নরীর পাশবিক নির্যাতনের প্রতিকার কি? by নাজমুন নাহার রহমান
সখি
ভালবাসা কারে কয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানটির আমরা প্রায় সবাই শুনেছি।
আমার ধারণা রবি ঠাকুর যদি নারী হতেন আর তাঁর জন্ম যদি আজকের বাংলাদেশে হতো
তবে, তিনি নিশ্চিত লিখতেন, সখি নারী নির্যাতন কারে কয়?
কারণ গত কয়েক বছর নারী নির্যাতনের রেকর্ডই এদেশে ভাঙেনি, বর্বরতার এক নতুন মাত্র যোগ করেছে। নির্যাতন করেই কেবল নারীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। তাকে নির্যাতনের পর দল বেঁধে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। চলন্ত বাসে নারীকে ধর্ষণের পর বাস্তায় ফেলে ইট দিয়ে মাথা থেতলে হত্যা করা হচ্ছে। প্রযুক্তি অপব্যবহার করে নারীকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যাওয়া এখন ডাল ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নারী নির্যাতন বলতে আমরা কী বুঝি? কোনো এক বা একাধিক পুরুষ বা নারী দ্বারা কোনো শিশু থেকে বৃদ্ধাকে মুখের ভাষায় বা শারিরীকভাবে নির্যাতন করাকে নারী নির্যাতন বুঝায়।
এ তো গেল কিতাবি ভাষা। আমি বা আমার মতো নারীরা বর্তমানে এই নারী নির্যাতন শব্দের অর্থ বলতে বুঝি, নুসরাত বা শাহিনুরের কথা। তাঁরা তাদের জীবনের বিনিময়ে এই ব্যাখ্যা আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে।
আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ বহুভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে। এ দাবি বিভিন্ন সংস্থার। তারা এ দাবির পক্ষে বিভিন্ন পরিসংখ্যানও দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নারী নির্যাতন বা এর প্রকাশভঙ্গিতে আমাদের দেশের পুরুষরা বর্বরতার শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার হয়ে উঠছে।
এই পরিসংখ্যান কেনো করা হচ্ছে না তা নিয়ে ভাবতেই না ভাবতেই প্রকাশ পেল বাংলাদেশ নারী নির্যাতনের শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে। গত ৯ মে ২০১৮ তে প্রকাশিত ‘গুটম্যাচার ল্যান্সেট’ কমিশন এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। যা বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ২৯ মে ২০১৯ এ ছাপা হয়। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাকিস্তান নারী নির্যাতনে আমাদের থেকেও পিছিয়ে আছে। এশিয়াতে কেবল মাত্র সিঙ্গাপুরে নারী নির্যাতনের হার এক শতাংশ। আর বাংলাদেশে তা ৫২ গুণ বেড়ে ৫৩ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান দেখে আমি অবাক ও বাকরুদ্ধ। এমন একটি বিষয়ে আমাদের দেশ শীর্ষ স্থান অর্জন করলো যার অপর নাম- বর্বরতা!
গত মে মাসের প্রথম নয় দিনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে ৪১টি শিশু ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যা দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
পড়াশুনা শেষ করে একটি চাকরি যে কী অভাবনীয় সাফল্য তা, যে অর্জন করতে পারে সেই জানে। যদিও দেশের শ্রম শ্রমিকদের কাজের কোনো অভাব নেই। কিন্ত একজন শিক্ষিত মানুষের তার উপযোগি কাজের বহুলাংশের অভাব রয়েছে। পরিসংখান বলে আমাদের দেশে শিক্ষিত চাকারি প্রার্থীদের তিন জনের দুইজনই বেকার। অথচ একটি সাধারণ গ্রামের মেয়ে একটি চাকরি পেয়ে এই দু:সাধ্য কাজটি সাধন করেছেন। কিন্ত মেয়েটি তিনজন নরপশুর কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পাারেনি। হ্যাঁ, আমি বলছিলাম ইবনে সিনা হাসপাতালের সেবিকা অভাগী শাহিনুরের কথা।
নতুন চাকরির টাকা জমিয়ে সে তার মধ্যবিত্ত বাবা-মার জন্য একটি এলইডি টিভি কিনে অফিস থেকে দু’দিনের ছুটি নিয়ে ছয় মে সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের যাচ্ছিলেন। তিনি ওই গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তাঁর অনেক দিনের শখ বাবা মা কে টিভি কিনে দেবে। আহা কী আনন্দ! বাসে বসে একা একাই হয়তো এই শখ পূরণের আনন্দ উপভোগ করছিলেন শাহিনুর। কিন্ত তিন জন মানুষ রূপি পশুর ক্ষণিকের জৈবিক চাহিদার কাছে শাহিনুর ও তাঁর পরিবারের সকল আনন্দ নস্যাত হয়ে গেল। বাস শ্রমিকরা এই অবিবাহিত সেবিকাকে একা বাসের মধ্যে পেয়ে পৈশাচিক নির্যাতনে মেতে উঠলো। অত:পর হত্যা করলো নির্মমভাবে।
একবার আপনারা ভাবুন তো চোখ বন্ধ করে, কেউ আপনাকে যৌন নির্যাতন করার পর ইট দিয়ে মাথা থেতলে দিচ্ছে। শুধু একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন। তাহলেই অনুভব করবেন কী নির্মমতা!
