মত ও মন্তব্য-হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠক সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ by হারুন হাবীব
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরটি এতটাই বেশি আশা-জাগানিয়া ছিল যে বেশ কয়েকটি প্রত্যাশিত চুক্তি শেষ পর্যন্ত না হওয়ায় দুই দেশের বেশির ভাগ মানুষই কমবেশি আশাহত হয়েছেন। এর পরও কি ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরটি ব্যর্থ হয়েছে বলা যাবে? আমি নিজে দুই পড়শি দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষে বিস্তর লেখালেখি করি।
এ আমার বিশ্বাস এবং মনেপ্রাণে আমি মনে করি যে প্রতিবেশীর প্রতি বিরূপ মনোভাব কখনোই মঙ্গল বয়ে আনে না। এর পরও বলব, মনমোহনের বাংলাদেশ সফরটিতে এতটাই নাটকীয়তা ঘটেছে, যা প্রত্যাশিত ছিল না এবং আমার ধারণা, ঘটনাগুলো দুই দেশের মুখ্য নীতিনির্ধারকদেরও আয়ত্তে ছিল না। খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়াকে 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে মন্তব্য করেন। বলতেই হবে, পশ্চিমবঙ্গের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ময়কর নাটকীয়তায় শেষ পর্যন্ত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হয়নি। হয়নি ফেনী নদীর পানি বণ্টন চুক্তিও। সেই সঙ্গে আরো হয়নি চট্টগ্রাম ও মংলা নৌবন্দর ব্যবহার এবং বাংলাদেশের স্থলভূমি দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে ট্রানজিট ব্যবস্থা চালু করার সম্মতিপত্রের স্বাক্ষরটিও।
পূর্বনির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও এসব চুক্তি না হওয়ায়, স্বভাবতই, গোটা সফরের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বলতেই হবে, এই নেতিবাচক প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব না ফেললেও সম্পর্ক উন্নয়নের চলমান গতি কিছুটা মন্থর করেছে। এর পরও ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর ব্যর্থ হয়েছে বলার কোনো সংগত কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ময়কর আচরণে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় থেকে একবিন্দু সরে যাননি। অন্যদিকে শেখ হাসিনাও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান গতি এগিয়ে নিতে তাঁর দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। কাজেই ২০১০ সালে শেখ হাসিনার নয়াদিলি্ল সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের যে নতুন দিগন্ত শুরু হয়, তা ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়ইনি, বরং আরো একধাপ উন্নীত হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি অবশ্যই একটি বড় অর্জন হতে পারত, কিন্তু সে চুক্তি, চূড়ান্ত হওয়ার পরও, কেন এবং কিভাবে ভণ্ডুল করা হয়েছে, তা দুই দেশের মানুষ বিস্তারিতভাবে জেনেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁর রাজ্যের স্বার্থ অবশ্যই তিনি দেখবেন। কিন্তু যখন ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে, তখন মনমোহনের সফরের মাত্র এক দিন আগে নাটকীয়ভাবে তিনি তাঁর ঢাকা সফর বাতিল করবেন, এবং এমন বাগড়া দেবেন, তা কেউই হয়তো ভাবেনি! বলা যায়, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপড়েনে নয়াদিলি্ল এ পরিস্থিতিতে যতটা সবল ভূমিকা রাখতে পারত, তা পারেনি। তবে একটিমাত্র চুক্তি কোনো ঐতিহাসিক সফরের গুরুত্ব ম্লান করতে পারে বলেও আমি বিশ্বাস করি না।
যাঁরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের দিকে দীর্ঘদিন নজর রাখছেন, তাঁরা সবাই জানেন, একটি-দুটি বিষয়ে আশাহত হওয়ার পরও দুই দেশের মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সহযোগিতা স্বারক স্বাক্ষর করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। আমি আরো মনে করি, কেবল চুক্তি দিয়ে নয়, দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ সফরটি পরিমাপ করা উচিত হবে। তিস্তার ব্যাপারে হতাশ হওয়াটা যেমন যুক্তিসংগত, তেমনি আশাবাদী হওয়ারও কারণ থাকে যে ওই একটি ব্যাপারে ব্যর্থ হয়ে দুই দেশের সরকারপ্রধানরা থেমে যাননি। তাঁরা এগিয়ে গেছেন এবং সামনে এগোনোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এখানে এ কথাটি বলা সংগত হবে যে তিস্তার চেয়ে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন বিষয়টি ছিল অনেক বেশি সংকটময়। কিন্তু সে সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হয়েছে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের আমলে। বাংলাদেশের মানুষ গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরে অবশ্যই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে, যাঁর অসামান্য অবদান এ চুক্তিকে সফল করেছে। বাংলাদেশের মানুষ একই সঙ্গে স্মরণ করবে পশ্চিমবঙ্গের আরো একজন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, যিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে বাদ সাধলেন এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ক্ষতিকারক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন!
