নাগরিক ও মানবিক অধিকারের রাজনীতি by ফরহাদ মজহার
আজকাল
কোনো সভা-সমিতিতে যেতে ইচ্ছা করে না। এটা পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নয়।
প্রায় সব সময়ই দেখি, যে কথা বলি কোনো সময়ই সেটা ঠিকভাবে গণমাধ্যমে আসে না।
প্রতিটি পত্রিকা তাদের নিজেদের মতো করেই তাদের যে-বাক্য পছন্দের সেটাই
সারকথা হিসেবে হাজির করে। এতে অসুবিধা নেই। যদি উদ্ধৃতি সঠিক হয়। যে
প্রসঙ্গে বাক্যটি বলা বা যুক্তির যে ধারাবাহিকতায় কথাটি উঠেছিল তা না হয়
উহ্যই থাকল। কিন্তু বিপদ হয়ে দাঁড়ায় যা বলেছি ঠিক তার উল্টা যদি পত্রিকায়
ছাপা হয়। এর ফলে বন্ধু ও শুভার্থী মহলে জবাবদিহি করতে করতে জান বেরিয়ে
যাওয়ার হাল হয়। ভাগ্য ভালো যে আমি লেখালিখি করি। ফলে অন্য লেখালিখির মধ্যে
বিভ্রান্তি কাটিয়ে ওঠা কিছুটা সম্ভব হয়। ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়ই। তিন
তারিখে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির একটি সভা হয়েছে বহুদিন পর। সম্প্রতি
আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আবার গত ২৭ জুলাই
রিমান্ডে আনা হয়েছিল। রিমান্ডে আনার উদ্দেশ্য কোনো জিজ্ঞাসাবাদ নয়, স্রেফ
তাকে নির্যাতন করা। তার প্রতিবাদ করার জন্য সভা। সেই সভায় যে কথা বলেছি তা
ভুলভাবে কোথাও উদ্ধৃত হয় কিনা সেটা আগাম ভেবে কয়েকটি কথা এখানে বলে রাখতে
চাই।
এই প্রথম মাহমুদুর রহমান শেখ হাসিনার সরকারের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা নয়। এর আগেও আদালত অবমাননার দায়ে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং পুলিশি হেফাজতে তার প্রাণনাশেরও চেষ্টা করা হয়েছে। তখন গ্রেফতারের সময় আমি দৈনিক আমার দেশে হাজির ছিলাম। যে বিপুল পরিমাণ সশস্ত্র পুলিশকে একটি পত্রিকা অফিসে ঢুকে একজন সম্পাদককে গ্রেফতার করতে দেখেছি তাতে মনে হচ্ছিল আমি একটি যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। দমন-নিপীড়নের পুরা পুলিশি যন্ত্র মহাজোটের সরকার তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। একদিক থেকে মাহমুদুর রহমানের জন্য আমার ঈর্ষাই হচ্ছিল। একটি সরকারের গোড়ায় তিনি কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তার লেখার দ্বারা যেমন, তেমনি দৈনিক আমার দেশের ভূমিকার দ্বারাও বটে। পত্রিকা অফিস থেকে তাকে যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা নিন্দিত হয়েছে দেশ-বিদেশে। দেশের চেয়েও বিদেশে বেশি। অনেক সাংবাদিক তাকে গ্রেফতার করার সেই কুখ্যাত অপারেশন প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের কারণে সেই গ্রেফতারের ঘটনা একটা কাহিনী হয়ে ওঠে।
এবার মাহমুদুর রহমানকে পাকড়াও করার বীররসাত্মক দৃশ্য কোনো সাংবাদিকের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দেয়া হয়নি। আগেই জানাজানি ছিল সরকার তাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ছোট দেশ, কোনোকিছুই বিশেষ গোপন থাকে না। মাহমুদুর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যদি গ্রেফতার হতে হয় তবে তিনি তার পত্রিকার অফিস থেকেই গ্রেফতার হবেন। যারা তার শুভার্থী ছিলেন, তাদের ভয় ছিল ভিন্ন। নানান সত্য-মিথ্যা তথ্যসূত্র এবং কিছুটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের অনেকেই অনুমান করছিলেন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার চেয়ে কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো সাজানো নাটকের মধ্য দিয়ে ক্ষতি করাই শ্রেয়। হত্যার পরিকল্পনাও কোনো মহলে থাকতেই পারে। থাকা বিচিত্র নয় মোটেও। তারা তাকে তার পত্রিকা অফিসে থাকাই অনুমোদন করেছিলেন। তাকে তার নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছিলেন তার বন্ধুরা। মাহমুদুর রহমান সেটাই করলেন। আমার ধারণা সেটা ছিল সাবধানী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
এবার যখন তাকে ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হল সরকার দৈনিক আমার দেশকে দৃশ্যমান যুদ্ধক্ষেত্র বানায়নি। তবে গুপ্ত কমান্ডো অপারেশনের ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল। গণমাধ্যমগুলোও ওঁত পেতে ছিল। তাদের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হল গেরিলা কায়দায়। সাদা পোশাকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন ভোরে ঢুকে গেল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়। তিনি নাস্তা খেয়ে চা খাচ্ছিলেন, অস্ত্রের মুখে তারা তাকে তুলে নিয়ে গেল। এরপর তেরো দিনের রিমান্ড, নির্যাতন, মাহমুদুর রহমানের অনশন ও তা ভাঙা এবং তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর ইত্যাদি অনেক ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে খবরগুলো এসেছে।
