যা করেছেন, তাতেই গর্বিত আফ্রিদি
পাকিস্তানই কি তাহলে ফাইনালে উঠেছে!
শহীদ আফ্রিদিকে দেখে কেউ ভুল বুঝতেই পারত। ভারত-পাকিস্তান আর দশটা ম্যাচের মতো নয়। এখানে একটাই নিয়ম—জয়ী দল আমজনতার নয়নের মণি। পরাজিতরা খলনায়ক। অথচ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে ভারতের কাছে হারার পর আফ্রিদি কথায় কথায় রসিকতা করলেন। হাসলেন, হাসালেনও।
বিস্ময়কর। আবার একটুও বিস্ময়কর নয়। আফ্রিদি যে শুধু এই একটা ম্যাচ দেখছেন না। দেখছেন বৃহত্তর ছবিটা। যে ছবিটা বলবে, এই বিশ্বকাপে কেউ যা প্রত্যাশা করেনি, তা-ই করেছে পাকিস্তান।
বিতর্কে জর্জরিত মাটিতে মিশে যাওয়া একটা দলের আবার মাথা তুলে দাঁড়ানো তো এই বিশ্বকাপেরই সুন্দরতম গল্প। আফ্রিদি সেটিই মনে করিয়ে দিতে চাইলেন সবাইকে, ‘আমি আমার দল নিয়ে গর্বিত। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ক্রিকেট খেলতে হয়েছে আমাদের, গত নয়-দশটা মাস কী ভয়াবহই না গেছে! একটা ভাঙা দল আবার দল হয়ে উঠে যেভাবে খেলেছে, তাতে খুব খুশি।’
আফ্রিদি এটাও মনে করিয়ে দিতে পারতেন যে, তিনি যা চেয়েছিলেন, তা-ই পেয়েছেন। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দূরে থাক, ফাইনালের কথাও তো কখনো বলেননি। শেষ চারে থাকতে চাই বলেছিলেন, তাতেও অনেকে হেসেছে। আফ্রিদি তো তাঁর দল নিয়ে গর্ব করতেই পারেন।
একটু এদিক-ওদিক হলে ফাইনালও অসম্ভব কিছু ছিল না। ওয়ানডেতে ২৯ রানে জয়-পরাজয় এমন বড় কোনো ব্যবধান নয়। ম্যাচটার দিকে ফিরে তাকালে ব্যবধানটা মনে হবে আরও কম। যা খেলেছে, তা খেলেই পাকিস্তান এই ম্যাচটা জিততে পারত। যদি পাকিস্তানি ফিল্ডাররা ‘টেন্ডুলকারের ক্যাচ ধরাটা অন্যায়’ মনে না করতেন!
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পরাজিত দলের কাউকে না কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটাও নিয়মের মধ্যে পড়ে। এখানে সবার পছন্দ বলে মনে হচ্ছে মিসবাহ-উল-হককে। ৭৬ বলে ৫৬ রান যা বলে, মিসবাহর ইনিংসটি অবশ্যই তার চেয়ে অনেক কম উজ্জ্বল। তবে শেষ দিকে ম্যাচটা যে ভারতের সঙ্গে তাঁর একার লড়াই হয়ে গেল, সেই দায় তো অন্য ব্যাটসম্যানদের। পাকিস্তানের গেমপ্ল্যান ছিল, ইউনুস বা মিসবাহর মধ্যে কেউ একজন একটা দিক ধরে রাখবেন। আস্কিং রেটের সঙ্গে বোঝাপড়ার করতে উমর আকমল, আবদুল রাজ্জাক ও শহীদ আফ্রিদি তো আছেই। ধরে রাখার কাজটা একটু বেশি আক্ষরিক অর্থে নেওয়ার ভুল হয়তো করেছেন মিসবাহ। কিন্তু পাকিস্তান তো ম্যাচটা হেরেছে আরও আগে, টেন্ডুলকারকে বারবার নবজীবন দিয়ে।
প্রথম ‘লাইফ’টি পাওয়ার পর টেন্ডুলকার ৫৮ রান করেছেন। জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের চেয়ে দ্বিগুণ। তবে এটিও আসল তাৎপর্যটা বোঝাতে অসমর্থ। টেন্ডুলকার উইকেটে থাকা না-থাকার মূল্য শুধু তাঁর নিজের রানেই প্রতিফলন ফেলে না, ভারতীয় ড্রেসিংরুমের হাওয়াটাই বদলে দেয়। মহেন্দ্র সিং ধোনি সেটিই বুঝিয়ে বললেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘শচীন থাকলে অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করাটাও খুব সহজ হয়ে যায়। ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ ব্যাটিং করলে ১৫ ম্যাচ খেলেছে এমন ব্যাটসম্যানেরও ৫০ ম্যাচের অভিজ্ঞতা হয়ে যায়।’ এই ম্যাচের উইকেট যে মোহালির সেই চিরন্তন ৩০০-৩২০-এর উইকেট নয়, সেটি বুঝে ২৬০-৭০ রানের পরিবর্তিত লক্ষ্যও টেন্ডুলকারেরই ঠিক করে দেওয়া।