ঢাকা সফরকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন; বলেছেন, পারস্পরিক সমঝোতায় অচিরেই এ চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। বাংলাদেশ থেকেও চুক্তিটি স্বাক্ষরে নতুন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এই যে আস্থা, যা দীর্ঘকাল দুই দেশের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল, সেটিই বড় কথা। দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অনন্য অবদান প্রতিবেশী দেশ দুটিকে পরস্পরের অনেক কাছে নিয়ে আসে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সে আস্থা ও সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর সে সম্পর্ককে অবিশ্বাসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। হারানো সে সম্পর্কের পুনরুদ্ধার ঘটে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর যা আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিলি্ল সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঐতিহাসিক মাত্রায় উন্নীত করে; যার ফলে মনমোহন সিং ঢাকায় আসেন। এ সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করা না গেলেও দেশ দুটি পরস্পরের আরো কাছাকাছি এসেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। খোদ মনমোহন সিং ও তাঁর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশের গণমানুষের প্রত্যাশা কী। দুই প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের কথা ভেবেছেন, তাঁদের পরস্পরের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এ লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে দেবে_এ আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রীদ্বয় শুধু দুই দেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের কথা ভেবেছেন। সে কারণেই তাঁরা তৈরি করেছেন আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার রূপরেখা। এ সফরে স্বাক্ষরিত প্রতিটি চুক্তিরই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে।
মনমোহনের সফরকালে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে কেন তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যাটি এত দিন সুরাহা হয়নি। দ্বিপক্ষীয় ঝুলে থাকা সমস্যাগুলোর অসমাধানের কারণ হিসেবে এত দিন কেবলই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পারস্পরিক আস্থার অভাবের দোহাই দেওয়া হতো। কিন্তু দেখা গেল, রাজনৈতিক সদিচ্ছা সত্ত্বেও বহুলপ্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি সই করা সম্ভব হলো না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু যেকোনো সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তার সমাধানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ও একান্তভাবে জরুরি। হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠককালে তিস্তা জটিলতায় আরো একটি বিষয় ষ্পষ্ট হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী রাজনৈতিক শক্তি দেশের স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ঐতিহ্যগতভাবে 'ভারতবিরোধী' দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রপন্থী দল-গোষ্ঠী নিরন্তর অপপ্রচার করে চলেছে যে শেখ হাসিনা সরকার ভারতের ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতায় এসেছে এবং তারা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে। কিন্তু তিস্তা জটিলতায় ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট-বিষয়ক সম্মতিপত্র বিনিময় না করার ত্বরিত সিদ্ধান্তটি এসব অপপ্রচারকে নতুন করে ভুল প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশ ২০১০ সালেই উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে মালামাল পরিবহনে ভারতকে ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ভারত যখন চূড়ান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশও ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নে সময় নিয়েছে।
মনমোহনের ঢাকা সফর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। তিস্তার পানি না দেওয়ায় ট্রানজিটের সম্মতি হয়নি, এটি যেমন সত্য, অন্যদিকে অন্য সব ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরে কেউ দ্বিমত করেনি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে দুই শীর্ষ নেতার একান্ত আলাপ ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক, ১০টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), প্রটোকল, সম্মতিপত্র ও যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে, যা সম্পর্কের বন্ধন আরো একধাপ বাড়িয়ে দেবে। আরো উল্লেখ্য, এ সফরে মনমোহন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে এনেছিলেন, যা আগে কখনো ঘটেনি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নে সমন্বিত রূপরেখা বা কাঠামো চুক্তি ও স্থলসীমা নিয়ে প্রটোকল স্বাক্ষরকে আমি এ সফরের বড় প্রাপ্তি বলে বিবেচনা