মরক্কোর অর্ধেক মানুষই কেন দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়
মরক্কোর বাদশা ষষ্ঠ মোহাম্মদ |
বিবিসির
এক জরিপ বলছে, মরক্কোর প্রায় অর্ধেক মানুষই অন্য দেশে পাড়ি জমাতে চায়,
অথবা অবিলম্বে মরক্কোয় একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন চায়।
তাহলে, সুদান এবং আলজেরিয়ার পর মরক্কোতেই কি ঘটতে যাচ্ছে ক্ষমতার পরবর্তী পটপরিবর্তন?
ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলেন সালেহ আল-মনসুরি। তার বয়েস মাত্র বিশের কোঠায়, কিন্তু ইতিমধ্যেই কঠিন জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তার।
তিনি নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়েছিলেন। কয়েক বছর থেকেছেন জার্মানিতে। কিন্তু তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আবার ফিরে এসেছেন দেশে।
"লোকে ইউরোপে যায় এমন কিছু পাবার জন্য যা তারা এখানে পায় না" - বলছিলেন মি. মনসুরি।
তিনি কিছু অর্থনৈতিক প্রয়োজনের কথা বললেন, উন্নত জীবনের কথা বললেন। কিন্তু আরো কিছু প্রয়োজন আছে - যা বিমূর্ত।
"যেমন স্বাধীনতা, যেমন সম্মান - এরকম অনেক কিছু আছে। মরক্কোতে জনগণকে কেউ পাত্তা দেয় না। এর অভাবই মানুষকে অভিবাসী হতে উদ্বুদ্ধ করে" - বলছিলেন তিনি।
বিবিসির আরবি বিভাগের চালানো এক জরিপ অনুযায়ী মরক্কোর প্রায় অর্ধেক লোক দেশ ছাড়ার কথা ভাবছে।
এই জরিপের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করলে এ প্রশ্নও মনে আসে: মরক্কোতেই কি এর পর গণ-অসন্তোষ দেখা দেবে?
সম্প্রতি সুদান এবং আলজেরিয়ায় যে গণবিক্ষোভ এবং তার পর আকস্মিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে গেল তাকে অনেকেই বলছেন আরব বসন্ত ২.০।
সুদানের ওমর আল-বশির এবং আলজেরিয়ার আবদেলআজিজ বুতেফ্লিকার ক্ষমতাচ্যুতি অনেককে অবাক করেছে - কিন্তু বিবিসির জরিপটিতে এরকম কিছু ঘটার ইঙ্গিত ছিল। দেশ দুটির লোকজনের কথাবার্তায় ফুটে উঠেছিল তারা ক্রুদ্ধ, আতঙ্কিত এবং বেপরোয়া। দেশ দুটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বলছিলেন, তারা নির্বাচন এবং একনায়কতন্ত্র, বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে অসন্তুষ্ট।
এরকম উপাত্ত মিলেছে আরেকটি দেশ থেকে - মরক্কো।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের আকাঙ্খা
বিবিসির জরিপে মরক্কোর উত্তরদাতাদের অর্ধেকই বলেছেন, তারা অবিলম্বে রাজনৈতিক পরিবর্তন চান।
দেশটির ৪৫ শতাংশ মানুষের বয়সই ২৪এর নিচে, এবং অনুর্ধ-৩০ বছর বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের ৭০ শতাংশই দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চান। ষাট বছরের বেশি বয়স্কদের অর্ধেকই সরকারের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, কিন্তু ১৮-২৯ বছর বয়স্কদের মধ্যে এ হার মাত্র ১৮ শতাংশ।
২০১১ সালের আরব বসন্তের পর মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। নতুন সংবিধান হয়, পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়, তবে রাজার ব্যাপক কর্তৃত্ব এখনো বহাল আছে। অনেক সংস্কারই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় নি - বলছেন সাংবাদিক ও বিরোধীদলীয় কর্মী আবদেললতিফ ফাদুয়াশ।
তিনি বলছেন, নানা কারণে এখানে পুরোপুরি বাজার অর্থনীতি চালু হতে পারছে না। ট্যাক্সি চালানো বা মাছ ধরার পারমিটের জন্যও রাজনীতিবিদ বা রাজপ্রাসাদের আনুকুল্য লাগে।
"আলজেরিয়া, সুদান, বা তার আগে সিরিয়া-মিশর-লিবিয়া-তিউনিসিয়ায় যা ঘটেছে তা যে কোন সময় মরক্কোতে ঘটতে পারে" - বলেন তিনি।
আরেকজন সাংবাদিক আবদেররহিম স্মুগেনি বলছেন, লোকে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ, কারণ তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই না করে শুধু কর বাড়াচ্ছে। কিন্তু মরক্কোর বাদশাকে লোকে দেখে রাজনীতির উর্দ্ধে। সুদান বা আলজেরিয়ার সাথে এটা একটা বড় পার্থক্য, কারণ ওই দেশগুলো মরক্কোর মতো রাজতন্ত্র নয়।
কিন্তু বাদশার ব্যাপারে এ অনুভুতি কি এখনো আছে? এটা বলা কঠিন। মি স্মুগেনি বলেন, অনেকেই মনে করছেন রাজতন্ত্র হয়তো নাও টিকতে পারে।
মরক্কোর সেনাবাহিনীকেও রাজার প্রতি অনুগত বলে মনে করা হয়। দেশটিতে এখনো সেরকম কোন গণআন্দোলন বা বিক্ষোভ নেই।
কিন্তু বিবিসি জরিপ পরিচালনাকারী আরব ব্যারোমিটারের মাইকেল রবিন্স বলছেন, মরক্কোয় এখনো কোন আরব বসন্ত মুহুর্ত আসে নি, ২০১১ সালের বিক্ষোভ সেরকম কোন মৌলিক পরিবর্তন আনে নি। কিন্তু তাদের জরিপের উপাত্ত থেকে একটা সতর্ক সংকেত পাওয়া যায়। তরুণ প্রজন্ম হয়তো একটা স্ফুলিঙ্গের কাছাকাছি, যা একটা বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে।
মরক্কো এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।
সবকিছু নির্ভর করে দেশটির তরুণরা তাদের বাদশা এবং তার অজনপ্রিয় সরকারের কাছে কি প্রত্যাশা করে - তার ওপর।
তাহলে, সুদান এবং আলজেরিয়ার পর মরক্কোতেই কি ঘটতে যাচ্ছে ক্ষমতার পরবর্তী পটপরিবর্তন?
ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলেন সালেহ আল-মনসুরি। তার বয়েস মাত্র বিশের কোঠায়, কিন্তু ইতিমধ্যেই কঠিন জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তার।
তিনি নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়েছিলেন। কয়েক বছর থেকেছেন জার্মানিতে। কিন্তু তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আবার ফিরে এসেছেন দেশে।
"লোকে ইউরোপে যায় এমন কিছু পাবার জন্য যা তারা এখানে পায় না" - বলছিলেন মি. মনসুরি।
তিনি কিছু অর্থনৈতিক প্রয়োজনের কথা বললেন, উন্নত জীবনের কথা বললেন। কিন্তু আরো কিছু প্রয়োজন আছে - যা বিমূর্ত।
"যেমন স্বাধীনতা, যেমন সম্মান - এরকম অনেক কিছু আছে। মরক্কোতে জনগণকে কেউ পাত্তা দেয় না। এর অভাবই মানুষকে অভিবাসী হতে উদ্বুদ্ধ করে" - বলছিলেন তিনি।
বিবিসির আরবি বিভাগের চালানো এক জরিপ অনুযায়ী মরক্কোর প্রায় অর্ধেক লোক দেশ ছাড়ার কথা ভাবছে।
এই জরিপের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করলে এ প্রশ্নও মনে আসে: মরক্কোতেই কি এর পর গণ-অসন্তোষ দেখা দেবে?
