উদ্বেগ উৎকণ্ঠার অবসান হোক by সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক
আজকের
সূর্যাস্তের পর লাইলাতুল কদরের মহিমান্বিত রজনী। এ রজনী হাজার মাস অপেক্ষা
উত্তম। এ রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন এটাই
স্বাভাবিক। তবে ইবাদত করতে গেলে মানুষের মনে শান্তি প্রয়োজন, পরিবেশ
প্রয়োজন। নিরবচ্ছিন্নভাবে একাগ্রচিত্তে শান্তিপূর্ণভাবে ইবাদত করার সে
পরিবেশ রয়েছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে না। কেননা রোজা শুরু হওয়ার আগে
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ বলেছিলেন, পবিত্র রমজান মাসে
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে জনগণ। ঢাকা মহানগরীতে রোজার মাসে বিদ্যুতের ঘাটতি
কম ছিল এ কথা সত্য। কিন্তু রোজার মাসের অর্ধেক সময় চট্টগ্রাম মহানগরীতে
বসবাস করে দেখেছি সেখানে লোডশেডিং নামক যন্ত্রণা কাকে বলে। সেখানে
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইফতারে, তারাবি নামাজে এমনকি সেহরিতেও বিদ্যুতের অভাবে
কষ্ট পেয়েছে এবং পেয়ে যাচ্ছে। সুতরাং শান্তিপূর্ণভাবে ইবাদত করার ইচ্ছা
থাকলেও মানুষ সেটা পারছে না। আরও অনেক কারণেই মানুষের মনে শান্তি নেই।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মানুষ অতিষ্ঠ। সেই সঙ্গে গুম, মানুষ হত্যা,
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব কিছু মিলিয়েই মানুষের মন থেকে শান্তি উঠে গেছে।
এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না মানুষ। সব কিছুই নীরবে মুখ
বুজে জনগণ সহ্য করে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে জয় লাভের জন্য সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকার এমন একটি পরিবেশ চাচ্ছে- যে পরিবেশে ১৮ দলীয় জোট দুর্বল হয়ে যাবে, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে, সরকারের রাজনৈতিক ক্যাডাররা একটি শক্ত অবস্থান নেবে ইত্যাদি। সরকার অবশ্য জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে চাচ্ছে- সেই নির্বাচন যার অধীনেই হোক না কেন। সরকার বিশ্বকে বোঝাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিয়ে আবার নির্বাচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে ১টি হচ্ছে ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে বৃহৎ শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে টানাহেঁচড়া। পত্রিকার কলামে টিভির টক-শোয়ের বিভিন্ন আলোচনায় এসেছে, সরকার এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে একটি আলোচনা হয়েছে এই মর্মে যে, সরকার জামায়াতের ওপর থেকে আক্রমণের খক্ষ উঠিয়ে নেবে, এর বিনিময়ে জামায়াত কোনো ধরনের সরকারবিরোধী এবং ধ্বংসাÍক আক্রমণাÍক কাজ করবে না, সেই সঙ্গে সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। সুতরাং এর বিনিময়ে উভয়পক্ষই কিছু না কিছু পাবে। ওই একই রকম কথাবার্তা হেফাজতে ইসলাম নিয়েও হয়েছে। কথা উঠেছে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামের জন্য ৫০টি আসন ছেড়ে দেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা তুলে নেবে। বিনিময়ে তারা সরকারের কোনো ধরনের বিরুদ্ধাচরণ না করে সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। এরকম পেক্ষাপটে গত ৪-৫ দিন আগে সংবাদ শিরোনাম হল ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।’ আইনের যুদ্ধ আইনের অঙ্গনে চলবে এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য, জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদেরও জনসমর্থন রয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। নিবন্ধনবিহীন রাজনৈতিক দল যে বাংলাদেশে নেই এটি সঠিক নয়। কিন্তু একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে বিচার বিভাগে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়েছে (আমার কথা নয়, মানুষের অনুভূতি)। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে অন্য দলগুলোর ওপরও যে চালানো হবে না- এর নিশ্চয়তা কী? কেননা সরকারের প্রায় প্রতিটি কর্মকাণ্ডই ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলে। একুশে টিভি বন্ধ হয়েছে, তাই চ্যানেল ওয়ানও বন্ধ হল। আমার দেশ বন্ধ হয়েছে, হয়তো আগামীতে অন্য আরেকটি বন্ধ হবে যদি বিকল্প সরকার আসে। তাহলে এ দ্বন্দ্ব কি চলতেই থাকবে? এ দ্বন্দ্ব দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কতটুকু প্রভাব ফেলছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকেই বলছেন, যেহেতু আদালতের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়, তাই আদালত সরকারি প্রভাব বৃত্তের বাইরে নয়। হাইকোর্ট বিভাগে যত সংখ্যক বিচারক আছেন তার তিন ভাগের দুই ভাগই বর্তমান সরকারের অনুগত। কেননা সরকারই তাদের বাছাই করে নিয়োগ দিয়েছে। সুতরাং তাদের কর্মকাণ্ড সরকারপন্থী না হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। অতএব জামায়াতের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাতিলের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো কাজ বিচার বিভাগের মাধ্যমে হোক আমরা সেটি চাই না। বিচার বিভাগ সম্মানিত এবং পবিত্র একটি ক্ষেত্র। আমরা একে কলুষিত হতে দিতে চাই না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কাজও আদলতের মাধ্যমে করানো হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশন বলছেন, নিবন্ধন বাতিলের কাজ সেটি বাস্তবায়নের ক্ষমতা তার নেই। তাই তিনি এ ক্ষমতাটি ছেড়ে দিয়েছেন। বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা যদি তার না থাকে তাহলে তিনি সে ক্ষমতা চেয়ে নিতে পারেন। কিন্তু তিনি অভিমান করে যেটুকু ক্ষমতা আছে সেটুকুও ছেড়ে দেবেন কার স্বার্থে? তাহলে কি তিনি কাজের চাপ কমানোর জন্য নাকি দায়িত্ব এড়ানোর জন্য এসব করছেন? যাই হোক তিনি হয়তো জানেন না, রাজনৈতিক সরকারের হাতে একটি বড় অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। দলকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন বাতিল করেছে হাইকোর্ট। তাই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল এটিই হাইকোর্টের মন্তব্য। তাহলে নির্বাচন কমিশন কেনই বা ওই ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন। কেনই বা হাইকোর্ট সেটি বাতিল করলেন? তাহলে ওই দলটিকে কি ইচ্ছা করেই হেয় করা হল?