এবার যখন তাকে রিমান্ডে আনা হল তখন কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়টা বেছে নেয়া হয়েছিল এমনভাবে যাতে ইফতারের সময়টা পথেই পড়ে। মাহমুদ ধর্মপ্রাণ মানুষ। বলাবাহুল্য, তিনি যে কোনো পরিস্থিতিতে রোজা থাকেন। তিনি প্রিজন ভ্যানে রোজা ভাঙার জন্য মুখে দেয়ার কিছু পাননি। সেটা নির্যাতন। শুধু কিছু না দেয়ার কারণে নয়। এই আচরণের মধ্য দিয়ে তার ধর্মবিশ্বাসকে হেয় করার চেষ্টাও ছিল। মানবাধিকার কর্মীরা সম্ভবত এটাও দাবি করবেন যে সময়মতো রোজা ভেঙে ইফতার করতে না দিয়ে তার ধর্মাচরণ বা ধর্মপালনের অধিকারও ক্ষুণœ করা হয়েছে।
প্রিজন ভ্যানে শুধু পানি পান করে মাহমুদুর রহমান ইফতার করেন। তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে ১২/১৫ ফুটের একটি সেলে ৩৫ জন বন্দির সঙ্গে গাদাগাদি করে দমবন্ধ পরিবেশে তাকে রাখা হয়। তিন দিন তিন রাত তাকে সেখানে থাকতে হয়েছে। নিদ্রাহীন, খাওয়া ছাড়া, গোসল করতে পারেননি, টয়লেটও সেই ঘরে ছিল না। রিমান্ড শেষে নিু আদালতে তিনি তার আইনজীবীর কাছে নির্যাতনের বীভৎস বর্ণনা দেন। সেহরি ও ইফতারে তিনি পানি ছাড়া কিছুই খাননি। পায়খানা-প্রস্রাবের উৎকট দুর্গন্ধে একাকার এক নারকীয় পরিবেশের মধ্যে তাকে স্রেফ নির্যাতন করার জন্যই রাখা হয়েছে। জেলে অকথ্য নির্যাতনের ফলে তার শরীর ভেঙে পড়েছে। তার ওজন ৭১ কেজি থেকে কমে ৬০ কেজি হয়েছে। প্রেসার কমে গেছে। শরীরে নানান শারীরিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
এই ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্যই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সভা। মাহমুদুর রহমান এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিমাত্র নন। পুলিশি হেফাজতে যেভাবে নির্যাতন চালানো হয় ক্স যেই হোক ক্স তার প্রতিবাদ করা মানবাধিকারের দিক থেকে কর্তব্য অবশ্যই। কিন্তু এই কর্তব্যের দুটো দিক আছে। এক. সুনির্দিষ্টভাবে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনার বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার জোর দাবি তোলা। দুই. একই সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে নৈতিক ও কাঠামোগত সংকট সুস্পষ্ট হয়ে গেছে মাহমুদুর রহমানকে নজির হিসাবে ধরে রাষ্ট্রের সেই ক্ষয়ের দিকটা স্পষ্ট করে তোলা। প্রথম দিকটি নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির অনেকেরই দায়, কারণ মাহমুদুর রহমান কমিটির অনেকেরই বন্ধু। কিন্তু দ্বিতীয়টিই তাদের প্রধান নাগরিক দায়িত্ব। এই দুটো কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট না থাকলে যদি শুধু বলা হয় শেখ হাসিনার সরকার ফ্যাসিস্ট তখন কথাগুলো গালাগালির মতো শোনায়। কোনো কাজে আসে না। বুঝতে হবে, আসলে আমাদের খোদ রাষ্ট্রব্যবস্থাই ফ্যাসিবাদী। রাষ্ট্রের এই রূপান্তর একদিনে ঘটেনি, কিংবা শেখ হাসিনার একার কারণে এটা হয়নি। অনেকে বলে থাকে তারা বাকশালী আমলেরই পুনরার্বিভাব দেখছেন। আসলে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে বাকশাল আসেনি। বরং বলা যায় আমরা বাকশাল হয়েই ছিলাম। নির্বাচন করে তাকে সরকারের রূপ দিয়েছি মাত্র। ধীরে ধীরে আমরা এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। সেই ক্ষেত্রে বিরোধী দলের ভূমিকাও কম নয়। তাদের নেতিবাচক ভূমিকা স্পষ্ট করে বলাও নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কাজ।
আমরা ভুলে যাই, ফ্যাসিবাদ আমাদের সমাজে ও সংস্কৃতির মধ্যেই আছে, নিবিড়ভাবে। শুধু সরকারে নেই। রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী রূপান্তরের শর্ত সমাজের মধ্যেই সদা তৎপর। আমরা তো নাগরিক হয়ে উঠিনি। অথচ নাগরিকতার বিকাশের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের লড়াই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে একেকজন খুদে হিটলার হয়ে সমাজে বিরাট বিরাট বুলি আউড়িয়ে যেতে আমাদের বিশেষ অসুবিধা হয় না। যেমন- বাংলাদেশে যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল মনে করেন তাদের অধিকাংশই মনে করেন মাহমুদুর রহমানকে সমর্থন করার কোনো নৈতিক বা আদর্শগত কারণ নেই। রাজনৈতিক আদর্শ বলতে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস এবং ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করেন। গণতন্ত্র কিংবা নাগরিক ও মানবিক অধিকার তাদের মুখ্য আদর্শ নয়। বলছি এ কারণে যে তাদের আদর্শের সঙ্গে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের সম্পর্ক কোথায় সেটা তাহলে তারা স্পষ্ট করতেন। সেটা স্পষ্ট নয়। সে কারণে ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী কোনো নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকার ক্ষুণœ হলে তার বিরোধিতা করা তারা জরুরি মনে করেন না। করতে দেখিনি। এই না করাটা তাদের আদর্শের পরিপন্থী কিনা সেটা তারা বিবেচনায় নিতেও সক্ষম নন। তারপরও তারা নিজেদের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দাবি করেন।
