আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে by উৎপল শুভ্র
খুবই তৃপ্তিদায়ী ইনিংস! অনেক দিন পর এমন মারতে পারলাম।’
৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা, বহরেও খারাপ নয়। রীতিমতো মানব-পাহাড়। পাশে বসা ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকেও বামন-বামন লাগে!
কত দিন পর, মনে আছে জ্যাকব ওরাম? ‘১২-১৩ মাস তো হবেই।’
আসলে প্রায় পনেরো মাস। গত পরশু নেপিয়ারে ৪০ বলে ৮৩ রানের পনেরো মাস ও ১০ ইনিংস আগে ৬২ বলে অপরাজিত ৭৫। প্রতিপক্ষ? বাংলাদেশ!
নেপিয়ারের এই ইনিংসের সঙ্গে ঢাকার ইনিংসের মিল আছে। সেখানেও নিউজিল্যান্ড বিপদে। ৫৭ রানে ৫ উইকেট নেই। সেখান থেকে ওরামের কল্যাণে ২১৩।
মিল আছে আরও। ঢাকায় ২৬ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন। রাজ্জাকের সঙ্গে আরেক ফিল্ডারের ধাক্কা লেগে পড়েছে সেই ক্যাচ। নেপিয়ারে নাজমুল-মাহমুদউল্লাহর ধাক্কা লাগেনি। কিন্তু দুজনই দৌড় শুরু করার পর কার ক্যাচ বুঝতে দেরি করাতেই বেঁচে গেছেন ওরাম। তাঁর রান তখন মাত্র ৩০।
বাংলাদেশ দলের হাজারো সমস্যা। একদিন ব্যাটিং ভালো হয় তো বোলিং ডুবিয়ে দেয়। যে দিন বোলাররা ভালো করেন, ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ড্রেসিংরুমে ফিরে চা-পানি খাওয়ার তাড়া! এসব নিত্যদিনের সমস্যা। তবে নেপিয়ারে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ চিরন্তন একটা হাহাকারকে আবারও সামনে নিয়ে এল। আহা, আমাদের যদি একটা ওরাম থাকত!
৩০ ওভারে ১৫৮ থেকে ৫০ ওভারে ৩৩৬—এটা তো ইহজন্মে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। সম্ভব নয় শেষ ১০ ওভারে ১৩০ রানের ওই ঝড় তোলা। টুকটাক মারতে পারেন—এমন ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ দলেও আছেন। কিন্তু অমন আসুরিক শক্তি আছে নাকি কারও গায়ে!
২০০৩ সালে বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে অস্ট্রেলিয়ান কোচ জন বুকানন একটা সাময়িকীতে বাংলাদেশ দলের শক্তি-দুর্বলতার ছবি এঁকেছিলেন। সেখানে একটা পয়েন্ট ছিল—প্রতিপক্ষের বিশাল শরীরের খেলোয়াড়েরা ঘিরে ধরলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বামন-বামন মনে হয়। মনস্তাত্ত্বিক একটা প্রভাবও পড়ে এর।
শুধু মনস্তাত্ত্বিক নয়, ক্রিকেটীয় সমস্যাও হয়। ইমরুল কায়েস ওরামের বিপক্ষে খেলার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, ‘চট্টগ্রামে যখন ওকে প্রথম খেলি, মনে হচ্ছিল পুরো গায়ের ওপর চলে আসছে।’ এটা বোলার ওরাম। ব্যাটসম্যান ওরামেরও সুবিধা আছে। লম্বা পা এত দূর চলে যায় যে, বোলারদের গুড লেংথ খুঁজে পেতেই সমস্যা হয়।
নিউজিল্যান্ডে তো আরও পোয়াবারো। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কের আড়াআড়ি বাউন্ডারি খুব ছোট। সেখানে ওরামের মতো বিগ হিটারদের বড় মজা। আগামীকাল ডানেডিনের যে ইউনিভার্সিটি ওভাল মাঠে দ্বিতীয় ওয়ানডে, সেটির আবার উইকেটের সোজাসুজি বাউন্ডারি খুব ছোট। এখানে ওরাম আবার না জানি কী করে বসেন!
