সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কি অবদান রাখতে পারে by রিজওয়ানুল ইসলাম
কিছুদিন আগে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভ দেশ থেকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে আপত্তি করা উচিত নয়। এই মন্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ হলো, বাংলাদেশের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তা থেকে প্রাপ্ত লাভ বিদেশে চলে গেলেও এ ধরনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো উচিত। আসলে বাংলাদেশের মতো দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কি অবদান রাখতে পারে?
বাংলাদেশসহ অনেক অনুন্নত দেশেই পুঁজির সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় কম। এর প্রধান কারণ এই যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগের প্রয়োজন, জাতীয় সঞ্চয় তার তুলনায় কম। বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের মধ্যকার এই ব্যবধান পূরণের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে বিদেশি পুঁজি। বিদেশ থেকে পুঁজি বিভিন্ন উপায়ে একটি দেশে প্রবেশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ঋণ এবং পুুঁজিবাজারের কথা উল্লেখ করতে পারে। তবে অনুন্নত দেশগুলোর পক্ষে ব্যক্তিপর্যায়ে বিদেশ থেকে ঋণ সংগ্রহ করা সহজ নয়। এ ধরনের দেশের পুঁজিবাজারেও বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সহজ নয়। আর সম্ভব হলেও এ ধরনের পুঁজির অনেক সমস্যা রয়েছে—যা সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট এবং ১৯৯৭-৯৮-এর এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের সময় বেশ প্রকটভাবে ধরা পড়েছিল। এসব কারণে বিদেশি পুঁজির জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকেই তুলনামূলকভাবে বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করা হয়। এ ধরনের বিনিয়োগ শুধু যে সঞ্চয় ও পুঁজির স্বল্পতা মেটাতে সহায়তা করে তা-ই নয়, পুঁজির সঙ্গে সঙ্গে উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা চালু করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তবে বাস্তবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসব ভূমিকা কতটা পালন করতে পারে সেটা পর্যালোচনার বিষয়।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তত্ত্বগত দিক থেকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়। প্রথম কারণটি হচ্ছে ব্যয়সাশ্রয়ী (cost-effective) হয়ে ব্যবসায়ে দক্ষতা বাড়ানো। যদি কোনো শিল্পে শ্রমের প্রয়োজন বেশি হয়, তবে শ্রমের সরবরাহ বেশি এবং মজুরি কম এমন দেশে সেই শিল্প স্থাপন করা যুক্তিযুক্ত। এ কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশে পোশাক, জুতা, খেলনা—এসব শিল্পে বিনিয়োগ করতে উত্সাহী হয়।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে সম্পদের আকর্ষণ। প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ও অন্যান্য খনিজসম্পদ এ ধরনের সম্পদের উদাহরণ। অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তির অভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেরা এসব সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি উত্তোলনের জন্য অনেকাংশে বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল।
তৃতীয় কারণটি হচ্ছে বাজারের আকর্ষণ। অনেক উন্নয়নশীল দেশেই আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের (যেমন মোটরগাড়ি, অন্যান্য টেকসই ভোগ্যপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত পণ্য ইত্যাদি) বাজার গড়ে উঠছে। পরিবহন-ব্যয়, আমদানি-শুল্ক, ইত্যাদি কারণে পণ্য রপ্তানি করে এই নতুন বাজারের সুযোগ গ্রহণ করার চেয়ে বাজারের কাছে উত্পাদন করা এবং সেই লক্ষ্যে বিনিয়োগ করা অনেক সময় বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে। চীন ও ভারতের মতো দেশে জনসংখ্যা ও আয়বৃদ্ধির কারণে বাজারের আয়তন বেড়েছে, তার ফলে দুটি দেশই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশি সফল হচ্ছে।