এই না নেয়ার সঙ্গেই গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের প্রশ্ন জড়িত, কারণ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপান্তরই যে এখনকার প্রধান ও একমাত্র রাজনৈতিক কর্তব্য অনেকের এটা মনে না করার কারণ এখানেই নিহিত। যারা ইসলামপন্থী তাদের কোনো নাগরিক ও মানবিক অধিকার নেই। এই ফ্যাসিস্ট চিন্তা আমাদের সমাজে বদ্ধমূল। তাদের কথা থাক। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করে এই সমাজ সম্পর্কে অনেক কিছুরই পাঠ আমরা নিতে পারি। মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যারা তাদের আদর্শ মেলাতে পারেন না, তখন তারা সরাসরি মাহমুদুর রহমানের বিরোধিতা করেন। তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু এই বিরোধিতাই বাংলাদেশের জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ কিংবা মতাদর্শ নির্বিশেষে যে কোনো নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকারেরও বিরোধিতা হয়ে দাঁড়ায়। মানবাধিকারের কথা মুখে বললেও তার সঙ্গে নিজ নিজ আদর্শ ও আদর্শ চর্চার সম্পর্ক কোথায় সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা নাগরিক সচেতনতা আমরা এখনও তৈরি করতে পারিনি। আসলে বাংলাদেশের সংকট শুধু সরকারের নয়, এটা রাষ্ট্রীয় সংকট। আর এই রাষ্ট্রীয় সংকটের বীজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অর্থাৎ সমাজের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের বীজ রয়েছে। যার ফলে ব্যক্তির বিরোধিতা করি বলে গণতান্ত্রিক নীতিনৈতিকতার জায়গাগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা গুয়েগোবরে করে ফেলি।
শুরুতে বলা দরকার, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি যদি কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই নির্দলীয় হতে হবে। এটা কথার কথা হলে হবে না। এটা সত্যি কথা যে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ফলে নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য তাদের লড়াইয়ের একটা তাগিদ সমাজে থাকবে এবং এই ধরনের কমিটির সঙ্গে তারাই এখন সবার আগে দলীয় স্বার্থ রক্ষার কারণে যুক্ত হবেন। কিন্তু কমিটিকে স্পষ্ট করতে হবে এই সংগঠন তাদের দলের প্রচারের যন্ত্র হবে না। বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন বিরোধিতার কথা বলতে গেলে আগের সরকারের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দলের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। আগামী দিনে ভালো হবে তারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ঠিক এ কারণেই ব্যক্তি মাহমুদুর রহমানের ওপর দমন-পীড়ন নির্যাতনের বিরোধিতা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণভাবে নীতি হিসেবে নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার প্রশ্ন তোলা সমান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের আগে যেসব সরকার নাগরিকদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার ক্ষুণœ করেছে তারাও সমানভাবে নিন্দনীয়। এই নীতিগত দিকটি স্পষ্ট না হলে বর্তমান সরকারের বিরোধিতা এর আগের সরকারগুলোর পক্ষে সাফাই সঙ্গীত হয়ে ওঠে। বিশেষত যখন বিরোধী দলের এখনকার বক্তব্যে তাদের নিজেদের অতীত সম্পর্কে কোনো আÍসমালোচনা বা পর্যালোচনার কোনো লক্ষণ আমরা দেখি না। কিংবা নাগরিক ও মানবিক অধিকারের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক তারা কিভাবে দেখে সেই বিষয়ে তারা নিশ্চুপ থাকে। এর অর্থ দাঁড়ায় শেখ হাসিনার আমলে রাষ্ট্রের সংবিধানে যে বদল ঘটেছে এবং রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী রূপান্তর ঘটেছে, সেই রাষ্ট্রকে বহাল রেখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। শেখ হাসিনার সরকারকে তখন ফ্যাসিবাদী বলাটা প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপির নেতারা যা হামেশাই করছেন। এতে বিএনপির পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে কিনা সন্দেহ। এই হিসাব ভুল যে সাধারণ মানুষ বর্তমান সরকারকে অপছন্দ করে বলে আগামী দিনে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। বিএনপির উচিত ক্ষমতায় এসে বিএনপি কী করবে সেটা বলা। দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবো সেসব মিথ্যা প্রতিশ্র“তি নয়। কিংবা তারেক রহমান সম্প্রতি বিলাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যেসব কথাবার্তা বলেছেন সেসবও নয়। অতি সাধারণ জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্ন আগে। যেমন- বিএনপি কি ঘাতক বাহিনী হিসেবে পরিচিত র্যাব বহাল রাখবে, নাকি বিলুপ্ত করবে? রিমান্ড বন্ধ হবে, নাকি হবে না? বিচার বিভাগ কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে নাকি পারবে না ইত্যাদি।
নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের প্রশ্নে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বাধ্য করা। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তারাও কি ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিবের বক্তৃতার মতো জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সংবিধানে ঢুকিয়ে দেবেন? কে জানে। তাদের আমলেও কি তারা বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক দলের অধীন সংস্থার মতো ব্যবহার করবেন? কী গ্যারান্টি দেবেন তারা যাতে নাগরিকরা সুবিচার পাবে? দিল্লির সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছে সেসব কি অক্ষুণœ থাকবে? এই রকম বেশ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন রয়েছে বিরোধী দলের কাছে তার উত্তর জনগণ প্রত্যাশা করে।
