দেয়নি বরং বিরোধী দলকে দমন নিপীড়নের জন্য বিভিন্ন কৌশল
অবলম্বন করেছে। এদিকে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বরাবরই বলে আসছেন,
পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় থেকে
নির্বাচন পরিচালনা করে সেভাবেই অর্থাৎ সংবিধান অনুসারে (পঞ্চদশ সংশোধনী)
সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে চলছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। কখন, কিভাবে, কোন সরকারের নেতৃত্বে, কী পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেÑ এসব প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। কিন্তু কেউই পরিষ্কার করে এসব প্রশ্নের যুতসই জবাব দিতে পারছে না। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা থেকে শুরু করে মহাজোট সরকারের শরিক দলগুলোর নেতারাও জানেন না নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান বিরোধী দল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। বিরোধী দলের এ দাবির যৌক্তিকতা আছে বলেই অনুমান করেন অনেকেই। কেননা, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সমমর্যাদা সম্পন্ন কর্তাব্যক্তিরা এবং সংসদ সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সুযোগ পাবে। এ অন্যায় ও অবৈধ সুযোগ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রহণ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী? বর্তমান মন্ত্রিসভা তথা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা (যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন) সরকারের নির্দেশে কাজ করবেন না, সেটাও হলফ করে বলা যাবে না। কেননা, যতই দিন গড়াচ্ছে ততই সরকারি কর্মকর্তারা নিজের আদর্শ, অস্তিত্ব ও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেনÑ সাময়িক সুবিধা পাওয়ার স্বার্থে। অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তাকে যতটা না জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়, তদপেক্ষা সরকারের তোষামোদি আর ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল নেতাদের অন্যায় দাবি বাস্তবায়নে বেশি তৎপর হতে দেখা যায়। যেন এটাই বাস্তবতা। কিন্তু সরকার এমন বাস্তবতায় আÍপক্ষ সমর্থন করে বলছে, নিকট অতীতে যতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোতে সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। বিরোধী দল বলছে, এ খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করালে চলবে না। স্থানীয় সরকার আর সাধারণ নির্বাচন এক বিষয় নয়। সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে বসা যায়, তাই এ নির্বাচন যেনতেন প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না বলে বিরোধী দল বরাবরই সতর্ক করে দিয়েছে সরকারকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের প্রধান দুই দল পালাক্রমে ক্ষমতার মসনদে বসতে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলেও আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে টালবাহানা করেন। অতীতে দুই দলই এ রকম আচরণ করেছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে নিয়েও আওয়ামী লীগ এ রোগে আক্রান্ত এবং কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর দেশের বড় দুটি দলই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে ভয় পায়। দেশের উন্নয়ন করলে, মানুষের কল্যাণ করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে ভয় পাওয়ার কথা। অতীতে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য যতটা চিৎকার-চেঁচামেচি করেছে, বিরোধী দল তার সিকি অংশও করেনি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দলÑ তাহলে তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নিজেদের বিতর্কিত করছে কেন? আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে মনে রাখতে হবে এটাই শেষ নির্বাচন নয়, নির্বাচন ভবিষ্যতে আবারও আসবে। যারা ক্ষমতায় থেকে বিরোধী দলের দাবির প্রতি সম্মান না জানিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করে, তাদের আÍজিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন, তারা বিরোধী দলে থাকলে কি সেই পুতুল-পুতুল খেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত?
