আজকের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া, এবং একটি লাথি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ! by হাসান মাহবুব
আজ
যখন ক্রোয়েশিয়া ফ্রান্সের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে, প্রতিটি ক্রোয়েশিয়ানের
মনে একবার হলেও একটি ছবি ভেসে উঠবে। ছবিটিতে ক্রোয়েশিয়ার (সাবেক
যুগোশ্লোভিয়া) খেলোয়াড় জভনিমির বোবান একজন পুলিশকে লাথি মারছেন।
আপাতদৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। তবে এটাই হয়ে আছে ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক। এটা কোনো সাধারণ কিক না। ইতিহাসে এর পরিচয় “The kick that started a war” নামে। যুগোস্লোভিয়া দেশটা বড় গোলমেলে ছিলো। সেখানে সার্ব, ক্রোয়াট, স্লোভানিয়ান, মন্টেনেগ্রিন ইত্যাদি বিভিন্ন রকম জাতিসত্তার মানুষ বাস করতো। মার্শাল টিটোর মৃত্যুর পর ১৯৮০ এর পরে অস্থিতিশীল সময়টায় ক্রোয়াটরা তাদের হতাশা এবং অস্থিরতা ঢাকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলো ফুটবলকে। তাদের প্রাণপ্রিয় ক্লাব ডায়নামো জাগরেবের খেলার সময় স্টেডিয়ামে গান গেয়ে, শ্লোগান তুলে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেতো।
এমনই এক সময়ে ১৩ই মে ১৯৯০ সালে ডায়নামো জাগরেব মুখোমুখি হলো সার্বিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেডের সাথে। ডায়নামো জাগরেবের সমর্থকরা, যারা ব্যাড ব্লু বয়েজ নামে পরিচিত ছিলো, প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো সহিংসতা মোকাবেলার। তারা অনেকেই ক্রোয়েশিয়ান মিলিটারির সাথেও যুক্ত ছিল। ওদিকে রেডস্টার বেলগ্রেডের সমর্থকরাও ছিলো কুখ্যাত। খেলা শুরু হলো এক বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতিতে। মাত্র দশ মিনিট চলেছিলো ম্যাচটি, এরপরই শুরু হয় দাঙ্গা। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত দাঙ্গাগুলোর একটি।
আর এমন সময়েই জভনিমির বোবান আসেন ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে, তার উড়ন্ত লাথি দিয়ে। পুলিশ একজন ক্রোয়াট সমর্থককে ধরে রেখেছিলো, যেন বেলগ্রেড থেকে আসা গুন্ডাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। ওদিকে বেলগ্রেডের গুণ্ডারা চালিয়ে যাচ্ছে তাণ্ডব। ছুটে এলেন বোবান। উড়ন্ত লাথি মারলেন পুলিশকে, মুক্ত করলেন তার জাতভাইকে।
এরপর আর পরিস্থিতি সামলে রাখা সম্ভব ছিলো না কারো পক্ষেই। পরবর্তী এক ঘন্টা ধরে স্টেডিয়ামে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চলে, যার নমুনা ইতিহাসে নেই।
আপাতদৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। তবে এটাই হয়ে আছে ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক। এটা কোনো সাধারণ কিক না। ইতিহাসে এর পরিচয় “The kick that started a war” নামে। যুগোস্লোভিয়া দেশটা বড় গোলমেলে ছিলো। সেখানে সার্ব, ক্রোয়াট, স্লোভানিয়ান, মন্টেনেগ্রিন ইত্যাদি বিভিন্ন রকম জাতিসত্তার মানুষ বাস করতো। মার্শাল টিটোর মৃত্যুর পর ১৯৮০ এর পরে অস্থিতিশীল সময়টায় ক্রোয়াটরা তাদের হতাশা এবং অস্থিরতা ঢাকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলো ফুটবলকে। তাদের প্রাণপ্রিয় ক্লাব ডায়নামো জাগরেবের খেলার সময় স্টেডিয়ামে গান গেয়ে, শ্লোগান তুলে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেতো।
এমনই এক সময়ে ১৩ই মে ১৯৯০ সালে ডায়নামো জাগরেব মুখোমুখি হলো সার্বিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেডের সাথে। ডায়নামো জাগরেবের সমর্থকরা, যারা ব্যাড ব্লু বয়েজ নামে পরিচিত ছিলো, প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো সহিংসতা মোকাবেলার। তারা অনেকেই ক্রোয়েশিয়ান মিলিটারির সাথেও যুক্ত ছিল। ওদিকে রেডস্টার বেলগ্রেডের সমর্থকরাও ছিলো কুখ্যাত। খেলা শুরু হলো এক বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতিতে। মাত্র দশ মিনিট চলেছিলো ম্যাচটি, এরপরই শুরু হয় দাঙ্গা। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত দাঙ্গাগুলোর একটি।
আর এমন সময়েই জভনিমির বোবান আসেন ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে, তার উড়ন্ত লাথি দিয়ে। পুলিশ একজন ক্রোয়াট সমর্থককে ধরে রেখেছিলো, যেন বেলগ্রেড থেকে আসা গুন্ডাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। ওদিকে বেলগ্রেডের গুণ্ডারা চালিয়ে যাচ্ছে তাণ্ডব। ছুটে এলেন বোবান। উড়ন্ত লাথি মারলেন পুলিশকে, মুক্ত করলেন তার জাতভাইকে।
এরপর আর পরিস্থিতি সামলে রাখা সম্ভব ছিলো না কারো পক্ষেই। পরবর্তী এক ঘন্টা ধরে স্টেডিয়ামে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চলে, যার নমুনা ইতিহাসে নেই।
বোবান পরে বলেন...