অনেকে এই বলে সমালোচনা করেন যে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিতে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই বিএনপির সঙ্গে সক্রিয়। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশে অনেক সামাজিক সংগঠন রয়েছে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বা আদর্শিকভাবে আওয়ামী রাজনীতিই বাস্তবায়ন করে। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে সেভাবে দলীয় হলে চলবে না। বিভিন্ন অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আদর্শগত ঝোঁক থাকতেই পারে। সে আদর্শকে যদি ফলপ্রসূ করতে হয় তার জন্যও দলীয় কাঠামোর বাইরে নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নকে সুস্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে হাজির করতে হবে। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে দেখাতে হবে তারা মাহমুদুর রহমানের ওপর দমন-নির্যাতনের বিরোধিতা করছেন এ কারণে নয় তিনি একসময় বিএনপি সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। বরং এ কারণে যে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার যে চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য আমরা দেখছি তারা তা উন্মোচন করছেন। একে বহাল রেখে বাংলাদেশের জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা অসম্ভব। এর খোলনলচে বদলে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। যদি বিএনপি রাষ্ট্রের এই চরিত্র ও কাঠামো বহাল রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সেটা স্রেফ ক্ষমতার অভিলাষ ছাড়া কিছু নয়। তাহলে বিএনপির কঠোর সমালোচনাই এখনকার প্রধান নাগরিক কর্তব্য। সত্যি কথা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন বড় সমস্যা নয়। কারণ তার চেহারা স্পষ্ট এবং আওয়ামী লীগ গত সাড়ে চার বছরে যা হারিয়েছে তা উদ্ধার করতে পারবে কিনা সন্দেহ। এখন মূল সমস্যা বিএনপি।
যদি নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা করা এই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির প্রধান কাজ হয় তাহলে বিএনপির সঙ্গে এক্ষেত্রে আদর্শগত বিরোধ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির এই সভাটির গুরুত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত থাকা। একদিকে সেটা মুশকিলের, অন্যদিকে সেটা সুবিধার। মুশকিলের কারণ সাধারণ মানুষের কাছে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি এতে নিজেকে বিএনপিঘেঁষা সংগঠন হিসেবে হাজির করল। এতে কমিটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ল নাকি কমল সেই উত্তর আমার জানা নেই। আগামী দিনগুলোতে সেটা আমরা দেখব। কিন্তু সুবিধাটুকু হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সভায় বসিয়ে তাকে কথাগুলো শুনিয়ে দেয়া। এই সুবিধাটুকু সভার সভাপতি হিসেবে সেখানে আমি গ্রহণ করেছিলাম। সেখানে যে কথাগুলো বলেছি গণমাধ্যমে সেসব আসেনি বলে নিজের কথা এখন নিজেই এখানে বলছি। শুরুতে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অনুযোগ করেছি নিজের কথা বলার উসিলা হিসেবে।
নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি তাদের নিয়েই বিশেষভাবে গঠিত হয়েছে যারা বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই দিক থেকে এর একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। কিন্তু এখানেও বোঝা দরকার নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন কোনো বিশেষ পেশার বা পেশাজীবীদের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন নয়। বরং পেশাজীবীদের এটাই প্রমাণ করতে হবে তারা তাদের নিজ নিজ পেশার বাইরে একজন সচেতন নাগরিকও বটে। তাদের নিজেদের কাছেও স্পষ্ট থাকতে হবে নাগরিক অধিকার রক্ষার সঙ্গে পেশাজীবীর স্বার্থ সব সময় ও সব অবস্থায় সুসঙ্গত না-ও থাকতে পারে। অবস্থা বিশেষে সেটা সাংঘর্ষিকও হতে পারে। এই ধরনের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি গঠনের ন্যায্যতা একটিমাত্র জায়গায়। সেটা হল কোনো নাগরিকের নাগরিক অধিকার হরণ করার কোনো এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই। এই নীতির জায়গায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে নাগরিকদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং তাদের সচেতন করে তোলা। একইভাবে কোনো নাগরিকেরও অন্যের অধিকার অস্বীকার বা তার বাস্তবায়নে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিরও অধিকার নেই। এই ধরনের কোনো সংঘাত যেন সৃষ্টি না হয় তার জন্য রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য বিধিবিধান প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু কোনো নাগরিকের অধিকার হরণ করতে পারে না।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে শেখ হাসিনা আমাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণ করেছেন, গালভরা উন্নয়নের কথা বলে বিএনপি আমাদের হাতে পায়ের সেই শৃংখলকে আরও রক্তাক্ত করুক আমরা তা চাই না। তাহলে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের ভিত্তিতে আমরা নতুনভাবে বাংলাদেশ গড়তে পারি সেই দিকনির্দেশনাই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে দিতে হবে।