সারা বিশ্বের মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের দিকে তাকালে দেখা যায়, আশির দশকের তুলনায় পরের দুই দশকে পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এর প্রধান কারণ, নব্বইয়ের দশকে অনেক বেশি সংখ্যক দেশে উদারনীতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এমন কোনো দেশ প্রায় নেই, যেখানে এ ধরনের বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চলছে না। তবে প্রশ্ন হলো সব দেশ কি এর সুফল পাচ্ছে? বস্তুত, বিদেশি বিনিয়োগের সিংহ ভাগ যায় মাত্র এক ডজনের মতো দেশে—চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, হংকং, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, মালয়েশিয়া, বারমুডা, চিলি, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলায়।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। গত নব্বইয়ের দশকেও বাংলাদেশে এ ধরনের বিনিয়োগ ছিল সামান্য। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কিন্তু এই বিনিয়োগের ধারায় কোনো স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যায় না। বর্তমান শতকের প্রথম দশকের দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ধারাবাহিকতা দেখা যায়; ২০০৮ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এই অর্জন এমন কিছু উল্লেখযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানে এই বিনিয়োগ ২০০৪ সালেই ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল; তারপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০০৮ সালে ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সুতরাং মাথাপিছু পরিমাণ হিসাব করলে পাকিস্তানে বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যাচ্ছে বলে মনে হয়। শ্রীলঙ্কায়ও মাথাপিছু হিসেবে বাংলাদেশের চাইতে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এর ফলে দেশ কতটা লাভবান হচ্ছে। এর সম্ভাব্য উপকারিতার কথা আগেই বলা হয়েছে। দেশজ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের স্বল্পতা কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগ কতটা সহায়ক তা নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগ দেশজ বিনিয়োগকে সরিয়ে নিজের স্থান সৃষ্টি করে, নাকি দেশজ বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, অবকাঠামো খাতে (যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ, শক্তি উত্পাদন ইত্যাদি) বিদেশি বিনিয়োগের ফলে সে খাতে উন্নতি হলে তা আরও বাড়তি (দেশজ এবং বিদেশি উভয়ই) বিনিয়োগকে উত্সাহিত করতে পারে। তেমনি কোনো যন্ত্রপাতি বা মোটরগাড়ির শিল্প স্থাপিত হলে যন্ত্রাংশের চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে এবং সে খাতে দেশজ বিনিয়োগ উত্সাহিত হতে পারে। কিন্তু কোনো কোনো সময় এর উল্টোটাও ঘটতে পারে। যেমন বিদেশি বিনিয়োগের ফলে সৃষ্ট শিল্প (বা ব্যবসা) যদি দেশজ কোনো শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং তার ফলে সেটি টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায় অথবা প্রতিযোগিতার মুখে দেশজ বিনিয়োগ কমে যায়, তাহলে সেই প্রভাবকে ‘সরানো’র প্রভাব বলা যাবে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নিট ফল নির্ভর করবে উপরিউক্ত দুই ধরনের প্রভাবের (অর্থাত্ বাড়ানো এবং সরানো) মধ্যে কোনটি বেশি শক্তিশালী, এবং মোট বিনিয়োগের ওপর ফল কী হচ্ছে তার ওপর।
বাস্তব উপাত্তভিত্তিক গবেষণা থেকে উপরিউক্ত প্রশ্নের সুস্পষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায় না। কোনো কোনো সমীক্ষায় ইতিবাচক প্রভাবই বেশি শক্তিশালী মনে হয়, আবার এমন সমীক্ষাও আছে যেখানে নেতিবাচক প্রভাব বেশি শক্তিশালী দেখা যায়। তবে ২০০৪ সালে ৩৭টি উন্নয়নশীল দেশের উপাত্তের ভিত্তিতে পরিচালিত আইএলওর একটি গবেষণায় দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাবই বেশি।
শুধু বিনিয়োগ বৃদ্ধি নয়, বর্ধিত বিনিয়োগ থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর (ও আয়ের) জনগোষ্ঠী কীভাবে উপকৃত হচ্ছে, বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠী সুফল পাচ্ছে কি না সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আর সেই প্রসঙ্গে এসে যায় কর্মসংস্থান ও মজুরির ওপর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাব কী ধরনের সেই প্রশ্ন। এ বিষয়ে অবশ্য গবেষণা খুব বেশি হয়নি। তবে সাধারণভাবে বলা যায় যে বিষয়টি নির্ভর করে বিনিয়োগের প্রকার এবং খাতের ওপর। এ প্রসঙ্গে এসে যায় আরও একটি বিষয়: বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে (যাকে বলা