পাকিস্তানের পশতু আন্দোলন পশতু স্বার্থে নয় by আতা রাসুল মালিক
সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ছিল পাকিস্তানের জন্য একটি
নৃশংস কাঁটা। ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার আশ্রয় নিয়ে টিটিপি মসজিদ ও
চার্চে নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। ২০১৪ সালে
পেশোয়ার আর্মি পাবলিক স্কুলে ১৩২ শিশুকে হত্যা, লাক্কি মারওয়াতের কাছে একটি
গ্রামে ১২৫ তরুণকে গলা কেটে হত্যা ছিল তাদের নৃশংসতার উদাহরণ।
গত বছর পাকিস্তান সেনাবাহিনী টিটিপিকে চূড়ান্তভাবে গুঁড়িয়ে দেয়। বর্তমানে এটি সংগঠিত সংগঠন হিসেবে পাকিস্তানে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। তবে পশতু বেল্টে জাতিগত রাজনীতি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অনেকে মনে করে, পশতু তাহাফুজ মুভমেন্টের (পিটিএম) রাজনীতি আসলে অন্য একটি পন্থায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ধারাবাহিকতা। আবার অন্য কেউ কেউ পিটিএমকে টিটিপি সহিংসতার ব্যর্থতার পর রাজনৈতিক অধিকারের জন্য আনাড়ি সংগ্রাম হিসেবেও অভিহিত করে।
পিটিএম সাবেক ফেডারেলি অ্যাডমেনিস্ট্রেটেড ট্রাইবাল এরিয়াস (ফাটা)-এ পরিচিতির রাজনীতি করে। তারা পশতু গোত্রগত আবেদন জানিয়ে আরো রাজনৈতিক সুযোগ দাবি করছে। দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য সত্ত্বেও তাদের পরিচিতির রাজনীতি বেশ উদ্বেগেরই সৃষ্টি করেছে।
অনেকেই পিটিএমের বর্ণিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে। পিটিএমকে প্রক্সি যুদ্ধরত পক্ষ অভিহিত করা বাড়াবাড়ি হলেও পাকিস্তান সরকার ও নাগরিকদের এই আন্দোলন নিয়ে সংশয়পূর্ণ হওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উপনিবেশ আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অত্যন্ত কার্যকরভাবে ভাগ করে শাসন করার কাজটি করেছিল। লক্ষ্য ছিল অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে উৎসাহিত করে ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম কোনো সংস্থা গঠন থেকে লোকজনকে বিরত রাখা। দুঃখজনকভাবে এই কৌশল বর্তমান সরকারও জারি রেখেছে।
বিশ্বজুড়ে ত্বকের বর্ণ, জাতি/গোত্র, ধর্মীয় গ্রুপ এবং এমনকি লিঙ্গের মতো অভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে গ্রুপ বা জোট গঠনের প্রবণতা দেখা যায়। এটি পরিচিতি রাজনীতি নামে অভিহিত। অনেকে একে গোত্রবাদও বলে থাকে।
দুর্বল জাতীয় পরিচিতি মারাত্মক নিরাপত্তা ইস্যু তৈরি করে। কারণ দেশগুলো তখন অনেক বেশি নাজুক থাকে, অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতের প্রবণতায় ভোগে। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল দেশ সহজেই অন্যান্য শক্তিশালী দেশের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়। আধিপত্যবাদী দেশগুলো প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য উপ-জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করে, পরিচিতিগত বিভেদ উস্কে দিয়ে থাকে।
ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা তার বই ‘আইডেন্টিটি: দি ডিমান্ড ফর ডিগনিটি অ্যান্ড দি পলিটিক্স অব রেসেন্টমেন্ট (২০১৮)-এ বলেছেন, আমরা আমাদের পরিচিতি নিয়ে গর্ব করলেও এটিই আমাদের বিভক্ত করতে পারে।
বিশ শতকে বামপন্থী রাজনীতি শ্রেণি ইস্যুগুলোতে মনোনিবেশ করত, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক দলগুলো অপেক্ষাকৃত গরিবদের অর্থনৈতিক কল্যাণের দিকে নজর দিত। কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দাবি ছিল আগে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিচিতি রাজনীতি রাজনৈতিক বামধারাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক সাম্যের দাবির বদলে সমাজের ছোট ছোট গ্রুপগুলো তাদের স্বীকৃতি ও অধিকার চাচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে নির্যাতিত গ্রুপগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এ ধরনের ছোট গ্রুপের পক্ষে সমাজের সর্বশক্তিশালী এলিটদের চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ হচ্ছে না।