সেটা যেন আমরা সবাই বুঝি, এটাই মিনতি।
এই প্রথম মাহমুদুর রহমান শেখ হাসিনার সরকারের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা নয়। এর আগেও আদালত অবমাননার দায়ে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং পুলিশি হেফাজতে তার প্রাণনাশেরও চেষ্টা করা হয়েছে। তখন গ্রেফতারের সময় আমি দৈনিক আমার দেশে হাজির ছিলাম। যে বিপুল পরিমাণ সশস্ত্র পুলিশকে একটি পত্রিকা অফিসে ঢুকে একজন সম্পাদককে গ্রেফতার করতে দেখেছি তাতে মনে হচ্ছিল আমি একটি যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। দমন-নিপীড়নের পুরা পুলিশি যন্ত্র মহাজোটের সরকার তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। একদিক থেকে মাহমুদুর রহমানের জন্য আমার ঈর্ষাই হচ্ছিল। একটি সরকারের গোড়ায় তিনি কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তার লেখার দ্বারা যেমন, তেমনি দৈনিক আমার দেশের ভূমিকার দ্বারাও বটে। পত্রিকা অফিস থেকে তাকে যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা নিন্দিত হয়েছে দেশ-বিদেশে। দেশের চেয়েও বিদেশে বেশি। অনেক সাংবাদিক তাকে গ্রেফতার করার সেই কুখ্যাত অপারেশন প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের কারণে সেই গ্রেফতারের ঘটনা একটা কাহিনী হয়ে ওঠে।
এবার মাহমুদুর রহমানকে পাকড়াও করার বীররসাত্মক দৃশ্য কোনো সাংবাদিকের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দেয়া হয়নি। আগেই জানাজানি ছিল সরকার তাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ছোট দেশ, কোনোকিছুই বিশেষ গোপন থাকে না। মাহমুদুর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যদি গ্রেফতার হতে হয় তবে তিনি তার পত্রিকার অফিস থেকেই গ্রেফতার হবেন। যারা তার শুভার্থী ছিলেন, তাদের ভয় ছিল ভিন্ন। নানান সত্য-মিথ্যা তথ্যসূত্র এবং কিছুটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের অনেকেই অনুমান করছিলেন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার চেয়ে কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো সাজানো নাটকের মধ্য দিয়ে ক্ষতি করাই শ্রেয়। হত্যার পরিকল্পনাও কোনো মহলে থাকতেই পারে। থাকা বিচিত্র নয় মোটেও। তারা তাকে তার পত্রিকা অফিসে থাকাই অনুমোদন করেছিলেন। তাকে তার নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছিলেন তার বন্ধুরা। মাহমুদুর রহমান সেটাই করলেন। আমার ধারণা সেটা ছিল সাবধানী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
এবার যখন তাকে ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হল সরকার দৈনিক আমার দেশকে দৃশ্যমান যুদ্ধক্ষেত্র বানায়নি। তবে গুপ্ত কমান্ডো অপারেশনের ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল। গণমাধ্যমগুলোও ওঁত পেতে ছিল। তাদের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হল গেরিলা কায়দায়। সাদা পোশাকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন ভোরে ঢুকে গেল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়। তিনি নাস্তা খেয়ে চা খাচ্ছিলেন, অস্ত্রের মুখে তারা তাকে তুলে নিয়ে গেল। এরপর তেরো দিনের রিমান্ড, নির্যাতন, মাহমুদুর রহমানের অনশন ও তা ভাঙা এবং তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর ইত্যাদি অনেক ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে খবরগুলো এসেছে।
এবার যখন তাকে রিমান্ডে আনা হল তখন কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়টা বেছে নেয়া হয়েছিল এমনভাবে যাতে ইফতারের সময়টা পথেই পড়ে। মাহমুদ ধর্মপ্রাণ মানুষ। বলাবাহুল্য, তিনি যে কোনো পরিস্থিতিতে রোজা থাকেন। তিনি প্রিজন ভ্যানে রোজা ভাঙার জন্য মুখে দেয়ার কিছু পাননি। সেটা নির্যাতন। শুধু কিছু না দেয়ার কারণে নয়। এই আচরণের মধ্য দিয়ে তার ধর্মবিশ্বাসকে হেয় করার চেষ্টাও ছিল। মানবাধিকার কর্মীরা সম্ভবত এটাও দাবি করবেন যে সময়মতো রোজা ভেঙে ইফতার করতে না দিয়ে তার ধর্মাচরণ বা ধর্মপালনের অধিকারও ক্ষুণœ করা হয়েছে।