হয় গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট) হচ্ছে, নাকি বর্তমানে বিদ্যমান কোনো উদ্যোগে (যাকে বলা হয় ব্রাউনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট) হচ্ছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হা-জুন চ্যাং (Ha-Joon Chang) বলেন, নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে মোট বিনিয়োগের অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে দ্বিতীয় ধরনের উদ্যোগে। এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি কর্মসংস্থান আশা করা যায় না। বহুজাতিক সংস্থার দৃষ্টি বেশি থাকে উত্পাদিকা শক্তি ও মুনাফার দিকে, ফলে তাদের চেষ্টা থাকে শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা কমানোর দিকে।
কর্মসংস্থানের দৃষ্টি থেকে বিনিয়োগের খাতও গুরুত্বপূর্ণ। খনি, জ্বালানি, এসব খাতে সরাসরি কর্মসংস্থান কমই সৃষ্টি হয়। সুতরাং এসব খাতে বিনিয়োগ হলেও খুব বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকে না। অবশ্য অবকাঠামো উন্নত হলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট হতে পারে। কিন্তু খনির ক্ষেত্রে তাও বলা যায় না। শিল্পখাতে বিনিয়োগও সব সময় কর্মসংস্থানের জন্য ইতিবাচক হয় না। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর এক তুলনামূলক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোটরগাড়ির ক্ষেত্রে শুধু মেক্সিকোতেই কর্মসংস্থান বেড়েছে, আর খাদ্য ও পানীয় শিল্পে বেড়েছে শুধু আর্জেন্টিনায়।
অনেক সময়ই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকা তৈরি করে সেখানে অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। তার ফলে সে ধরনের এলাকায় হয়তো বিদেশি বিনিয়োগ আসে এবং কিছু কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। কিন্তু সে ধরনের বিনিয়োগ অনেক সময়ই দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে না। ফলে এসব বিশেষ এলাকা অনেকটা বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের মতো গড়ে ওঠে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশেই এ রকম বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে যত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, তা একটি দেশের মোট শ্রমশক্তির তুলনায় (বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে) কত, সেই প্রশ্ন থেকে যায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের আটটি ইপিজেডে মোট শ্রমিকের সংখ্যা দুই লাখ ১৮ হাজার ২৯৯, যা শিল্পখাতে নিয়োজিত মোট শ্রমিকের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ।
ওপরের আলোচনা থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অবদান সম্পর্কে কী বলা যায়? তাত্ত্বিক (বা নীতির) দিক থেকে অবশ্যই এ ধরনের বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বাস্তবে কী ঘটে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ইতিবাচক নির্দেশনা পাওয়া যায় না, বরং অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ফল দেখা যায়। এ রকম অবস্থায় এ বিষয়ে সরকারের কী ধরনের অবস্থান নেওয়া উচিত? যেহেতু এর সম্ভাব্য ইতিবাচক দিক রয়েছে এবং সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেহেতু এর জন্য দ্বার উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে এবং আরও অধিক মাত্রায় বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য প্রণোদনাও রাখা যেতে পারে। কিন্তু একে নির্বিচারে আমন্ত্রণ না জানিয়ে কীভাবে এর সম্ভাব্য সুফলগুলো বাস্তবে পরিণত করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কথাও ভাবা যেতে পারে। আজ যারা উন্নত দেশ তারাও কিন্তু তাদের উন্নয়নের সময় এ ধরনের নীতি গ্রহণ করেছিল।
নিজের দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা প্রয়োজন, তার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং দক্ষতা (শ্রম এবং ব্যবস্থাপনা—উভয়েরই) বৃদ্ধির ব্যবস্থা। তবে তারও আগে দেখতে হবে, যে বহুজাতিক সংস্থা বিনিয়োগ নিয়ে আসছে, সে কতটা বিনিয়োগ দেশের বাইরে থেকে আনছে এবং কতটা লাভ দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এমন খাতে বিনিয়োগ উত্সাহিত করা, যার ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়তে পারে। অবকাঠামো, বিদ্যুত্—এসব খাতে বিনিয়োগের প্রভাবে দেশজ বিনিয়োগ বাড়তে পারে। তদুপরি, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে যৌথ মালিকানা উত্সাহিত করা যায় কি না এবং কাঁচামাল ব্যবহারে দেশজ পণ্যের অংশ বাড়ানো যায় কি না, এসব বিষয়েও মনোযোগ দেওয়া উচিত।
