তবুও আছেন মিনার মাহমুদ by সোহেলুর রহমান
চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল, একথা অনেকাংশে
সত্য হলেও সর্বাংশে সত্য হয়। যেমন সত্য নয় সাপ্তাহিক বিচিন্তা প্রয়াত
সম্পাদক মিনার মাহমুদের ক্ষেত্রে। মিনার মাহমুদ গত একবছর যাবত চোখের আড়াল হলেও যারা তাকে চেনেন জানেন তাদের কারোরই মন থেকে তিনি আড়াল হননি।
শুক্রবার
(২৯ মার্চ) মিনার মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এক বছর আগের এ দিনে তিনি
অনেক অভিমান আর ব্যথা বেদনা নিয়ে নিভৃতে পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছেন তিনি।
তবুও তার বিচরণের সবখানেই তার অনুপস্থিতি এখনও প্রকটভাবে ধরা পড়ে।
প্রিয় বাংলাদেশের অবক্ষয়, অব্যবস্থাপনা, হতাশা আর অনেক না পাওয়া নিয়েই হয়তো অভিমানে তিনি আত্মহনন করেছিলেন।
কিন্তু লাখো বুকের রক্তে অর্জিত এ দেশকে তিনি তো কারো চেয়ে কম ভালবাসেন নি। কখনো কখনো তার ভালবাসা ছিল অনেকের চেয়ে বেশি। হয়ত দেশ ও মানুষের প্রতি অধিক দায়বদ্ধতাই তাকে ফিরিয়ে এনেছিল দেশে। আবার তার প্রিয় “বিচিন্তায়”। কিন্তু না মিনার মাহমুদরা থাকবেন কেন?
তিনি তো নতুন করে দিতেই এসেছিলেন, আমরা হতভাগার দল নিতে পরলাম না বলেই কি তার এই অকাল প্রস্থান।
মিনার মাহমুদকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে তিনি নতুন করে দেশে ফিরে “বিচিন্তা” আবার শুরু করেছিলেন। তখন তার সঙ্গে কাজ করার সুয়োগ চেয়ে ফোনে কথা হয়েছিল।
আমার কাজের কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে তা না জানতে চেয়েই, বড় কথা আমার মতো আনাড়িকে তিনি এক কথাতেই কাজ করবার সুযোগ দিতে রাজি হয়েছিলেন।
১৯৮৭ সালে তার সম্পাদনায় বিচিন্তা প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসক এরশাদ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে তাকে জেলে পাঠান। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর মিনার ছাড়া পান এবং আবার পত্রিকাটি প্রকাশ করেন।
১৯৯১ সালে তিনি আমেরিকা চলে যান। দীর্ঘ আঠারো বছর পর ২০১০ সালে তিনি দেশে ফেরেন।
মিনার মাহমুদের জন্ম ১৯৫৯ সালের ১০ মার্চ। ফরিদপুরে। তার পিতৃপ্রদত্ত নাম মোহাম্মদ আলী মিনার। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বিএসএস (সম্মান) এবং ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই তার লেখালেখি শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই শুরু করেন সাংবাদিকতা।
১৯৮৭ সালে “বিচিন্তা” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই বিচিন্তাই পরবর্তীতে তাকে তুমুল পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
বিচিন্তায় তৎকালীর স্বৈরাচার বিরোধী লেখা প্রকাশের জন্য ১৯৮৮ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সামরিক শাসকের রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় বিচিন্তা।
১৯৯১ তে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় এলে আবার বিচিন্তা প্রকাশ শুরু করেন মিনার। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কিছু দিন পর পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ দেড়যুগ।
মিনার মাহমুদ নামটা আর দশটা বিষয়ের মতো পুরনো হতে হতে এক সময় ধুলো জমে আড়াল পড়ে যায়।
অবশেষে আবার মিনার মাহমুদ ফেরেন মায়ের কোলে। ২০০৯ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজের চেষ্টার পাশাপাশি শুরু করেন পুরনো বিচিন্তার নতুন প্রকাশ।
এর মধ্যেই পান শান্তা মারিয়াম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার প্রস্তাব। সাপ্তাহিক রাজনৈতিক পত্রিকায় রিপোর্টিং ভিত্তিক বিদ্রোহীধারার আধুনিকতার প্রবর্তক এ যোদ্ধা মৃত্যুর কিছুদিন আগে কাঁধে নেন আজকের প্রত্যাশা নামে একটি দৈনিকের কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব।
২০১২ সালের ২৯ মার্চ রাজধানীর রিজেন্সি হোটেলে রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে স্ত্রীর কাছে দীর্ঘ পত্র লিখে অনেকগুলো ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহনন করেন তিনি। ৩১ মার্চ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মিনার মাহমুদকে দাফন করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন তসলিমার তৃতীয় স্বামী। জীবদ্দশায় তিনটি বই- মনে পড়ে রুবি রায়, পিছনে ফেলে আসি ও নির্ঘুম স্বপ্নের দেশে প্রকাশিত হয়েছিল।
মিনার মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে শুক্রবার বিকেল ৫টায় বিচিন্তার প্রয়াত সম্পাদক-প্রকাশকের স্মরণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় দিলু রোড জামে মসজিদ এবং ফরিদপুরের ফরিদ শাহ দরগাহ প্রাঙ্গণে বাদ-জুমা বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
তাকে নিয়ে যারা ভাবেন তাদের অধিকাংশের অভিমত মিনার মাহমুদ অভিমানেই এমনি করে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু কিসের এতো অভিমান? কার ওপর অভিমান তা তিনি খোলাসা করে যাননি। তার মতো প্রতিববাদী, সংগ্রামী আর কর্মোদীপ্ত মানুষের এত নির্লিপ্ত অভিমান ছিল, যা তিনি কাউকে বুঝতেই দেননি। এমনকি যার জন্যে বাচার স্বপ্ন নিয়ে দেশে এসেছেন বলে চিঠিতে লিখে গিয়েছেন সেই স্ত্রীকেও না।
প্রিয় বাংলাদেশের অবক্ষয়, অব্যবস্থাপনা, হতাশা আর অনেক না পাওয়া নিয়েই হয়তো অভিমানে তিনি আত্মহনন করেছিলেন।
কিন্তু লাখো বুকের রক্তে অর্জিত এ দেশকে তিনি তো কারো চেয়ে কম ভালবাসেন নি। কখনো কখনো তার ভালবাসা ছিল অনেকের চেয়ে বেশি। হয়ত দেশ ও মানুষের প্রতি অধিক দায়বদ্ধতাই তাকে ফিরিয়ে এনেছিল দেশে। আবার তার প্রিয় “বিচিন্তায়”। কিন্তু না মিনার মাহমুদরা থাকবেন কেন?