প্রিজন ভ্যানে শুধু পানি পান করে মাহমুদুর রহমান ইফতার করেন। তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে ১২/১৫ ফুটের একটি সেলে ৩৫ জন বন্দির সঙ্গে গাদাগাদি করে দমবন্ধ পরিবেশে তাকে রাখা হয়। তিন দিন তিন রাত তাকে সেখানে থাকতে হয়েছে। নিদ্রাহীন, খাওয়া ছাড়া, গোসল করতে পারেননি, টয়লেটও সেই ঘরে ছিল না। রিমান্ড শেষে নিু আদালতে তিনি তার আইনজীবীর কাছে নির্যাতনের বীভৎস বর্ণনা দেন। সেহরি ও ইফতারে তিনি পানি ছাড়া কিছুই খাননি। পায়খানা-প্রস্রাবের উৎকট দুর্গন্ধে একাকার এক নারকীয় পরিবেশের মধ্যে তাকে স্রেফ নির্যাতন করার জন্যই রাখা হয়েছে। জেলে অকথ্য নির্যাতনের ফলে তার শরীর ভেঙে পড়েছে। তার ওজন ৭১ কেজি থেকে কমে ৬০ কেজি হয়েছে। প্রেসার কমে গেছে। শরীরে নানান শারীরিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
এই ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্যই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সভা। মাহমুদুর রহমান এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিমাত্র নন। পুলিশি হেফাজতে যেভাবে নির্যাতন চালানো হয় ক্স যেই হোক ক্স তার প্রতিবাদ করা মানবাধিকারের দিক থেকে কর্তব্য অবশ্যই। কিন্তু এই কর্তব্যের দুটো দিক আছে। এক. সুনির্দিষ্টভাবে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনার বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার জোর দাবি তোলা। দুই. একই সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে নৈতিক ও কাঠামোগত সংকট সুস্পষ্ট হয়ে গেছে মাহমুদুর রহমানকে নজির হিসাবে ধরে রাষ্ট্রের সেই ক্ষয়ের দিকটা স্পষ্ট করে তোলা। প্রথম দিকটি নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির অনেকেরই দায়, কারণ মাহমুদুর রহমান কমিটির অনেকেরই বন্ধু। কিন্তু দ্বিতীয়টিই তাদের প্রধান নাগরিক দায়িত্ব। এই দুটো কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট না থাকলে যদি শুধু বলা হয় শেখ হাসিনার সরকার ফ্যাসিস্ট তখন কথাগুলো গালাগালির মতো শোনায়। কোনো কাজে আসে না। বুঝতে হবে, আসলে আমাদের খোদ রাষ্ট্রব্যবস্থাই ফ্যাসিবাদী। রাষ্ট্রের এই রূপান্তর একদিনে ঘটেনি, কিংবা শেখ হাসিনার একার কারণে এটা হয়নি। অনেকে বলে থাকে তারা বাকশালী আমলেরই পুনরার্বিভাব দেখছেন। আসলে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে বাকশাল আসেনি। বরং বলা যায় আমরা বাকশাল হয়েই ছিলাম। নির্বাচন করে তাকে সরকারের রূপ দিয়েছি মাত্র। ধীরে ধীরে আমরা এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। সেই ক্ষেত্রে বিরোধী দলের ভূমিকাও কম নয়। তাদের নেতিবাচক ভূমিকা স্পষ্ট করে বলাও নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কাজ।
আমরা ভুলে যাই, ফ্যাসিবাদ আমাদের সমাজে ও সংস্কৃতির মধ্যেই আছে, নিবিড়ভাবে। শুধু সরকারে নেই। রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী রূপান্তরের শর্ত সমাজের মধ্যেই সদা তৎপর। আমরা তো নাগরিক হয়ে উঠিনি। অথচ নাগরিকতার বিকাশের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের লড়াই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে একেকজন খুদে হিটলার হয়ে সমাজে বিরাট বিরাট বুলি আউড়িয়ে যেতে আমাদের বিশেষ অসুবিধা হয় না। যেমন- বাংলাদেশে যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল মনে করেন তাদের অধিকাংশই মনে করেন মাহমুদুর রহমানকে সমর্থন করার কোনো নৈতিক বা আদর্শগত কারণ নেই। রাজনৈতিক আদর্শ বলতে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস এবং ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করেন। গণতন্ত্র কিংবা নাগরিক ও মানবিক অধিকার তাদের মুখ্য আদর্শ নয়। বলছি এ কারণে যে তাদের আদর্শের সঙ্গে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের সম্পর্ক কোথায় সেটা তাহলে তারা স্পষ্ট করতেন। সেটা স্পষ্ট নয়। সে কারণে ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী কোনো নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকার ক্ষুণœ হলে তার বিরোধিতা করা তারা জরুরি মনে করেন না। করতে দেখিনি। এই না করাটা তাদের আদর্শের পরিপন্থী কিনা সেটা তারা বিবেচনায় নিতেও সক্ষম নন। তারপরও তারা নিজেদের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দাবি করেন।
এই না নেয়ার সঙ্গেই গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের প্রশ্ন জড়িত, কারণ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপান্তরই যে এখনকার প্রধান ও একমাত্র রাজনৈতিক কর্তব্য অনেকের এটা মনে না করার কারণ এখানেই নিহিত। যারা ইসলামপন্থী তাদের কোনো নাগরিক ও মানবিক অধিকার নেই। এই ফ্যাসিস্ট চিন্তা আমাদের সমাজে বদ্ধমূল। তাদের কথা থাক। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করে এই সমাজ সম্পর্কে অনেক কিছুরই পাঠ আমরা নিতে পারি। মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যারা তাদের আদর্শ মেলাতে পারেন না, তখন তারা সরাসরি মাহমুদুর রহমানের বিরোধিতা করেন। তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু এই বিরোধিতাই বাংলাদেশের জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ কিংবা মতাদর্শ নির্বিশেষে যে কোনো নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকারেরও বিরোধিতা হয়ে দাঁড়ায়। মানবাধিকারের কথা মুখে বললেও তার সঙ্গে নিজ নিজ আদর্শ ও আদর্শ চর্চার সম্পর্ক কোথায় সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা নাগরিক সচেতনতা আমরা এখনও তৈরি করতে পারিনি। আসলে বাংলাদেশের সংকট শুধু সরকারের নয়, এটা রাষ্ট্রীয় সংকট। আর এই রাষ্ট্রীয় সংকটের বীজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অর্থাৎ সমাজের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের বীজ রয়েছে। যার ফলে ব্যক্তির বিরোধিতা করি বলে গণতান্ত্রিক নীতিনৈতিকতার জায়গাগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা গুয়েগোবরে করে ফেলি।