রিজওয়ানুল ইসলাম: সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, জেনেভা।
বাংলাদেশসহ অনেক অনুন্নত দেশেই পুঁজির সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় কম। এর প্রধান কারণ এই যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগের প্রয়োজন, জাতীয় সঞ্চয় তার তুলনায় কম। বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের মধ্যকার এই ব্যবধান পূরণের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে বিদেশি পুঁজি। বিদেশ থেকে পুঁজি বিভিন্ন উপায়ে একটি দেশে প্রবেশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ঋণ এবং পুুঁজিবাজারের কথা উল্লেখ করতে পারে। তবে অনুন্নত দেশগুলোর পক্ষে ব্যক্তিপর্যায়ে বিদেশ থেকে ঋণ সংগ্রহ করা সহজ নয়। এ ধরনের দেশের পুঁজিবাজারেও বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সহজ নয়। আর সম্ভব হলেও এ ধরনের পুঁজির অনেক সমস্যা রয়েছে—যা সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট এবং ১৯৯৭-৯৮-এর এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের সময় বেশ প্রকটভাবে ধরা পড়েছিল। এসব কারণে বিদেশি পুঁজির জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকেই তুলনামূলকভাবে বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করা হয়। এ ধরনের বিনিয়োগ শুধু যে সঞ্চয় ও পুঁজির স্বল্পতা মেটাতে সহায়তা করে তা-ই নয়, পুঁজির সঙ্গে সঙ্গে উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা চালু করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তবে বাস্তবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসব ভূমিকা কতটা পালন করতে পারে সেটা পর্যালোচনার বিষয়।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তত্ত্বগত দিক থেকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়। প্রথম কারণটি হচ্ছে ব্যয়সাশ্রয়ী (cost-effective) হয়ে ব্যবসায়ে দক্ষতা বাড়ানো। যদি কোনো শিল্পে শ্রমের প্রয়োজন বেশি হয়, তবে শ্রমের সরবরাহ বেশি এবং মজুরি কম এমন দেশে সেই শিল্প স্থাপন করা যুক্তিযুক্ত। এ কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশে পোশাক, জুতা, খেলনা—এসব শিল্পে বিনিয়োগ করতে উত্সাহী হয়।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে সম্পদের আকর্ষণ। প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ও অন্যান্য খনিজসম্পদ এ ধরনের সম্পদের উদাহরণ। অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তির অভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেরা এসব সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি উত্তোলনের জন্য অনেকাংশে বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল।
তৃতীয় কারণটি হচ্ছে বাজারের আকর্ষণ। অনেক উন্নয়নশীল দেশেই আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের (যেমন মোটরগাড়ি, অন্যান্য টেকসই ভোগ্যপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত পণ্য ইত্যাদি) বাজার গড়ে উঠছে। পরিবহন-ব্যয়, আমদানি-শুল্ক, ইত্যাদি কারণে পণ্য রপ্তানি করে এই নতুন বাজারের সুযোগ গ্রহণ করার চেয়ে বাজারের কাছে উত্পাদন করা এবং সেই লক্ষ্যে বিনিয়োগ করা অনেক সময় বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে। চীন ও ভারতের মতো দেশে জনসংখ্যা ও আয়বৃদ্ধির কারণে বাজারের আয়তন বেড়েছে, তার ফলে দুটি দেশই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশি সফল হচ্ছে।