করি। তবে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর প্রয়োজন উপযুক্ত বাস্তবায়ন। আশা করব, দুই দেশই বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন নিয়ে বাংলাদেশে মুখ খোলেননি মনমোহন সিং। কিন্তু মমতার আচরণে বাংলাদেশে যে তিনি তীব্রভাবে বিব্রত হয়েছেন, তা খুলে বলেছেন তাঁর সফরসঙ্গী ভারতীয় সংবাদিকদের। মমতার আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে মনমোহন বলেছেন, মমতার সঙ্গে তাঁর নিজের এবং দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের কথা হয়েছে, চুক্তির ব্যাপারেও জানানো হয়েছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতার আচরণ বোধগম্য নয়। মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক সফরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে সংগত কারণেই অন্যতম মনে করা হচ্ছে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা লাভের বিষয়টি। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে দাবি ছিল ৬২টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্তি, ভারত রাজি হয়েছে ৪৬টিতে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক থাকলেও সন্তোষই প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীমহল। কেউ কেউ এ নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন, কারণ ভারত নিজেই পোশাক শিল্পে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। এ ধরনের সংশয় সত্ত্বেও ৪৬টি পণ্যের শুল্ক সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
আরো একটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। মনমোহনের ঢাকা সফরের প্রস্তুতিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টাদের মধ্যে যে ধরনের সমন্বয় প্রত্যাশিত ছিল, তা হয়নি। আমাদের দূতাবাসগুলো কী কাজে দিলি্ল-কলকাতায় আছে, তার উপযুক্ত জবাব সরকারকে অবশ্যই চাইতে হবে। অন্যথায় রাষ্ট্রের অর্থই কেবল লোপাট হবে, কাজের কাজ কিছু হবে না। বাংলাদেশকেও অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তাঁর সরকারের মনোভাব সংগ্রহের কাজটি জরুরি ছিল, যা একেবারেই করা হয়নি। ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতি সামলাতে আরো দক্ষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো। বাংলাদেশের জনগণের বহু প্রত্যাশার তিস্তা চুক্তিটি সই না হওয়ায় একটি বড় আক্ষেপ অস্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে মূল দায়িত্ব দিলি্লর হলেও ঢাকাকেও এ ব্যাপারে আরো বেশি তৎপর, সতর্ক ও তথ্যসমৃদ্ধ হওয়া উচিত ছিল। তবে সমন্বয়হীনতা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, ভারতের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তির আলোকে স্বাক্ষরিত হয়েছে স্থল সীমানা সংক্রান্ত প্রটোকল, যা ১৯৪৭ সাল থেকে ঝুলে থাকা সীমানা চিহ্নিতকরণ, ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমি হস্তান্তরের বিষয়গুলোর দ্রুত সুরাহা করেছে। ঢাকা চুক্তির ফলে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষ তিনবিঘা করিডর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত শুরু করেছে। এ যেন তাদের নতুন স্বাধীনতা।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বিশ্লেষক
পূর্বনির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও এসব চুক্তি না হওয়ায়, স্বভাবতই, গোটা সফরের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বলতেই হবে, এই নেতিবাচক প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব না ফেললেও সম্পর্ক উন্নয়নের চলমান গতি কিছুটা মন্থর করেছে। এর পরও ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর ব্যর্থ হয়েছে বলার কোনো সংগত কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ময়কর আচরণে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় থেকে একবিন্দু সরে যাননি। অন্যদিকে শেখ হাসিনাও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান গতি এগিয়ে নিতে তাঁর দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। কাজেই ২০১০ সালে শেখ হাসিনার নয়াদিলি্ল সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের যে নতুন দিগন্ত শুরু হয়, তা ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়ইনি, বরং আরো একধাপ উন্নীত হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি অবশ্যই একটি বড় অর্জন হতে পারত, কিন্তু সে চুক্তি, চূড়ান্ত হওয়ার পরও, কেন এবং কিভাবে ভণ্ডুল করা হয়েছে, তা দুই দেশের মানুষ বিস্তারিতভাবে জেনেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁর রাজ্যের স্বার্থ অবশ্যই তিনি দেখবেন। কিন্তু যখন ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে, তখন মনমোহনের সফরের মাত্র এক দিন আগে নাটকীয়ভাবে তিনি তাঁর ঢাকা সফর বাতিল করবেন, এবং এমন বাগড়া দেবেন, তা কেউই হয়তো ভাবেনি! বলা যায়, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপড়েনে নয়াদিলি্ল এ পরিস্থিতিতে যতটা সবল ভূমিকা রাখতে পারত, তা পারেনি। তবে একটিমাত্র চুক্তি কোনো ঐতিহাসিক সফরের গুরুত্ব ম্লান করতে পারে বলেও আমি বিশ্বাস করি না।
যাঁরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের দিকে দীর্ঘদিন নজর রাখছেন, তাঁরা সবাই জানেন, একটি-দুটি বিষয়ে আশাহত হওয়ার পরও দুই দেশের মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সহযোগিতা স্বারক স্বাক্ষর করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। আমি আরো মনে করি, কেবল চুক্তি দিয়ে নয়, দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ সফরটি পরিমাপ করা উচিত হবে। তিস্তার ব্যাপারে হতাশ হওয়াটা যেমন যুক্তিসংগত, তেমনি আশাবাদী হওয়ারও কারণ থাকে যে ওই একটি ব্যাপারে ব্যর্থ হয়ে দুই দেশের সরকারপ্রধানরা থেমে যাননি। তাঁরা এগিয়ে গেছেন এবং সামনে এগোনোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এখানে এ কথাটি বলা সংগত হবে যে তিস্তার চেয়ে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন বিষয়টি ছিল অনেক বেশি সংকটময়। কিন্তু সে সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হয়েছে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের আমলে। বাংলাদেশের মানুষ গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরে অবশ্যই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে, যাঁর অসামান্য অবদান এ চুক্তিকে সফল করেছে। বাংলাদেশের মানুষ একই সঙ্গে স্মরণ করবে পশ্চিমবঙ্গের আরো একজন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, যিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে বাদ সাধলেন এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ক্ষতিকারক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন!
ঢাকা সফরকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন; বলেছেন, পারস্পরিক সমঝোতায় অচিরেই এ চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। বাংলাদেশ থেকেও চুক্তিটি স্বাক্ষরে নতুন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এই যে আস্থা, যা দীর্ঘকাল দুই দেশের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল, সেটিই বড় কথা। দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অনন্য অবদান প্রতিবেশী দেশ দুটিকে পরস্পরের অনেক কাছে নিয়ে আসে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সে আস্থা ও সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর সে সম্পর্ককে অবিশ্বাসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। হারানো সে সম্পর্কের পুনরুদ্ধার ঘটে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর যা আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিলি্ল সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঐতিহাসিক মাত্রায় উন্নীত করে; যার ফলে মনমোহন সিং ঢাকায় আসেন। এ সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করা না গেলেও দেশ দুটি পরস্পরের আরো কাছাকাছি এসেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। খোদ মনমোহন সিং ও তাঁর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশের গণমানুষের প্রত্যাশা কী। দুই প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের কথা ভেবেছেন, তাঁদের পরস্পরের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এ লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে দেবে_এ আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রীদ্বয় শুধু দুই দেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের কথা ভেবেছেন। সে কারণেই তাঁরা তৈরি করেছেন আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার রূপরেখা। এ সফরে স্বাক্ষরিত প্রতিটি চুক্তিরই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে।
মনমোহনের সফরকালে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে কেন তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যাটি এত দিন সুরাহা হয়নি। দ্বিপক্ষীয় ঝুলে থাকা সমস্যাগুলোর অসমাধানের কারণ হিসেবে এত দিন কেবলই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পারস্পরিক আস্থার অভাবের দোহাই দেওয়া হতো। কিন্তু দেখা গেল, রাজনৈতিক সদিচ্ছা সত্ত্বেও বহুলপ্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি সই করা সম্ভব হলো না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু যেকোনো সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তার সমাধানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ও একান্তভাবে জরুরি। হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠককালে তিস্তা জটিলতায় আরো একটি বিষয় ষ্পষ্ট হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী রাজনৈতিক শক্তি দেশের স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ঐতিহ্যগতভাবে 'ভারতবিরোধী' দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রপন্থী দল-গোষ্ঠী নিরন্তর অপপ্রচার করে চলেছে যে শেখ হাসিনা সরকার