এমন এক পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন আলাদা থাকার পর পাকিস্তান সরকার ফাটার লোকজনকে মূলধারায় নিয়ে আসছে। কিন্তু পশতুদেরকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে পিটিএম।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো ও গর্বিত পশতু সাইরা বানু ওরাকজাই সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে বলেছেন যে এখন সময় এসছে উপজাতীয় এলাকার লোকজনকে একটিকে বাছাই করে নেয়া: তারা অধিকার ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে না পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠান ও আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করলে তা স্থায়ী সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করবে। ফাটার জনগণ মূলধারায় একীভূত হওয়ার যে অর্জন হাসিল করতে যাচ্ছে, তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পিটিএম।
যেকোনো গ্রুপের জন্যই পরিচিতি একটি আবেগগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ আশা করে না যে পশতুরা তাদের পরিচিতি ত্যাগ করবে বা তারা যে সম্প্রদায়ের গর্বিত প্রতিনিধিত্বকারী, তা ছেড়ে দেবে। বরং খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি একটি শক্তিশালী সমষ্টি নির্মাণে ব্যবহৃত হতে পারে।
পিটিএমের স্পষ্টতই বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা রয়েছে। তারা অজ্ঞাত উৎস থেকে অর্থ পেয়ে তাকে, তাদের সাথে পাকিস্তান-বৈরী বিদেশী সংগঠনগুলোর সম্পর্ক রয়েছে।
পিটিএমের যদি সত্যিই সবচেয়ে অভাবী পশতুদের কল্যাণ কামনা করে থাকে, তবে তাদেরকে অবশ্যই সংকীর্ণ পরিচিতির বলয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়ার জনগণকে বিভক্ত করা বন্ধ করতে হবে। এর বদলে তাদেরকে একটি অভিন্ন রাজনৈতিক সম্প্রদায় গঠন করতে হবে যার ভিত্তি হবে উদার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। এ ধরনের কৌশল সার্বিকভাবে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বিশেষভাবে ফাটার জনগণের অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে।
পিটিএমের উচিত হবে ফ্রন্টিয়ার ক্রাইম রেগুলেশন্স বাতিল করতে সহায়তা করা, পশতু উপজাতীয় এলাকার লোকজনকে পাকিস্তানের মূলধারার রাজনীতিতে যোগদানে সহযোগিতা করা। উপজাতীয় এলাকা মানেই বিশৃঙ্খল ভূমি- এই ধারণাকে অতীতে পরিণত হতে দিতে হবে।
গত বছর পাকিস্তান সেনাবাহিনী টিটিপিকে চূড়ান্তভাবে গুঁড়িয়ে দেয়। বর্তমানে এটি সংগঠিত সংগঠন হিসেবে পাকিস্তানে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। তবে পশতু বেল্টে জাতিগত রাজনীতি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অনেকে মনে করে, পশতু তাহাফুজ মুভমেন্টের (পিটিএম) রাজনীতি আসলে অন্য একটি পন্থায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ধারাবাহিকতা। আবার অন্য কেউ কেউ পিটিএমকে টিটিপি সহিংসতার ব্যর্থতার পর রাজনৈতিক অধিকারের জন্য আনাড়ি সংগ্রাম হিসেবেও অভিহিত করে।
পিটিএম সাবেক ফেডারেলি অ্যাডমেনিস্ট্রেটেড ট্রাইবাল এরিয়াস (ফাটা)-এ পরিচিতির রাজনীতি করে। তারা পশতু গোত্রগত আবেদন জানিয়ে আরো রাজনৈতিক সুযোগ দাবি করছে। দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য সত্ত্বেও তাদের পরিচিতির রাজনীতি বেশ উদ্বেগেরই সৃষ্টি করেছে।
অনেকেই পিটিএমের বর্ণিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে। পিটিএমকে প্রক্সি যুদ্ধরত পক্ষ অভিহিত করা বাড়াবাড়ি হলেও পাকিস্তান সরকার ও নাগরিকদের এই আন্দোলন নিয়ে সংশয়পূর্ণ হওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উপনিবেশ আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অত্যন্ত কার্যকরভাবে ভাগ করে শাসন করার কাজটি করেছিল। লক্ষ্য ছিল অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে উৎসাহিত করে ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম কোনো সংস্থা গঠন থেকে লোকজনকে বিরত রাখা। দুঃখজনকভাবে এই কৌশল বর্তমান সরকারও জারি রেখেছে।
বিশ্বজুড়ে ত্বকের বর্ণ, জাতি/গোত্র, ধর্মীয় গ্রুপ এবং এমনকি লিঙ্গের মতো অভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে গ্রুপ বা জোট গঠনের প্রবণতা দেখা যায়। এটি পরিচিতি রাজনীতি নামে অভিহিত। অনেকে একে গোত্রবাদও বলে থাকে।
