ড্রাগন-লেবু চাষে সফল শামসুল by মাহমুদ কামাল, টাঙ্গাইল ও মো. নজরুল ইসলাম
এস
এম শামসুল আলম। পাঁচ বছর আগে উচ্চপদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তার চাকরি থেকে অবসর
নিয়েছেন। বয়স এখন ৭৫-এর কোঠায়। বয়স তাকে অবসরে নিতে পারেনি। পেশার
পরিবর্তন ভেবে বর্তমানে তিনি কৃষিতে আত্মনির্ভর হয়েছেন। ৫০ বিঘা জমিতে
ড্রাগন ও লেবুর বাম্পার ফলন হওয়ায় তিনি অনেকেরই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে
পরিণত হয়েছেন। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার নবগঠিত লক্ষিন্দর ইউনিয়নের
মধুপুরচালায় বিশাল এলাকাজুড়ে তিনি এসবের চাষ করছেন।
সঙ্গে রয়েছে পেয়ারা, আম, লিচু, কুল, পেঁপে, মাল্টা ও কফি। একসময়ের ব্যাংক কর্মকর্তা এস এম শামসুল আলম এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।
এস এম শামসুল আলম ১৯৪৯ সালে ঘাটাইল উপজেলার দিগর ইউনিয়নের কাঁশতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা তোরাব আলী মৌলভী ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ৫ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে শামসুল আলম তৃতীয়। করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষে ১৯৭২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি করেছেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ড. নাজমুন্নাহার শামস ইঞ্জিনিয়র, ছোট মেয়ে ডা. নুসরাত শামস শিশু বিশেষজ্ঞ এবং ছেলে নাজমুছ শামস ও পুত্রবধূও ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিষ্ঠিত এই পরিবারের সান্নিধ্য ছেড়ে পাহাড়ে সমন্বিত কৃষি প্রকল্পে তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন। বয়স হলেও এখনও নিজেই রান্না করে খান।
এস এম শামসুল আলম মনে করেন, জীবনে অবসর বলতে কিছু নেই। জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো না কোনো কাজ মানুষকে করতেই হয়। তা পেশাই হোক কিংবা নেশাই থেকে। তিনি ব্যাংকের উচ্চপদের চাকরি শেষে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন কৃষিতে। তিনি মনে করেন বেকার তরুণেরা ৫-৭ লাখ টাকা খরচ করে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেয়ার চেয়ে যদি সমন্বিত কৃষি কাজ করে তবে তারা যেমন উপকৃত হবে পাশাপাশি দেশও এগিয়ে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার তার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য কাঁচাপাকা ড্রাগন ফল, লেবু, পেঁপে, মাল্টা এবং কফি।
বাগানে বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। এস এম শামসুল আলম জানান, ছেলেবেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে দু’পাশে কৃষি জমি দেখে তার ভালো লাগতো। তখন ভাবতেন, বড় হয়ে সুযোগ হলে তিনি কৃষিচাষ করবেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি নেন। এক সময় তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় কাজ করেন। তখন তিনি সেখানে ধান আবাদের জন্য কৃষিঋণ কার্যক্রম শুরু করেন। এজন্য কৃষকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবেই ছোটবেলার কৃষিপ্রেম আরো গভীর হয়। অফিসে বসেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভবিষ্যতে তিনি কৃষির সঙ্গে যুক্ত হবেন।
২০১৫ সালের দিকে নিজের সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ঘাটাইলের মধুপুরচালা এলাকায় একটু একটু করে জায়গা কিনে বাগান গড়তে শুরু করেন। ২০১৪ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি যোগাযোগ করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কি ধরনের গাছ, কীভাবে লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পরের বছরে তিনি একই এলাকায় ৬০০ শতাংশ জায়গা কিনে ফেলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও সাপমারা এলাকায় পর্যাক্রমে ২২০০ শতাংশ জায়গা লিজ নেন শামসুল আলম। অপরদিকে রসুলপুর ইউনিয়নের ধলী বিলের প্রায় ১০ একর জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। প্রায় ৫০ একর জমিতে মিশ্র ফল এবং মাছ চাষ করছেন। বাণিজ্যিকভাবে সুবিধা ও লাভবান হতে তিনি লেবুর প্রতি আগ্রহী হন বেশি। তার বাগানে সব সময় প্রায় ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বিশেষ সময় আরো অন্তত ৫০ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয় তাকে। গত বছর এক বিঘা জমির ১৮০টি ড্রাগন গাছে ফল উৎপাদন হয়েছে। খরচ বাদে সাড়ে চার লাখ টাকা আয় হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ওই এক বিঘা জমির ড্রগন ফল বাজারে তোলা হবে। খরচ বাদে এবারও প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে বলে ধারণা করছেন শামসুল তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি বিঘায় ৪০ হাজার লেবু বাগান থেকে তোলা হয়েছে যার দাম প্রায় এক লাখ টাকা। খরচ বাদে লাভ হয়েছ ৫০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক কফি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে গাছে কফি ফল আসা শুরু করেছে। আগামী বছর পুরোপুরি কফি উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাত করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন । তিনি মনে করেন, কৃষিচাষ করে মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করা সম্ভব। দেশীয় ফল আবাদ করলে আমদানি নির্ভরতাও কমে যাবে। নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাকরি নির্ভর মনোবৃত্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে আত্মনির্ভর হতে হবে। এজন্য কৃষি সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম।