২০০৯ সালে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় ছিল একটা রূপকথা। ৫০ ওভারের এই বিশ্বকাপেও আরেকটি রূপকথা প্রায় লেখাই হয়ে গিয়েছিল ভেবে মনে মনে নিশ্চয়ই আফ্রিদির আফসোস আছে। তবে মুখে তাঁর প্রকাশ নেই। যোগ্য অধিনায়কের মতো দলকে উল্টো ধন্যবাদ জানালেন। যাঁরা প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি, তাঁদের পিঠে রাখলেন সান্ত্বনার হাত। এই ম্যাচে এক নম্বরে অবশ্যই উমর গুল। এক সাংবাদিকের প্রশ্নে আফ্রিদির উত্তর হাসির রোল তুলল, ‘গুল আগের ম্যাচগুলোতে এত ভালো করেছে, এক দিন তো খারাপ যেতেই পারে। আপনার যায় না? ক্রিকেটের মতো ক্রিকেটের বাইরেও এটাই নিয়ম, সব দিন সমান যায় না।’
মাঠের মতো সংবাদ সম্মেলনের আফ্রিদিও যেন এক ঝলক তাজা বাতাস। বিরূপ প্রশ্নেও তিনি একই রকম সপ্রতিভ। তখনো সবকিছু সহজভাবে নেওয়ার আমুদে ভঙ্গি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হারার পর কী হয়েছিল, এটা ভেবে শঙ্কিত কি না—এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়ও যে কারণে হাসতে পারলেন। ‘আরে, আমি তো মনে করি, সবাই আমাদের আরও উৎসাহ দেবে। আত্মবিশ্বাস জোগাবে। ১৯৯৬-এর কথা বলছেন? ২০০৩-২০০৭ বিশ্বকাপের কথা বলুন না, আমাদের দল তখন অনেক ভালো ছিল। ওই দুবারের চেয়ে তো আমরা অনেক ভালো করেছি।’
টেন্ডুলকার এখানে শততম সেঞ্চুরি পেলেন না, শ্রীলঙ্কাও কি তাঁকে ঠেকাতে পারবে বলে মনে করেন? আফ্রিদির মুখে দুষ্টুমির হাসি, ‘পারলে পারবে, না পারলে নাই। আমি বলেছিলাম করতে দেব না, দিইনি।’ আগের দিনই যে এমন কিছু বলেননি বলে ভারতীয় মিডিয়াকে একহাত নিলেন, সেটি আফ্রিদিকে কে মনে করিয়ে দেবে? সবাই যে তখন তাঁর বলার ভঙ্গিতে হাসিতে মাতোয়ারা।
শহীদ আফ্রিদিকে দেখে কেউ ভুল বুঝতেই পারত। ভারত-পাকিস্তান আর দশটা ম্যাচের মতো নয়। এখানে একটাই নিয়ম—জয়ী দল আমজনতার নয়নের মণি। পরাজিতরা খলনায়ক। অথচ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে ভারতের কাছে হারার পর আফ্রিদি কথায় কথায় রসিকতা করলেন। হাসলেন, হাসালেনও।
বিস্ময়কর। আবার একটুও বিস্ময়কর নয়। আফ্রিদি যে শুধু এই একটা ম্যাচ দেখছেন না। দেখছেন বৃহত্তর ছবিটা। যে ছবিটা বলবে, এই বিশ্বকাপে কেউ যা প্রত্যাশা করেনি, তা-ই করেছে পাকিস্তান।
বিতর্কে জর্জরিত মাটিতে মিশে যাওয়া একটা দলের আবার মাথা তুলে দাঁড়ানো তো এই বিশ্বকাপেরই সুন্দরতম গল্প। আফ্রিদি সেটিই মনে করিয়ে দিতে চাইলেন সবাইকে, ‘আমি আমার দল নিয়ে গর্বিত। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ক্রিকেট খেলতে হয়েছে আমাদের, গত নয়-দশটা মাস কী ভয়াবহই না গেছে! একটা ভাঙা দল আবার দল হয়ে উঠে যেভাবে খেলেছে, তাতে খুব খুশি।’
আফ্রিদি এটাও মনে করিয়ে দিতে পারতেন যে, তিনি যা চেয়েছিলেন, তা-ই পেয়েছেন। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দূরে থাক, ফাইনালের কথাও তো কখনো বলেননি। শেষ চারে থাকতে চাই বলেছিলেন, তাতেও অনেকে হেসেছে। আফ্রিদি তো তাঁর দল নিয়ে গর্ব করতেই পারেন।
একটু এদিক-ওদিক হলে ফাইনালও অসম্ভব কিছু ছিল না। ওয়ানডেতে ২৯ রানে জয়-পরাজয় এমন বড় কোনো ব্যবধান নয়। ম্যাচটার দিকে ফিরে তাকালে ব্যবধানটা মনে হবে আরও কম। যা খেলেছে, তা খেলেই পাকিস্তান এই ম্যাচটা জিততে পারত। যদি পাকিস্তানি ফিল্ডাররা ‘টেন্ডুলকারের ক্যাচ ধরাটা অন্যায়’ মনে না করতেন!