শুরুতে বলা দরকার, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি যদি কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই নির্দলীয় হতে হবে। এটা কথার কথা হলে হবে না। এটা সত্যি কথা যে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ফলে নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য তাদের লড়াইয়ের একটা তাগিদ সমাজে থাকবে এবং এই ধরনের কমিটির সঙ্গে তারাই এখন সবার আগে দলীয় স্বার্থ রক্ষার কারণে যুক্ত হবেন। কিন্তু কমিটিকে স্পষ্ট করতে হবে এই সংগঠন তাদের দলের প্রচারের যন্ত্র হবে না। বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন বিরোধিতার কথা বলতে গেলে আগের সরকারের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দলের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। আগামী দিনে ভালো হবে তারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ঠিক এ কারণেই ব্যক্তি মাহমুদুর রহমানের ওপর দমন-পীড়ন নির্যাতনের বিরোধিতা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণভাবে নীতি হিসেবে নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার প্রশ্ন তোলা সমান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের আগে যেসব সরকার নাগরিকদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার ক্ষুণœ করেছে তারাও সমানভাবে নিন্দনীয়। এই নীতিগত দিকটি স্পষ্ট না হলে বর্তমান সরকারের বিরোধিতা এর আগের সরকারগুলোর পক্ষে সাফাই সঙ্গীত হয়ে ওঠে। বিশেষত যখন বিরোধী দলের এখনকার বক্তব্যে তাদের নিজেদের অতীত সম্পর্কে কোনো আÍসমালোচনা বা পর্যালোচনার কোনো লক্ষণ আমরা দেখি না। কিংবা নাগরিক ও মানবিক অধিকারের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক তারা কিভাবে দেখে সেই বিষয়ে তারা নিশ্চুপ থাকে। এর অর্থ দাঁড়ায় শেখ হাসিনার আমলে রাষ্ট্রের সংবিধানে যে বদল ঘটেছে এবং রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী রূপান্তর ঘটেছে, সেই রাষ্ট্রকে বহাল রেখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। শেখ হাসিনার সরকারকে তখন ফ্যাসিবাদী বলাটা প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপির নেতারা যা হামেশাই করছেন। এতে বিএনপির পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে কিনা সন্দেহ। এই হিসাব ভুল যে সাধারণ মানুষ বর্তমান সরকারকে অপছন্দ করে বলে আগামী দিনে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। বিএনপির উচিত ক্ষমতায় এসে বিএনপি কী করবে সেটা বলা। দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবো সেসব মিথ্যা প্রতিশ্র“তি নয়। কিংবা তারেক রহমান সম্প্রতি বিলাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যেসব কথাবার্তা বলেছেন সেসবও নয়। অতি সাধারণ জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্ন আগে। যেমন- বিএনপি কি ঘাতক বাহিনী হিসেবে পরিচিত র্যাব বহাল রাখবে, নাকি বিলুপ্ত করবে? রিমান্ড বন্ধ হবে, নাকি হবে না? বিচার বিভাগ কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে নাকি পারবে না ইত্যাদি।
নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের প্রশ্নে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বাধ্য করা। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তারাও কি ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিবের বক্তৃতার মতো জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সংবিধানে ঢুকিয়ে দেবেন? কে জানে। তাদের আমলেও কি তারা বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক দলের অধীন সংস্থার মতো ব্যবহার করবেন? কী গ্যারান্টি দেবেন তারা যাতে নাগরিকরা সুবিচার পাবে? দিল্লির সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছে সেসব কি অক্ষুণœ থাকবে? এই রকম বেশ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন রয়েছে বিরোধী দলের কাছে তার উত্তর জনগণ প্রত্যাশা করে।
