চকবাজার ট্র্যাজেডি: তছনছ দুটি পরিবার by মরিয়ম চম্পা
একা
থাকার এই ভালো লাগায় হারিয়ে গিয়েছি, নিঃসঙ্গতা আমাকে আর পাবে না...। ৩রা
জানুয়ারি ফেসবুকে এ লেখা পোস্ট করেছিলেন রেহেনুমা তারান্নুম দোলা। এর দেড়
মাসের মধ্যে হারিয়ে গেছেন দুই বান্ধবী বৃষ্টি ও দোলা। শাড়ি ছিল তাদের
দু’জনের ভীষণ প্রিয়। কোনো উৎসব কিংবা পার্বণে শাড়ি থাকতো তাদের প্রথম
পছন্দের তালিকায়। শিল্প-সাহিত্যে ও আবৃত্তিতে আগ্রহ ছিল বেশ। দুজনেই ভর্তি
হয়েছিলেন প্রজন্মকণ্ঠ নামে একটি আবৃত্তি সংগঠনে।
বাবার পরিবারে একমাত্র মেয়ে ছিলেন বৃষ্টি। পুরো নাম ফাতেমা-তুজ-জোহরা বৃষ্টি।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্যদিকে দুই বোনের মধ্যে দোলা ছিলেন বড়। বাবা এবং মায়ের পরিবারে তিন কুলে আপন বলতে কেউ নেই বললেই চলে। তাই দোলার বাবা-মা দুই মেয়েকে দিয়েই তাদের না পাওয়ার বেদনা পূর্ণ করতেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকে বৃষ্টি এবং দোলার মধ্যে তৈরি হয় গভীর বন্ধুত্ব। দুই বান্ধবীর সম্পর্কের সূত্র ধরে তাদের বাবা-মায়েরও একে অন্যের বাসায় যাতায়াত ছিল সবসময় । মন খারাপ থাকলে দোলা বৃষ্টির বাসায় কিংবা বৃষ্টি দোলার বাসায় চলে আসতেন। তাদের মন ভালো করার প্রধান অনুসঙ্গ ছিল শাড়ি। দুজনেই শাড়ি পড়ে চলে যেতেন বাসার ছাদে। তুলতেন নানা রং ও ঢং এ সেলফি। কেনাকাটায় ছিল জোড়া মিলানো। যেটাই পছন্দ হতো সেটা দুটি করে কিনতেন। পড়তেন একই কিংবা কাছাকাছি ডিজাইনের চশমা। তারা ছিল ঠিক যেন মানিক জোড়। মৃত্যুও আলাদা করতে পারেনি তাদের। দুই বান্ধবীকেই কবর দেয়া হয়েছে আজিমপুর গোরস্থানে। দুটি পরিবারই দুই মেয়েকে হারিয়ে শোকাতুর। কাঁদতে ভুলে গেছে তারা। তাদের চলে যাওয়ার দেড় মাস পূর্ণ হয়েছে। দুই পরিবারের সদস্যদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিনের সাথে কথা বলেছেন তারা।
বৃষ্টির ভাই সাইদুল ইসলাম সানি বলেন, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আপু ছিল সবার বড়। বাবা জসিমউদ্দিন পুরান ঢাকা ও নিউমার্কেটে ব্যবসা করেন। মা শামসুন্নাহার গৃহিনী। লালবাগ শাহী মসদিজ সংলগ্ন হাজী রহিম বক্স লেনে বাসা। আমাদের ফ্যামিলিতে বৃষ্টি আপু একমাত্র মেয়ে ছিলেন। এবং সে ছিলেন অতি আদরের। ঘটনার দিন আমার সঙ্গে আপুর সর্বশেষ কথা হয় রাত ১০ টায়। আমি ফোন দিয়ে বলি, তুই এত রাতে বাহিরে কোথায় আছিস। বাহিরে কেন? তখন আপু বলে আমার প্রোগ্রাম শেষ। এখন রওয়ানা দিচ্ছি। তখন আমি বললাম, আমাকে আসতে হবে? উত্তরে আপু বললো, আসতে হবে না। দোলা সাথে আছে। এটাই ছিল শেষ কথা।
দোলা আপুও ছিলেন আমার নিজের বোনের মতো। আমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তার আম্মু আমাদের অনেক আদর করতেন। ঘটনার দিন দুপুর তিনটায় তারা দুজন আমাদের বাসায় আসে। শিল্পকলায় নির্ধারিত অনুষ্ঠানের জন্য দুজনেই রেডি হয়ে বের হন। এরপর দোলা আপুর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে রাত ১০টা ২৮ মিনিটে তার কথা হয়। এসময় তার চাচাতো ভাইকে আমাদের বাসা থেকে এগিয়ে নিতে বলে।
যখন সর্বপ্রথম আগুন লাগে তখন বাসার ছাদের ওপর দাড়িয়ে আমি দেখছিলাম। এসময় প্রথমে আমার বন্ধুদের সবার বাসায় ফোন দিয়ে আগুন লাগার বিষয়টি জানাই। ঠিক তখনো জানিনা আমার বোন বৃষ্টি বাসায় আসেনি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দোলা আপুর আম্মু ফোন দিয়ে জানায় দোলার ফোন বন্ধ। ওদের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো খোঁজ খবর নাই। এরপরতো তাদের দুজনকে অপহরনের নাটক করে আমাদের দুই পরিবারের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয়া হয়। পরবর্তীতে ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। আমাদের পরিবারে বৃষ্টি আপুর গুরুত্ব বাবার কাছে সবসময়ই বেশি ছিল। ওই সময় যদি বাবার কাছে ৫ লাখ টাকাও মুক্তিপন দাবি করতো বাবা সেটা দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন এবং ঢাকা মেডিকেলের বরাত দিয়ে ১২ দিন পর আমরা নিশ্চিত হই তারা আর বেঁচে নেই।