এই নরপশুদের তিন জনের দুইজন ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। তারা অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতেই উঠে এসেছে শাহীনুরকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার চিত্র। পুলিশ এখনো এ হত্যাক-ের চার্জশিট দেয়নি। হয়তো এ মামলাটিও আমরা দিনের পর দিন চলতে দেখবো। হয়তো এক সময় আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে আসামীরা বের হয়ে যাবে বা স্বল্প মেয়াদে সাজা ভোগ করবে। কারন মামলা দীর্ঘ হলে শাহীনুরের পিতা কী পারবে অর্থ ও শারিরীক সামর্থ্য দিয়ে তা মোকাবেলা করতে? তাঁর দ্বারা কি সম্ভব হবে আত্মজার খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা?
শাহিনুরে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে গেলে বা স্বল্প মেয়াদে শাস্তি পেলে শাহীনুরের বিদেহী আত্মার কাছে আমাদের জবাব-ই বা কী হবে। আমরা কি রাষ্ট্রের কাছে এ ধরনের নির্যাতনের শাস্তি চীনের আদলে চাইতে পারি না। চীনে এ ধারনের অপরাধকে ‘ক্রাইম এ্যাগেইনিস্ট পিপলস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ ধরণের অপরাধে মেডিক্যাল রিপোর্টে আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের সাথে সাথে চীন অপরাধীর মৃতুদন্ড কার্যকর করে।
নাজমুন নাহার রহমান, চিত্রশিল্পী ও লেখিকা।
কারণ গত কয়েক বছর নারী নির্যাতনের রেকর্ডই এদেশে ভাঙেনি, বর্বরতার এক নতুন মাত্র যোগ করেছে। নির্যাতন করেই কেবল নারীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। তাকে নির্যাতনের পর দল বেঁধে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। চলন্ত বাসে নারীকে ধর্ষণের পর বাস্তায় ফেলে ইট দিয়ে মাথা থেতলে হত্যা করা হচ্ছে। প্রযুক্তি অপব্যবহার করে নারীকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যাওয়া এখন ডাল ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নারী নির্যাতন বলতে আমরা কী বুঝি? কোনো এক বা একাধিক পুরুষ বা নারী দ্বারা কোনো শিশু থেকে বৃদ্ধাকে মুখের ভাষায় বা শারিরীকভাবে নির্যাতন করাকে নারী নির্যাতন বুঝায়।
এ তো গেল কিতাবি ভাষা। আমি বা আমার মতো নারীরা বর্তমানে এই নারী নির্যাতন শব্দের অর্থ বলতে বুঝি, নুসরাত বা শাহিনুরের কথা। তাঁরা তাদের জীবনের বিনিময়ে এই ব্যাখ্যা আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে।
আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ বহুভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে। এ দাবি বিভিন্ন সংস্থার। তারা এ দাবির পক্ষে বিভিন্ন পরিসংখ্যানও দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নারী নির্যাতন বা এর প্রকাশভঙ্গিতে আমাদের দেশের পুরুষরা বর্বরতার শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার হয়ে উঠছে।
এই পরিসংখ্যান কেনো করা হচ্ছে না তা নিয়ে ভাবতেই না ভাবতেই প্রকাশ পেল বাংলাদেশ নারী নির্যাতনের শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে। গত ৯ মে ২০১৮ তে প্রকাশিত ‘গুটম্যাচার ল্যান্সেট’ কমিশন এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। যা বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ২৯ মে ২০১৯ এ ছাপা হয়। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাকিস্তান নারী নির্যাতনে আমাদের থেকেও পিছিয়ে আছে। এশিয়াতে কেবল মাত্র সিঙ্গাপুরে নারী নির্যাতনের হার এক শতাংশ। আর বাংলাদেশে তা ৫২ গুণ বেড়ে ৫৩ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান দেখে আমি অবাক ও বাকরুদ্ধ। এমন একটি বিষয়ে আমাদের দেশ শীর্ষ স্থান অর্জন করলো যার অপর নাম- বর্বরতা!