এত ওরাম-ওরাম হচ্ছে প্রতীকী অর্থে। মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের চেহারা বদলে দিতে পারেন, বাংলাদেশ দলে এমন বিগ হিটারের অভাব বোঝাতে। ওরামকে অবশ্য প্রতীকী না ভাবলেও সমস্যা নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভদ্রলোক বরাবরই দুর্বার। ওয়ানডেতে ৬ ইনিংসে ৪টি হাফ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইকরেট ১১৮.৮২!
দুই বছর আগে পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের এই শহরে ৫০তম টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটিতেও ওরামের সেঞ্চুরি। বোলিংয়ে যদি ড্যানিয়েল ভেট্টোরি হন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের আতঙ্ক এই ওরাম।
এক সময় মারকাটারি ব্যাটসম্যান হিসেবে যাঁর খুব খ্যাতি ছিল, সেই মোহাম্মদ আশরাফুল প্রথমেই মেনে নিলেন, ‘শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অনেক পিছিয়ে। এশিয়ার বাইরের দেশগুলোর ক্রিকেটাররা তো বটেই, এশিয়াতেও ভারত-শ্রীলঙ্কাকে দেখুন, ওরা আমাদের চেয়ে অনেক স্ট্রং।’ ব্যাটিংয়ে এর বাড়তি সুবিধাটার কথাও ব্যাখ্যা করলেন, ‘ওদের মিস হিটও অনেক সময় ছয় হয়ে যায়। নেপিয়ারেই ওরামের যে ক্যাচটা ত্রিশ গজে গিয়ে পড়ল, আমরা মারলে সেটি খাড়া ওপরে উঠে যেত।’
বাংলাদেশ দলে ‘ছক্কা নাঈম’ বলে যাঁর খ্যাতি, সেই নাঈম ইসলাম ছক্কা মারায় ব্যাট সুইং আর টাইমিংয়েরই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা দেখেন। তবে সঙ্গে যোগ করে দিচ্ছেন, ‘গায়ে শক্তি বেশি থাকলে অবশ্যই সুবিধা।’
বাংলাদেশের ম্যাচে এই সুবিধা শুধুই প্রতিপক্ষের। ওয়ানডেতে ২০০ বা এর বেশি স্ট্রাইকরেটে কমপক্ষে ২৫ রানের যে ১৫৮টি ইনিংস আছে, সেখানে বাংলাদেশের আছেন মাত্র একজন। কেনিয়ার বিপক্ষে মাশরাফি বিন মুর্তজার ১৬ বলে অপরাজিত ৪৪ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসের তালিকায় ৯ নম্বরে (২৭৫.০০)। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন ইনিংস খেলা হয়েছে ৯টি। সেখানে আফ্রিদি-ওরাম-কেয়ার্নস-যুবরাজদের মতো পরিচিত বিগ হিটার যেমন আছেন, তেমনই আছেন ফারভিজ মাহারুফ ও মুত্তিয়া মুরালিধরনও!
আফ্রিদি-কেয়ার্নসদের মতো ধারাবাহিকভাবে ঝোড়ো ইনিংস খেলার ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ কখনোই পায়নি। তবে এটা শুধু বোধহয় শক্তির ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তো আর বাংলাদেশের বোলিং খেলার সুযোগ পায় না!
সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে সহকারী কোচ খালেদ মাহমুদ যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিগ হিটার-শূন্যতার এই আলোচনা করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের নাম বললেন। বলেই যোগ করে দিলেন, ‘ও স্পিনে মারতে পারে। কিন্তু বেশি পেসের বলে পারে না।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় সব দলেই এখন ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতির একাধিক বোলার। বাংলাদেশের একটা ওরাম পাওয়ার অপেক্ষা কোনো দিন শেষ হবে কি না কে জানে!
৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা, বহরেও খারাপ নয়। রীতিমতো মানব-পাহাড়। পাশে বসা ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকেও বামন-বামন লাগে!
কত দিন পর, মনে আছে জ্যাকব ওরাম? ‘১২-১৩ মাস তো হবেই।’
আসলে প্রায় পনেরো মাস। গত পরশু নেপিয়ারে ৪০ বলে ৮৩ রানের পনেরো মাস ও ১০ ইনিংস আগে ৬২ বলে অপরাজিত ৭৫। প্রতিপক্ষ? বাংলাদেশ!
নেপিয়ারের এই ইনিংসের সঙ্গে ঢাকার ইনিংসের মিল আছে। সেখানেও নিউজিল্যান্ড বিপদে। ৫৭ রানে ৫ উইকেট নেই। সেখান থেকে ওরামের কল্যাণে ২১৩।
মিল আছে আরও। ঢাকায় ২৬ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন। রাজ্জাকের সঙ্গে আরেক ফিল্ডারের ধাক্কা লেগে পড়েছে সেই ক্যাচ। নেপিয়ারে নাজমুল-মাহমুদউল্লাহর ধাক্কা লাগেনি। কিন্তু দুজনই দৌড় শুরু করার পর কার ক্যাচ বুঝতে দেরি করাতেই বেঁচে গেছেন ওরাম। তাঁর রান তখন মাত্র ৩০।
বাংলাদেশ দলের হাজারো সমস্যা। একদিন ব্যাটিং ভালো হয় তো বোলিং ডুবিয়ে দেয়। যে দিন বোলাররা ভালো করেন, ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ড্রেসিংরুমে ফিরে চা-পানি খাওয়ার তাড়া! এসব নিত্যদিনের সমস্যা। তবে নেপিয়ারে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ চিরন্তন একটা হাহাকারকে আবারও সামনে নিয়ে এল। আহা, আমাদের যদি একটা ওরাম থাকত!
৩০ ওভারে ১৫৮ থেকে ৫০ ওভারে ৩৩৬—এটা তো ইহজন্মে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। সম্ভব নয় শেষ ১০ ওভারে ১৩০ রানের ওই ঝড় তোলা। টুকটাক মারতে পারেন—এমন ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ দলেও আছেন। কিন্তু অমন আসুরিক শক্তি আছে নাকি কারও গায়ে!
২০০৩ সালে বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে অস্ট্রেলিয়ান কোচ জন বুকানন একটা সাময়িকীতে বাংলাদেশ দলের শক্তি-দুর্বলতার ছবি এঁকেছিলেন। সেখানে একটা পয়েন্ট ছিল—প্রতিপক্ষের বিশাল শরীরের খেলোয়াড়েরা ঘিরে ধরলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বামন-বামন মনে হয়। মনস্তাত্ত্বিক একটা প্রভাবও পড়ে এর।
শুধু মনস্তাত্ত্বিক নয়, ক্রিকেটীয় সমস্যাও হয়। ইমরুল কায়েস ওরামের বিপক্ষে খেলার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, ‘চট্টগ্রামে যখন ওকে প্রথম খেলি, মনে হচ্ছিল পুরো গায়ের ওপর চলে আসছে।’ এটা বোলার ওরাম। ব্যাটসম্যান ওরামেরও সুবিধা আছে। লম্বা পা এত দূর চলে যায় যে, বোলারদের গুড লেংথ খুঁজে পেতেই সমস্যা হয়।
নিউজিল্যান্ডে তো আরও পোয়াবারো। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কের আড়াআড়ি বাউন্ডারি খুব ছোট। সেখানে ওরামের মতো বিগ হিটারদের বড় মজা। আগামীকাল ডানেডিনের যে ইউনিভার্সিটি ওভাল মাঠে দ্বিতীয় ওয়ানডে, সেটির আবার উইকেটের সোজাসুজি বাউন্ডারি খুব ছোট। এখানে ওরাম আবার না জানি কী করে বসেন!
