আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই-দুর্নীতির সূচকে সামান্য অগ্রগতি

দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি য ৎসামান্যই থাকল, ভবিষ্যতে যে এর তেমন হেরফের ঘটতে পারে, তাও ধারণা করা চলে না। কারণ, দুর্নীতি দমন অভিযানের গতি যথারীতি ঢিমেতালেই রয়েছে। সরকারি দল সাত হাজারের বেশি মামলা তুলে নিয়ে এখন ওয়ান ইলেভেনে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নিতে দুদককে চাপ দিয়ে চলেছে।
অন্যদিকে ‘স্বাধীন’ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আড়াই বছরে নতুন যেসব মামলা দায়ের করেছে, তাতে যেন ক্ষমতাসীন দলের একচোখা নীতিরই প্রতিফলন ঘটছে। এ ছাড়া দুর্নীতিসংক্রান্ত চার শতাধিক রিট ও ফৌজদারি মামলা আড়াই বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। আমরা এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির উপযুক্ত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ আশা করেছিলাম। কিন্তু কোথাও তেমন কোনো স্পন্দন আমরা টের পাইনি। সে কারণে সার্বিকভাবে দুর্নীতি দমন অভিযান সর্বতোভাবে অস্বচ্ছ, অগ্রহণযোগ্য এবং প্রশ্নসাপেক্ষ। বৃহস্পতিবার দুর্নীতি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০১১ (করাপশন করপোরেশন ইনডেক্স) প্রকাশ করেছে। এই ফলাফল তাই আমাদের অবাক করেনি। ক্ষমতাসীনদের এতে সন্তুষ্টির সুযোগ নেই।
২০১১ সালের দুর্নীতিসংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহ সূচকে আসেনি। সেটা এলে ধারণাসূচকের আরও অবনতির আশঙ্কা আছে। এর পরও যেটুকু অগ্রগতির ইঙ্গিত মিলেছে, তাকে আমরা ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে দেখি। এখনো বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক বলা যাবে না। ভুটান ৫ দশমিক ৭ স্কোর পেয়ে ১৮তম স্থানে রয়েছে (ঊর্ধ্বতম অনুযায়ী)। এরপর শ্রীলঙ্কার স্কোর ৩ দশমিক ৩ এবং ভারতের ৩ দশমিক ১। বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তান।
২০০১-০৫ সাল মেয়াদে যেখানে আমরা দুর্নীতিতে এক নম্বরে ছিলাম, সেখানে এই অগ্রগতি সামান্য হলেও তা ৎপর্যহীন নয়। তবে আমরা মুখ্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ও উদ্বিগ্ন হতে দেখি না। দেশে সরকারি পর্যায়ে কী মাত্রায় দুর্নীতি হচ্ছে, তা পরিমাপের জন্য টিআই, টিআইবি বা অন্য কোনো সংস্থার জরিপের ফলাফল দেখার প্রয়োজন হয় না। ভুক্তভোগী মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বাংলাদেশ যখন এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল, তখনো ক্ষমতাসীনেরা এর সত্যতা স্বীকার করেননি। আবার তাঁরাই বিরোধী দলে গিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টিআই জরিপ ব্যবহার করেছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এই ধারাবাহিক স্ববিরোধিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
দুর্নীতি বন্ধের প্রধান উপায় হলো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়া, দলমত-নির্বিশেষে সব দুর্নীতিবাজের শাস্তি নিশ্চিত করা। সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা জরুরি। সংসদীয় কমিটি যথার্থই মন্ত্রিসভার সঙ্গে একমত হয়নি। তারা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করতে সরকারের পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা নিয়েই বর্তমান দুদক অসহায়ত্বে ভুগছে। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি লালনের মনমানসিকতার কারণে দুদক সাহসী হতে পারছে না।

No comments

Powered by Blogger.