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পরাজিত দলের কাউকে না কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটাও নিয়মের মধ্যে পড়ে। এখানে সবার পছন্দ বলে মনে হচ্ছে মিসবাহ-উল-হককে। ৭৬ বলে ৫৬ রান যা বলে, মিসবাহর ইনিংসটি অবশ্যই তার চেয়ে অনেক কম উজ্জ্বল। তবে শেষ দিকে ম্যাচটা যে ভারতের সঙ্গে তাঁর একার লড়াই হয়ে গেল, সেই দায় তো অন্য ব্যাটসম্যানদের। পাকিস্তানের গেমপ্ল্যান ছিল, ইউনুস বা মিসবাহর মধ্যে কেউ একজন একটা দিক ধরে রাখবেন। আস্কিং রেটের সঙ্গে বোঝাপড়ার করতে উমর আকমল, আবদুল রাজ্জাক ও শহীদ আফ্রিদি তো আছেই। ধরে রাখার কাজটা একটু বেশি আক্ষরিক অর্থে নেওয়ার ভুল হয়তো করেছেন মিসবাহ। কিন্তু পাকিস্তান তো ম্যাচটা হেরেছে আরও আগে, টেন্ডুলকারকে বারবার নবজীবন দিয়ে।
প্রথম ‘লাইফ’টি পাওয়ার পর টেন্ডুলকার ৫৮ রান করেছেন। জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের চেয়ে দ্বিগুণ। তবে এটিও আসল তাৎপর্যটা বোঝাতে অসমর্থ। টেন্ডুলকার উইকেটে থাকা না-থাকার মূল্য শুধু তাঁর নিজের রানেই প্রতিফলন ফেলে না, ভারতীয় ড্রেসিংরুমের হাওয়াটাই বদলে দেয়। মহেন্দ্র সিং ধোনি সেটিই বুঝিয়ে বললেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘শচীন থাকলে অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করাটাও খুব সহজ হয়ে যায়। ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ ব্যাটিং করলে ১৫ ম্যাচ খেলেছে এমন ব্যাটসম্যানেরও ৫০ ম্যাচের অভিজ্ঞতা হয়ে যায়।’ এই ম্যাচের উইকেট যে মোহালির সেই চিরন্তন ৩০০-৩২০-এর উইকেট নয়, সেটি বুঝে ২৬০-৭০ রানের পরিবর্তিত লক্ষ্যও টেন্ডুলকারেরই ঠিক করে দেওয়া।
২০০৯ সালে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় ছিল একটা রূপকথা। ৫০ ওভারের এই বিশ্বকাপেও আরেকটি রূপকথা প্রায় লেখাই হয়ে গিয়েছিল ভেবে মনে মনে নিশ্চয়ই আফ্রিদির আফসোস আছে। তবে মুখে তাঁর প্রকাশ নেই। যোগ্য অধিনায়কের মতো দলকে উল্টো ধন্যবাদ জানালেন। যাঁরা প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি, তাঁদের পিঠে রাখলেন সান্ত্বনার হাত। এই ম্যাচে এক নম্বরে অবশ্যই উমর গুল। এক সাংবাদিকের প্রশ্নে আফ্রিদির উত্তর হাসির রোল তুলল, ‘গুল আগের ম্যাচগুলোতে এত ভালো করেছে, এক দিন তো খারাপ যেতেই পারে। আপনার যায় না? ক্রিকেটের মতো ক্রিকেটের বাইরেও এটাই নিয়ম, সব দিন সমান যায় না।’
মাঠের মতো সংবাদ সম্মেলনের আফ্রিদিও যেন এক ঝলক তাজা বাতাস। বিরূপ প্রশ্নেও তিনি একই রকম সপ্রতিভ। তখনো সবকিছু সহজভাবে নেওয়ার আমুদে ভঙ্গি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হারার পর কী হয়েছিল, এটা ভেবে শঙ্কিত কি না—এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়ও যে কারণে হাসতে পারলেন। ‘আরে, আমি তো মনে করি, সবাই আমাদের আরও উৎসাহ দেবে। আত্মবিশ্বাস জোগাবে। ১৯৯৬-এর কথা বলছেন? ২০০৩-২০০৭ বিশ্বকাপের কথা বলুন না, আমাদের দল তখন অনেক ভালো ছিল। ওই দুবারের চেয়ে তো আমরা অনেক ভালো করেছি।’
টেন্ডুলকার এখানে শততম সেঞ্চুরি পেলেন না, শ্রীলঙ্কাও কি তাঁকে ঠেকাতে পারবে বলে মনে করেন? আফ্রিদির মুখে দুষ্টুমির হাসি, ‘পারলে পারবে, না পারলে নাই। আমি বলেছিলাম করতে দেব না, দিইনি।’ আগের দিনই যে এমন কিছু বলেননি বলে ভারতীয় মিডিয়াকে একহাত নিলেন, সেটি আফ্রিদিকে কে মনে করিয়ে দেবে? সবাই যে তখন তাঁর বলার ভঙ্গিতে হাসিতে মাতোয়ারা।
No comments