দুর্বল জাতীয় পরিচিতি মারাত্মক নিরাপত্তা ইস্যু তৈরি করে। কারণ দেশগুলো তখন অনেক বেশি নাজুক থাকে, অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতের প্রবণতায় ভোগে। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল দেশ সহজেই অন্যান্য শক্তিশালী দেশের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়। আধিপত্যবাদী দেশগুলো প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য উপ-জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করে, পরিচিতিগত বিভেদ উস্কে দিয়ে থাকে।
ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা তার বই ‘আইডেন্টিটি: দি ডিমান্ড ফর ডিগনিটি অ্যান্ড দি পলিটিক্স অব রেসেন্টমেন্ট (২০১৮)-এ বলেছেন, আমরা আমাদের পরিচিতি নিয়ে গর্ব করলেও এটিই আমাদের বিভক্ত করতে পারে।
বিশ শতকে বামপন্থী রাজনীতি শ্রেণি ইস্যুগুলোতে মনোনিবেশ করত, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক দলগুলো অপেক্ষাকৃত গরিবদের অর্থনৈতিক কল্যাণের দিকে নজর দিত। কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দাবি ছিল আগে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিচিতি রাজনীতি রাজনৈতিক বামধারাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক সাম্যের দাবির বদলে সমাজের ছোট ছোট গ্রুপগুলো তাদের স্বীকৃতি ও অধিকার চাচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে নির্যাতিত গ্রুপগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এ ধরনের ছোট গ্রুপের পক্ষে সমাজের সর্বশক্তিশালী এলিটদের চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ হচ্ছে না।
এমন এক পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন আলাদা থাকার পর পাকিস্তান সরকার ফাটার লোকজনকে মূলধারায় নিয়ে আসছে। কিন্তু পশতুদেরকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে পিটিএম।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো ও গর্বিত পশতু সাইরা বানু ওরাকজাই সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে বলেছেন যে এখন সময় এসছে উপজাতীয় এলাকার লোকজনকে একটিকে বাছাই করে নেয়া: তারা অধিকার ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে না পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠান ও আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করলে তা স্থায়ী সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করবে। ফাটার জনগণ মূলধারায় একীভূত হওয়ার যে অর্জন হাসিল করতে যাচ্ছে, তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পিটিএম।
যেকোনো গ্রুপের জন্যই পরিচিতি একটি আবেগগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ আশা করে না যে পশতুরা তাদের পরিচিতি ত্যাগ করবে বা তারা যে সম্প্রদায়ের গর্বিত প্রতিনিধিত্বকারী, তা ছেড়ে দেবে। বরং খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি একটি শক্তিশালী সমষ্টি নির্মাণে ব্যবহৃত হতে পারে।
পিটিএমের স্পষ্টতই বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা রয়েছে। তারা অজ্ঞাত উৎস থেকে অর্থ পেয়ে তাকে, তাদের সাথে পাকিস্তান-বৈরী বিদেশী সংগঠনগুলোর সম্পর্ক রয়েছে।
পিটিএমের যদি সত্যিই সবচেয়ে অভাবী পশতুদের কল্যাণ কামনা করে থাকে, তবে তাদেরকে অবশ্যই সংকীর্ণ পরিচিতির বলয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়ার জনগণকে বিভক্ত করা বন্ধ করতে হবে। এর বদলে তাদেরকে একটি অভিন্ন রাজনৈতিক সম্প্রদায় গঠন করতে হবে যার ভিত্তি হবে উদার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। এ ধরনের কৌশল সার্বিকভাবে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বিশেষভাবে ফাটার জনগণের অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে।
পিটিএমের উচিত হবে ফ্রন্টিয়ার ক্রাইম রেগুলেশন্স বাতিল করতে সহায়তা করা, পশতু উপজাতীয় এলাকার লোকজনকে পাকিস্তানের মূলধারার রাজনীতিতে যোগদানে সহযোগিতা করা। উপজাতীয় এলাকা মানেই বিশৃঙ্খল ভূমি- এই ধারণাকে অতীতে পরিণত হতে দিতে হবে।
লাহোরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছে পশতু তাহাফুজ মুভমেন্টের (পিটিএম) কর্মীরা |
No comments