মোগল আমলের চকবাজার যেভাবে বিখ্যাত
খাবারের জন্য এখনো বিখ্যাত চকবাজার |
ভয়াবহ
আগুনের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এলো মোগল আমলে গড়ে ওঠা ঢাকার এককালের
প্রাণকেন্দ্র চকবাজার। যদি পুরনো ঢাকায় এমন দুর্ঘটনা এবারই প্রথম নয়।
ইতিহাসবিদরা বলেন, পুরনো ঢাকার এই চকবাজারের সূচনা হয়েছিলো মোগল আমলে। আর তখন থেকেই ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এই চকবাজার।
ব্যবসার পাশাপাশি এই চকবাজারে আছে হোসেনি দালান, বড় কাটরা, ছোটো কাটড়া কিংবা শাহী মসজিদের মতো নানা ধরণের স্থাপত্যকর্ম।
তবে এই চার শ' বছর পরে এসে ঢাকা অনেক বিস্তৃত হয়েছে সব দিকেই। কিন্তু ব্যবসায়িক বিবেচনায় গুরুত্ব হারায়নি চকবাজার।
যদিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ বলছেন, অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল চকবাজার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ, পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ আমলেও এর ভেতরকার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
"জনসংখ্যা আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। রাস্তাঘাট অলিগলি সেই সরুই রয়ে গেছে। সে কারণেই বুধবার রাতে দুর্ঘটনায় রাস্তায় থাকা মানুষও মারা গেছে।"
অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ চকবাজার নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তিনি বলছেন, "চক শব্দটা এসেছে ফার্সি শব্দ থেকে। বাণিজ্যিক গুরুত্ব নিজেই গড়ে উঠেছে এই চকবাজার।"
"মোগলরা আসার পর থেকে চকবাজার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে সতের শতকে। পরে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবেই দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু চকবাজারের রাস্তাঘাট নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা কেউ করেনি"।
শাহনাওয়াজ বলেন, এক সময় বিয়ের কেনাকাটার প্রধান বাজার ছিলো চকবাজার। এমনকি বরযাত্রীদের চকবাজার ঘুরে যাওয়ার একটা রীতি ছিল।"
কিন্তু এখন সেইসব রীতিনীতি বিদায় নিলেও পুরনো অনেক স্থাপত্যে সমৃদ্ধ হয়ে আছে বাংলাদেশের ঢাকার পুরনো অংশের এই চকবাজার।
২০০১ সালের হিসেবে, এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বাস করে। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ভবনেই রয়েছেন কেমিক্যাল কারখানা, গোডাউন কিংবা অন্য কোনো ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তবে অপরিকল্পিত ভবন, সরু রাস্তা, নোংরা অলিগলির পাশাপাশি গত দু দশকে এই চকবাজার এখন রীতিমত এক অগ্নিকাণ্ড।
কারণ, এই চকবাজারের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে উচ্চ মাত্রার দাহ্য পদার্থের মজুত, প্লাস্টিক কারখানা, পারফিউম কারখানা- যেগুলোর সবই তৈরি হয়েছে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই।
এর আগে ২০১০ সারে পুরনো ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকান্ডে ১২০ জন নিহত হবার পর সব কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছিলো কর্তৃপক্ষ।
উচ্চ মাত্রার কেমিক্যাল বিপণন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধও করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশের পরিবেশ পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো: সামসুল আলম বলছেন, ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে চকবাজারের এই দুর্ঘটনা ঘটতোনা।
পুরনো ঢাকার সরু রাস্তাঘাট বরাবরই নানা দুর্ঘটনায় আলোচনায় এসেছে। পুরনো ঢাকার অন্য অংশের মতো চকবাজারের রাস্তাও অনেক সরু আর সরু রাস্তার ওপরেই বিদ্যুৎসহ নানা পরিষেবার তারের জটলা।
যেখানে সেখানে ট্রান্সফরমার যার একটি বিস্ফোরণ থেকেই চকবাজারের বুধবার রাতের দুর্ঘটনার সুচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
রাসায়নিকের পাশাপাশি চকবাজারের জমে ওঠা অন্য দুটি ব্যবসায়িক পণ্য হলো- প্লাস্টিক দ্রব্য ও পারফিউম।
ফলে ওই এলাকায় নিয়ম-বহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক ও পারফিউমের কারখানা।
সামসুল আলম বলছেন, "উচ্চ মাত্রার দাহ্য পদার্থের মধ্যে একটি রয়েছে প্লাস্টিক দানা। এতে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণ খুবই কষ্টের হয়ে যায়"।
তবে রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিক দ্রব্য ও পারফিউমের বাইরে আরো একটি বিষয়ের জন্য আকর্ষণীয় এই চকবাজার। সেটি হলো খাবার।
বিশেষ করে রোজার সময় বাহারি ধরণের ইফতার সামগ্রীর দোকানে ভরে যায় চকবাজারের রাস্তাঘাট যেখানে ভিড় করেন লাখ লাখ মানুষ।