গত মে মাসের প্রথম নয় দিনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে ৪১টি শিশু ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যা দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
পড়াশুনা শেষ করে একটি চাকরি যে কী অভাবনীয় সাফল্য তা, যে অর্জন করতে পারে সেই জানে। যদিও দেশের শ্রম শ্রমিকদের কাজের কোনো অভাব নেই। কিন্ত একজন শিক্ষিত মানুষের তার উপযোগি কাজের বহুলাংশের অভাব রয়েছে। পরিসংখান বলে আমাদের দেশে শিক্ষিত চাকারি প্রার্থীদের তিন জনের দুইজনই বেকার। অথচ একটি সাধারণ গ্রামের মেয়ে একটি চাকরি পেয়ে এই দু:সাধ্য কাজটি সাধন করেছেন। কিন্ত মেয়েটি তিনজন নরপশুর কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পাারেনি। হ্যাঁ, আমি বলছিলাম ইবনে সিনা হাসপাতালের সেবিকা অভাগী শাহিনুরের কথা।
নতুন চাকরির টাকা জমিয়ে সে তার মধ্যবিত্ত বাবা-মার জন্য একটি এলইডি টিভি কিনে অফিস থেকে দু’দিনের ছুটি নিয়ে ছয় মে সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের যাচ্ছিলেন। তিনি ওই গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তাঁর অনেক দিনের শখ বাবা মা কে টিভি কিনে দেবে। আহা কী আনন্দ! বাসে বসে একা একাই হয়তো এই শখ পূরণের আনন্দ উপভোগ করছিলেন শাহিনুর। কিন্ত তিন জন মানুষ রূপি পশুর ক্ষণিকের জৈবিক চাহিদার কাছে শাহিনুর ও তাঁর পরিবারের সকল আনন্দ নস্যাত হয়ে গেল। বাস শ্রমিকরা এই অবিবাহিত সেবিকাকে একা বাসের মধ্যে পেয়ে পৈশাচিক নির্যাতনে মেতে উঠলো। অত:পর হত্যা করলো নির্মমভাবে।
একবার আপনারা ভাবুন তো চোখ বন্ধ করে, কেউ আপনাকে যৌন নির্যাতন করার পর ইট দিয়ে মাথা থেতলে দিচ্ছে। শুধু একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন। তাহলেই অনুভব করবেন কী নির্মমতা!
এই নরপশুদের তিন জনের দুইজন ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। তারা অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতেই উঠে এসেছে শাহীনুরকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার চিত্র। পুলিশ এখনো এ হত্যাক-ের চার্জশিট দেয়নি। হয়তো এ মামলাটিও আমরা দিনের পর দিন চলতে দেখবো। হয়তো এক সময় আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে আসামীরা বের হয়ে যাবে বা স্বল্প মেয়াদে সাজা ভোগ করবে। কারন মামলা দীর্ঘ হলে শাহীনুরের পিতা কী পারবে অর্থ ও শারিরীক সামর্থ্য দিয়ে তা মোকাবেলা করতে? তাঁর দ্বারা কি সম্ভব হবে আত্মজার খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা?
শাহিনুরে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে গেলে বা স্বল্প মেয়াদে শাস্তি পেলে শাহীনুরের বিদেহী আত্মার কাছে আমাদের জবাব-ই বা কী হবে। আমরা কি রাষ্ট্রের কাছে এ ধরনের নির্যাতনের শাস্তি চীনের আদলে চাইতে পারি না। চীনে এ ধারনের অপরাধকে ‘ক্রাইম এ্যাগেইনিস্ট পিপলস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ ধরণের অপরাধে মেডিক্যাল রিপোর্টে আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের সাথে সাথে চীন অপরাধীর মৃতুদন্ড কার্যকর করে।
নাজমুন নাহার রহমান, চিত্রশিল্পী ও লেখিকা।
নাজমুন নাহার রহমান |
No comments