এত ওরাম-ওরাম হচ্ছে প্রতীকী অর্থে। মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের চেহারা বদলে দিতে পারেন, বাংলাদেশ দলে এমন বিগ হিটারের অভাব বোঝাতে। ওরামকে অবশ্য প্রতীকী না ভাবলেও সমস্যা নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভদ্রলোক বরাবরই দুর্বার। ওয়ানডেতে ৬ ইনিংসে ৪টি হাফ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইকরেট ১১৮.৮২!
দুই বছর আগে পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের এই শহরে ৫০তম টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটিতেও ওরামের সেঞ্চুরি। বোলিংয়ে যদি ড্যানিয়েল ভেট্টোরি হন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের আতঙ্ক এই ওরাম।
এক সময় মারকাটারি ব্যাটসম্যান হিসেবে যাঁর খুব খ্যাতি ছিল, সেই মোহাম্মদ আশরাফুল প্রথমেই মেনে নিলেন, ‘শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অনেক পিছিয়ে। এশিয়ার বাইরের দেশগুলোর ক্রিকেটাররা তো বটেই, এশিয়াতেও ভারত-শ্রীলঙ্কাকে দেখুন, ওরা আমাদের চেয়ে অনেক স্ট্রং।’ ব্যাটিংয়ে এর বাড়তি সুবিধাটার কথাও ব্যাখ্যা করলেন, ‘ওদের মিস হিটও অনেক সময় ছয় হয়ে যায়। নেপিয়ারেই ওরামের যে ক্যাচটা ত্রিশ গজে গিয়ে পড়ল, আমরা মারলে সেটি খাড়া ওপরে উঠে যেত।’
বাংলাদেশ দলে ‘ছক্কা নাঈম’ বলে যাঁর খ্যাতি, সেই নাঈম ইসলাম ছক্কা মারায় ব্যাট সুইং আর টাইমিংয়েরই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা দেখেন। তবে সঙ্গে যোগ করে দিচ্ছেন, ‘গায়ে শক্তি বেশি থাকলে অবশ্যই সুবিধা।’
বাংলাদেশের ম্যাচে এই সুবিধা শুধুই প্রতিপক্ষের। ওয়ানডেতে ২০০ বা এর বেশি স্ট্রাইকরেটে কমপক্ষে ২৫ রানের যে ১৫৮টি ইনিংস আছে, সেখানে বাংলাদেশের আছেন মাত্র একজন। কেনিয়ার বিপক্ষে মাশরাফি বিন মুর্তজার ১৬ বলে অপরাজিত ৪৪ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসের তালিকায় ৯ নম্বরে (২৭৫.০০)। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন ইনিংস খেলা হয়েছে ৯টি। সেখানে আফ্রিদি-ওরাম-কেয়ার্নস-যুবরাজদের মতো পরিচিত বিগ হিটার যেমন আছেন, তেমনই আছেন ফারভিজ মাহারুফ ও মুত্তিয়া মুরালিধরনও!
আফ্রিদি-কেয়ার্নসদের মতো ধারাবাহিকভাবে ঝোড়ো ইনিংস খেলার ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ কখনোই পায়নি। তবে এটা শুধু বোধহয় শক্তির ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তো আর বাংলাদেশের বোলিং খেলার সুযোগ পায় না!
সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে সহকারী কোচ খালেদ মাহমুদ যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিগ হিটার-শূন্যতার এই আলোচনা করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের নাম বললেন। বলেই যোগ করে দিলেন, ‘ও স্পিনে মারতে পারে। কিন্তু বেশি পেসের বলে পারে না।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় সব দলেই এখন ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতির একাধিক বোলার। বাংলাদেশের একটা ওরাম পাওয়ার অপেক্ষা কোনো দিন শেষ হবে কি না কে জানে!
No comments