সারা বিশ্বের মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের দিকে তাকালে দেখা যায়, আশির দশকের তুলনায় পরের দুই দশকে পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এর প্রধান কারণ, নব্বইয়ের দশকে অনেক বেশি সংখ্যক দেশে উদারনীতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এমন কোনো দেশ প্রায় নেই, যেখানে এ ধরনের বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চলছে না। তবে প্রশ্ন হলো সব দেশ কি এর সুফল পাচ্ছে? বস্তুত, বিদেশি বিনিয়োগের সিংহ ভাগ যায় মাত্র এক ডজনের মতো দেশে—চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, হংকং, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, মালয়েশিয়া, বারমুডা, চিলি, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলায়।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। গত নব্বইয়ের দশকেও বাংলাদেশে এ ধরনের বিনিয়োগ ছিল সামান্য। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কিন্তু এই বিনিয়োগের ধারায় কোনো স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যায় না। বর্তমান শতকের প্রথম দশকের দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ধারাবাহিকতা দেখা যায়; ২০০৮ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এই অর্জন এমন কিছু উল্লেখযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানে এই বিনিয়োগ ২০০৪ সালেই ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল; তারপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০০৮ সালে ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সুতরাং মাথাপিছু পরিমাণ হিসাব করলে পাকিস্তানে বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যাচ্ছে বলে মনে হয়। শ্রীলঙ্কায়ও মাথাপিছু হিসেবে বাংলাদেশের চাইতে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এর ফলে দেশ কতটা লাভবান হচ্ছে। এর সম্ভাব্য উপকারিতার কথা আগেই বলা হয়েছে। দেশজ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের স্বল্পতা কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগ কতটা সহায়ক তা নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগ দেশজ বিনিয়োগকে সরিয়ে নিজের স্থান সৃষ্টি করে, নাকি দেশজ বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, অবকাঠামো খাতে (যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ, শক্তি উত্পাদন ইত্যাদি) বিদেশি বিনিয়োগের ফলে সে খাতে উন্নতি হলে তা আরও বাড়তি (দেশজ এবং বিদেশি উভয়ই) বিনিয়োগকে উত্সাহিত করতে পারে। তেমনি কোনো যন্ত্রপাতি বা মোটরগাড়ির শিল্প স্থাপিত হলে যন্ত্রাংশের চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে এবং সে খাতে দেশজ বিনিয়োগ উত্সাহিত হতে পারে। কিন্তু কোনো কোনো সময় এর উল্টোটাও ঘটতে পারে। যেমন বিদেশি বিনিয়োগের ফলে সৃষ্ট শিল্প (বা ব্যবসা) যদি দেশজ কোনো শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং তার ফলে সেটি টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায় অথবা প্রতিযোগিতার মুখে দেশজ বিনিয়োগ কমে যায়, তাহলে সেই প্রভাবকে ‘সরানো’র প্রভাব বলা যাবে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নিট ফল নির্ভর করবে উপরিউক্ত দুই ধরনের প্রভাবের (অর্থাত্ বাড়ানো এবং সরানো) মধ্যে কোনটি বেশি শক্তিশালী, এবং মোট বিনিয়োগের ওপর ফল কী হচ্ছে তার ওপর।
বাস্তব উপাত্তভিত্তিক গবেষণা থেকে উপরিউক্ত প্রশ্নের সুস্পষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায় না। কোনো কোনো সমীক্ষায় ইতিবাচক প্রভাবই বেশি শক্তিশালী মনে হয়, আবার এমন সমীক্ষাও আছে যেখানে নেতিবাচক প্রভাব বেশি শক্তিশালী দেখা যায়। তবে ২০০৪ সালে ৩৭টি উন্নয়নশীল দেশের উপাত্তের ভিত্তিতে পরিচালিত আইএলওর একটি গবেষণায় দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাবই বেশি।
শুধু বিনিয়োগ বৃদ্ধি নয়, বর্ধিত বিনিয়োগ থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর (ও আয়ের) জনগোষ্ঠী কীভাবে উপকৃত হচ্ছে, বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠী সুফল পাচ্ছে কি না সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আর সেই প্রসঙ্গে এসে যায় কর্মসংস্থান ও মজুরির ওপর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাব কী ধরনের সেই প্রশ্ন। এ বিষয়ে অবশ্য গবেষণা খুব বেশি হয়নি। তবে সাধারণভাবে বলা যায় যে বিষয়টি নির্ভর করে বিনিয়োগের প্রকার এবং খাতের ওপর। এ প্রসঙ্গে এসে যায় আরও একটি বিষয়: বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে (যাকে বলা হয় গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট) হচ্ছে, নাকি বর্তমানে বিদ্যমান কোনো উদ্যোগে (যাকে বলা হয় ব্রাউনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট) হচ্ছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হা-জুন চ্যাং (Ha-Joon Chang) বলেন, নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে মোট বিনিয়োগের অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে দ্বিতীয় ধরনের উদ্যোগে। এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি কর্মসংস্থান আশা করা যায় না। বহুজাতিক সংস্থার দৃষ্টি বেশি থাকে উত্পাদিকা শক্তি ও মুনাফার দিকে, ফলে তাদের চেষ্টা থাকে শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা কমানোর দিকে।