যাই হোক বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক অঙ্গন নিয়ে জনগণ উৎকণ্ঠিত। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সেদিন বলেছেন ‘আগামীতেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে, আমার নিকট তথ্য আছে।’ সেদিন থেকে এই উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে। এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমার কোনো পথ আমরা দেখছি না। কারণ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকারি দল মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী জাতিকে ভয় দেখাচ্ছে এই মর্মে, যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তাহলে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে দু’বছরও লাগতে পারে, আবার ১০ বছরও লাগতে পারে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অনেক নেতাকর্মী জেলে যাবেন। এ ধরনের অযাচিত সতর্ক বাণী প্রচার করে তিনি কি কোনো ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন? তিনি কি এ ব্যাপারে জনগণকে প্রস্তুত হতে বলছেন? অনেকেই বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে সরকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যে পরিস্থিতি তখন আর স্বাভাবিক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তখন রাষ্ট্রপতি ব্যতিক্রমী কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন। আমরা কোনোভাবেই এমনটি চাই না। আমরা আশা করব, সরকারদলীয় রাজনৈতিক মহলে শুভবুদ্ধির যেন উদয় হয়। রক্তপাত, সংঘাত আর সহিংসতার আবর্তে দেশকে যেন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে না দেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার। সে পরিবেশ রক্ষায় সবাকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ মুহূর্তে যদি রেফারেন্ডাম বা গণভোট দেয়া হয় এ ব্যাপারে যে, বাংলাদেশের মানুষ নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় কি চায় না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রায় ৯০ ভাগেরও ওপরে দেশের জনগণ বলবেন, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়।
আজকের এ রাজনৈতিক অসহিষ্ণু পরিস্থিতির উৎপত্তি এখন থেকে আনুমানিক দু’বছর এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর একটি হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে। সেই সিদ্ধান্তটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে বাতিল করা। কিন্তু এ মুহূর্তে এর সমাধান প্রধানমন্ত্রীর একার ওপর আর নেই। সুতরাং এখন উচিত সর্বদলীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক : কলাম লেখক; সভাপতি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে জয় লাভের জন্য সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকার এমন একটি পরিবেশ চাচ্ছে- যে পরিবেশে ১৮ দলীয় জোট দুর্বল হয়ে যাবে, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে, সরকারের রাজনৈতিক ক্যাডাররা একটি শক্ত অবস্থান নেবে ইত্যাদি। সরকার অবশ্য জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে চাচ্ছে- সেই নির্বাচন যার অধীনেই হোক না কেন। সরকার বিশ্বকে বোঝাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিয়ে আবার নির্বাচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে ১টি হচ্ছে ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে বৃহৎ শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে টানাহেঁচড়া। পত্রিকার কলামে টিভির টক-শোয়ের বিভিন্ন আলোচনায় এসেছে, সরকার এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে একটি আলোচনা হয়েছে এই মর্মে যে, সরকার জামায়াতের ওপর থেকে আক্রমণের খক্ষ উঠিয়ে নেবে, এর বিনিময়ে জামায়াত কোনো ধরনের সরকারবিরোধী এবং ধ্বংসাÍক আক্রমণাÍক কাজ করবে না, সেই সঙ্গে সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। সুতরাং এর বিনিময়ে উভয়পক্ষই কিছু না কিছু পাবে। ওই একই রকম কথাবার্তা হেফাজতে ইসলাম নিয়েও হয়েছে। কথা উঠেছে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামের জন্য ৫০টি আসন ছেড়ে দেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা তুলে নেবে। বিনিময়ে তারা সরকারের কোনো ধরনের বিরুদ্ধাচরণ না করে সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। এরকম পেক্ষাপটে গত ৪-৫ দিন আগে সংবাদ শিরোনাম হল ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।’ আইনের যুদ্ধ আইনের অঙ্গনে চলবে এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য, জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদেরও জনসমর্থন রয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। নিবন্ধনবিহীন রাজনৈতিক দল যে বাংলাদেশে নেই এটি সঠিক নয়। কিন্তু একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে বিচার বিভাগে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়েছে (আমার কথা নয়, মানুষের অনুভূতি)। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে অন্য দলগুলোর ওপরও যে চালানো হবে না- এর নিশ্চয়তা কী? কেননা সরকারের প্রায় প্রতিটি কর্মকাণ্ডই ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলে। একুশে টিভি বন্ধ হয়েছে, তাই চ্যানেল ওয়ানও বন্ধ হল। আমার দেশ বন্ধ হয়েছে, হয়তো আগামীতে অন্য আরেকটি বন্ধ হবে যদি বিকল্প সরকার আসে। তাহলে এ দ্বন্দ্ব কি চলতেই থাকবে? এ দ্বন্দ্ব দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কতটুকু প্রভাব ফেলছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকেই বলছেন, যেহেতু আদালতের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়, তাই আদালত সরকারি প্রভাব বৃত্তের বাইরে নয়। হাইকোর্ট বিভাগে যত সংখ্যক বিচারক আছেন তার তিন ভাগের দুই ভাগই বর্তমান সরকারের অনুগত। কেননা সরকারই তাদের বাছাই করে নিয়োগ দিয়েছে। সুতরাং তাদের কর্মকাণ্ড সরকারপন্থী না হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। অতএব জামায়াতের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাতিলের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো কাজ বিচার বিভাগের মাধ্যমে হোক আমরা সেটি চাই না। বিচার বিভাগ সম্মানিত এবং পবিত্র একটি ক্ষেত্র। আমরা একে কলুষিত হতে দিতে চাই না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কাজও আদলতের মাধ্যমে করানো হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশন বলছেন, নিবন্ধন বাতিলের কাজ সেটি বাস্তবায়নের ক্ষমতা তার নেই। তাই তিনি এ ক্ষমতাটি ছেড়ে দিয়েছেন। বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা যদি তার না থাকে তাহলে তিনি সে ক্ষমতা চেয়ে নিতে পারেন। কিন্তু তিনি অভিমান করে যেটুকু ক্ষমতা আছে সেটুকুও ছেড়ে দেবেন কার স্বার্থে? তাহলে কি তিনি কাজের চাপ কমানোর জন্য নাকি দায়িত্ব এড়ানোর জন্য এসব করছেন? যাই হোক তিনি হয়তো জানেন না, রাজনৈতিক সরকারের হাতে একটি বড় অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। দলকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন বাতিল করেছে হাইকোর্ট। তাই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল এটিই হাইকোর্টের মন্তব্য। তাহলে নির্বাচন কমিশন কেনই বা ওই ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন। কেনই বা হাইকোর্ট সেটি বাতিল করলেন? তাহলে ওই দলটিকে কি ইচ্ছা করেই হেয় করা হল?
যাই হোক বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক অঙ্গন নিয়ে জনগণ উৎকণ্ঠিত। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সেদিন বলেছেন ‘আগামীতেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে, আমার নিকট তথ্য আছে।’ সেদিন থেকে এই উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে। এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমার কোনো পথ আমরা দেখছি না। কারণ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকারি দল মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী জাতিকে ভয় দেখাচ্ছে এই মর্মে, যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তাহলে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে দু’বছরও লাগতে পারে, আবার ১০ বছরও লাগতে পারে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অনেক নেতাকর্মী জেলে যাবেন। এ ধরনের অযাচিত সতর্ক বাণী প্রচার করে তিনি কি কোনো ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন? তিনি কি এ ব্যাপারে জনগণকে প্রস্তুত হতে বলছেন? অনেকেই বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে সরকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যে পরিস্থিতি তখন আর স্বাভাবিক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তখন রাষ্ট্রপতি ব্যতিক্রমী কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন। আমরা কোনোভাবেই এমনটি চাই না। আমরা আশা করব, সরকারদলীয় রাজনৈতিক মহলে শুভবুদ্ধির যেন উদয় হয়। রক্তপাত, সংঘাত আর সহিংসতার আবর্তে দেশকে যেন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে না দেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার। সে পরিবেশ রক্ষায় সবাকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ মুহূর্তে যদি রেফারেন্ডাম বা গণভোট দেয়া হয় এ ব্যাপারে যে, বাংলাদেশের মানুষ নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় কি চায় না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রায় ৯০ ভাগেরও ওপরে দেশের জনগণ বলবেন, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়।
আজকের এ রাজনৈতিক অসহিষ্ণু পরিস্থিতির উৎপত্তি এখন থেকে আনুমানিক দু’বছর এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর একটি হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে। সেই সিদ্ধান্তটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে বাতিল করা। কিন্তু এ মুহূর্তে এর সমাধান প্রধানমন্ত্রীর একার ওপর আর নেই। সুতরাং এখন উচিত সর্বদলীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক : কলাম লেখক; সভাপতি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
No comments