আমার ব্যক্তিগত যে কোনো বিষয় বৃষ্টি আপুকে জানাতাম। কোথাও বেড়াতে গেলে আপুর জন্য আমি যা পেতাম তাই নিয়ে আসতাম। অধিকাংশ সময় আমি মাঝরাতে বাসায় ফিরতাম। এসময় আপুকে ফোন করলে সে এসে দরজা খুলে দিতেন। বয়সে ছোট হলেও বড় ভাইয়ের মতো শাসন করতাম তাকে। গত জানুয়ারি মাসে আমরা কুমিল্লায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। এসময় দোলা আপুও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের চাইতে আরো বেশি কিছু। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত দুজন একত্রে সিটি কলেজে পড়ালেখা করেছে। এরপরতো বৃষ্টি আপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যায়। পরে দোলা আপু ইডেনে চান্স পেলেও সাবজেক্ট পছন্দ না হওয়ায় ক্যানন্টমেন্টে বিইউপি ‘ল’ কলেজে ভর্তি হন। তারা দুজনে যা কিছুই কিনতেন জোড়া মিলিয়ে দুটি করে কিনতেন। কোনো পছন্দের জিনিস একটি কিনতেন না। চশমা, ড্রেস, শাড়ি, জুতা, সবকিছুই এক জোড়া করে কিনতেন। এমনকি শপিংএ ও যেতেন একত্রে। মারা যাওয়ার পর বৃষ্টি ও দোলা আপুকে একই কবরস্থান আজিমপুরে দাফন করা হয়। কবর দুটি সামান্য দুরত্বে। মরনও তাদের আলাদা করতে পারেনি।
পেশায় দলিল লেখক দোলার বাবা দলিলুর রহমান দুলাল বলেন, দোলার মা সোফিয়া রহমান ছিল তার বান্ধবীর মতো। ওরা দু’বোন ছিল। ছোট বোন লিসা অগ্রণী গালর্স স্কুলের শিক্ষার্থী। দোলা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। মিরপুর সেনানিবাসে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ল’ ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন দোলা। ওইদিন দোলাকে শিল্পকলা একাডেমির একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠানে আমার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিকাল ৪টায় যখন রেডি হয় তখন আমি বলি তুমি কি একা যাচ্ছো? দোলা বলে, বাবা বৃষ্টি আমার সাথে যাচ্ছে। তখন আমি বলি, অনুষ্ঠান শেষ করে তুমি অবশ্যই রাত ৯টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। আগামীকাল ২১শে ফেব্রুয়ারি। যে কোনো সময় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এরপর দোলার সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয় ৯টা ৩৯ মিনিটে। এসময় ফোনে বলেন, বাবা আমাদের অনুষ্ঠান শেষ। আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা পৌছে যাবো। এখন রিকশায় আছি। তুমি টেনশন করবে না।
এরপরতো আমি পাগলের মতো মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করেছি। দোলা হারিয়ে যাওয়ার ১২ থেকে ১৪ দিন পর একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হই সে আর বেঁচে নেই। ২১ দিনের মাথায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার লাশ সনাক্ত করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দোলা আর বৃষ্টির বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ছিল একদম বাল্যকাল থেকে। যখন তারা চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো। শাড়ি পড়ার সখ ছিল ওদের। বাসার ছাদে শাড়ি পড়ে ছবি তুলতো। ফেসবুকে দিতো। আমাদের মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। দুই মেয়েকে নিয়ে আমাদের ছোট্ট ও সুখের সংসার ছিল। ওকে ছাড়া আমাদের পরিবারের বর্তমান অবস্থা এতোটাই খারাপ যে বলে বোঝানো যাবে না। দোলার চলে যাওয়ার আগুন বুকের মাঝে এখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে।