তিনি তো নতুন করে দিতেই এসেছিলেন, আমরা হতভাগার দল নিতে পরলাম না বলেই কি তার এই অকাল প্রস্থান।
মিনার মাহমুদকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে তিনি নতুন করে দেশে ফিরে “বিচিন্তা” আবার শুরু করেছিলেন। তখন তার সঙ্গে কাজ করার সুয়োগ চেয়ে ফোনে কথা হয়েছিল।
আমার কাজের কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে তা না জানতে চেয়েই, বড় কথা আমার মতো আনাড়িকে তিনি এক কথাতেই কাজ করবার সুযোগ দিতে রাজি হয়েছিলেন।
১৯৮৭ সালে তার সম্পাদনায় বিচিন্তা প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসক এরশাদ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে তাকে জেলে পাঠান। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর মিনার ছাড়া পান এবং আবার পত্রিকাটি প্রকাশ করেন।
১৯৯১ সালে তিনি আমেরিকা চলে যান। দীর্ঘ আঠারো বছর পর ২০১০ সালে তিনি দেশে ফেরেন।
মিনার মাহমুদের জন্ম ১৯৫৯ সালের ১০ মার্চ। ফরিদপুরে। তার পিতৃপ্রদত্ত নাম মোহাম্মদ আলী মিনার। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বিএসএস (সম্মান) এবং ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই তার লেখালেখি শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই শুরু করেন সাংবাদিকতা।
১৯৮৭ সালে “বিচিন্তা” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই বিচিন্তাই পরবর্তীতে তাকে তুমুল পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
বিচিন্তায় তৎকালীর স্বৈরাচার বিরোধী লেখা প্রকাশের জন্য ১৯৮৮ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সামরিক শাসকের রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় বিচিন্তা।
১৯৯১ তে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় এলে আবার বিচিন্তা প্রকাশ শুরু করেন মিনার। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কিছু দিন পর পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ দেড়যুগ।
মিনার মাহমুদ নামটা আর দশটা বিষয়ের মতো পুরনো হতে হতে এক সময় ধুলো জমে আড়াল পড়ে যায়।
অবশেষে আবার মিনার মাহমুদ ফেরেন মায়ের কোলে। ২০০৯ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজের চেষ্টার পাশাপাশি শুরু করেন পুরনো বিচিন্তার নতুন প্রকাশ।
এর মধ্যেই পান শান্তা মারিয়াম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার প্রস্তাব। সাপ্তাহিক রাজনৈতিক পত্রিকায় রিপোর্টিং ভিত্তিক বিদ্রোহীধারার আধুনিকতার প্রবর্তক এ যোদ্ধা মৃত্যুর কিছুদিন আগে কাঁধে নেন আজকের প্রত্যাশা নামে একটি দৈনিকের কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব।
২০১২ সালের ২৯ মার্চ রাজধানীর রিজেন্সি হোটেলে রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে স্ত্রীর কাছে দীর্ঘ পত্র লিখে অনেকগুলো ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহনন করেন তিনি। ৩১ মার্চ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মিনার মাহমুদকে দাফন করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন তসলিমার তৃতীয় স্বামী। জীবদ্দশায় তিনটি বই- মনে পড়ে রুবি রায়, পিছনে ফেলে আসি ও নির্ঘুম স্বপ্নের দেশে প্রকাশিত হয়েছিল।
মিনার মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে শুক্রবার বিকেল ৫টায় বিচিন্তার প্রয়াত সম্পাদক-প্রকাশকের স্মরণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় দিলু রোড জামে মসজিদ এবং ফরিদপুরের ফরিদ শাহ দরগাহ প্রাঙ্গণে বাদ-জুমা বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
তাকে নিয়ে যারা ভাবেন তাদের অধিকাংশের অভিমত মিনার মাহমুদ অভিমানেই এমনি করে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু কিসের এতো অভিমান? কার ওপর অভিমান তা তিনি খোলাসা করে যাননি। তার মতো প্রতিববাদী, সংগ্রামী আর কর্মোদীপ্ত মানুষের এত নির্লিপ্ত অভিমান ছিল, যা তিনি কাউকে বুঝতেই দেননি। এমনকি যার জন্যে বাচার স্বপ্ন নিয়ে দেশে এসেছেন বলে চিঠিতে লিখে গিয়েছেন সেই স্ত্রীকেও না।
No comments