রমজানের শিক্ষা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য by ড. সুকোমল বড়ুয়া
ইসলামের পাঁচ মূল স্তম্ভের মধ্যে সওম বা
রোজা অন্যতম। ইসলামী জীবন বিধানে এটি সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত বা
ব্রতকর্ম। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মে উপবাস থাকার বিধান
আছে; তবে পার্থক্য আচার ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে। মাহে রমজান মানে শুধু
সারাদিন পানাহার বন্ধ রাখা নয়; এর অন্তর্নিহিত অর্থ হল নিজের জীবনকে
গভীরভাবে উপলব্ধি করা, দৈহিক ইন্দ্রিয় ও রিপুগুলোকে সংযত রাখা এবং সব ধরনের
ভেদাভেদ ও বৈষম্য দূর করে কাছের প্রতিবেশীসহ সব মানুষের প্রতি মমত্ববোধ
জাগ্রত করা। মাহে রমজান যদিও অত্যন্ত পবিত্র মাস কিন্তু এ মাসকে কেন্দ্র
করেই একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নানামুখী অসদুপায় ও অনৈতিকতার পথ বেছে নেয়। রমজান
আসার আগেই মজুদদার ও মুনাফালোভীরা নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম
বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু রমজানের শুরুতেই বাজারে জিনিসপত্রের চাহিদা স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়, সেহেতু দাম বৃদ্ধিসহ সারাদেশে ভেজাল পণ্যের অবাধ
বাণিজ্যও চলে বেশি। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাÍ্য কত বেশি, সেটা বলে শেষ করা
যাবে না। আমরা মনে করি, এটা কখনও ইসলামের শিক্ষা হতে পারে না। পারে না মাহে
রমজানের শিক্ষা হতে। রোজা রাখার কারণে একজন ব্যক্তি নিজের জন্য যে ক্ষুধা
বা তৃষ্ণা অনুভব করে, ঠিক একইভাবে সে অন্য ক্ষুধার্ত ব্যক্তির ক্ষুধার
যন্ত্রণাও সহজে উপলব্ধি করতে পারে; যার কারণে তার মধ্যে ক্ষুধার্ত
ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি ও মমত্ববোধ জেগে ওঠে।
আমরা জানি, এ দেশ মুসলিম প্রধান। এ দেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাহলে আমরা যে এই পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করছি, সেটা কার জন্য? বিষয়টি একটু ভেবে দেখা উচিত নয় কি? যারা ব্যবসা করেন, যারা মজুদদার ও আমদানীকারক তাদের উচিত এ পবিত্র মাসে ধনী, গরিবসহ সব শ্রেণীর মানুষ যাতে সহজে সব ধরনের নিত্যপণ্য ও দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা কী দেখি? আমরা দেখি এর সম্পূর্ণ উল্টোটা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন ধর্মীয় উৎসব, আনন্দ উৎসব ও পূজা-পার্বণ আসে, তখন নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। সব ধরনের নিত্যপণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়, যাতে সব শ্রেণীর মানুষ ওই আনন্দ উৎসবে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারে। কারণ ধর্ম পবিত্র। আর আনন্দ উৎসব হল পবিত্রতার প্রতীক। এছাড়া ধর্ম যেমন সবার জন্য সমান, তেমনি ধর্মীয় উৎসব কিংবা আনন্দও সবার জন্য সমান। এখানে বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ বা বৈষম্য থাকার কথা নয়।