আমাদের রাজনীতিকরা উত্তম আদর্শ স্থাপন করে ভবিষ্যৎ প্রজšে§র জন্য ভালো কিছু উদাহরণ রেখে যেতে চান না। শুধু নগদ নারায়ণ নিয়ে ব্যস্ত অধিকাংশ রাজনীতিক। বর্তমানে যারা ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা ভবিষ্যতে রাজনীতিক হয়ে কী ধরনের আদর্শ স্থাপন করবেন তা আমাদের প্রবীণ রাজনীতিকরা ভাবেন কি? জাতীয় সংকটেও বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এক টেবিলে বসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংকট নিরসন না করে বরং ওই সংকটের জন্য এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। এ নেতিবাচক সংস্কৃতি থেকে বেরোনোর জন্য দুদলকেই এগিয়ে আসতে হবে, প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করে হলেও। আর সেটি যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সংকট ক্রমশই বাড়বে এবং ইউরোপ-আমেরিকার কূটনীতিকরা চায়ের টেবিলে বসে আমাদের জ্ঞানদান করার সুযোগ পাবে। দেশের মঙ্গলের স্বার্থেই আমাদের রাজনীতিকদের কখনও কখনও ছাড় দেয়ার মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।
গণমাধ্যমের বদৌলতে পুরো দেশবাসী জানতে পেয়েছে, ২৫ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশ অচল হয়ে যাবে। আবারও প্রকাশ্যে হত্যাযজ্ঞ চলবে! নিরীহ মানুষ মারা যাবে। পথচারী আতংকিত হয়ে চলাফেরা করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়বে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। সিএনজি-বাস-ট্রাকচালকরা পেটের দায়ে, সংসারের ভরনপোষণের খাতিরে কাজে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরবে। পুলিশের লাঠিপেটা খাবে সাধারণ মানুষ। এ আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট সুবিধাদি ভোগ করবে রাজনীতিকরা, যারা আন্দোলনের সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মতো কলকাঠি নেড়েছে।
দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আমার এক মক্কেলের বাড়িতে ঈদের ছুটিতে দাওয়াত খেতে গেলে তিনি টেলিভিশনের খবরাখবর শুনে আমাকে সতর্ক করে বললেন, উকিল সাহেব, ২৫ অক্টোবর বাসা থেকে বের হবেন না। খুব সাবধান। বাঁইচ্যা থাকলে বহু ওকালতি করবার পারবেন। মইরা গেলে সব শেষ। বাঁইচ্যা থাকেন, বাপ, মা, বউ পোলাপাইনরে দেইখ্যা শুইন্যা খাওয়াইতে পারবেন, মইরা গেলে তখন আপনার বুড়া বাপ-মায়েরে দেখবো কেডা? এই যে, এতগুলা বেডায় মরলো, হেগো খবর কেউ লয়? আপনি মরলেও আপনার খবর কেউই লইবো না। এজন্য কই পঁচিশ তারিখ বাসায় বইসা টিভিতে খবর দেখবেন, এরপর ...। সত্যিই কি ২৫ তারিখে ভাড়া বাসা থেকে মরার ভয়ে বের হব না? গণতন্ত্রের জন্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, স্বাভাবিকভাবে দেশ পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আরও কত মানুষের জীবন চান, কত মানুষের তাজা রক্ত ঝরাতে চানÑ বলবেন কি?
পলাশ কুমার রায় : আইনজীবী; আহ্বায়ক, সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (সুপ্রা)
আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে চলছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। কখন, কিভাবে, কোন সরকারের নেতৃত্বে, কী পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেÑ এসব প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। কিন্তু কেউই পরিষ্কার করে এসব প্রশ্নের যুতসই জবাব দিতে পারছে না। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা থেকে শুরু করে মহাজোট সরকারের শরিক দলগুলোর নেতারাও জানেন না নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান বিরোধী দল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। বিরোধী দলের এ দাবির যৌক্তিকতা আছে বলেই অনুমান করেন অনেকেই। কেননা, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সমমর্যাদা সম্পন্ন কর্তাব্যক্তিরা এবং সংসদ সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সুযোগ পাবে। এ অন্যায় ও অবৈধ সুযোগ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রহণ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী? বর্তমান মন্ত্রিসভা তথা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা (যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন) সরকারের নির্দেশে কাজ করবেন না, সেটাও হলফ করে বলা যাবে না। কেননা, যতই দিন গড়াচ্ছে ততই সরকারি কর্মকর্তারা নিজের আদর্শ, অস্তিত্ব ও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেনÑ সাময়িক সুবিধা পাওয়ার স্বার্থে। অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তাকে যতটা না জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়, তদপেক্ষা সরকারের তোষামোদি আর ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল নেতাদের অন্যায় দাবি বাস্তবায়নে বেশি তৎপর হতে দেখা যায়। যেন এটাই বাস্তবতা। কিন্তু সরকার এমন বাস্তবতায় আÍপক্ষ সমর্থন করে বলছে, নিকট অতীতে যতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোতে সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। বিরোধী দল বলছে, এ খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করালে চলবে না। স্থানীয় সরকার আর সাধারণ নির্বাচন এক বিষয় নয়। সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে বসা যায়, তাই এ নির্বাচন যেনতেন প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না বলে বিরোধী দল বরাবরই সতর্ক করে দিয়েছে সরকারকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের প্রধান দুই দল পালাক্রমে ক্ষমতার মসনদে বসতে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলেও আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে টালবাহানা করেন। অতীতে দুই দলই এ রকম আচরণ করেছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে নিয়েও আওয়ামী লীগ এ রোগে আক্রান্ত এবং কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর দেশের বড় দুটি দলই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে ভয় পায়। দেশের উন্নয়ন করলে, মানুষের কল্যাণ করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে ভয় পাওয়ার কথা। অতীতে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য যতটা চিৎকার-চেঁচামেচি করেছে, বিরোধী দল তার সিকি অংশও করেনি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দলÑ তাহলে তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নিজেদের বিতর্কিত করছে কেন? আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে মনে রাখতে হবে এটাই শেষ নির্বাচন নয়, নির্বাচন ভবিষ্যতে আবারও আসবে। যারা ক্ষমতায় থেকে বিরোধী দলের দাবির প্রতি সম্মান না জানিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করে, তাদের আÍজিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন, তারা বিরোধী দলে থাকলে কি সেই পুতুল-পুতুল খেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত?