চকবাজারের কাবাব কিংবা বিরিয়ানি খেতে প্রতিদিনই সেখানকার রেস্টুরেন্ট বা খোলা দোকানে ভিড় করেন শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে যাওয়া মানুষ।
সূত্র : বিবিসি
ইতিহাসবিদরা বলেন, পুরনো ঢাকার এই চকবাজারের সূচনা হয়েছিলো মোগল আমলে। আর তখন থেকেই ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এই চকবাজার।
ব্যবসার পাশাপাশি এই চকবাজারে আছে হোসেনি দালান, বড় কাটরা, ছোটো কাটড়া কিংবা শাহী মসজিদের মতো নানা ধরণের স্থাপত্যকর্ম।
তবে এই চার শ' বছর পরে এসে ঢাকা অনেক বিস্তৃত হয়েছে সব দিকেই। কিন্তু ব্যবসায়িক বিবেচনায় গুরুত্ব হারায়নি চকবাজার।
যদিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ বলছেন, অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল চকবাজার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ, পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ আমলেও এর ভেতরকার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
"জনসংখ্যা আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। রাস্তাঘাট অলিগলি সেই সরুই রয়ে গেছে। সে কারণেই বুধবার রাতে দুর্ঘটনায় রাস্তায় থাকা মানুষও মারা গেছে।"
অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ চকবাজার নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তিনি বলছেন, "চক শব্দটা এসেছে ফার্সি শব্দ থেকে। বাণিজ্যিক গুরুত্ব নিজেই গড়ে উঠেছে এই চকবাজার।"
"মোগলরা আসার পর থেকে চকবাজার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে সতের শতকে। পরে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবেই দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু চকবাজারের রাস্তাঘাট নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা কেউ করেনি"।
শাহনাওয়াজ বলেন, এক সময় বিয়ের কেনাকাটার প্রধান বাজার ছিলো চকবাজার। এমনকি বরযাত্রীদের চকবাজার ঘুরে যাওয়ার একটা রীতি ছিল।"
কিন্তু এখন সেইসব রীতিনীতি বিদায় নিলেও পুরনো অনেক স্থাপত্যে সমৃদ্ধ হয়ে আছে বাংলাদেশের ঢাকার পুরনো অংশের এই চকবাজার।
২০০১ সালের হিসেবে, এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বাস করে। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ভবনেই রয়েছেন কেমিক্যাল কারখানা, গোডাউন কিংবা অন্য কোনো ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তবে অপরিকল্পিত ভবন, সরু রাস্তা, নোংরা অলিগলির পাশাপাশি গত দু দশকে এই চকবাজার এখন রীতিমত এক অগ্নিকাণ্ড।
কারণ, এই চকবাজারের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে উচ্চ মাত্রার দাহ্য পদার্থের মজুত, প্লাস্টিক কারখানা, পারফিউম কারখানা- যেগুলোর সবই তৈরি হয়েছে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই।
এর আগে ২০১০ সারে পুরনো ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকান্ডে ১২০ জন নিহত হবার পর সব কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছিলো কর্তৃপক্ষ।
উচ্চ মাত্রার কেমিক্যাল বিপণন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধও করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশের পরিবেশ পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো: সামসুল আলম বলছেন, ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে চকবাজারের এই দুর্ঘটনা ঘটতোনা।
পুরনো ঢাকার সরু রাস্তাঘাট বরাবরই নানা দুর্ঘটনায় আলোচনায় এসেছে। পুরনো ঢাকার অন্য অংশের মতো চকবাজারের রাস্তাও অনেক সরু আর সরু রাস্তার ওপরেই বিদ্যুৎসহ নানা পরিষেবার তারের জটলা।
যেখানে সেখানে ট্রান্সফরমার যার একটি বিস্ফোরণ থেকেই চকবাজারের বুধবার রাতের দুর্ঘটনার সুচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
রাসায়নিকের পাশাপাশি চকবাজারের জমে ওঠা অন্য দুটি ব্যবসায়িক পণ্য হলো- প্লাস্টিক দ্রব্য ও পারফিউম।
ফলে ওই এলাকায় নিয়ম-বহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক ও পারফিউমের কারখানা।
সামসুল আলম বলছেন, "উচ্চ মাত্রার দাহ্য পদার্থের মধ্যে একটি রয়েছে প্লাস্টিক দানা। এতে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণ খুবই কষ্টের হয়ে যায়"।
তবে রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিক দ্রব্য ও পারফিউমের বাইরে আরো একটি বিষয়ের জন্য আকর্ষণীয় এই চকবাজার। সেটি হলো খাবার।
বিশেষ করে রোজার সময় বাহারি ধরণের ইফতার সামগ্রীর দোকানে ভরে যায় চকবাজারের রাস্তাঘাট যেখানে ভিড় করেন লাখ লাখ মানুষ।
চকবাজারের কাবাব কিংবা বিরিয়ানি খেতে প্রতিদিনই সেখানকার রেস্টুরেন্ট বা খোলা দোকানে ভিড় করেন শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে যাওয়া মানুষ।
সূত্র : বিবিসি
No comments