- *“আমি আমার খ্যাতি, যশ, পরিচিতি, কিছুরই তোয়াক্কা করিনি। আমি জীবন বাজী রেখেছিলাম একটি আদর্শের জন্যে, ক্রোয়েশিয়ার জন্যে”।
জভনিমির বোবানের এই লাথি আক্ষরিক অর্থেই ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের
সূচনা করে। এসি মিলানে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার কাটানো বোবান পরে ক্রোয়েশিয়ার
পক্ষে বিশ্বকাপেও অংশ নেন ১৯৯৮ সালে। এখন তিনি ফিফার ডেপুটি সেক্রেটারি
জেনারেল।
আপনারা যারা খেলার সাথে রাজনীতি মেশাতে অনিচ্ছুক, তারা এই ঘটনাটা একটু মনে রাখবেন।
আর একটা কথা, ১৯৯৩ সালে ক্রোয়েশিয়ার ১১৯ তম র্যাংকিং নিয়ে কথা হচ্ছে, ব্যাপারটা বোঝা গেছে এখন? ক্রোয়েশিয়া তখন কেবল যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীন হয়েছে। ফিফাতে কেবল রেজিস্টার্ড হয়েছে। সেজন্যেই তাদের র্যাংকিং তলানিতে ছিলো। তারা মোটেও দুর্বল দল ছিলো না। অখণ্ড যুগোস্লাভিয়া ভেঙে সেসব দেশ হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই বিশ্বকাপ খেলেছে।
ক্রোয়াটরা মুক্তিকামী বীরের জাত, আমরাও। তাদের ছিলেন বোবান, আমাদের ছিলেন শহীদ জুয়েল, মুশতাক। আফসোস একটাই, লুকা মডরিচরা খেলতে নামার সময় এখনও সেই যুদ্ধবিদ্ধস্ত অবস্থা থেকে উঠে আসার স্মৃতি স্মরণ করেন, আর আমাদের নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা পাল্লা দিয়ে বান্ধবী তৈরি করেন।
এভাবেই পার্থক্য তৈরি হয়, এ কারণেই আমরা পিছিয়ে যাই বারেবার।
আর একটা কথা, ১৯৯৩ সালে ক্রোয়েশিয়ার ১১৯ তম র্যাংকিং নিয়ে কথা হচ্ছে, ব্যাপারটা বোঝা গেছে এখন? ক্রোয়েশিয়া তখন কেবল যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীন হয়েছে। ফিফাতে কেবল রেজিস্টার্ড হয়েছে। সেজন্যেই তাদের র্যাংকিং তলানিতে ছিলো। তারা মোটেও দুর্বল দল ছিলো না। অখণ্ড যুগোস্লাভিয়া ভেঙে সেসব দেশ হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই বিশ্বকাপ খেলেছে।
ক্রোয়াটরা মুক্তিকামী বীরের জাত, আমরাও। তাদের ছিলেন বোবান, আমাদের ছিলেন শহীদ জুয়েল, মুশতাক। আফসোস একটাই, লুকা মডরিচরা খেলতে নামার সময় এখনও সেই যুদ্ধবিদ্ধস্ত অবস্থা থেকে উঠে আসার স্মৃতি স্মরণ করেন, আর আমাদের নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা পাল্লা দিয়ে বান্ধবী তৈরি করেন।
এভাবেই পার্থক্য তৈরি হয়, এ কারণেই আমরা পিছিয়ে যাই বারেবার।
No comments