আমাদের রাজনীতিকরা উত্তম আদর্শ স্থাপন করে ভবিষ্যৎ প্রজšে§র জন্য ভালো কিছু উদাহরণ রেখে যেতে চান না। শুধু নগদ নারায়ণ নিয়ে ব্যস্ত অধিকাংশ রাজনীতিক। বর্তমানে যারা ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা ভবিষ্যতে রাজনীতিক হয়ে কী ধরনের আদর্শ স্থাপন করবেন তা আমাদের প্রবীণ রাজনীতিকরা ভাবেন কি? জাতীয় সংকটেও বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এক টেবিলে বসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংকট নিরসন না করে বরং ওই সংকটের জন্য এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। এ নেতিবাচক সংস্কৃতি থেকে বেরোনোর জন্য দুদলকেই এগিয়ে আসতে হবে, প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করে হলেও। আর সেটি যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সংকট ক্রমশই বাড়বে এবং ইউরোপ-আমেরিকার কূটনীতিকরা চায়ের টেবিলে বসে আমাদের জ্ঞানদান করার সুযোগ পাবে। দেশের মঙ্গলের স্বার্থেই আমাদের রাজনীতিকদের কখনও কখনও ছাড় দেয়ার মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।
গণমাধ্যমের বদৌলতে পুরো দেশবাসী জানতে পেয়েছে, ২৫ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশ অচল হয়ে যাবে। আবারও প্রকাশ্যে হত্যাযজ্ঞ চলবে! নিরীহ মানুষ মারা যাবে। পথচারী আতংকিত হয়ে চলাফেরা করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়বে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। সিএনজি-বাস-ট্রাকচালকরা পেটের দায়ে, সংসারের ভরনপোষণের খাতিরে কাজে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরবে। পুলিশের লাঠিপেটা খাবে সাধারণ মানুষ। এ আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট সুবিধাদি ভোগ করবে রাজনীতিকরা, যারা আন্দোলনের সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মতো কলকাঠি নেড়েছে।
দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আমার এক মক্কেলের বাড়িতে ঈদের ছুটিতে দাওয়াত খেতে গেলে তিনি টেলিভিশনের খবরাখবর শুনে আমাকে সতর্ক করে বললেন, উকিল সাহেব, ২৫ অক্টোবর বাসা থেকে বের হবেন না। খুব সাবধান। বাঁইচ্যা থাকলে বহু ওকালতি করবার পারবেন। মইরা গেলে সব শেষ। বাঁইচ্যা থাকেন, বাপ, মা, বউ পোলাপাইনরে দেইখ্যা শুইন্যা খাওয়াইতে পারবেন, মইরা গেলে তখন আপনার বুড়া বাপ-মায়েরে দেখবো কেডা? এই যে, এতগুলা বেডায় মরলো, হেগো খবর কেউ লয়? আপনি মরলেও আপনার খবর কেউই লইবো না। এজন্য কই পঁচিশ তারিখ বাসায় বইসা টিভিতে খবর দেখবেন, এরপর ...। সত্যিই কি ২৫ তারিখে ভাড়া বাসা থেকে মরার ভয়ে বের হব না? গণতন্ত্রের জন্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, স্বাভাবিকভাবে দেশ পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আরও কত মানুষের জীবন চান, কত মানুষের তাজা রক্ত ঝরাতে চানÑ বলবেন কি?
পলাশ কুমার রায় : আইনজীবী; আহ্বায়ক, সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (সুপ্রা)
No comments