সম্প্রতি সুদান এবং আলজেরিয়ায় যে গণবিক্ষোভ এবং তার পর আকস্মিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে গেল তাকে অনেকেই বলছেন আরব বসন্ত ২.০।
সুদানের ওমর আল-বশির এবং আলজেরিয়ার আবদেলআজিজ বুতেফ্লিকার ক্ষমতাচ্যুতি অনেককে অবাক করেছে - কিন্তু বিবিসির জরিপটিতে এরকম কিছু ঘটার ইঙ্গিত ছিল। দেশ দুটির লোকজনের কথাবার্তায় ফুটে উঠেছিল তারা ক্রুদ্ধ, আতঙ্কিত এবং বেপরোয়া। দেশ দুটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বলছিলেন, তারা নির্বাচন এবং একনায়কতন্ত্র, বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে অসন্তুষ্ট।
এরকম উপাত্ত মিলেছে আরেকটি দেশ থেকে - মরক্কো।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের আকাঙ্খা
বিবিসির জরিপে মরক্কোর উত্তরদাতাদের অর্ধেকই বলেছেন, তারা অবিলম্বে রাজনৈতিক পরিবর্তন চান।
দেশটির ৪৫ শতাংশ মানুষের বয়সই ২৪এর নিচে, এবং অনুর্ধ-৩০ বছর বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের ৭০ শতাংশই দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চান। ষাট বছরের বেশি বয়স্কদের অর্ধেকই সরকারের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, কিন্তু ১৮-২৯ বছর বয়স্কদের মধ্যে এ হার মাত্র ১৮ শতাংশ।
২০১১ সালের আরব বসন্তের পর মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। নতুন সংবিধান হয়, পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়, তবে রাজার ব্যাপক কর্তৃত্ব এখনো বহাল আছে। অনেক সংস্কারই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় নি - বলছেন সাংবাদিক ও বিরোধীদলীয় কর্মী আবদেললতিফ ফাদুয়াশ।
তিনি বলছেন, নানা কারণে এখানে পুরোপুরি বাজার অর্থনীতি চালু হতে পারছে না। ট্যাক্সি চালানো বা মাছ ধরার পারমিটের জন্যও রাজনীতিবিদ বা রাজপ্রাসাদের আনুকুল্য লাগে।
"আলজেরিয়া, সুদান, বা তার আগে সিরিয়া-মিশর-লিবিয়া-তিউনিসিয়ায় যা ঘটেছে তা যে কোন সময় মরক্কোতে ঘটতে পারে" - বলেন তিনি।
আরেকজন সাংবাদিক আবদেররহিম স্মুগেনি বলছেন, লোকে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ, কারণ তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই না করে শুধু কর বাড়াচ্ছে। কিন্তু মরক্কোর বাদশাকে লোকে দেখে রাজনীতির উর্দ্ধে। সুদান বা আলজেরিয়ার সাথে এটা একটা বড় পার্থক্য, কারণ ওই দেশগুলো মরক্কোর মতো রাজতন্ত্র নয়।
কিন্তু বাদশার ব্যাপারে এ অনুভুতি কি এখনো আছে? এটা বলা কঠিন। মি স্মুগেনি বলেন, অনেকেই মনে করছেন রাজতন্ত্র হয়তো নাও টিকতে পারে।
মরক্কোর সেনাবাহিনীকেও রাজার প্রতি অনুগত বলে মনে করা হয়। দেশটিতে এখনো সেরকম কোন গণআন্দোলন বা বিক্ষোভ নেই।
কিন্তু বিবিসি জরিপ পরিচালনাকারী আরব ব্যারোমিটারের মাইকেল রবিন্স বলছেন, মরক্কোয় এখনো কোন আরব বসন্ত মুহুর্ত আসে নি, ২০১১ সালের বিক্ষোভ সেরকম কোন মৌলিক পরিবর্তন আনে নি। কিন্তু তাদের জরিপের উপাত্ত থেকে একটা সতর্ক সংকেত পাওয়া যায়। তরুণ প্রজন্ম হয়তো একটা স্ফুলিঙ্গের কাছাকাছি, যা একটা বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে।
মরক্কো এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।
সবকিছু নির্ভর করে দেশটির তরুণরা তাদের বাদশা এবং তার অজনপ্রিয় সরকারের কাছে কি প্রত্যাশা করে - তার ওপর।
সালেহ আল মনসুরি ইউরোপে আশ্রয় না পেয়ে আবার দেশে ফিরেছেন |
No comments