বাবার পরিবারে একমাত্র মেয়ে ছিলেন বৃষ্টি। পুরো নাম ফাতেমা-তুজ-জোহরা বৃষ্টি।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্যদিকে দুই বোনের মধ্যে দোলা ছিলেন বড়। বাবা এবং মায়ের পরিবারে তিন কুলে আপন বলতে কেউ নেই বললেই চলে। তাই দোলার বাবা-মা দুই মেয়েকে দিয়েই তাদের না পাওয়ার বেদনা পূর্ণ করতেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকে বৃষ্টি এবং দোলার মধ্যে তৈরি হয় গভীর বন্ধুত্ব। দুই বান্ধবীর সম্পর্কের সূত্র ধরে তাদের বাবা-মায়েরও একে অন্যের বাসায় যাতায়াত ছিল সবসময় । মন খারাপ থাকলে দোলা বৃষ্টির বাসায় কিংবা বৃষ্টি দোলার বাসায় চলে আসতেন। তাদের মন ভালো করার প্রধান অনুসঙ্গ ছিল শাড়ি। দুজনেই শাড়ি পড়ে চলে যেতেন বাসার ছাদে। তুলতেন নানা রং ও ঢং এ সেলফি। কেনাকাটায় ছিল জোড়া মিলানো। যেটাই পছন্দ হতো সেটা দুটি করে কিনতেন। পড়তেন একই কিংবা কাছাকাছি ডিজাইনের চশমা। তারা ছিল ঠিক যেন মানিক জোড়। মৃত্যুও আলাদা করতে পারেনি তাদের। দুই বান্ধবীকেই কবর দেয়া হয়েছে আজিমপুর গোরস্থানে। দুটি পরিবারই দুই মেয়েকে হারিয়ে শোকাতুর। কাঁদতে ভুলে গেছে তারা। তাদের চলে যাওয়ার দেড় মাস পূর্ণ হয়েছে। দুই পরিবারের সদস্যদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিনের সাথে কথা বলেছেন তারা।
বৃষ্টির ভাই সাইদুল ইসলাম সানি বলেন, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আপু ছিল সবার বড়। বাবা জসিমউদ্দিন পুরান ঢাকা ও নিউমার্কেটে ব্যবসা করেন। মা শামসুন্নাহার গৃহিনী। লালবাগ শাহী মসদিজ সংলগ্ন হাজী রহিম বক্স লেনে বাসা। আমাদের ফ্যামিলিতে বৃষ্টি আপু একমাত্র মেয়ে ছিলেন। এবং সে ছিলেন অতি আদরের। ঘটনার দিন আমার সঙ্গে আপুর সর্বশেষ কথা হয় রাত ১০ টায়। আমি ফোন দিয়ে বলি, তুই এত রাতে বাহিরে কোথায় আছিস। বাহিরে কেন? তখন আপু বলে আমার প্রোগ্রাম শেষ। এখন রওয়ানা দিচ্ছি। তখন আমি বললাম, আমাকে আসতে হবে? উত্তরে আপু বললো, আসতে হবে না। দোলা সাথে আছে। এটাই ছিল শেষ কথা।
দোলা আপুও ছিলেন আমার নিজের বোনের মতো। আমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তার আম্মু আমাদের অনেক আদর করতেন। ঘটনার দিন দুপুর তিনটায় তারা দুজন আমাদের বাসায় আসে। শিল্পকলায় নির্ধারিত অনুষ্ঠানের জন্য দুজনেই রেডি হয়ে বের হন। এরপর দোলা আপুর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে রাত ১০টা ২৮ মিনিটে তার কথা হয়। এসময় তার চাচাতো ভাইকে আমাদের বাসা থেকে এগিয়ে নিতে বলে।
যখন সর্বপ্রথম আগুন লাগে তখন বাসার ছাদের ওপর দাড়িয়ে আমি দেখছিলাম। এসময় প্রথমে আমার বন্ধুদের সবার বাসায় ফোন দিয়ে আগুন লাগার বিষয়টি জানাই। ঠিক তখনো জানিনা আমার বোন বৃষ্টি বাসায় আসেনি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দোলা আপুর আম্মু ফোন দিয়ে জানায় দোলার ফোন বন্ধ। ওদের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো খোঁজ খবর নাই। এরপরতো তাদের দুজনকে অপহরনের নাটক করে আমাদের দুই পরিবারের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয়া হয়। পরবর্তীতে ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। আমাদের পরিবারে বৃষ্টি আপুর গুরুত্ব বাবার কাছে সবসময়ই বেশি ছিল। ওই সময় যদি বাবার কাছে ৫ লাখ টাকাও মুক্তিপন দাবি করতো বাবা সেটা দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন এবং ঢাকা মেডিকেলের বরাত দিয়ে ১২ দিন পর আমরা নিশ্চিত হই তারা আর বেঁচে নেই।
