বিডিআর হত্যাকাণ্ড: অমীমাংসিত রহস্য by সাইয়েদা নাজনিন ফেরদৌসি
ঢাকার
পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ১১তম বার্ষিকী স্মরণ করা হচ্ছে। বিদ্রোহের
নামে সঙ্ঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীরা
সামনে এগিয়ে যেতে শিখেছেন। কিন্তু তারা এটাও বলেছেন, “জীবন কখনও আর আগের
মতো হবে না”। যদিও সামান্য কয়েকজন বিধবা আবারও বিয়ে করেছেন, কিন্তু বীভৎস
স্মৃতি তাদেরকে আজীবন তাড়া করে ফিরবে।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বিদ্রোহীরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তিতে হত্যা করে, যেটার শেষ হয় বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। তৎকালীন বিডিআর প্রধানসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার এই ঘটনা জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে ‘বড় হত্যাযজ্ঞ’। আমরা জানি যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাসের দীর্ঘ যুদ্ধে ৪৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন। আর এখানে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হলো মাত্র ৩৩ ঘন্টায়।
আমার জন্য এটা একটা কঠিন আতঙ্কের ঘটনা, যেটার ক্ষত কোনদিনই পুরোপুরি দূর হবে না। যে কোন জীবিত প্রাণীর জন্য কোন ধরনের নিষ্ঠুরতাই আমার কল্পনার বাইরে… আর এখানে আমরা ৭৪ জন মানুষকে বিবেচনাহীনভাবে হত্যা করার কথা বলছি।
যদি এটা বুঝতে পারি যে দুর্ভাগা পরিবারগুলোর জন্য এটা কি পরিমাণের ভয়াবহ কঠিন ছিল এবং কি অপূরণীয় ক্ষতি তাদের হয়েছে, তবে বাস্তবতা হলো এই পরিবারগুলোর ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশি জানি আমি, কারণ ৫৭ জন নিহত সেনা কর্মকর্তাদের একজন কর্নেল মজিবুল হক ছিলেন আমার বোনের স্বামী। আমি তাদের কথা আমার বোনের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে বিভিন্ন সময় আমার বোনের বাসায় কথা হয়েছে, আর প্রতি বছর আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তাদের প্রায় সবার সাথেই সাক্ষাত হয়েছে আমার।
আমি খুব ভালভাবে স্মরণ করতে পারি যে ২০০৯ সালের ওই দুই দিন এবং পরবর্তী তিনটি বার্ষিকীতে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে, নিহতদের ভিডিও ফুটেজগুলো মিডিয়াতে সম্প্রচারিত হয়েছে, পত্রিকাগুলোতে নিবন্ধ, উপসম্পাদকীয়, বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে জনপ্রিয় গীতিকার ও গায়ক হায়দার হোসেনের অসামান্য গানটির সাথে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় সেখানকার ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মিলিয়ে প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলে বারবার প্রচার করা হয়েছে। অমর গানটির শুরুতেই হায়দার হোসেন লিখেছেন:
“নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ?
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার”
আমরা, কর্নেল মজিবুল হকের পরিবারের সদস্যরা একটা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট করেছে এবং ট্রাস্টের পক্ষ থেকে হায়দার হোসেনকে শহীদদের জন্য তার হৃদয়গ্রাহী গানটির জন্য স্বীকৃতি দিয়েছে। গানটি শুনলেই যে কারো চোখে পানি চলে আসবেই।
তবে, অজানা কারণে, এই গানটি আর টেলিভিশনে প্রচার করা হয় না। যদিও গানটি এখনও প্রতি বছর এই দিনে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়, এটা কি চরম হতাশার নয় যে বছরে একবার শহীদদের আত্মার স্মরণও বিধিনিষেধের মধ্যে চলে এসেছে? আমাদের জন্য খুবই যাতনাদায়ক এটা।
আমি অস্বীকার করছি না যে এই দিনটিকে একেবারের স্মরণ করা হয় না। সেনা কবরস্থানে যেখানে হতভাগা নিহতরা শুয়ে আছেন, তাদের কবরে প্রতি বছরই ফুল দেয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সেখানে ফুল দিচ্ছেন এবং মিডিয়া চ্যানেলগুলো সেই ভিডিও ধারণ করছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিহতদের পরিবারের আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন।
কিন্তু এই দিনটি নিয়ে এ ধরনের উদাসীনতা নিহতদের পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে কেবল অসন্তোষই তৈরি করবে। তারা এখনও মনে করেন তাদেরকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি, কারণ তাদের তিনটি প্রধান প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়নি এখনও:
১. বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। এটা কোন যৌক্তিক বিষয় নয় যে আধাসামরিক বাহিনীর একদল লোক সশস্ত্র বিদ্রোহের ডাক দেবে এবং সাধারণ জনতা পরিবেষ্টিত একটি কম্পাউন্ডের ভেতরে হত্যার উৎসব শুরু করে দেবে। তারা খুব ভালো করেই জানতো সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং সেনাবাহিনীর সংখ্যার কাছে তারা খুবই ক্ষুদ্র হয়ে পড়বে। যে কোন যৌক্তিক চিন্তার দিক থেকে, এটা আত্মঘাতী ছাড়া কিছুই নয়।