আমি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একজন মানুষ। আমি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও পবিত্র রমজান মাসকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি, সম্মান জানাই এবং সব ধরনের পবিত্রতা রক্ষার জন্য নিজকে সংযত রাখি এবং আমার বিভাগের মুসলিম ছাত্রছাত্রীসহ আমার জানাশোনা অন্য মুসলিম বন্ধু-বান্ধবদেরও সংযত আচরণের জন্য উৎসাহিত করি। এছাড়া আমি নিজেও ধর্মের বিধিবিধান ও সব ধরনের নীতি-নৈতিকতাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। শুধু তাই নয়, আমি এ দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব ও সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার সতত চেষ্টা করি। এ পবিত্র মাসে আমাদের জীবনের সব ধরনের নীতি-নৈতিকতার আদর্শকে যেমন মনেপ্রাণে অনুসরণ করা উচিত; তেমনি আমাদের অন্তরকেও নির্মল করে মানবিক সব ধরনের গুণধর্মের চর্চা করা উচিত। এতে একদিকে মাহে রমজানের পবিত্রতা ও মর্যাদা যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি দেশ-জাতি-সম্প্রদায়সহ সব মানুষ সমভাবে উপকৃত হবে। এর সুশীতল ছোঁয়া বিশ্ব মানবতাকেও উপকৃত করবে, আলিঙ্গন করবে।
এ রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। এ ব্যাপারে তারা যত হাঁকডাক করেন, জিনিসপত্রের দাম তত বেড়ে যায়। নিত্যদিনের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির কথা একবার চিন্তা করুন। নাগরিক জীবনের কী দুর্বিষহ অবস্থা। রাস্তাঘাটের বেহালদশা। সামনে পবিত্র ঈদের ছুটি। এ ছুটিতে সড়ক-মহাসড়কে জনগণের কী ভোগান্তি হবে, সেটা বলে শেষ করা যাবে না। ঢাকার যানজটের কথা নাই বা বললাম। প্রতিদিন গ্রামগঞ্জ ও শহরের খুনখারাবি ও নানা অপরাধের চিত্র আমাদের বিবেককে তাড়িত করে। নিজেকে প্রশ্ন করি, সব জায়গায় কেন এ রকম দুরবস্থা? জনজীবন এ রকম বিপর্যস্ত হবে কেন? এখন তো ক্ষমতায় আছে মহাজোট সরকার। ছোট-বড় সবাইকে নিয়েই তো মহাজোট সরকার গঠন করা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণের সব ক্ষমতা তো তাদের হাতেই আছে; আছে আইন-শৃংখলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী। তাহলে জনগণের এত দুর্ভোগ হবে কেন?
আসুন, আমরা একে অপরকে দোষ না দিয়ে নিজেরা কী করছি সেটি একবার ভেবে দেখি। নিজেকে একবার পরীক্ষা করি বিবেকচক্ষু দিয়ে। নিজের দোষ অন্যের কাঁধে দিয়ে লাভ নেই। চলুন আমরা সবাই মিথ্যা, দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে দূরে থেকে দেশ ও জনগণের সেবায় উদ্বুদ্ধ হই। দেশ বাঁচলে জনগণ বাঁচবে, আমরা বাঁচব- এই নীতিতে বিশ্বাসী হই। চলুন আমরা সবাই রমজানের এ পবিত্র মাসে সব ধরনের অনৈতিকতা পরিহার করে ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী হই এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। রমজানের আদর্শের শিক্ষায় আমরা সবাইকে সুখে, শান্তিতে, নিরাপদে ও নির্বিঘেœ বসবাস করার সুযোগ করে দিই। এতে বাংলাদেশ তো সমৃদ্ধময় হবেই, এমনকি বিশ্বেও শান্তির পরশ পড়বে।
ড. সুকোমল বড়ুয়া : প্রফেসর ওসাবেক চেয়ারম্যান, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বিশ্ব বৌদ্ধ ফেডারেশন- বাংলাদেশ চ্যাপ্টার
আমরা জানি, এ দেশ মুসলিম প্রধান। এ দেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাহলে আমরা যে এই পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করছি, সেটা কার জন্য? বিষয়টি একটু ভেবে দেখা উচিত নয় কি? যারা ব্যবসা করেন, যারা মজুদদার ও আমদানীকারক তাদের উচিত এ পবিত্র মাসে ধনী, গরিবসহ সব শ্রেণীর মানুষ যাতে সহজে সব ধরনের নিত্যপণ্য ও দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা কী দেখি? আমরা দেখি এর সম্পূর্ণ উল্টোটা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন ধর্মীয় উৎসব, আনন্দ উৎসব ও পূজা-পার্বণ আসে, তখন নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। সব ধরনের নিত্যপণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়, যাতে সব শ্রেণীর মানুষ ওই আনন্দ উৎসবে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারে। কারণ ধর্ম পবিত্র। আর আনন্দ উৎসব হল পবিত্রতার প্রতীক। এছাড়া ধর্ম যেমন সবার জন্য সমান, তেমনি ধর্মীয় উৎসব কিংবা আনন্দও সবার জন্য সমান। এখানে বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ বা বৈষম্য থাকার কথা নয়।