কর্মসংস্থানের দৃষ্টি থেকে বিনিয়োগের খাতও গুরুত্বপূর্ণ। খনি, জ্বালানি, এসব খাতে সরাসরি কর্মসংস্থান কমই সৃষ্টি হয়। সুতরাং এসব খাতে বিনিয়োগ হলেও খুব বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকে না। অবশ্য অবকাঠামো উন্নত হলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট হতে পারে। কিন্তু খনির ক্ষেত্রে তাও বলা যায় না। শিল্পখাতে বিনিয়োগও সব সময় কর্মসংস্থানের জন্য ইতিবাচক হয় না। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর এক তুলনামূলক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোটরগাড়ির ক্ষেত্রে শুধু মেক্সিকোতেই কর্মসংস্থান বেড়েছে, আর খাদ্য ও পানীয় শিল্পে বেড়েছে শুধু আর্জেন্টিনায়।
অনেক সময়ই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকা তৈরি করে সেখানে অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। তার ফলে সে ধরনের এলাকায় হয়তো বিদেশি বিনিয়োগ আসে এবং কিছু কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। কিন্তু সে ধরনের বিনিয়োগ অনেক সময়ই দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে না। ফলে এসব বিশেষ এলাকা অনেকটা বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের মতো গড়ে ওঠে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশেই এ রকম বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে যত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, তা একটি দেশের মোট শ্রমশক্তির তুলনায় (বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে) কত, সেই প্রশ্ন থেকে যায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের আটটি ইপিজেডে মোট শ্রমিকের সংখ্যা দুই লাখ ১৮ হাজার ২৯৯, যা শিল্পখাতে নিয়োজিত মোট শ্রমিকের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ।
ওপরের আলোচনা থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অবদান সম্পর্কে কী বলা যায়? তাত্ত্বিক (বা নীতির) দিক থেকে অবশ্যই এ ধরনের বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বাস্তবে কী ঘটে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ইতিবাচক নির্দেশনা পাওয়া যায় না, বরং অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ফল দেখা যায়। এ রকম অবস্থায় এ বিষয়ে সরকারের কী ধরনের অবস্থান নেওয়া উচিত? যেহেতু এর সম্ভাব্য ইতিবাচক দিক রয়েছে এবং সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেহেতু এর জন্য দ্বার উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে এবং আরও অধিক মাত্রায় বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য প্রণোদনাও রাখা যেতে পারে। কিন্তু একে নির্বিচারে আমন্ত্রণ না জানিয়ে কীভাবে এর সম্ভাব্য সুফলগুলো বাস্তবে পরিণত করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কথাও ভাবা যেতে পারে। আজ যারা উন্নত দেশ তারাও কিন্তু তাদের উন্নয়নের সময় এ ধরনের নীতি গ্রহণ করেছিল।
নিজের দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা প্রয়োজন, তার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং দক্ষতা (শ্রম এবং ব্যবস্থাপনা—উভয়েরই) বৃদ্ধির ব্যবস্থা। তবে তারও আগে দেখতে হবে, যে বহুজাতিক সংস্থা বিনিয়োগ নিয়ে আসছে, সে কতটা বিনিয়োগ দেশের বাইরে থেকে আনছে এবং কতটা লাভ দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এমন খাতে বিনিয়োগ উত্সাহিত করা, যার ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়তে পারে। অবকাঠামো, বিদ্যুত্—এসব খাতে বিনিয়োগের প্রভাবে দেশজ বিনিয়োগ বাড়তে পারে। তদুপরি, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে যৌথ মালিকানা উত্সাহিত করা যায় কি না এবং কাঁচামাল ব্যবহারে দেশজ পণ্যের অংশ বাড়ানো যায় কি না, এসব বিষয়েও মনোযোগ দেওয়া উচিত।
রিজওয়ানুল ইসলাম: সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, জেনেভা।
No comments