হেফাজতে ইসলামের চ্যালেঞ্জ by আহমেদ জামাল
জামায়াতের
সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর
আল্লামা আহমদ শফি। ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামবিরোধী সব ধরনের আগ্রাসন প্রতিরোধের,
নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির বিধান না হলে ৬ই এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে ৫০ লাখ
লোকের লংমার্চের।
আর এতে বাধা দিলে লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ
কঠোর কর্মসূচি দেয়ার। দাবি করেছেন জীবনভর নিজের অরাজনৈতিক অবস্থানের।
অঙ্গীকার করেছেন মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত
রাখার। ক্ষমতার অংশীদার চান না তিনি, চান ঈমান-আকিদা ও দেশের
শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নিশ্চয়তা। গতকাল দৈনিক মানবজমিন-এর সঙ্গে
সাক্ষাৎকারে এসব চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন বর্ষীয়ান এই আলেম। সামপ্রতিক সময়ের
আলোচিত নাম হেফাজতে ইসলাম ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী। শাহবাগের জাগরণ মঞ্চের
নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে রাসুল (সা.) ও ইসলাম অবমাননার খবর
প্রকাশিত হওয়ার পর এই সংগঠনটির প্রতিবাদ কর্মসূচি সবার নজরে আসে। ইসলাম ও
রাসুল অবমাননার সঙ্গে জড়িত ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা
দেশে ব্যাপক জনসমাগমে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, উপজেলা পরিষদ ঘেরাও এবং
স্মারকলিপি প্রদানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। ইতিমধ্যেই
হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে ৬ই এপ্রিল দেশের সকল জেলা থেকে ঢাকা অভিমুখী
লংমার্চ ও মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাদের আন্দোলন নিয়ে
বিরোধী পক্ষের কেউ কেউ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সংগঠনটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। এসব অভিযোগ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় খণ্ডন করেন
হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যক্তিজীবনে তিনি কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে
জড়াননি। তবে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রয়োজনে সাড়া দিতেও কখনও পিছপা
হননি। এ কারণে বহুধাবিভক্ত ইসলামী নেতৃবৃন্দের ঐক্যের প্রতীকও বলা হয় তাকে।
দেশে-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়তাও রয়েছে তার। এ কারণে শক্তিশালী কোন সাংগঠনিক
কাঠামো ছাড়াই তার আহ্বানে লাখো মানুষকে জীবনবাজি রেখে সাড়া দিতে দেখা যায়।
হেফাজতে
ইসলাম গঠন করার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা আহমদ শফী বলেন,
মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, নীতি-আদর্শ, কৃষ্টিকালচার, ধর্মীয় বিধি-বিধান ও
অনুশাসনের সুরক্ষা এবং ইসলাম ও এর বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চক্রান্ত
মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ তথা তৌহিদী জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণে
লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯শে জানুয়ারি এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তখন থেকেই সংগঠনটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতিকে সামনে
রেখে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের সকল কর্মসূচিই শুধুমাত্র ইসলাম ও মুসলিম
স্বার্থসংশ্লিষ্ট, দেশাত্মবোধক, শান্তিপূর্ণ এবং অরাজনৈতিক। তবে ব্লগারদের
বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন ঢালাওভাবে
সব ব্লগারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা জানি, সাধারণ মুসলমান, ছাত্র-শিক্ষক ও
বিভিন্ন পেশাজীবীর অনেকেই ব্লগ লিখে থাকেন। আলেম ও মাদরাসা ছাত্রদের মধ্যেও
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্লগার রয়েছেন। আমাদের প্রতিবাদী আন্দোলন কেবলমাত্র
সেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে, যারা মুক্ত চিন্তা ও বাক-স্বাধীনতার আড়ালে কোটি
কোটি মানুষের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসুল (সা.), পবিত্র
কুরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয়
দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং
সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোন মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেয়া
যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের কোন
অমুসলিমের মুখেও কখনও শোনা যায়নি। সুস্থ বিবেকের কোন মুসলমানের পক্ষে এসবের
সম্পূর্ণটা পড়ে দেখার সাধ্যও নেই। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠা, ইসলামবিরোধী নারী নীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতির
বিরোধিতা করে আসছি। অথচ কয়েক বছর যেতে না যেতেই বর্তমান সরকারের গৃহীত এসব
নীতির মারাত্মক কুফল শুরু হয়ে গেছে। হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনের দাবি
নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি শোনা যায়। এব্যাপারে আল্লামা আহমদ শফী বলেন, আমরা
জনসমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে হেফাজতে ইসলামের
দাবিসমূহ বার বার তুলে ধরেছি। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে, সংবিধানে আল্লাহর
উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
সুরক্ষা, শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননার
বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাস। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে
মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অবমাননাকর
জঘন্য কটূক্তিপূর্ণ প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে বস্তুনিষ্ঠ
তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। পাঠ্যবইয়ে সকল
ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে সংশোধনী
প্রকাশ। সকল অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে
ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে
পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দান। শিক্ষার সকল স্তরে
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও
নিরাপত্তার জন্য এসব দাবি অত্যন্ত জরুরি। সরকার দেশ, জনগণ ও মুসলমানদের
স্বার্থে ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজন শেষ হয়ে
যায়। আমরা ক্ষমতার অংশ হতে চাই না। জনসাধারণের ঈমান-আকিদা ও দেশের
শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নিশ্চয়তা চাই। সংবিধান সংশোধনের ফলে যে
ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরে এসেছে, সে ব্যাপারে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে। তিনি
বলেন, ইসলাম ও রাসুল অবমাননাবিরোধী চলমান আন্দোলনে হেফাজতে ইসলাম উত্থাপিত
১৩ দফা দাবির প্রথমটি হচ্ছে সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস
পুনঃস্থাপন এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সকল আইন বাতিল। তাছাড়া, প্রতিটি মানুষ
কোন না কোন ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী। তাই ধর্মনিরপেক্ষতার মানেই হচ্ছে
নাস্তিকতা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিকই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক
রীতি-নীতি ও সঙ্গত কারণেই এই দেশকে মুসলিম দেশ বলতে হবে। আর ইসলামী আইনে
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব ধর্মীয় রীতি পালন ও নিরাপত্তা বিধানের
সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে মূলত দেশকে
ধর্মহীন তথা নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর স্পষ্ট
আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি।
চলমান আন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ লক্ষ্য সম্পর্কে আল্লামা শফী বলেন, আমরা ১৩টি দাবি উত্থাপন করেছি। ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ রাখা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করাই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। এছাড়া শিরক, বিদআতসহ সকল ধর্মীয় কুসংস্কার সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকবে। আসন্ন লংমার্চে ৫০ লাখ লোকের জমায়েতের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রস্তুতি কমিটি ও সমন্বয় প্রতিনিধি দল দেশব্যাপী সফর ও জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষ করছেন। প্রতিদিন যেভাবে সাড়া মিলছে তাতে সরকার বাধা সৃষ্টি না করলে অন্তত ৫০ লাখ লোকের জমায়েত হবে, ইনশাআল্লাহ। এ কর্মসূচি বানচাল হলে কিংবা বাধা দিলে কি করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা শফী বলেন, সে ক্ষেত্রে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল বা অবস্থান ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। তবে আমরা এখনও আশাবাদী, সরকার লংমার্চ কর্মসূচি পালনের আগেই আমাদের ন্যায্য দাবিসমূহ পূরণ করে ওলামা-মাশায়েখসহ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, তারা কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোন আইন পাস করবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দুই বার বৈঠক হয়েছে। তখনও তিনি বার বার এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মতো কোন কাজ এখনও করেনি। জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা জানতে চাইলে আল্লামা শফী বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনও কোন রাজনৈতিক বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন দাবি বা কর্মসূচি দেয়নি এ সংগঠন। এমনকি নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে আমরা যে ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেছি, তার মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবু যখন হেফাজতে ইসলামের ন্যায্য দাবিতে সারাদেশ উত্তাল, তখন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অন্যায় অবস্থানের পক্ষে কোন যুক্তি খুঁজে না পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং জঙ্গিবাদের কল্প নাটক সাজিয়ে বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য রাখছেন। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দেশী-বিদেশী পরিদর্শনকারীসহ দেশের কোটি কোটি তৌহিদী জনতা দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামের রাজনীতি মুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন, আমাদের পড়ালেখার পরিবেশ, শৃঙ্খলা, শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তারা সকলেই আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নীতির ব্যাপারে প্রশংসা করছেন। আমি সমালোচনাকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা প্রমাণ করে দেখাক, হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা-মাশায়েখের কোন কোন দাবির সঙ্গে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়া, টিভি টকশোতে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, জামায়াত থেকে আমরা অর্থ নিচ্ছি বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, টাকা-পয়সা নিলে জামায়াত থেকে কেন, ক্ষমতাসীন বা ইসলামবিদ্বেষী মহল থেকেও তো নিতে পারতাম। ইসলামবিরোধী আগ্রাসন রোধ করার লক্ষ্যে আল্লাহর উপর ভরসা করে ময়দানে নেমেছি। দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমান আমাদের সমর্থন করছেন। ইনশাআল্লাহ ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে আপনার সখ্যের কথা শোনা যায়- এমন প্রশ্নের উত্তরে আল্লামা শফী বলেন, যদি সত্যি সত্যিই এমন কিছু শুনে থাকেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। মুসলমান এই পরিচয়ে লক্ষ কোটি মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা সমর্থকের পরিচয়ে কারও সঙ্গে সখ্য বা সংশ্লিষ্টতার কথা কেউ বলতে পারবে না। ব্লগারদের শাস্তি হলে হেফাজতে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে না সক্রিয় থাকবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই ইসলাম ও মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের ওপর আঘাত আসবে, তখনই হেফাজতে ইসলাম তৎপর ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে দেশের কোন রাজনৈতিক সঙ্কটে হেফাজতে ইসলাম ভূমিকা রাখবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা শফী বলেন- হেফাজতে ইসলাম মৌলিক অরাজনৈতিক নীতিমালা তথা ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বাইরে কোন রাজনৈতিক ভূমিকায় জড়াবে না।
দেশের উলামা-মাশায়েখদের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রবীণ এই আলেম হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন। উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি দীর্ঘ দিন। বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এবং বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বেও তিনি রয়েছেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা গ্রামের এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে দারুল উলূম হাটহাজারীতে অধ্যয়ন শেষে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৫১ সালে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে ৪ বছর লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি দারুল উলূম হাটহাজারীতে শিক্ষকতায় যোগদান করেন এবং বিগত ২৭ বছর ধরে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকার কারণে সারাদেশে তার রয়েছে লাখ লাখ ছাত্র, মুরিদ, ভক্ত ও খলিফা। কওমী ধারার ৪০ হাজার মাদরাসার প্রায় প্রত্যেকটির শিক্ষকতা ও পরিচালকের পদে রয়েছে তার অগণিত ছাত্র। এছাড়াও তার শ’ শ’ খলিফা বা প্রতিনিধির মাধ্যমে লাখ লাখ ভক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেশের সর্বত্র এবং বহির্বিশ্বের অনেক স্থানে। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের যে কোন সঙ্কটে আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র আহ্বানে পারস্পরিক মতভেদ থাকলেও সকলেই ছুটে যান তার কাছে।
চলমান আন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ লক্ষ্য সম্পর্কে আল্লামা শফী বলেন, আমরা ১৩টি দাবি উত্থাপন করেছি। ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ রাখা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করাই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। এছাড়া শিরক, বিদআতসহ সকল ধর্মীয় কুসংস্কার সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকবে। আসন্ন লংমার্চে ৫০ লাখ লোকের জমায়েতের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রস্তুতি কমিটি ও সমন্বয় প্রতিনিধি দল দেশব্যাপী সফর ও জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষ করছেন। প্রতিদিন যেভাবে সাড়া মিলছে তাতে সরকার বাধা সৃষ্টি না করলে অন্তত ৫০ লাখ লোকের জমায়েত হবে, ইনশাআল্লাহ। এ কর্মসূচি বানচাল হলে কিংবা বাধা দিলে কি করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা শফী বলেন, সে ক্ষেত্রে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল বা অবস্থান ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। তবে আমরা এখনও আশাবাদী, সরকার লংমার্চ কর্মসূচি পালনের আগেই আমাদের ন্যায্য দাবিসমূহ পূরণ করে ওলামা-মাশায়েখসহ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, তারা কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোন আইন পাস করবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দুই বার বৈঠক হয়েছে। তখনও তিনি বার বার এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মতো কোন কাজ এখনও করেনি। জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা জানতে চাইলে আল্লামা শফী বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনও কোন রাজনৈতিক বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন দাবি বা কর্মসূচি দেয়নি এ সংগঠন। এমনকি নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে আমরা যে ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেছি, তার মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবু যখন হেফাজতে ইসলামের ন্যায্য দাবিতে সারাদেশ উত্তাল, তখন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অন্যায় অবস্থানের পক্ষে কোন যুক্তি খুঁজে না পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং জঙ্গিবাদের কল্প নাটক সাজিয়ে বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য রাখছেন। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দেশী-বিদেশী পরিদর্শনকারীসহ দেশের কোটি কোটি তৌহিদী জনতা দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামের রাজনীতি মুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন, আমাদের পড়ালেখার পরিবেশ, শৃঙ্খলা, শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তারা সকলেই আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নীতির ব্যাপারে প্রশংসা করছেন। আমি সমালোচনাকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা প্রমাণ করে দেখাক, হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা-মাশায়েখের কোন কোন দাবির সঙ্গে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়া, টিভি টকশোতে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, জামায়াত থেকে আমরা অর্থ নিচ্ছি বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, টাকা-পয়সা নিলে জামায়াত থেকে কেন, ক্ষমতাসীন বা ইসলামবিদ্বেষী মহল থেকেও তো নিতে পারতাম। ইসলামবিরোধী আগ্রাসন রোধ করার লক্ষ্যে আল্লাহর উপর ভরসা করে ময়দানে নেমেছি। দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমান আমাদের সমর্থন করছেন। ইনশাআল্লাহ ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে আপনার সখ্যের কথা শোনা যায়- এমন প্রশ্নের উত্তরে আল্লামা শফী বলেন, যদি সত্যি সত্যিই এমন কিছু শুনে থাকেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। মুসলমান এই পরিচয়ে লক্ষ কোটি মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা সমর্থকের পরিচয়ে কারও সঙ্গে সখ্য বা সংশ্লিষ্টতার কথা কেউ বলতে পারবে না। ব্লগারদের শাস্তি হলে হেফাজতে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে না সক্রিয় থাকবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই ইসলাম ও মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের ওপর আঘাত আসবে, তখনই হেফাজতে ইসলাম তৎপর ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে দেশের কোন রাজনৈতিক সঙ্কটে হেফাজতে ইসলাম ভূমিকা রাখবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা শফী বলেন- হেফাজতে ইসলাম মৌলিক অরাজনৈতিক নীতিমালা তথা ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বাইরে কোন রাজনৈতিক ভূমিকায় জড়াবে না।
দেশের উলামা-মাশায়েখদের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রবীণ এই আলেম হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন। উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি দীর্ঘ দিন। বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এবং বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বেও তিনি রয়েছেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা গ্রামের এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে দারুল উলূম হাটহাজারীতে অধ্যয়ন শেষে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৫১ সালে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে ৪ বছর লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি দারুল উলূম হাটহাজারীতে শিক্ষকতায় যোগদান করেন এবং বিগত ২৭ বছর ধরে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকার কারণে সারাদেশে তার রয়েছে লাখ লাখ ছাত্র, মুরিদ, ভক্ত ও খলিফা। কওমী ধারার ৪০ হাজার মাদরাসার প্রায় প্রত্যেকটির শিক্ষকতা ও পরিচালকের পদে রয়েছে তার অগণিত ছাত্র। এছাড়াও তার শ’ শ’ খলিফা বা প্রতিনিধির মাধ্যমে লাখ লাখ ভক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেশের সর্বত্র এবং বহির্বিশ্বের অনেক স্থানে। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের যে কোন সঙ্কটে আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র আহ্বানে পারস্পরিক মতভেদ থাকলেও সকলেই ছুটে যান তার কাছে।
No comments