আমার ব্যক্তিগত যে কোনো বিষয় বৃষ্টি আপুকে জানাতাম। কোথাও বেড়াতে গেলে আপুর জন্য আমি যা পেতাম তাই নিয়ে আসতাম। অধিকাংশ সময় আমি মাঝরাতে বাসায় ফিরতাম। এসময় আপুকে ফোন করলে সে এসে দরজা খুলে দিতেন। বয়সে ছোট হলেও বড় ভাইয়ের মতো শাসন করতাম তাকে। গত জানুয়ারি মাসে আমরা কুমিল্লায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। এসময় দোলা আপুও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের চাইতে আরো বেশি কিছু। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত দুজন একত্রে সিটি কলেজে পড়ালেখা করেছে। এরপরতো বৃষ্টি আপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যায়। পরে দোলা আপু ইডেনে চান্স পেলেও সাবজেক্ট পছন্দ না হওয়ায় ক্যানন্টমেন্টে বিইউপি ‘ল’ কলেজে ভর্তি হন। তারা দুজনে যা কিছুই কিনতেন জোড়া মিলিয়ে দুটি করে কিনতেন। কোনো পছন্দের জিনিস একটি কিনতেন না। চশমা, ড্রেস, শাড়ি, জুতা, সবকিছুই এক জোড়া করে কিনতেন। এমনকি শপিংএ ও যেতেন একত্রে। মারা যাওয়ার পর বৃষ্টি ও দোলা আপুকে একই কবরস্থান আজিমপুরে দাফন করা হয়। কবর দুটি সামান্য দুরত্বে। মরনও তাদের আলাদা করতে পারেনি।
পেশায় দলিল লেখক দোলার বাবা দলিলুর রহমান দুলাল বলেন, দোলার মা সোফিয়া রহমান ছিল তার বান্ধবীর মতো। ওরা দু’বোন ছিল। ছোট বোন লিসা অগ্রণী গালর্স স্কুলের শিক্ষার্থী। দোলা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। মিরপুর সেনানিবাসে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ল’ ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন দোলা। ওইদিন দোলাকে শিল্পকলা একাডেমির একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠানে আমার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিকাল ৪টায় যখন রেডি হয় তখন আমি বলি তুমি কি একা যাচ্ছো? দোলা বলে, বাবা বৃষ্টি আমার সাথে যাচ্ছে। তখন আমি বলি, অনুষ্ঠান শেষ করে তুমি অবশ্যই রাত ৯টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। আগামীকাল ২১শে ফেব্রুয়ারি। যে কোনো সময় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এরপর দোলার সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয় ৯টা ৩৯ মিনিটে। এসময় ফোনে বলেন, বাবা আমাদের অনুষ্ঠান শেষ। আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা পৌছে যাবো। এখন রিকশায় আছি। তুমি টেনশন করবে না।
এরপরতো আমি পাগলের মতো মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করেছি। দোলা হারিয়ে যাওয়ার ১২ থেকে ১৪ দিন পর একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হই সে আর বেঁচে নেই। ২১ দিনের মাথায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার লাশ সনাক্ত করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দোলা আর বৃষ্টির বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ছিল একদম বাল্যকাল থেকে। যখন তারা চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো। শাড়ি পড়ার সখ ছিল ওদের। বাসার ছাদে শাড়ি পড়ে ছবি তুলতো। ফেসবুকে দিতো। আমাদের মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। দুই মেয়েকে নিয়ে আমাদের ছোট্ট ও সুখের সংসার ছিল। ওকে ছাড়া আমাদের পরিবারের বর্তমান অবস্থা এতোটাই খারাপ যে বলে বোঝানো যাবে না। দোলার চলে যাওয়ার আগুন বুকের মাঝে এখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে।
No comments