মানসিক অদক্ষতার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। গুটিকয়েকের মাথায় এটা খেলতে পারে কিন্তু একটা বড় গ্রুপের কাছে নয়। বিদ্রোহের নেতারা অন্তত এটা জানতেন বলে ধরে নেয়া যায় যে, তাদের এই কর্মকাণ্ড তাদেরকে যেখানে নেবে, সেখান থেকে ফেরার কোন পথ থাকবে না এবং তাদেরকে কোর্ট-মার্শালসহ মারাত্মক পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে;
২. বিচারের সমস্ত্র প্রক্রিয়া এবং তাদের শাস্তি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করা। সবাই বিচার ও রায় নিয়ে খুশি নয়… বিচারের আগে কাস্টডিতে মারা গেছে প্রায় ৫০ জন আর তারা যেটাকে আইনি প্রক্রিয়া বলছে, এতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এর পরও তারা রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর, বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ১৫২ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে হাইকোর্ট, যাদেরকে নিম্ন আদালতেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ অপরাধীদের ‘সর্বোচ্চ বর্বর’ এবং ‘ঠাণ্ডা মাথার ঘাতক’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অভিযুক্ত ও দোষির সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপরাধ মামলা এটা।
৩. ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করা। নিহতদের পরিবারের কাছে এটা কোনভাবেই বোধগম্য নয় যে, নিহত সেনা কর্মকর্তা – যাদের অনেকেই উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছিলেন – তাদের জন্য এই সম্মান কেন দেয়া হচ্ছে না। তাদের দক্ষতা এবং আনুগত্যের সেবাকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে।
সেনাবাহিনীতে মেজর পদে পদোন্নতির আগে একজনকে অবশ্যই কমপক্ষে ১০ বছর সেনাবাহিনীকে সার্ভিস দিতে হয় এবং কমপক্ষে দুই বছর ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অধিকাংশ ক্যাপ্টেনই পাঁচ থেকে ছয় বছর দায়িত্ব পালনের পর একটা পর্যায়ে মেজর হিসেবে প্রমোশন পান। তাই এটা হিসেব করা খুব একটা কঠিন নয় যে, দুই দিনেরও কম সময়ে আমরা সম্পদের বিবেচনায় কি হারিয়েছি।
আসলে যেখানে জনগণের জানার অধিকারের প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রের নাম দিয়ে সেনাবাহিনীর ব্যাপারে অতিরিক্তি গোপনীয়তার কোন সুযোগ নেই। বাস্তবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জনগণের প্রতি অবশ্যই একটা স্বচ্ছতার গ্যারান্টি থাকতে হবে, যে জনগণের জন্যই আসলে রাষ্ট্র টিকে আছে।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বিদ্রোহীরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তিতে হত্যা করে, যেটার শেষ হয় বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। তৎকালীন বিডিআর প্রধানসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার এই ঘটনা জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে ‘বড় হত্যাযজ্ঞ’। আমরা জানি যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাসের দীর্ঘ যুদ্ধে ৪৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন। আর এখানে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হলো মাত্র ৩৩ ঘন্টায়।
আমার জন্য এটা একটা কঠিন আতঙ্কের ঘটনা, যেটার ক্ষত কোনদিনই পুরোপুরি দূর হবে না। যে কোন জীবিত প্রাণীর জন্য কোন ধরনের নিষ্ঠুরতাই আমার কল্পনার বাইরে… আর এখানে আমরা ৭৪ জন মানুষকে বিবেচনাহীনভাবে হত্যা করার কথা বলছি।
যদি এটা বুঝতে পারি যে দুর্ভাগা পরিবারগুলোর জন্য এটা কি পরিমাণের ভয়াবহ কঠিন ছিল এবং কি অপূরণীয় ক্ষতি তাদের হয়েছে, তবে বাস্তবতা হলো এই পরিবারগুলোর ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশি জানি আমি, কারণ ৫৭ জন নিহত সেনা কর্মকর্তাদের একজন কর্নেল মজিবুল হক ছিলেন আমার বোনের স্বামী। আমি তাদের কথা আমার বোনের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে বিভিন্ন সময় আমার বোনের বাসায় কথা হয়েছে, আর প্রতি বছর আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তাদের প্রায় সবার সাথেই সাক্ষাত হয়েছে আমার।
আমি খুব ভালভাবে স্মরণ করতে পারি যে ২০০৯ সালের ওই দুই দিন এবং পরবর্তী তিনটি বার্ষিকীতে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে, নিহতদের ভিডিও ফুটেজগুলো মিডিয়াতে সম্প্রচারিত হয়েছে, পত্রিকাগুলোতে নিবন্ধ, উপসম্পাদকীয়, বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে জনপ্রিয় গীতিকার ও গায়ক হায়দার হোসেনের অসামান্য গানটির সাথে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় সেখানকার ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মিলিয়ে প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলে বারবার প্রচার করা হয়েছে। অমর গানটির শুরুতেই হায়দার হোসেন লিখেছেন:
“নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ?