অনেকে এই বলে সমালোচনা করেন যে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিতে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই বিএনপির সঙ্গে সক্রিয়। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশে অনেক সামাজিক সংগঠন রয়েছে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বা আদর্শিকভাবে আওয়ামী রাজনীতিই বাস্তবায়ন করে। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে সেভাবে দলীয় হলে চলবে না। বিভিন্ন অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আদর্শগত ঝোঁক থাকতেই পারে। সে আদর্শকে যদি ফলপ্রসূ করতে হয় তার জন্যও দলীয় কাঠামোর বাইরে নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নকে সুস্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে হাজির করতে হবে। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে দেখাতে হবে তারা মাহমুদুর রহমানের ওপর দমন-নির্যাতনের বিরোধিতা করছেন এ কারণে নয় তিনি একসময় বিএনপি সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। বরং এ কারণে যে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার যে চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য আমরা দেখছি তারা তা উন্মোচন করছেন। একে বহাল রেখে বাংলাদেশের জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা অসম্ভব। এর খোলনলচে বদলে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। যদি বিএনপি রাষ্ট্রের এই চরিত্র ও কাঠামো বহাল রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সেটা স্রেফ ক্ষমতার অভিলাষ ছাড়া কিছু নয়। তাহলে বিএনপির কঠোর সমালোচনাই এখনকার প্রধান নাগরিক কর্তব্য। সত্যি কথা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন বড় সমস্যা নয়। কারণ তার চেহারা স্পষ্ট এবং আওয়ামী লীগ গত সাড়ে চার বছরে যা হারিয়েছে তা উদ্ধার করতে পারবে কিনা সন্দেহ। এখন মূল সমস্যা বিএনপি।
যদি নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা করা এই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির প্রধান কাজ হয় তাহলে বিএনপির সঙ্গে এক্ষেত্রে আদর্শগত বিরোধ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির এই সভাটির গুরুত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত থাকা। একদিকে সেটা মুশকিলের, অন্যদিকে সেটা সুবিধার। মুশকিলের কারণ সাধারণ মানুষের কাছে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি এতে নিজেকে বিএনপিঘেঁষা সংগঠন হিসেবে হাজির করল। এতে কমিটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ল নাকি কমল সেই উত্তর আমার জানা নেই। আগামী দিনগুলোতে সেটা আমরা দেখব। কিন্তু সুবিধাটুকু হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সভায় বসিয়ে তাকে কথাগুলো শুনিয়ে দেয়া। এই সুবিধাটুকু সভার সভাপতি হিসেবে সেখানে আমি গ্রহণ করেছিলাম। সেখানে যে কথাগুলো বলেছি গণমাধ্যমে সেসব আসেনি বলে নিজের কথা এখন নিজেই এখানে বলছি। শুরুতে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অনুযোগ করেছি নিজের কথা বলার উসিলা হিসেবে।
নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি তাদের নিয়েই বিশেষভাবে গঠিত হয়েছে যারা বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই দিক থেকে এর একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। কিন্তু এখানেও বোঝা দরকার নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন কোনো বিশেষ পেশার বা পেশাজীবীদের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন নয়। বরং পেশাজীবীদের এটাই প্রমাণ করতে হবে তারা তাদের নিজ নিজ পেশার বাইরে একজন সচেতন নাগরিকও বটে। তাদের নিজেদের কাছেও স্পষ্ট থাকতে হবে নাগরিক অধিকার রক্ষার সঙ্গে পেশাজীবীর স্বার্থ সব সময় ও সব অবস্থায় সুসঙ্গত না-ও থাকতে পারে। অবস্থা বিশেষে সেটা সাংঘর্ষিকও হতে পারে। এই ধরনের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি গঠনের ন্যায্যতা একটিমাত্র জায়গায়। সেটা হল কোনো নাগরিকের নাগরিক অধিকার হরণ করার কোনো এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই। এই নীতির জায়গায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে নাগরিকদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং তাদের সচেতন করে তোলা। একইভাবে কোনো নাগরিকেরও অন্যের অধিকার অস্বীকার বা তার বাস্তবায়নে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিরও অধিকার নেই। এই ধরনের কোনো সংঘাত যেন সৃষ্টি না হয় তার জন্য রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য বিধিবিধান প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু কোনো নাগরিকের অধিকার হরণ করতে পারে না।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে শেখ হাসিনা আমাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণ করেছেন, গালভরা উন্নয়নের কথা বলে বিএনপি আমাদের হাতে পায়ের সেই শৃংখলকে আরও রক্তাক্ত করুক আমরা তা চাই না। তাহলে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের ভিত্তিতে আমরা নতুনভাবে বাংলাদেশ গড়তে পারি সেই দিকনির্দেশনাই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে দিতে হবে।
সেটা যেন আমরা সবাই বুঝি, এটাই মিনতি।
No comments