ভারতের ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতায় এসেছে এবং তারা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে। কিন্তু তিস্তা জটিলতায় ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট-বিষয়ক সম্মতিপত্র বিনিময় না করার ত্বরিত সিদ্ধান্তটি এসব অপপ্রচারকে নতুন করে ভুল প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশ ২০১০ সালেই উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে মালামাল পরিবহনে ভারতকে ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ভারত যখন চূড়ান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশও ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নে সময় নিয়েছে।
মনমোহনের ঢাকা সফর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। তিস্তার পানি না দেওয়ায় ট্রানজিটের সম্মতি হয়নি, এটি যেমন সত্য, অন্যদিকে অন্য সব ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরে কেউ দ্বিমত করেনি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে দুই শীর্ষ নেতার একান্ত আলাপ ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক, ১০টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), প্রটোকল, সম্মতিপত্র ও যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে, যা সম্পর্কের বন্ধন আরো একধাপ বাড়িয়ে দেবে। আরো উল্লেখ্য, এ সফরে মনমোহন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে এনেছিলেন, যা আগে কখনো ঘটেনি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নে সমন্বিত রূপরেখা বা কাঠামো চুক্তি ও স্থলসীমা নিয়ে প্রটোকল স্বাক্ষরকে আমি এ সফরের বড় প্রাপ্তি বলে বিবেচনা করি। তবে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর প্রয়োজন উপযুক্ত বাস্তবায়ন। আশা করব, দুই দেশই বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন নিয়ে বাংলাদেশে মুখ খোলেননি মনমোহন সিং। কিন্তু মমতার আচরণে বাংলাদেশে যে তিনি তীব্রভাবে বিব্রত হয়েছেন, তা খুলে বলেছেন তাঁর সফরসঙ্গী ভারতীয় সংবাদিকদের। মমতার আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে মনমোহন বলেছেন, মমতার সঙ্গে তাঁর নিজের এবং দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের কথা হয়েছে, চুক্তির ব্যাপারেও জানানো হয়েছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতার আচরণ বোধগম্য নয়। মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক সফরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে সংগত কারণেই অন্যতম মনে করা হচ্ছে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা লাভের বিষয়টি। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে দাবি ছিল ৬২টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্তি, ভারত রাজি হয়েছে ৪৬টিতে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক থাকলেও সন্তোষই প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীমহল। কেউ কেউ এ নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন, কারণ ভারত নিজেই পোশাক শিল্পে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। এ ধরনের সংশয় সত্ত্বেও ৪৬টি পণ্যের শুল্ক সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
আরো একটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। মনমোহনের ঢাকা সফরের প্রস্তুতিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টাদের মধ্যে যে ধরনের সমন্বয় প্রত্যাশিত ছিল, তা হয়নি। আমাদের দূতাবাসগুলো কী কাজে দিলি্ল-কলকাতায় আছে, তার উপযুক্ত জবাব সরকারকে অবশ্যই চাইতে হবে। অন্যথায় রাষ্ট্রের অর্থই কেবল লোপাট হবে, কাজের কাজ কিছু হবে না। বাংলাদেশকেও অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তাঁর সরকারের মনোভাব সংগ্রহের কাজটি জরুরি ছিল, যা একেবারেই করা হয়নি। ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতি সামলাতে আরো দক্ষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো। বাংলাদেশের জনগণের বহু প্রত্যাশার তিস্তা চুক্তিটি সই না হওয়ায় একটি বড় আক্ষেপ অস্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে মূল দায়িত্ব দিলি্লর হলেও ঢাকাকেও এ ব্যাপারে আরো বেশি তৎপর, সতর্ক ও তথ্যসমৃদ্ধ হওয়া উচিত ছিল। তবে সমন্বয়হীনতা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, ভারতের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তির আলোকে স্বাক্ষরিত হয়েছে স্থল সীমানা সংক্রান্ত প্রটোকল, যা ১৯৪৭ সাল থেকে ঝুলে থাকা সীমানা চিহ্নিতকরণ, ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমি হস্তান্তরের বিষয়গুলোর দ্রুত সুরাহা করেছে। ঢাকা চুক্তির ফলে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষ তিনবিঘা করিডর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত শুরু করেছে। এ যেন তাদের নতুন স্বাধীনতা।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বিশ্লেষক
No comments