সঙ্গে রয়েছে পেয়ারা, আম, লিচু, কুল, পেঁপে, মাল্টা ও কফি। একসময়ের ব্যাংক কর্মকর্তা এস এম শামসুল আলম এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।
এস এম শামসুল আলম ১৯৪৯ সালে ঘাটাইল উপজেলার দিগর ইউনিয়নের কাঁশতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা তোরাব আলী মৌলভী ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ৫ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে শামসুল আলম তৃতীয়। করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষে ১৯৭২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি করেছেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ড. নাজমুন্নাহার শামস ইঞ্জিনিয়র, ছোট মেয়ে ডা. নুসরাত শামস শিশু বিশেষজ্ঞ এবং ছেলে নাজমুছ শামস ও পুত্রবধূও ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিষ্ঠিত এই পরিবারের সান্নিধ্য ছেড়ে পাহাড়ে সমন্বিত কৃষি প্রকল্পে তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন। বয়স হলেও এখনও নিজেই রান্না করে খান।
এস এম শামসুল আলম মনে করেন, জীবনে অবসর বলতে কিছু নেই। জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো না কোনো কাজ মানুষকে করতেই হয়। তা পেশাই হোক কিংবা নেশাই থেকে। তিনি ব্যাংকের উচ্চপদের চাকরি শেষে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন কৃষিতে। তিনি মনে করেন বেকার তরুণেরা ৫-৭ লাখ টাকা খরচ করে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেয়ার চেয়ে যদি সমন্বিত কৃষি কাজ করে তবে তারা যেমন উপকৃত হবে পাশাপাশি দেশও এগিয়ে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার তার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য কাঁচাপাকা ড্রাগন ফল, লেবু, পেঁপে, মাল্টা এবং কফি।
বাগানে বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। এস এম শামসুল আলম জানান, ছেলেবেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে দু’পাশে কৃষি জমি দেখে তার ভালো লাগতো। তখন ভাবতেন, বড় হয়ে সুযোগ হলে তিনি কৃষিচাষ করবেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি নেন। এক সময় তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় কাজ করেন। তখন তিনি সেখানে ধান আবাদের জন্য কৃষিঋণ কার্যক্রম শুরু করেন। এজন্য কৃষকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবেই ছোটবেলার কৃষিপ্রেম আরো গভীর হয়। অফিসে বসেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভবিষ্যতে তিনি কৃষির সঙ্গে যুক্ত হবেন।
২০১৫ সালের দিকে নিজের সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ঘাটাইলের মধুপুরচালা এলাকায় একটু একটু করে জায়গা কিনে বাগান গড়তে শুরু করেন। ২০১৪ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি যোগাযোগ করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কি ধরনের গাছ, কীভাবে লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পরের বছরে তিনি একই এলাকায় ৬০০ শতাংশ জায়গা কিনে ফেলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও সাপমারা এলাকায় পর্যাক্রমে ২২০০ শতাংশ জায়গা লিজ নেন শামসুল আলম। অপরদিকে রসুলপুর ইউনিয়নের ধলী বিলের প্রায় ১০ একর জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। প্রায় ৫০ একর জমিতে মিশ্র ফল এবং মাছ চাষ করছেন। বাণিজ্যিকভাবে সুবিধা ও লাভবান হতে তিনি লেবুর প্রতি আগ্রহী হন বেশি। তার বাগানে সব সময় প্রায় ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বিশেষ সময় আরো অন্তত ৫০ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয় তাকে। গত বছর এক বিঘা জমির ১৮০টি ড্রাগন গাছে ফল উৎপাদন হয়েছে। খরচ বাদে সাড়ে চার লাখ টাকা আয় হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ওই এক বিঘা জমির ড্রগন ফল বাজারে তোলা হবে। খরচ বাদে এবারও প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে বলে ধারণা করছেন শামসুল তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি বিঘায় ৪০ হাজার লেবু বাগান থেকে তোলা হয়েছে যার দাম প্রায় এক লাখ টাকা। খরচ বাদে লাভ হয়েছ ৫০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক কফি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে গাছে কফি ফল আসা শুরু করেছে। আগামী বছর পুরোপুরি কফি উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাত করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন । তিনি মনে করেন, কৃষিচাষ করে মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করা সম্ভব। দেশীয় ফল আবাদ করলে আমদানি নির্ভরতাও কমে যাবে। নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাকরি নির্ভর মনোবৃত্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে আত্মনির্ভর হতে হবে। এজন্য কৃষি সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম।
No comments