আমি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একজন মানুষ। আমি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও পবিত্র রমজান মাসকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি, সম্মান জানাই এবং সব ধরনের পবিত্রতা রক্ষার জন্য নিজকে সংযত রাখি এবং আমার বিভাগের মুসলিম ছাত্রছাত্রীসহ আমার জানাশোনা অন্য মুসলিম বন্ধু-বান্ধবদেরও সংযত আচরণের জন্য উৎসাহিত করি। এছাড়া আমি নিজেও ধর্মের বিধিবিধান ও সব ধরনের নীতি-নৈতিকতাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। শুধু তাই নয়, আমি এ দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব ও সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার সতত চেষ্টা করি। এ পবিত্র মাসে আমাদের জীবনের সব ধরনের নীতি-নৈতিকতার আদর্শকে যেমন মনেপ্রাণে অনুসরণ করা উচিত; তেমনি আমাদের অন্তরকেও নির্মল করে মানবিক সব ধরনের গুণধর্মের চর্চা করা উচিত। এতে একদিকে মাহে রমজানের পবিত্রতা ও মর্যাদা যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি দেশ-জাতি-সম্প্রদায়সহ সব মানুষ সমভাবে উপকৃত হবে। এর সুশীতল ছোঁয়া বিশ্ব মানবতাকেও উপকৃত করবে, আলিঙ্গন করবে।
এ রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। এ ব্যাপারে তারা যত হাঁকডাক করেন, জিনিসপত্রের দাম তত বেড়ে যায়। নিত্যদিনের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির কথা একবার চিন্তা করুন। নাগরিক জীবনের কী দুর্বিষহ অবস্থা। রাস্তাঘাটের বেহালদশা। সামনে পবিত্র ঈদের ছুটি। এ ছুটিতে সড়ক-মহাসড়কে জনগণের কী ভোগান্তি হবে, সেটা বলে শেষ করা যাবে না। ঢাকার যানজটের কথা নাই বা বললাম। প্রতিদিন গ্রামগঞ্জ ও শহরের খুনখারাবি ও নানা অপরাধের চিত্র আমাদের বিবেককে তাড়িত করে। নিজেকে প্রশ্ন করি, সব জায়গায় কেন এ রকম দুরবস্থা? জনজীবন এ রকম বিপর্যস্ত হবে কেন? এখন তো ক্ষমতায় আছে মহাজোট সরকার। ছোট-বড় সবাইকে নিয়েই তো মহাজোট সরকার গঠন করা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণের সব ক্ষমতা তো তাদের হাতেই আছে; আছে আইন-শৃংখলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী। তাহলে জনগণের এত দুর্ভোগ হবে কেন?
আসুন, আমরা একে অপরকে দোষ না দিয়ে নিজেরা কী করছি সেটি একবার ভেবে দেখি। নিজেকে একবার পরীক্ষা করি বিবেকচক্ষু দিয়ে। নিজের দোষ অন্যের কাঁধে দিয়ে লাভ নেই। চলুন আমরা সবাই মিথ্যা, দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে দূরে থেকে দেশ ও জনগণের সেবায় উদ্বুদ্ধ হই। দেশ বাঁচলে জনগণ বাঁচবে, আমরা বাঁচব- এই নীতিতে বিশ্বাসী হই। চলুন আমরা সবাই রমজানের এ পবিত্র মাসে সব ধরনের অনৈতিকতা পরিহার করে ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী হই এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। রমজানের আদর্শের শিক্ষায় আমরা সবাইকে সুখে, শান্তিতে, নিরাপদে ও নির্বিঘেœ বসবাস করার সুযোগ করে দিই। এতে বাংলাদেশ তো সমৃদ্ধময় হবেই, এমনকি বিশ্বেও শান্তির পরশ পড়বে।
ড. সুকোমল বড়ুয়া : প্রফেসর ওসাবেক চেয়ারম্যান, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বিশ্ব বৌদ্ধ ফেডারেশন- বাংলাদেশ চ্যাপ্টার
No comments