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার”
আমরা, কর্নেল মজিবুল হকের পরিবারের সদস্যরা একটা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট করেছে এবং ট্রাস্টের পক্ষ থেকে হায়দার হোসেনকে শহীদদের জন্য তার হৃদয়গ্রাহী গানটির জন্য স্বীকৃতি দিয়েছে। গানটি শুনলেই যে কারো চোখে পানি চলে আসবেই।
তবে, অজানা কারণে, এই গানটি আর টেলিভিশনে প্রচার করা হয় না। যদিও গানটি এখনও প্রতি বছর এই দিনে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়, এটা কি চরম হতাশার নয় যে বছরে একবার শহীদদের আত্মার স্মরণও বিধিনিষেধের মধ্যে চলে এসেছে? আমাদের জন্য খুবই যাতনাদায়ক এটা।
আমি অস্বীকার করছি না যে এই দিনটিকে একেবারের স্মরণ করা হয় না। সেনা কবরস্থানে যেখানে হতভাগা নিহতরা শুয়ে আছেন, তাদের কবরে প্রতি বছরই ফুল দেয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সেখানে ফুল দিচ্ছেন এবং মিডিয়া চ্যানেলগুলো সেই ভিডিও ধারণ করছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিহতদের পরিবারের আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন।
কিন্তু এই দিনটি নিয়ে এ ধরনের উদাসীনতা নিহতদের পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে কেবল অসন্তোষই তৈরি করবে। তারা এখনও মনে করেন তাদেরকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি, কারণ তাদের তিনটি প্রধান প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়নি এখনও:
১. বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। এটা কোন যৌক্তিক বিষয় নয় যে আধাসামরিক বাহিনীর একদল লোক সশস্ত্র বিদ্রোহের ডাক দেবে এবং সাধারণ জনতা পরিবেষ্টিত একটি কম্পাউন্ডের ভেতরে হত্যার উৎসব শুরু করে দেবে। তারা খুব ভালো করেই জানতো সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং সেনাবাহিনীর সংখ্যার কাছে তারা খুবই ক্ষুদ্র হয়ে পড়বে। যে কোন যৌক্তিক চিন্তার দিক থেকে, এটা আত্মঘাতী ছাড়া কিছুই নয়।
মানসিক অদক্ষতার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। গুটিকয়েকের মাথায় এটা খেলতে পারে কিন্তু একটা বড় গ্রুপের কাছে নয়। বিদ্রোহের নেতারা অন্তত এটা জানতেন বলে ধরে নেয়া যায় যে, তাদের এই কর্মকাণ্ড তাদেরকে যেখানে নেবে, সেখান থেকে ফেরার কোন পথ থাকবে না এবং তাদেরকে কোর্ট-মার্শালসহ মারাত্মক পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে;
২. বিচারের সমস্ত্র প্রক্রিয়া এবং তাদের শাস্তি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করা। সবাই বিচার ও রায় নিয়ে খুশি নয়… বিচারের আগে কাস্টডিতে মারা গেছে প্রায় ৫০ জন আর তারা যেটাকে আইনি প্রক্রিয়া বলছে, এতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এর পরও তারা রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর, বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ১৫২ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে হাইকোর্ট, যাদেরকে নিম্ন আদালতেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ অপরাধীদের ‘সর্বোচ্চ বর্বর’ এবং ‘ঠাণ্ডা মাথার ঘাতক’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অভিযুক্ত ও দোষির সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপরাধ মামলা এটা।
৩. ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করা। নিহতদের পরিবারের কাছে এটা কোনভাবেই বোধগম্য নয় যে, নিহত সেনা কর্মকর্তা – যাদের অনেকেই উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছিলেন – তাদের জন্য এই সম্মান কেন দেয়া হচ্ছে না। তাদের দক্ষতা এবং আনুগত্যের সেবাকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে।
সেনাবাহিনীতে মেজর পদে পদোন্নতির আগে একজনকে অবশ্যই কমপক্ষে ১০ বছর সেনাবাহিনীকে সার্ভিস দিতে হয় এবং কমপক্ষে দুই বছর ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অধিকাংশ ক্যাপ্টেনই পাঁচ থেকে ছয় বছর দায়িত্ব পালনের পর একটা পর্যায়ে মেজর হিসেবে প্রমোশন পান। তাই এটা হিসেব করা খুব একটা কঠিন নয় যে, দুই দিনেরও কম সময়ে আমরা সম্পদের বিবেচনায় কি হারিয়েছি।
আসলে যেখানে জনগণের জানার অধিকারের প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রের নাম দিয়ে সেনাবাহিনীর ব্যাপারে অতিরিক্তি গোপনীয়তার কোন সুযোগ নেই। বাস্তবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জনগণের প্রতি অবশ্যই একটা স্বচ্ছতার গ্যারান্টি থাকতে হবে, যে জনগণের জন্যই আসলে রাষ্ট্র টিকে আছে।
No comments